আমার স্বপ্ন এবং আপনাদের সহযোগিতা! রাওয়ান সায়েমা
বিশ্বের যত ফিল্ম স্কুল আছে তার টপ র্যাং কিংয়ে থাকে AFI — অ্যামেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট। প্রতিযোগিতার নমুনা এমন: মাত্র ১ শতাংশেরও কম আবেদনপত্র অ্যাকসেপ্টেড হয় সেখানে। এবং জানা মতে, AFI গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি নেই।
AFI-এর সবচেয়ে আলোচিত ডিসিপ্লিন — সিনেমাটোগ্রাফি। সেখানেই আবেদন করেছিলাম। ফলাফল: ২০ হাজার ডলারের স্কলারশিপসহ পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেছি। কিন্তু বাকি টাকা যোগাড় হবে না, তাই চুপসে ছিলাম।
ছোটবেলার পাগলামি ছিল বই পড়া, বড় হয়ে কখন যে তা হয়ে গেছে সিনেমা, কে জানে। সেই আগ্রহে ২০১১-তে লোকাল ফিল্ম স্কুলে ভর্তি হই। পড়াশোনায় ভালো করায় আর লেখালেখির আগ্রহ থাকায় সবসময়ই চেয়েছিলাম সিনেমার টেকনিক্যাল দিকটা আয়ত্ব করতে। সেই সূত্রে সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং, সাউন্ড ডিজাইনসহ সিনেমার বিভিন্ন সেক্টরে কাজ শুরু করলেও পরে শুধু সিনেমাটোগ্রাফিকেই বেছে নিই।
প্রতিক্রিয়া আপনারা জানেন। মেয়ে সিনেমাটোগ্রাফার! আমাকে কাজে নিতে তাই দ্বিধার মুখোমুখি হয়েছেন অচেনা পরিচালক থেকে চেনা বন্ধুও। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। না থেমে লেগেছিলাম গত দশ বছর। সিনেমাটোগ্রাফির কাজ করেছি বিশটির বেশি ফিকশন প্রজেক্টে। বলা দরকার, তার ৮০ শতাংশই করেছি পয়সা ছাড়া। কাজের নমুনার দেখতে চাইলে পোর্টফোলিওতে লিংক পাবেন। ডকুমেন্টারি ভিডিওতে সিনেমাটোগ্রাফি করেছি অগুনতি।
দুঃখজনক, দেশে ফিকশন-ধর্মী সিনেমায় সহযোদ্ধা হিসাবে পাশে আর কোনো এসটাবলিশড নারী সিনেমাটোগ্রাফার পাইনি এখন পর্যন্ত। মেয়ে যারা সিনেমাটোগ্রাফি শুরুও করেছিলো পরে ডিরেকশন বা অন্য সেক্টরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। কাজ পাইনি দেখে আমাকেও ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছু করতে হয়েছে। ফিকশন ফিল্মের সিনেমাটোগ্রাফি না করতে পারার ফ্রাস্ট্রেশন থেকেই গতবছর চারটা ফিল্ম স্কুলে অ্যাপ্লাই করি। সবগুলোতেই সুযোগ পাই ঘটনাক্রমে: এক নম্বরে থাকা AFI, চার নম্বরে থাকা Chapman University, বারো নম্বরে থাকা ডিউক ইউনিভার্সিটি ও ছত্রিশ নম্বরে থাকা সান ফ্রান্সিসকো ষ্টেট ইউনিভার্সিটি। আমি বেছে নিয়েছি AFI কে।
AFI তাদের ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য বরাদ্দ সর্বোচ্চ স্কলারশিপ দিয়েছে আমাকে। পরিমাণে ২০ লাখ টাকা। তারপরও প্রায় ৯৮ লাখ টাকা দরকার দুই বছরে। মানে, প্রতি ছয় মাসে লাগবে ২৪ লাখের মতো। তাই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম গত দুই মাস। হঠাৎ মনে হলো শেষ আরেকটা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। যেমন —
১. সুদ ছাড়া ঋণ দিতে পারেন — মেয়াদটা পাঁচ বছরের হলে সুবিধা হয়। পড়াশোনা শেষে তৃতীয় বছর থেকে ঋণ শোধ করা শুরু করতে পারবো। AFI থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষে সিনেমাটোগ্রাফির কাজ করে দৈনিক ১৫০০-২৫০০ ডলার ইনকাম করা সম্ভব। জমা রাখতে পারি, কাজ করে ঠিক সময়ে ঋণ শোধ করার আত্মবিশ্বাস।
২. সাধ্য মতো ডোনেট করতে পারেন — আবদারটা সেইসব শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে, যারা বিশ্বাস করেন সিনেমাটোগ্রাফি খালি Men's Job না, দেশের নারীদেরও আসা দরকার। AFI হচ্ছে আমার শেষ প্রচেষ্টা, সিনেমাটোগ্রাফিতেই নিজের ক্যারিয়ার পাকাপোক্ত করার।
৩. কাজের স্বত্ব কিনে নিতে পারেন — আমার নয় পর্বের ওয়েব সিরিজ “ন-বর্গীয় আবেগ”, তিনটা বিদেশী ল্যাবে অংশ নেয়া “সাব-ওয়ে” ফিচার ফিল্মের স্ক্রিপ্ট, সদ্য সরকারি অনুদান পাওয়া শর্ট ফিল্ম “দ্যা লেডি ল্যান্ড”, জডোরোস্কির সব সিনেমার সাইকো-বিশ্লেষণ করে লেখা প্রায় ৮০ পাতার থিসিস (বই আকারে প্রকাশযোগ্য) — টাকা দিয়ে কিনে নিন। AFI-তে তবু পড়ার সুযোগ দিন।
৪. স্টাডি লোন ম্যানেজ করে দিতে পারেন — অনেক বিদেশি ব্যাংক ১০ থেকে ২০ বছরের মেয়াদী স্টুডেন্ট লোন দেয়। আমেরিকাতেও দেয়। দরকার একজন কো-সাইনার। কো-সাইনার এর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।
৫. প্রি-হায়ার করতে পারেন — AFI থেকে বের হলে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের কাজ করতে সক্ষম হবো। বর্তমান কাজ দেখে, ইন্ডাস্ট্রিতে খোঁজ নিয়ে, আমাকে আপনার ভবিষ্যতের সিনেমা প্রজেক্টে প্রি-হায়ার করতে পারেন। মানে কন্ট্রাক্ট করবেন, পে করবেন এখন — ২ বছর পরে কাজ শুরু করবো। যারা আমাকে চেনেন, তারা জানেন: কারো কাছ থেকে এক টাকাও কখনো ধার করিনি। কেউ ট্রিট দিলে তার বেশি ট্রিট দেয়ার চেষ্টা করেছি। এইসব মধ্যবিত্ত মানসিকতা ভেঙে যখন এই পোস্ট লিখেই ফেলেছি, তার মানে মন থেকে চাইছি আমি!
যাই হোক, ৫০০০ মানুষও যদি আমাকে ২০০০ টাকা করে ডোনেট করেন, AFI এর টিউশন ফি জোগাড় হয়ে যাবে। লিভিং ও হেলথ খরচ অলরেডি আছে। আমার পারসোনাল বিকাশ ও নগদ নাম্বার: 01785594922 অবশ্যই আপনার নাম লিখবেন, যাতে কমেন্টে আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি এবং পরে কোনো না কোনো ভাবে এই ঋণ শোধ দিতে পারি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলে বলবেন, লিখবো না।
এর বেশি টাকা ডোনেট করতে চাইলে ব্যাংকে পাঠান:
Account # 1501103821309001 (Savings) BRAC Bank, Gulshan-1 Branch House 50, Road 03, Gulshan-1, Dhaka 1212 SWIFT Code: BRAKBDDH Routing # 060261726 Bank code: 060
অথবা এই লিঙ্ক থেকেও ডোনেট করতে পারেনঃ
কথা হচ্ছে, কেন ডোনেট করবেন? আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, যেহেতু জীবনে সিনেমা বানানো বা সিনেমায় কাজ করা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই বর্তমানে; এবং গত ১৩/১৪ বছরে সবকিছুর কেন্দ্রে এই সিনেমা — এখানে এসে থিতু হয়েছি আমি, আমার জীবন। এবং আত্মবিশ্বাসী যে বিশ্বমানের কাজ করবো, দেশের ভালো সিনেমা নির্মাণে কোনো না কোনো ভাবে আমার কাজ দিয়ে সমৃদ্ধ হবে। পাশাপাশি, AFI এমন একটা স্কুল, আমার সহপাঠীরা চান্স পাওয়ার পর যে জুম মিটিং হয়েছে সেদিনই একটা গ্রুপ খুলে ফেলেছে, বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা অলরেডি এতো রিসোর্স গত ২/৩ মাসে সেই গ্রুপে শেয়ার করেছে এবং আলোচনা করেছে, না জানি দুই বছরের এই Conservatory থেকে বের হলে আরো কত কিছু শিখতে পারবো; দেশের তরুণদের শেখাতে পারবো।
AFI তে ডিফার করা যায় না, পরবর্তীতে এপ্লাই করলে চান্স পাওয়ার কোন গ্যারান্টি নেই। জীবনের একটা সময় হয়তো এই কোটি টাকা কিছুই মনে হবে না কিন্তু এই রকম একটা সুযোগ মানুষের জীবনে একবারই আসে। জানিনা এইসব লেখালেখি বা পোস্ট বোকামি হচ্ছে কিনা, রাজশাহীর সহজ সরল বোকাসোকা মানুষ আমি, তাই হয়তো চাঁদ ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন দেখছি। সফল হবো কিনা জানি না, কিন্তু আপনারা সাহায্যে করলে সফল হবো ফর শিওর। আর্থিকভাবে সাপোর্ট না করতে পারলে সাহায্য-সমর্থন জানাতে পোষ্টটি শেয়ার করতে পারেন।
সবশেষে এত বড় পোস্ট পড়ার জন্য ও আপনাদের সহযোগিতার জন্য এক আকাশ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রইলো।
রাওয়ান সায়েমা, সিনেমাটোগ্রাফার, ঢাকা, বাংলাদেশ Facebook ID: Rawyan Shayema (রাওয়ান) |