bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



(উপন্যাস)

ছায়াসখী - ১ম পর্ব
ড. রতন কুন্ডু



আজ ১২ ই ডিসেম্বর। অস্ট্রেলিয়ার বসন্ত বিদায়, পালা বদলের আকাশে সিঁদুর মেঘ। বৃষ্টি হয় কি হয়না। পেছনের বাগানের গন্ধরাজের অনেকগুলো শুকিয়ে লেপটে আছে ডালার সাথে। জাকারান্ডায় বেগুনী রং ক্রমে ফিকে হয়ে আসছে। বিকেলে পেছনের বাগানের ফুল-দুর্বার বুকে জল ছিটিয়ে দ্বীপ, গার্ডেন চেয়ারে গাটা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করতেই যৌবনেরা স্মৃতির দরোজায় কড়া নাড়ে।

-ঘরে কেউ কি আছেন? দরোজা খুলুন। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখুন আপনার শরীরে গ্রীষ্মকাল হলেও মনে এখনো বসন্ত। আমি একগুচ্ছ রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে এসেছি। আপনার মনের বার্ধক্য ঘুচে যাবে। দয়া করে দরোজাটা খুলুন। নির্লিপ্ত দ্বীপ ইজি চেয়ারে বসে মাথার উপরের আকাশে সিঁদুর রাঙা মেঘ দেখে আর কল্পনার রাজ্যে ভেসে বেড়াতে থাকে।

বাড়ির উঠোন পেড়িয়ে চালতা গাছ ডানে রেখে আরও খানিকটা এগিয়ে গেলে পানের বরজের মাঝখান দিয়ে সরুপথে নামতেই রাস্তাটা দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। সার সার সুপারি গাছ। ডানে সব গাছেরা দিঘীর জলে উল্টো হয়ে দাড়িয়ে আছে। এ এক অপরূপ দৃশ্য। দ্বীপ থমকে দাড়ায়। সামনেই পূর্বপুরুষের সমাধি মন্দির আর কালীখোলা। আরেকটু আগালেই ছনক্ষেত আর শিশু কড়ই গাছ। পাতার সাথে লেপটে আছে সোনাপোকা। দ্বীপ ছনক্ষেতে বসে পরে একটি শিরিস গাছের নীচে। জেলা পরিষদের রাস্তায় আচানক হাসি দ্বীপকে সচকিত করে। পেছনে ফিরলেই দেখতে পায় একটি কিশোরী নীল ফ্রক আর চপ্পল পড়ে ডানে বায়ে দুলছে আর খিলখিল করে হাসছে। দ্বীপ অজানা এক আকর্ষণে মেয়েটির দিকে এগিয়ে যায়।

- তোর নাম কিরে সোনাভান?

-তুমিই তো বলে দিলে। সোনাভান নামটা আমার খুব পছন্দ। তুমিতো জানোই আমার নাম কি! তারপরও প্রতিদিন জিজ্ঞেস করো!

-আমি জানি, তুমি জয় দূর্গা কামেশ্বরী।

- সেটা আবার কি?

- তুমি বুঝবেনা। উনি প্রেমের দেবী।

শিখা আবার খিলখিল করে হেসে ওঠে। হ্যাঁ মেয়েটির নাম শিখা। আর ওর নাম দ্বীপ। আচ্ছা সন্ধি করলে কেমন হয়?

- কেন ভালোই তো হয় দ্বীপশিখা। দ্বীপ মনে মনে ভাবে - ব্যাকরণে শুধু সন্ধি থাকবে কোনো বিচ্ছেদ থাকবেনা।

দ্বীপ সম্বিৎ ফিরে পায়। বাস্তবে ফিরে আসে।

-কইগো, বিকেলতো হয়ে গেল; একটু চা হবে না? দ্বীপ মলির মনোযোগ আকর্ষণ করে।

- চা’র কি হাত-পা আছে যে বাগানে হেটে যাবে? লাউঞ্জে এসো। টেবিলে দেয়া আছে। দ্বীপ আর মলি একসাথে তিরিশ বছর। ছাদ পরিবর্তন হয়েছে। নদী মহাসাগরে এসে মিশেছে কিন্তু তারা একসাথে আছে তিরিশ বছর। সময় বুড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের সন্তানেরাও বিয়ের উপযুক্ত হয়ে গেছে।

রাত এগারোটা বাজতেই মলি এলার্ম ক্লকের বাটন অন করে এসিটা চালু করে দেয়। আজ ক’দিন পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম পরছে। দ্বীপ মনে মনে পরদিনের ছক আঁকে। একটু সকাল সকাল বেরোতে হবে। বেলা উঠে গেলে রাস্তায় গাড়ীর কাফেলা দীর্ঘ হয়। জ্যামে দাড়িয়ে থাকার মত বিরক্তি আর কোন কিছুতেই নেই। কাল ইন্টারস্টেট কনফারেন্সে তাকে র্যা পোর্টিয়ার এর দায়িত্ব পালন করতে হবে। রকস এ ভেনু ঠিক করা হয়েছে। ভেনুতে সীমিত পার্কিং। কেনসিংটন গাড়ী রেখে ট্যাক্সি নিয়ে যেতে হবে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রাত গড়িয়ে যায় কিন্তু কোন কারণে ঘুম আসছেনা। গীর্জায় রাত দুটো বাজার ঢং ঢং শব্দ হল। তারপর অখণ্ড নীরবতা। রাতের নীরবতা ভেঙে হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে ওঠে - আমি শুনেছি সেদিন তুমি.....। দ্বীপ গা করেনা। ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়ায় কাজ পাগলের বাস। এখানকার পাগলেরা কাজ ছাড়া কিছুই বোঝেনা। তাই সপ্তাহ দিনে রাত দশটার পরে কেউ কাউকে ফোন করেনা। নিশ্চয়ই দেশের কল। দীপের ভেতরটা ছ্যাৎ করে ওঠে। কোন দুঃসংবাদ না তো? নিতান্ত দুঃসংবাদ না হলে দেশ থেকেও কেউ ফোন করেনা। মলি অঘোরে ঘুমাচ্ছে। দ্বীপ নিজের অজান্তেই বিছানা ছেড়ে মোবাইল এর দিকে এগিয়ে যায়। ড্রেসিং টেবিল থেকে নিত্য-সাথী চশমাটা নাকের উপর তুলে নিয়ে কলার আই.ডি চেক করে। নাহ কতগুলো নাম্বার এসেছে শুধু। কোন নাম নেই। দ্বীপ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসে। অহেতুক একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বাগানের পারগোলায় তার প্রিয় চেয়ারটিতে গা এলিয়ে দেয়। সিগারেটে হালকা টান দেয় আর ভাবে রিং ব্যাক করবে কিনা!

এর মধ্যে আবার রিং বেজে ওঠে। দ্বীপ তটস্থ হয় ফোন ধরে

-হ্যালো কে বলছেন?

অন্যপ্রান্তে অবাক নীরবতা! দ্বীপ হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে কিন্তু অপরপক্ষ ভীষণ নীরব। দ্বীপ ত্যক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দেয়। ভীষণ বিরক্ত হয়ে ভাবতে থাকে কেউ হয়ত মধ্যরাতে মশকরা করছে অথবা এও হতে পারে অপরপক্ষ সম্বোধনের কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা। কারণ হৃদয় যেখানে ভাবপ্রবণ ভাষা সেখানে মুক। প্রচণ্ড আবেগ কখনো কখনো ভাষাগুলো আটকে দেয়। ভেতরে কথা বলে কিন্তু বাইরে কোন শব্দ হয়না। এর মাঝে ফোনটা আবার বেজে ওঠে। দ্বীপ এবার ফোন ধরেনা, ১০ সেকেন্ড পরে মেসেজ ব্যাংকে চলে যায়। দ্বীপ মেসেজ ব্যাংক ডায়াল করে কোন মেসেজ দিয়েছে কিনা চেক করে। নাহ কোন কথা শোনা যাচ্ছেনা। দ্বীপ ফোনটা মিউট করে বিছানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দরোজার কাছে পৌঁছাতেই ফোনটা নেচে ওঠে, তির তির করে কাঁপতে থাকে আর আলো জ্বলে ওঠে। আবার সেই +৮৮ নম্বর। রিসিভ বাটনটা অন করে কানের কাছে ধরে কিন্তু হ্যালো বলেনা। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা। এবার ওপ্রান্ত থেকে নারীকন্ঠ ভেসে আসে।

-কি ব্যাপার চুপ কেন? কথা বলো! দ্বীপ হতচকিত হয়ে যায়। কথার ধরণে মনে হচ্ছে অনেক কালের পরিচিত কিন্তু গলার স্বরটা মেলাতে পারছেনা।

-কে বলছেন আপনি? এই রাত দুপুরে তামাশা করছেন?

- সরি! কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তুমিই তো আমাদের দিপু দা? দ্বীপ অবাক হয়। শুধু মা ছোটবেলায় তাকে দীপু ডাকত। অন্য কেউ তাকে এ নামে সম্বোধন করেছে মনে পরে না।

-সরি আমি দীপু নই। আমি দ্বীপ। আপনি কে বলছেন? অপর প্রান্তের একটি চাপা হাসি দ্বীপকে অচ্ছন্ন করে।

- আমাকে তুমি চিনবেনা। তাই নাম বলে কি লাভ? ডাকোনা যেকোনো নামে। সাগরিকা, মালবিকা, ললিতা, বিশাখা, মেনকা কিংবা উর্বশী। দ্বীপের তার উপন্যাসের নায়িকার কথা মনে পরে যায়। তার পরিচয় দিতে গিয়ে সে লিখেছিল-

"তাঁর কোন নাম নেই আছে শুধু অবয়ব,
চেতনায় অবিরাম হেটে চলে অনুভব।
তার হাত, তার চোখ, তার মুখ-
তার বলে কিছু নয়,
তার ইচ্ছা তার শেষ শুধু যেন পদ্যে লিখা হয়।"

-আচ্ছা ঠিক আছে আপনার নাম দিলাম মালবিকা। বলুন মালবিকা আপনার জন্য আমি কি করতে পারি? অপরপ্রান্তে হেসে ওঠে-

-দীর্ঘ তিরিশ বছরে কিছু করতে পারোনি আর আজ মধ্যরাতে সাত-সাগর আর তের নদীর ওপার থেকে কি করবে? দ্বীপ অবাক হয়। কাল তাদের তিরিশতম বিয়ে বার্ষিকী ছিল। এ মহিলা তা কি করে জানে! এ মহিলা নিশ্চয়ই তার অতি পরিচিত কেউ হবেন। ভাবনায় ছেদ হল অপর পাশের কথায়।

-ঠিক আছে আমাকে মালবিকাই ডেকো। তবে আমাকে আপনি আপনি না করে আগের মত- সেই ছোট বেলার মতো তুমি করেই বলো। ভালো লাগবে। দ্বীপ মেঘাচ্ছন্ন হয়।

-মালবিকা তুমি সেই পুরনো কথা বলো। আজ আর আমি ঘুমাবোনা। তোমার সাথে থাকবো। কাল অফিস যাবেনা। তোমাকে নিয়ে কাব্য করব।

-শুনেছি ইদানীং তুমি নাকি কবিতা লিখছো। শোনাওনা তোমার লিখা একটি কবিতা।

ইদানীং বলছো কেনো? আমি তো সেই ছেলেবেলা থেকেই কবিতা লিখি। তুমিতো জানোনা আমার ডাক নাম ছিল বুনো। বনে বাদারে ঘুরে বেড়ানোই ছিল আমার কাজ। তখন অনেক ছেড়া ছেড়া শব্দ জোড়া লাগিয়ে ছড়া কাটতাম। একটি ছড়া গাঁথা ছলে নাকে তৃপ্তির ঘাম জমে যেত। সে তুমি বুঝবেনা।

- বুঝবো না কেন? আমিতো সবই জানি। তোমার সোনাপোকা নিয়ে লিখা কবিতাটা বলবে?

দ্বীপ এবার সত্যি অবাক হয়। মেয়েটি আসলে কে? যে তার অতীত তুলে এনেছে ঝাঁকি জাল ফেলে। ফেঁসে বেড়িয়ে যাওয়ার পথ নেই। ইদানীং ফেসবুক, মেসেঞ্জার এর কল্যাণে অনেক অচেনা অতিথি রূপ যৌবন খুলে ইনবক্সে চলে আসে। তাদের যতোটা না ললনা তারচে' বেশী ছলনা। আবার মেয়ের তসবীর লাগিয়ে উঠতি যৌবন ছেলেরা মজা নিচ্ছে। কোথা থেকে কিভাবে যেন যৌবন নিধনের আলোছায়া মাখা চমৎকার চমৎকার দৃষ্টিনন্দন ভিডিও ইনবক্স করে। তারপর আবদার শুরু হয়। মোবাইল এ ক্রেডিট ভরে দাও। একটি স্মার্ট ফোন হলে ভিডিও চ্যাট করতে পরব। কালই একটা আইফোন পাঠাও। অনেকতো দিলাম, এবার আমাকে কিছু দাও। তোমারতো অনেক আছে। জানো আমার কোন ল্যাপটপ নেই। তোমার আশায় বসে আছি, ইত্যাদি ইত্যাদি।

-কি চুপ করে আছো কেন? বলো কবিতাটা! দ্বীপ সম্বিত ফিরে পায়। মোহাবিষ্টের মতো আবৃত্তি করে-

বিরামহীন সময়ের নীলাকাশে
তুমি এক আলোর মিছিল,
ক্লান্ত ডানায় রোদ মেখে-
তুমি এক মোনাপোকা হও।

শিশু কড়াই গাছের কচি পাতায়
ঠোট রেখে আরো পিচ্ছিল
ঠোটে ঠোট রেখে
আমি যেন জাতিস্মর হই।

তোমার বুকের সর্পিল রেখা-
বুনোপথে আল বেয়ে- চলে,
অবিরাম হেটে চলে দুর সীমানায়
ঢেউ তোলে প্রতি পলে পলে।

হঠাৎ জীবন ছেড়ে জড় হয়ে যাই।
আমি ডাল হলে তুমি পাতা হও,
আমি বোটা হলে তুমি ফুল হও,
বুকের পাগড়ি মেলে হঠাৎ একদিন
আমি দ্বীপ হলে তুমি শিখা হও।

আমি গতিহীন, ক্লান্ত কড়ই গাছ, বড় একা
সূর্যের রং মেখে আজ তুমি হও সোনাপোকা।


-চলবে-





Share on Facebook               Home Page             Published on: 2-Jan-2017

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far