বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস ২০১৪ উদযাপিত
রতন কুন্ডুঃ গত ১০ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়া, সিডনীর গ্লেনফিল্ড কমিউনিটি হলে আয়োজন করে বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস ২০১৪। বাঙালী জাতির ইতিহাসে আগস্ট হলো শোকের মাস। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু তরুণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক চক্রান্তে শামিল হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রতিবছর এই দিনটিকে অত্যন্ত ভাব গম্ভীর পরিবেশে পালন করে আসছে। এবারের শোক দিবসের আয়োজন ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। শোকসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীতশিল্পী ও শব্দসৈনিক অধ্যাপক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল এম.পি, লরি ফারগুসান। বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ড.খায়রুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিক উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠান সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন শোক দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও প্রাক্তন সভাপতি ডক্টর নিজাম উদ্দিন। আরও বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সভাপতি ডক্টর কাইয়ুম পারভেজ, প্রাক্তন সভাপতি ডক্টর রতন কুন্ডু, বঙ্গবন্ধু কাউন্সিলের সভাপতি শেখ শামীমুল হক, ডঃ রবিউল ইসলাম, বিশেষ অতিথি মিঃ লরি ফারগুসন ও প্রধান অতিথি অধ্যাপক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। ড. কাইয়ুম পারভেজ তার স্মৃতিচারণ মূলক বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা তুলে ধরলে এক আবেগময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তার চোখের পানি আগত শ্রোতা ও দর্শকদের আপ্লুত করে। শেখ শামীমুল হক তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টি ফান্ড গঠন ও তার মাধ্যমে দুস্থ মানবতার সেবায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সমুন্নত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ড. রতন কুন্ডু তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বপ্ন ও বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষিত ও অর্জনকে নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বঙ্গবন্ধু তনয়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জন-নেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন। উন্নয়ন সূচকে উপমহাদেশের মধ্যে ভারতকেও পেছনে ফেলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মানুষের জীবনের ৫টি মৌলিক চাহিদা পূরণ, মিয়ানমার ও ভারতের কবল থেকে দখলকৃত সমুদ্র সম্পত্তি উদ্ধার, পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম উড়াল সেতু, নারীশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অর্জন সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্যে রাখেন। ড. কুন্ডু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আরও শক্তিশালী করার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথি লরি ফারগুসান তার ও তার দলের নিঃশর্ত সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেন এবং ইতিপূর্বে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে মোশন এনে সিদ্ধান্ত নেওয়াতে সক্ষম হয়েছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী অত্যন্ত সাবলীলভাবে একাত্তর এবং পূর্ববর্তী কালে রেডিও পাকিস্তান এর নিয়মিত শিল্পী হিসেবে পাক সরকারের বিরুদ্ধে সংগীত সংগ্রামের ঘটনাবলী তুলে ধরেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তার সহযোগী শিল্পী আপেল মাহমুদ, রথীন্দ্র নাথ রায়, আব্দুল জব্বার ও অন্যান্য শিল্পীদের ভূমিকা বর্ণনা করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাদের সংগীত সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এক্ষেত্রে তিনি শ্রদ্ধাভরে কলিম শরাফীর নিরলস সংগ্রাম ও তার ভূমিকা বর্ণনা করেন। তিনি উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে অনেক গান রচনা করেছিলেন এবং সাংস্কৃতিক পর্বে সেই গান পরিবেশন করে সবাইকে মুগ্ধ করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জনাব রফিক উদ্দিন আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অনেক অজানা তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আজকের আওয়ামী লীগের সফলতা ও ব্যর্থতা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করা যাবেনা। বঙ্গবন্ধুকে খুঁজতে হবে আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে, বঙ্গবন্ধুকে খুঁজতে হবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এবং বিশ্ব দরবারে বাঙালী জাতিকে সন্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করার মধ্যে। বাঙালী জাতির উচিত বঙ্গবন্ধুকে সকল তর্কের ঊর্ধ্বে রেখে দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অবদান ও ভূমিকাকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা।
ড.রতন কুন্ডুর গ্রন্থনা ও উপস্থাপনায় দেশের গান ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা পর্বটি ছিল খুবই উপভোগ্য। এ পর্বে গান পরিবেষণ করেন অভিষেক, ফারিয়া, লামিয়া, রুনু রফিক, নিলুফা ইয়াসমীন, মিজান ও ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। তবলায় সহযোগিতা করেন খন্দকার জাহিদ হোসেন। কবিতা অবৃত্তি করেন শাহীন শাহনেওয়াজ, কাউয়ুম পারভেজ ও কবিতা পারভেজ। ড.কাউয়ুম পারভেজ বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর তার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ থেকে আবৃত্তি করেন। প্রতিবারের মত সবাইকে রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়। সবশেষে সংগঠনের সভাপতি ডক্টর খায়রুল চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং এ শোক সভাটি আয়োজনে যারা বিভিন্নভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
|