bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













দুঃস্বপ্নের খণ্ডচিত্র - (৪)
অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রাযযাক



মধুর ক্যান্টিন
জুন মাসের প্রথম দিন এলেফেন্ট রোডের ভাড়া-বাসায় উঠে আসার কথা থাকলেও মে মাসের শেষ সপ্তাহেই সে বাসায় উঠে গেলাম। এ বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া সহজ হবে। সরকারী আদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অনেক শিক্ষকের মতো আমিও পহেলা জুন কাজে যোগ দিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধুর ক্যান্টিনের ঠিক পাশেই আইবিএর নিজস্ব ভবন। আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পর ২৫শে মার্চ পর্যন্ত আমি মাত্র বার দু’য়েক এখানে এসেছি। পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা শুরু করার পর বেতনের টাকা তোলার জন্য আটই এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেও আমি আইবিএ তে যাই নি। কিন্তু সরকারী ঘোষণার পর কাজে যোগ না দেবার কোন উপায় ছিলনা; সামরিক আদেশে বলা হয়েছিল ঘোষিত তারিখের পর ১৫ দিনের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে শিক্ষকদের চাকরীচ্যুত এবং সামরিক আদালতে বিচার করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসার উল্টোদিকের গেট দিয়ে ঢুকে কলাভবনের পশ্চিম পাশের রাস্তা ধরে ভয়ে ভয়ে আইবিএ ভবনের দিকে অগ্রসর হলাম। মধুর ক্যান্টিন জনশূন্য। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য আমি বহুবার এই ক্যান্টিনে এসেছি। কিন্তু মধুর ক্যান্টিনকে কোনদিন এমন জনহীন দেখতে হবে তা ভাবিনি। যাই হোক ব্যথাতুর মনেই আইবিএ ভবনে ঢুকলাম। না, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে পাকিস্তানি কোন সৈন্য দেখতে পেলাম না; তবে এক সহকর্মীর মুখে শুনলাম রোকেয়া হলের পাশে সৈন্যদের একটি ক্যাম্প রয়েছে। সহকর্মীদের সবারই খুব মন খারাপ, সবার মনেই ভয়। আমাকে আমার জন্য নির্ধারিত কামরা দেখিয়ে দেয়া হোল। তিনটে সাড়ে-তিনটে নাগাদ বাসায় ফিরে এলাম। পরদিন খবরের কাগজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেল যে প্রবীণ এবং বিশিষ্ট শিক্ষকদের প্রায় সকলেই কাজে যোগ দিয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে কয়েকজন শিক্ষকের নামও প্রকাশ করা হয়েছে। আজ আর সেই সব নাম মনে পড়ছে না; তবে সে তালিকায় আইবিএর কোন শিক্ষকের নাম ছিল না।

আমি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম না সে জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকজন দেশবরেণ্য অধ্যাপক ছাড়া তেমন কাউকে চিনতাম না। তবে সবসময় দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা ঢাকা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য আমার মনে বরাবরই একটা শ্রদ্ধার আসন ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবরুদ্ধ পূর্ব বাংলায় এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে তাদের অনেকের আচরণ আমাকে মানসিকভাবে প্রচন্ডভাবে আলোড়িত এবং ক্ষুব্ধ করে। একাত্তরের ২৫শে মার্চের মধ্যরাতে যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা গণহত্যা শুরু করে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ঢাকা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি জনাব আবু সাইদ চৌধুরী “জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্মেলনে” যোগ দিতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে ছিলেন। ২৫ শে মার্চের গণহত্যা পরবর্তী দিনগুলোতে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টির কাজে আত্মনিয়োগ করার পর পাকিস্তান সামরিক জান্তা সে সময়কার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উগ্র ইসলামপন্থী ইংরেজির অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে বসায়। শোনা যায় টিক্কা বাহিনী নাকি নিশ্ছিদ্র সামরিক কনভয়ের নিরাপত্তায় তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।

সাজ্জাদ হোসেনকে আমরা বজ্জাত হোসেন নামে ডাকতাম। কিছুদিনের মধ্যেই অবরুদ্ধ পূর্ববাংলার সকল মানুষের কাছে এই লোকটির বেশ ক’জন দোসর এবং সহযোগীর পরিচয় প্রকাশিত হোল। অবাক বিস্ময়ে দেশের মানুষ দেখলো শিক্ষক পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কদর্য মুখাবয়ব। এরা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের দোসর। এদের কাজ ছিল রেডিও- টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের গতিবিধি এবং আচার-আচরণের নজরদারী করা এবং সে সব আচরণ পাকিস্তানি ‘তাহজীব, তমদ্দুন’ বা ধ্যান-ধারণার অনুকূল না হলে তাদেরকে মিলিটারিদের হাতে ধরিয়ে দেয়া। ৫০ বছর পর এদের সকলের কথা মনে নেই; দেশ-দেশান্তরে ঘুরে-বেড়ানোর সুবাদে এখানে-সেখানে লিখে রাখা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতি-সম্বলিত কাগজ-পত্রও আজ হারিয়ে গেছে। কিন্তু কিছু মানুষের কথা আমৃত্যু আমার মনে থাকবে। প্রতিদিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে যাবার আগে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম কোনক্রমেই যেন এদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ না হয়।

বাসায় উঠে আসার দু’একদিনের মধ্যেই বাবা-মা’এর খবর নিতে নারায়ণগঞ্জে গেলাম। বাড়িটা অস্বাভাবিক রকমের চুপচাপ। বাড়ির সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্যা, আমার ছোটবোন, ছ’বছর বয়সী লিপিও খুব মন খারাপ করে বসে আছে। মাকে প্রশ্ন করতেই জানা গেল ব্যাপার গুরুতর; আমাদের একমাত্র ছোট ভাই, সদ্য এইচ এস সি পাশ করা, আব্দুর রহিম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ইন্ডিয়া চলে গেছে! সে একাই যায় নি, তার সাথে আমার খালাতো ভাই মাসুদ, তাদের বন্ধু সামসু, গিয়াসুদ্দিন, বিজয় এবং আরো অনেকে রয়েছে। এ এমন খবর যা কাউকে বলা যায় না। বাবার মন ভীষণ খারাপ, কিন্তু মা’য়ের কণ্ঠে এক আশ্চর্য দৃঢ়তা এবং প্রত্যয়। মা’র বক্তব্য হচ্ছে ‘আমরা, মায়েরা যদি আমাদের ছেলেদের যুদ্ধে যেতে না দিই তবে মুক্তিযোদ্ধা আসবে কোত্থেকে? যুদ্ধ করবে কারা?’ মা জানালেন সবাইকে বলা হয়েছে রহিম এখন থেকে ঢাকায় আমার বাসায় থাকবে এবং সেখান থেকে ঢাকা কলেজে পড়বে; আমাকে কেউ ওর কথা জিজ্ঞাসা করলে আমিও যেন সে কথাই বলি। ঢাকায় ফেরার সময় মা আমাকে অনুরোধ করলেন আমি যেন আমার ভগ্নীপতির ভাগনে সহিদকে আমার ঢাকার বাসায় থাকতে দিই। সহিদ আইবিএ তে টেকনিশিয়ান; চাকুরীর জন্য বেচারাকে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা আসতে হয়। আমি রাজি হলাম, বাসায় দ্বিতীয় একজন পুরুষ মানুষ থাকলে একটু সাহস বাড়ে। ঠিক হলো দু’একদিনের মধ্যেই ও চলে আসবে।

জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিকে, সম্ভবতঃ ৭ ই জুন, পাকিস্তান সরকার ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করে। আমার অবশ্য তাতে কোন সমস্যা হয়নি, কারণ আমার কাছে সে সব নোট ছিলনা; তবে আমার বাড়িওয়ালার কাছে কিছু বড় নোট থাকায় তাকে নিয়ে ব্যাংকে যেতে হোল এবং টাকা জমা দেবার জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হোল। এ ব্যাপারটা মানুষকে প্রচণ্ড ভয় পাইয়ে দিল। ৮ই জুনের চরমপত্রের মাধ্যমে জানা গেল যে মুক্তিবাহিনী নাকি জয়বাংলা সিল দিয়ে পাকিস্তানি ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলে চালু করেছে।

মে মাসের শেষ সপ্তাহের শুরুতে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র আবার চালু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতি রাত্রেই মুক্তিবাহিনীর হাতে দেশের কোন না কোন এলাকা হানাদার বাহিনী মুক্ত হবার খবর থাকতো। সে সব খবরে ভালোলাগা এবং আশার আলো থাকলেও কিছুটা সন্দেহ ও মিশে থাকত – কারণ অনেক সময়ই মুক্ত এলাকা আবার পাকিস্তানী সৈন্যরা দখল করে নিত। মুক্তিযুদ্ধ এবং এর সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে দেশের বহু লোক নৈরাশ্যবাদী হয়ে ওঠেন। নিকট অতীতে (১৯৬৫ – ১৯৬৮) প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটামুটি পরিচিত প্রগতিশীল ছাত্রনেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য যোগ দেওয়া নবীন শিক্ষক – এই দু’টো পরিচয়ই পাকিস্তানি দালালদের অবাঞ্ছিত লোকদের তালিকায় আমার অন্তর্ভুক্তির কারণ হিসেবে যথেষ্ট ছিল বলে আমি খুব বিশ্বাসী মানুষ না হলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন কথা বলতাম না। তবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মেলামেশা থাকায় আমার মনে হয়েছে যে ১৯৪৭ এর পাকিস্তান আন্দোলনের প্রত্যক্ষদর্শী বা সে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী চল্লিশোর্ধ অনেকের মধ্যেই একটা সন্দেহ ছিল যে এই ’২৫ শে মার্চের গণ্ডগোল’ (অনেকের কাছে এটাই ছিল অপারেশন সার্চলাইটের প্রচলিত নাম) হয়তো বা পাকিস্তান ভাঙ্গার ভারতীয় ষড়যন্ত্র। হ্যাঁ, তারা জানতেন যে দেশের শহর, বন্দর, এবং গ্রাম-গঞ্জ থেকে সমাজের সর্বশ্রেণীর অনেক তরুণ এবং যুবক মুক্তিযুদ্ধে যাবার নাম করে পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ভারতবর্ষে চলে যাচ্ছে; কিন্তু তাদের প্রশ্ন ছিল তারা কবে ঢাকায় অভিযান চালাবে?

আমার যতটুকু মনে পড়ে, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে সন্দেহ-বাদীরা তাদের প্রশ্নের যুতসই জবাব পেলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষুদ্র একটি দল অবরুদ্ধ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক দুঃসাহসী গেরিলা অভিযান চালালেন। সে সময় ঢাকায় অবস্থানকারী বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল বাইরে কোথাও থেকে হোটেলে ফিরেছিলেন। তারা কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা ভেদ করে এমন দুর্ধর্ষ অভিযান সম্ভব। এই অপারেশনটি সামরিক প্রশাসনকে হতভম্ব করে দেয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাড়া জাগায়। এই আক্রমণের মাধ্যমে ক্র্যাক প্লাটুন নামক এক প্রচণ্ড দুঃসাহসী গেরিলা বাহিনী আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং আকাশবাণী ছাড়াও বিবিসি এবং ভয়েস অফ আমেরিকা থেকে ঘটনাটি প্রচারিত হয়ে পাকিস্তান সরকারের গোয়েবলসিয় দাবী ‘পূর্ব পাকিস্তানের সব কিছু স্বাভাবিক’ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রমাণিত করে। এর অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির খুব কাছে অবস্থিত বিমান বাহিনীর রিক্রুটিং কেন্দ্রের কাছেও একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। জুলাই মাসের প্রথম দিকে ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কের মোড়ে একটি টহল পুলিশের গাড়ির ওপর গেরিলাদের গ্রেনেড আক্রমণে কয়েকজন পুলিশ হতাহত হয়। জুলাই মাসে মাঝামাঝি সময়ে, একদিন বিকেলে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল মহানগরীর জিন্নাহ অ্যাভিনিউ (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) এলাকায় অবস্থিত গ্যানিজ এবং ভোগ নামের দুই অভিজাত দোকানে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে ক্র্যাক প্লাটুন এক দুঃসাহসিক গেরিলা অভিযান পরিচালনা করে সামরিক বাহিনীর দখলে থাকা রাজধানী ঢাকার উলুন পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফরমার উড়িয়ে দেয় এবং খিলগাঁও পাওয়ার সাব-স্টেশন এবং গুলবাগ পাওয়ার স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রদেশের রাজধানী ঢাকায় পরপর ঘটে যাওয়া এই গরিলা আক্রমণগুলো টিক্কা-বাহিনীকে পাগলা কুকুরের মত ক্ষিপ্ত করে তোলে এবং তাদের নৃশংসতা আরো বহুগুণ বেড়ে যায়।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে এপ্রিল মাসের শেষদিকে ইসলামী ছাত্র সংঘ আলবদর নামে একটি বাহিনী গঠন করে। মে মাসের শুরুতে খুলনা শহরে স্বাধীনতা-বিরোধী বাঙ্গালী এবং উর্দুভাষী অবাঙ্গালীদের নিয়ে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা রাজাকার বাহিনী নামে একটি দুর্বৃত্ত দল গঠন করে। জুলাই মাসের মধ্যে টিক্কা খান অনেক চোর, ডাকাত, সমাজবিরোধী এবং আনসার বাহিনীকে এই দুর্বৃত্ত দলের অন্তর্ভুক্ত করে এর কলেবর বাড়ায়। আরো পরে আল শামস নামে আরো একটি খুনে বাহিনী গঠন করা হয়। এই বাহিনীগুলির কাজ ছিল সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা, এবং সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক গণহত্যার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। এদের নিষ্ঠুরতা ছিল সীমাহীন।

সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী আগস্ট মাসের ২ তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু প্রথম দিনে ক্লাসে মুষ্টিমেয় অবাঙ্গালী ছাত্র ছাড়া কোন বাঙ্গালী ছাত্রের উপস্থিতির কথা আমি মনে করতে পারছি না। আমি নূতন শিক্ষক, তখনো কি পড়াবো তা ঠিক করা হয়নি বলে কোন ক্লাসে যেতে হল না। ফলে নিজের অফিস কক্ষে বসেই সময়টা কাটানো বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হল। আইবিএর পাশের কলা ভবন থেকে আরবি, উর্দু, এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পাকিস্তানী বাহিনীর দোসর বলে পরিচিত দু’য়েক জন শিক্ষক মাঝে মাঝে আই বি এ ভবনে এসে কথা বলতে চাইতেন, কিন্তু আমি বরাবর তাদেরকে এড়িয়ে গিয়েছি। ধীরে ধীরে কিছু কিছু পাকিস্তানপন্থী ছাত্র এবং অত্যন্ত নিরীহ-দর্শন গেরিলা যোদ্ধারা ক্লাসে আসতে শুরু করার ফলে ছাত্র-উপস্থিতি সামান্য বাড়ে। তবে প্রায় প্রতিদিনই কলাভবনে গ্রেনেড ফাটতো; ক্লাসে যোগদানকারী মুক্তিযোদ্ধা ছাত্ররা গ্রেনেড ফাটিয়েই ক্লাসে ঢুকে যেত বলে তাদেরকে ধরা সম্ভব হত না। ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে আনার জন্য রাজাকার এবং তাদের অন্যান্য সহযোগীদের ঢাকার রাস্তায় নামায়। এই বিশ্বাসঘাতকদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আকস্মিকভাবে ঢাকায় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। কয়েকটি গোপন গেরিলা আস্তানা ও বাড়িতে হানা দিয়ে পাকবাহিনী গেরিলাসহ তাঁদের কয়েকজন সহায়তাকারীকে আটক করে। ধানমণ্ডির এক বাসা থেকে পাক হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলমকে ধরে নিয়ে যায়। আগস্ট মাসের...

...শেষ তিন দিনের মধ্যে একে একে ধরা পড়ে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য শাফী ইমাম রুমী, আবুল বারক আলভী, সুরকার আলতাফ মাহমুদ ও আরো অনেকে যাদের নাম এখন মনে পড়ছে না। পরবর্তীতে তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়।

জুলাই মাসের প্রথম দিকে মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দরে offload হয়ে যাওয়া আমার ডাটসুন গাড়িটি হাতে পেলাম। আমি তখন গাড়ি চালাতে জানতাম না বলে জিন্নাত আলী নামে একজন ড্রাইভারকে নিয়োগ দিই। জিন্নাত আলী অত্যন্ত সাহসী এবং বিশ্বাসী মানুষ ছিল। একদিন আইবিএ তে আমার অফিসে বসে কাজ করার সময় আমাদের পিয়ন জবেদ আলী আমাকে একটা চিঠি এনে দিয়ে বলল ‘স্যার, এ চিঠিটা আপনার বংশালের খালার বাসা থেকে দিয়ে গেছে, বলে গেছে জরুরী’। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব সন্দেহজনক মনে হল। যাই হোক, চিঠিটা খুলে পড়লাম – আমাকে তার পরদিন সন্ধ্যের সময় ডেমরা ঘাট থেকে ‘ভাই’কে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে, আরো বলা হয়েছে না আনতে পারলে বিপদ হতে পারে। এই ‘ভাই’টা যে কে, তা বুঝলাম না’ তবে হাতের লেখাটা আমার পরিচিত। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলল এটা মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি; আমার যেহেতু গাড়ি আছে তারা তাদের কোন সহযোগীকে ঢাকায় আনার ব্যাপারে আমার সাহায্য চাইছে। পরদিন সন্ধ্যে বেলায় খুব সাহস এবং অনেক কায়দা করে আমি এবং জিন্নাত আলী সেই অচেনা ভাইকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। সে নিতান্ত গ্রাম্য ভাইটির এক হাতে গামছা দিয়ে বাঁধা ক’টি মাটির হাড়িতে চিতই, পুলি এবং পাটি-সাপটা পিঠা ছিল; আরেক হাতে ছিল একটা টাটকা সবজি ভর্তি চটের ব্যাগ। ঘাটের সেনা প্রহরী তার মালপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করে তাকে ছেড়ে দিল। সারাটা পথ সে আমাদের সাথে কোন কথা বলেনি; শুধু একবার আমি সিগারেট ধরানোর চেষ্টা করার সময় সে বলেছিল তাকে নামিয়ে দেবার আগ পর্যন্ত যেন দেশলাই না জ্বালাই। ছেলেটিকে আমরা পরীবাগের কাছে নামিয়ে দিয়েছিলাম - আর সে রাতে পরীবাগের খুব কাছেই, ইস্কাটনের নেভী রিক্রুটমেন্ট কেন্দ্রে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে।

সেপ্টেম্বর থেকে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি দ্রুত পাল্টাতে থাকে। ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধ আর দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বিপর্যস্ত পাকিস্তান বাহিনী আরো নৃশংস এবং হিংস্র হয়ে ওঠে। মাও সে তুং একবার বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা হল মাছ আর সাধারণ জনগণ হল পানি।’ পানি ছাড়া মাছ বাঁচতে পারে না। দেশের মুষ্টিমেয় পাকিস্তানী দালাল ছাড়া আপামর জনসাধারণ নিজেদেরকে পানি বানিয়ে গেরিলা যোদ্ধাদের মাছের মতো আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং সহায়তা করেছিলেন বলেই পাকিস্তানী হানাদারদের এই ধর-পাকড় এবং নৃশংসতা। রাজাকারদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে অসংখ্য কিশোর-তরুণ এবং যুবকদের ধর-পাকড় শুরু হয়। তাদের বেশীর ভাগ আর কখনো তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসেনি। সে সময় একটা গুজব ওঠে যে এইসব কিশোর-তরুণ-এবং যুবকদের শরীর থেকে সিরিঞ্জ দিয়ে সব রক্ত বের করে নিয়ে তা যুদ্ধে আহত পাকিস্তানী সৈন্যদের বাঁচিয়ে তোলার কাজে ব্যবহার করা হত। আমার তখন পঁচিশ বছর বয়স, কাজেই সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম কখন আবার ধরে নিয়ে যায়।

অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা পূর্বপাকিস্তানের প্রাক্তন গভর্নর মোনায়েম খানের বনানীর বাড়িতে আক্রমণ করে তাকে গুলিবিদ্ধ করে পালিয়ে যায়। ভোর রাতে এই পাকিস্তানী দালাল হাসপাতালে মারা যায়। এই ঘটনার পর ঢাকায় পাকিস্তানী সৈন্যদের তৎপরতা মারাত্মক রকম বেড়ে যায়। এই সময়ে একদিন গভীর রাতে আমাদের বাড়িতে সৈন্যরা এলো; তাদের ধারণা, আমাদের বাসায় ‘মুকুত’ আছে এবং তারা বাসা সার্চ করবে। কাজেই তাদেরকে বাসায় ঢুকতে দিতে হল। তারা বাসার একতলার দুই অংশ, দোতলার পুরোটা এবং ছাদ তন্নতন্ন করে পরীক্ষা করে চলে গেল। তবে যাবার আগে আমাদেরকে বলে গেলো যদি আমাদের বাসায় আশ্রয় নিতে আসে, তবে যেন সেনাবাহিনীকে খবর দেই। সৈন্যদের বিদায় করে বাসায় ঢোকার ঠিক আগে ছাদ থেকে দু’জন তরুণ বের হয়ে এলো। হ্যাঁ, তারা মুক্তিযোদ্ধা, বাড়ির ছাদে লুকিয়ে ছিল; তারা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। তাদেরকে বাসায় এনে খাবার দিলাম। বাড়িওয়ালা তার বাসার একটি কামরায় তাদের শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। তবে ভোর বেলা ফজর নামাজের সময় উঠে দেখেন ওরা কখন যেন চলে গেছে। আমি আজো ভেবে পাই না ছাদে ওরা কোথায় লুকিয়ে ছিল। সে সময় বাড়িওয়ালার পানির ট্যাঙ্ক বদলানো হচ্ছিল বলে ছাদে দু’টো খালি এবং দু’টো পানি ভর্তি ট্যাঙ্ক এবং বেশ কিছু বাঁশ, কাঠ, বালি, কংক্রিট, ইট পড়ে ছিল; কিন্তু দু’জন মানুষকে আড়াল করার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। ওরা এমন ভাবে লুকিয়েছিল যে সৈন্যরা টর্চ জ্বালিয়েও ওদের দেখতে পায় নি।

অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে রোজা শুরু হল; কিন্তু রোজা বলে ধর-পাকড় থামলো না। মানুষ রোজা রাখে কিন্তু মসজিদে গিয়ে তারাবী নামাজ পড়তে ভয় পায়। শবে কদরের আগের দিন, অর্থাৎ ২৬ রোজার দিন আসর নামাজের পর আমাদের এলেফেন্ট রোড এলাকায় মাইকে ঘোষণা করা হলো যেন পরদিন সকালে বারো বছরের বেশি বয়সী সব পুরুষ যেন যার যার গলির মুখে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। যাদের বন্দুক, পিস্তল, রাইফেল, রিভলভার জাতীয় অস্ত্র আছে তাদেরকে লাইসেন্সসহ রাস্তায় আসতে বলা হোল। এ ঘোষণা শেষ হবার সংগে সংগেই ভাগনে শহিদ আমাকে জানালো বাসায় বারুদ এবং রিভলভার আছে এবং সেগুলো নাকি ‘ছোট মামার” মানে আমার ছোটভাই রহিমের! ভয় হোল কাল যদি সৈন্যরা বাসা সার্চ করতে আসে, তা’হলে ভয়ানক বিপদ হতে পারে। সন্ধ্যার অন্ধকার একটু গাঢ় হওয়ার পর বাসার সবগুলো বিপদজনক জিনিষকে প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে বাসার পাশের কাঁচা ড্রেনের ভিতর প্রায় দেড়-দু ফুট গর্ত করে রেখে দেয়া হোল। সেই দিনই ভোররাতে, সেহরির পর মাইকিং করে আমাদের এলাকায় কারফিউ দেয়া হোল। ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে মনে হোল, কারফিউ হলে বড় রাস্তায় মানুষ যাবে কিভাবে? সকাল বেলায় দেখা গেল কারফিউর মধ্যেই সবাই যাচ্ছে। আমাদের বাড়ীওয়ালা চোখে খুব কম দেখেন; তার উপর উনার একটা জং ধরা গাদা-বন্দুক আছে। একহাতে তাকে ধরে আরেক হাতে তার বন্দুক নিয়ে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। সে এলাকায় আমরা বেশ ক’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকতাম; আমি ছাড়াও ছিলেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার, শামিম উজ্জামান বসুনিয়া, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাব্বত খান। প্রায় সাড়ে ন’টার দিকে আজিমপুর এলাকার শান্তিবাহিনীর সদস্য হাজী কাশেমকে সাথে নিয়ে একটি আর্মি জীপে একজন অফিসার এসে আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলো। হাজি কাশেম আমার ফুপু শ্বাশুরীর পড়শি হবার সুবাদে আমাকে খুব ভালো চেনেন। আমি যে মাত্র ক’দিন আগেই আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছি এবং আওয়ামী লীগ বা দেশে ঘটমান নাশকতার সঙ্গে যে আমার কোন সম্পর্কই নেই এটা তিনি অফিসারটিকে বোঝাতে সক্ষম হলেন। অফিসারটি আমার সাথে উর্দুতে কথা বলতে শুরু করলে আমিও মোটামুটিভাবে উর্দুতেই তার জবাব দিলাম। তাতে বেশ কাজ হোল, অফিসারটি আমাকে বাসায় চলে যেতে বললো। কিন্তু আমি অন্য শিক্ষকদের ছেড়ে যেতে চাইলাম না, বরং তাদের হয়ে সুপারিশ করার চেষ্টা করলাম। কি ভেবে অফিসারটি আমদের সবাইকে বাসায় ফিরে যাবার অনুমতি দিয়ে তার দলবল নিয়ে সামনে এগিয়ে গেল।

দু’দিন পরেই ঈদ; ইচ্ছা ছিল নারায়ণগঞ্জ গিয়ে বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করবো। কিন্তু ঢাকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে সে পরিকল্পনা বাদ দিতে হোল। সহিদ অবশ্য বাড়ি চলে গেল; আমরা সবাই আজিমপুর নাসিমের ফুপু আম্মার বাসায় গিয়ে জীবনের সবচেয়ে নিরানন্দ ঈদ উদযাপন করলাম।

নভেম্বর মাসের শেষ দিকে থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্মুখযুদ্ধে পরিণত হয়েছিল। ৩রা ডিসেম্বর দুপুরের একটু পরেই ঢাকার আকাশে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়। এলেফেন্ট রোডে অবস্থিত ‘ভোজ্য তেল কলের সামনে প্রচণ্ড শব্দে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়ে বিরাট গর্ত হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর দিক থেকে ভারতীয় যুদ্ধ বিমান লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছুড়তে দেখা যায়। উপর্যুপরি বিমান হামলা ও বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ৬ ডিসেম্বর প্রথমে ভুটান এবং পরে ভারত স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার ফলে মুক্তিযুদ্ধ নতুন মাত্রা পায়।

১৪ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত অব্যাহত ভারতীয় আক্রমণের ফলে পাকিস্তানী সেনাপতি নিয়াজী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। আকাশবাণী থেকে এবং ভারতীয় বিমান থেকে হ্যান্ডবিল ছড়িয়ে পাক-বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহবান জানানো হয়; যুদ্ধ থেমে যায়। তখন জানা যায় যে ১০ তারিখ রাত থেকে আলবদর এবং আল শামস বাহিনী দেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং চিকিৎসকসহ বিভিন্ন স্তরের বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে তুলে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে যায় এবং অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় তাদের হত্যা করে। মনে পড়লো ১০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে কে বা কারা আমাদের এবং আমাদের পড়শি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বাসার দরজার কড়া নেড়ে আমাদেরকে বাইরে আসতে বলে; কিন্তু আমরা কেউ সে ডাকে সাড়া দিই নি। সম্ভবতঃ সে কারণেই আমরা বেঁচে যাই। সেদিন দুপুরের দিকে আমি ছোটবোন বুলবুলকে সাথে নিয়ে রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে গিয়ে এই নৃশংস দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যাই। ফেরার পথে মোহাম্মদপুরে অবস্থিত আলবদর বাহিনীর অফিসের সামনে মানুষের ভিড় দেখে আমরাও কৌতূহলী হয়ে নেমে আসি – সবাই বিস্ময়ে বিস্ফারিত চোখে যা দেখছে তা হচ্ছে এক বস্তা মানুষের চোখ যা আলবদর বাহিনী মানুষ হত্যা করার আগে উপড়ে নিতো!

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায় ঢাকায় রমনা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য সহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে নয় মাস দীর্ঘ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলো। আমার প্রায় দু’বছর বয়সী মেয়ে সোনিয়াকে কাঁধে নিয়ে অসংখ্য হর্ষোৎফুল্ল জনতার সাথে মিশে আনন্দাশ্রু ভেজা দুই চোখে আমি আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা – স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় - দেখতে পেলাম। (সমাপ্ত)




মোহাম্মদ আবদুর রাযযাক, সিডনি





Share on Facebook               Home Page             Published on: 15-Dec-2021

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot