দীর্ঘবিলাসী ধ্রুপদীর ছেঁড়াখোঁড়া
ধানসিঁড়ি নদী প্রকাশনী, ঢাকা থেকে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে চাষী সিরাজুল ইসলাম ও রিয়াজ হকের যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘দীর্ঘ বিলাসী ধ্রুপদীর ছেঁড়াখোঁড়া’। বইয়ের মুখবন্ধে তারা বলেছেন এ বই প্রকাশের পেছনের ঘটনা।
তাদের ভাষায়, “আমাদের পরিচয় মধ্য সত্তর দশকে 'চিত্রালী পাঠক পাঠিকা চলচ্চিত্র সংসদ' (চিপাচস) করতে গিয়ে। তারপর নিরন্তর দেখা-দেখি,আড্ডা মারা; লেখালেখি করা, পত্র পত্রিকা বের করা ইত্যাদি। মাঝখানে দীর্ঘ বিরতিতে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া জীবন নামক জোয়াল টানায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দু'জনের প্রায় আড়াই দশক। বর্তমানে দু'জন দু'গ্রহের বাসিন্দা। একজন ঢাকায় অন্যজন সিডনিতে জীবনের ঘানি টেনে যাচ্ছি। হঠাৎই গেল বছরের এপ্রিলে আমাদের আবার দেখা। আড্ডায় ধোঁয়া ওঠা হলুদ রঙের স্যুপ খেতে খেতে সিদ্ধান্ত দু'জনে মিলে একটা বই বের করলে কেমন হয়? সেই আড্ডার ফসল এই 'দীর্ঘবিলাসী ধ্রুপদীর ছেঁড়াখোঁড়া'।
আমরা আমাদের মতই স্বতন্ত্র। লেখালেখি করি যার যার মতো। স্বভাবতই দু'জনের কবিতাও দু'রকম। সেটাই স্বাভাবিক। রিয়াজ হক আমাদের যৌথ নিজস্বী নিয়ে লিখলো, ‘চাষী, পাঠকের মনোযোগ দাবী করে আপনার কবিতা। শব্দ ও বোধের নতুন বিন্যাস আছে। জীবনের নানা ভাঙচুরের গল্প আছে। প্রকৃতি ও প্রেমও আছে নিরন্তর।আমার বিশ্বাস আমাদের পরস্পরের কবিতা হবে পরস্পরের পরিপূরক। আমার কবিতায় যা নেই তা আছে আপনার কবিতায়’। অনেকটা তুমি আর আমি মিলে দু'জনে একজন । সেক্ষেত্রে আমরা বিপরীতধর্মী পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারব বলে আমাদের ধারনা।
সে ভরসায় ২০১৮-র বই মেলায় সম্পূর্ণ অনাকাংখিতভাবেই ঢুকে পড়লাম আমরা দু'জন। জানিনা এই অযাচিত ঢুকে পড়াটা কতোটা দুঃখ বা আনন্দ দেবে আপনাদের। দু'জনের লেখালেখি আপনাদের ভালো লাগলে হয়তো দেখা হবে আরেক ফাল্গুনে। ফের ফিরে আসবো আমরা দিঘীর জলে কবিতার আলপনা নিয়ে বা গদ্যের কোন খসড়ায় স্লেটে আঁকা ছবি নিয়ে।
যতীন সরকার বলেছেন,'কবিতাই হচ্ছে মূল সাহিত্য। সাহিত্যের নানা শাখা প্রশাখায় প্রথমেই এসেছে কবিতা। কবিতা থেকে সাহিত্যের অন্যান্য শাখার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাচীন ভারতে সাহিত্য শব্দটা কিন্তু প্রচলিত ছিলনা। সাহিত্য শব্দটা অনেক পরে এসেছে। আগে বৃহৎ অর্থে কাব্যের মাধ্যমেই মানুষের অনুভূতি প্রকাশ হতো। কাব্য কি? কাব্য হচ্ছে 'কাব্যং রসাত্নকং বাক্যং'। কাব্য হচ্ছে রসযুক্ত বাক্য'। জানিনা কতোটা রস দিতে পারলাম আমরা। কারণ কবিতার শুরু এবং শেষ বলে কিছু হয়না”।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি প্রবাসী রিয়াজ হকের জন্ম ১৯৫৮ সালে, বর্ষা মুখরিত জুনের ঢাকায়। পড়াশুনা করেছেন বাংলাদেশে, ফিলিপিন্সে, অস্ট্রেলিয়ায়। বিষয় পুরকৌশল, ব্যবসায় প্রশাসন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রথম যে পনের জনকে নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র শুরু করেছিলেন রিয়াজ হক তাদের একজন। সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক। সিডনিতে বাংলা-সিডনি ডট কমে নিয়মিত লিখছেন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ।
চাষী সিরাজুল ইসলামের জন্ম ১৯৫৭ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার বিক্রমপুরে। একুশে পদক প্রাপ্ত প্রয়াত গুণী পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম তার বড় ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী লিখে যাচ্ছেন নানা মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে। প্রকাশিত বই ‘সোনালী সমষপুর তার রুপালী কথা’, ‘ঐতিহাসিক পটভূমিতে বিক্রমপুর’, ‘পত্রহীন অরণ্যে বৃষ্টির গান’, ‘স্বপ্নের ধ্বনিরা’ ও ‘টাটা নগরের ছেলেটি’।
|