bangla-sydney













বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ইন্দিরা গান্ধী
ড. রতন কুন্ডু



১৯৭১ সালে ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কতোটা যে ইস্পাত কঠিন তা বোঝা গিয়েছিলো পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানে অপারেশন সার্চলাইট নামে গণহত্যায় মেতে ওঠে! এই যুদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী একযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প আক্রমণ করে। শুরু হয় এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এক রাতেই তারা শত শত ছাত্র জনতা পুলিশ ও ইপিআর জওয়ানদের হত্যা করে। ব্রিটিশ সাংবাদিক এন্থনি মাসক্যারেনহাস এর “দ্য লিগ্যাসি অব ব্লাড” গ্রন্থে তাঁর সরেজমিন প্রতিবেদনে বিস্তারিত ঐতিহাসিক তথ্য সন্নিবেশিত আছে। তিনি একদিন এক আর্মি অপারেশনে সঙ্গী হয়েছিলেন। আর্মিরা তাদের ভয়ে মাঠে দৌড়ানো অবস্থায় একজনকে পাকড়াও করে। সেখানে কমান্ডার জওয়ানদের উদ্দেশ্যে বলছে -
⁃ জেনারেলের নির্দেশ আছে যে সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই সাথে সাথে তাকে গুলি করে হত্যা করবে। এটা রাষ্ট্রীয় নির্দেশ।
এন্থনি প্রত্যক্ষ করেন যে কমান্ডার জওয়ানকে গুলি করার নির্দেশ দেন। তখন এন্থনী এগিয়ে যান
⁃ তোমরা তাকে কেন হত্যা করছো? তার কি অপরাধ? তিনি বিনীতভাবে তাঁর পরিচয় জানতে অনুরোধ করেন। সেই ব্যক্তিটি হাত জোড় করে বললো
⁃ আমার নাম আব্দুল বারী। আমি একজন দর্জি। আমার কোন দোষ নেই।
জওয়ানরা তা বিশ্বাস না করে তাকে গুলি করতে উদ্যত হয়। এন্থনির বারবার পীড়া পীড়িতেও তল্লাসিতে তাঁর কাছে কোন অস্ত্র না মিললেও তারা রাইফেল তাক করে। ঐ মূহুর্তে ঐ এলাকার এক মসজিদের ইমাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি ঐ লোকটিকে চিনতেন। তিনি উর্দু ভাষাতে নিশ্চিত করেন যে অভিযুক্তের নাম মোহাম্মদ আব্দুল বারি এবং তিনি একজন দর্জি। ঢাকাতে তাঁর একটি টেইলারিং শপ আছে। তারপর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এন্থনী এই হত্যাযজ্ঞের আরও অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি সমস্ত ঘটনাক্রম সংযোজিত করে খুব গোপনীয় ভাবে তা লন্ডনের দ্য সানডে টাইমস অফিসে প্রেরণ করেন। ১৯৭১ এর ১৩ই জুন দ্য সানডে টাইমস তা লিড নিউজ করে সম্প্রচার করলে সারা বিশ্বে হৈ চৈ পরে যায়। অপারেশন সার্চলাইট আসলে যে নির্মম গণহত্যা তা প্রকাশ পায়!

জীবন বাঁচানোর জন্য হাজার হাজার বাঙ্গালী কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে বাঁধ ভাঙা নদীর স্রোতের মতো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম ও ত্রিপুরায় উপনীত হয়। ভারত সরকার প্রধান ইন্দিরা গান্ধী তখন মানবিক ইস্যুতে তাদের জন্য শরণার্থী শিবির তৈরি করে তাদের আশ্রয়, অন্ন, বস্ত্র ও চিকিৎসা সুবিধার বন্দোবস্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জরুরী নির্দেশনা প্রদান করেন। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্বও সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে আসে। বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সরকার ভারতীয় প্রচার মিডিয়াকে সার্বক্ষণিক ভাবে বাংলাদেশের যুদ্ধের খবর, গণহত্যার ডকুমেন্টারি, শরণার্থী শিবিরের মানবেতর জীবন, লঙ্গরখানার সরেজমিন প্রতিবেদন সম্প্রচারের জন্য নির্দেশ প্রদান করে। এটি ছিল ইন্দিরা গান্ধীর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ! তিনি জোড়া চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামেন।

১.এই লক্ষ লক্ষ মানুষের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা
২.উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জোরদার করা।

ইন্দিরা গান্ধী তাঁর এপ্রিল ১৯৭১ এর দিল্লীর জনসভায় বলেন
⁃ যে মানুষগুলো পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছে তাঁদের নেই কোন অর্থ, বস্ত্র কিংবা থাকার মতো কোন উপকরণ। তাঁদের প্রতি সবাইকে মানবিক আচরণ করার আহ্বান জানান ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ সে এপ্রিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার এক জরুরী বৈঠক তলব করেন। মন্ত্রীসভার সদস্যদের পাশাপাশি সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সেনাপ্রধান- জেনারেল ম্যানেক শ’। বৈঠকের শুরুতেই তিনি কয়েকটি টেলিগ্রাম পড়ে শোনান। সেগুলো পাঠিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীবৃন্দ। তার ভিত্তিতে তিনি জেনারেল ম্যানেক শ’র দিকে তাকালেন-

⁃ আমি চাই এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হোক। জেনারেল ম্যানেক শ’ বললেন
⁃ আপনি কি চান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?
⁃ আমি চাই আমাদের আর্মি পূর্ব পাকিস্তানে অভিযান পরিচালনা করুক।
⁃ গোস্তাখী মাফ করবেন। আপনি এর অর্থ জানেন? এটা হবে যুদ্ধ। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ!
⁃ আমি পরোয়া করিনা জেনারেল। যুদ্ধ শুরু হলে হবে। আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি থাকতে হবে।
⁃ ম্যাডাম, আপনি বাইবেল পড়েছেন? বাইবেলের প্রথম অধ্যায়ে লিখা আছে, ঈশ্বর আদেশ করলেন- আলো তৈরি হয়ে যাও। তৎক্ষণাৎ আলো তৈরি হয়ে গেল। আপনি বললেন- যুদ্ধ হলে হবে! যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। কারণ আপনি রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে- আমরা যুদ্ধের জন্য কি প্রস্তুত? আজ ২৫শে এপ্রিল। হিমালয়ের সমস্ত রাস্তা খোলা। চীন, সরাসরি পাকিস্তানকে সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে! ইতোমধ্যে চীন আমাদের আল্টিমেটাম দিয়েছে। তাইলে আমাদের পাকিস্তান ও চীন দুটো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করতে হবে। তাদের আক্রমণ মোকাবেলা করতে হবে। মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলছি- পশ্চিমবঙ্গে গত নির্বাচনের সময় আমার কাছে ফৌজ চেয়েছিলেন, আমি ২০,০০০ ফৌজ মোতায়েন করেছি। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে একমাস সময় লেগে যাবে। তাছাড়া আসাম ও অন্ধ্রপ্রদেশে আমার দুই ডিভিশন সৈন্য মোতায়েন করা আছে। এদের সবাইকে একত্রিত করে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে আমাকে একমাস সময় দিতে হবে। এজন্য দেশের সমস্ত বাস, ট্রাক, ট্রেন শুধুমাত্র যুদ্ধের কাজেই ব্যবহার করতে হবে। আর একটি শেষ কথা- আমাদের আরমার্ড ডিভিশনে মাত্র ১৩ টি ট্যাঙ্ক আছে। অর্থমন্ত্রী বললেন -
⁃ শুধু ১৩ টি ট্যাঙ্ক কেন!
⁃ আপনি মাননীয় অর্থমন্ত্রী। বিগত দেড় বছরে আপনি যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনার জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ করেননি। আরেকটি কথা, ম্যাডাম- আমরা যতদিনে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবো ততদিনে মনসুন শুরু হয়ে যাবে। এই মৌসুমে সব মাঠ ঘাট তলিয়ে যায়। বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ী ঢলে খাল-নদী সব সমুদ্রে পরিণত হয়। নদী-মাঠ-জনপদ সব পানিতে পানিতে সয়লাব হয়ে যাবে। তারমধ্যে আমাদের পদাতিক বাহিনী এক পাও অগ্রসর হতে পারবেনা! আমি আপনাকে ১০০% গ্যারান্টি দিতে পারি যে এখন আমরা যুদ্ধ শুরু করলে আমাদের পরাজয়ের সম্ভাবনা শতভাগ। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রীসভার সব সদস্যবৃন্দ জেনারেল ম্যানেক শ’র এ কথা শুনে থ হয়ে গেলেন। তাঁর কথা শুনে ইন্দিরা গান্ধীর মুখ রাগে থমথম থমথম করছিলো। তিনি বিকেল ৪টা পর্যন্ত মিটিং মুলতবি ঘোষণা করে সবাইকে আসতে বললেন। সবাই বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে তিনি শুধুমাত্র জেনারেল ম্যানেক শ’কে থাকতে বললেন।
⁃ আপনি একটু বসুন। আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
⁃ ম্যাডাম, হয়তো বয়সের কারণে আমার মনের জোড় কমে গেছে! আপনি চাইলে আমি ইস্তফা দিতে পারি!
⁃ আপনি বসুন। আপনি এখানে যা যা বলেছেন তা কি সত্যি?
⁃ গোস্তাখী মাফ করবেন, আমি যা যা বলেছি তা সবই সত্যি। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জেতার জন্য লড়াই, হারার জন্য নয়!
⁃ আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমি কি চাই! এবার আপনি বলুন আপনি কবে নাগাদ তৈরি হবেন?
⁃ সময় কত লাগবে আমি এখনই বলতে পারছিনা! তবে যদি কমপ্লিট প্লান ও পর্যাপ্ত সময় পাই তাহলে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি যে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা শতভাগ। জেনারেল ম্যানেক শ’র মুখে একথা শুনে ইন্দিরা গান্ধীর মুখ খুশীতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে সেই সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্থার পিট ব্রাড দিনের পর দিন ঢাকা ও শহরতলীর রাস্তা ঘুরে ঘুরে পাক বাহিনীর অমানবিক অত্যাচারের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে The Blood Telegram নামে একটি গণহত্যার দলিল তৈরি করে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বরাবরে প্রেরণ করেন। তখন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন ও তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার


তা গোপন করে ইয়াহিয়া খানকে সকল প্রকার সামরিক সাহায্য প্রদান অব্যাহত রাখেন। তখন ভারতে নিযুক্ত বিবিসির তুখোড় সাংবাদিক মার্ক টালি গণহত্যার বিস্তারিত বিবরণ তাঁর “Selective Genocide” নিবন্ধ বিবিসির মাধ্যমে সারা বিশ্বকে অবহিত করেন।

ইন্দিরা গান্ধী নিজে সশরীরে শরণার্থী শিবির গুলো পরিদর্শন করেন ও তাদের সঠিক সেবা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি বেতার ভাষণেও বারবার একই আহ্বান জানান। ২৪শে মে ১৯৭১ তিনি জরুরী পার্লামেন্ট অধিবেশন তলব করেন। তিনি দ্ব্যর্থ-হীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন:
⁃ পাকিস্তানের এই সমস্যা এখন আর কোন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়! এটি এখন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর থেকে জরুরী পরিত্রাণ আবশ্যক। তাঁর নির্দেশে জেনারেল ম্যানেক শ ও কোলকাতার রিজিওনাল ইস্টার্ন কমান্ডারকে টপ সিক্রেট নোট পাঠালে মুক্তি বাহিনী গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তার জন্য সংসদে জরুরী ত্রাণ কার্যক্রম নামে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও মোবিলাইজেশন এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানের বিমান হঠাৎ করে ভারতের আকাশ-সীমা লঙ্ঘন করলে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ কোলকাতার জনসভার ইন্দিরা গান্ধী বলেন:
⁃ জাতিসংঘ সনদ মোতাবেক একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ অন্য কোন স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। এই ব্যাপারে পাকিস্তান সোচ্চার হলেও খোদ পাকিস্তানীরা সেই নিয়ম নীতি ভেঙে আমাদের রাষ্ট্রের ব্যাপারে বারবার হস্তক্ষেপ করে আসছে। ভারত সবসময় শান্তির পূজারী কিন্তু কেউ যদি আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় তাইলে আমাদের কোন গত্যন্তর থাকবেনা। আমাদেরকেও প্রতিরক্ষা যুদ্ধে শামিল হতে হবে। সেই মূহুর্তে তাঁর হাতে একজন এসে একটি টেলিগ্রাম ধরিয়ে দিলেন। এই জরুরী তারবার্তায় চোখ বুলানো মাত্র তাঁর চোখে আগুন জ্বলে উঠল। তাঁর মুখ ইস্পাত কঠিন হয়ে উঠলো। তাঁর বক্তব্য শেষ না করেই তিনি মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন। গাড়িতে তাঁর সাথে ছিলেন সিদ্ধার্থ শংকর রায়। তিনি বার্তাটি তাঁর দিকে এগিয়ে ধরলেন। খবর এসেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজস্থান ও কাশ্মীর সীমান্তে আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে। তখন ইন্দিরা গান্ধী বললেন-
⁃ জানিনা ঠিকমতো দিল্লি পৌঁছাতে পারবো কিনা!
সেদিন তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজ রুট পরিবর্তন করে কোলকাতা থেকে দিল্লি রওনা দেয়। এটা ছিল গত ১০ বছরের মধ্যে ভারতের উপর পাকিস্তানের তৃতীয় হামলা।

৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ দিল্লী পৌঁছে এক বেতার ভাষণে ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মাত্র দুই সপ্তাহের যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যরা সব সেক্টরে পাকিস্তানী সৈন্যদের পরাস্ত করে। এদিকে পূর্ব পাকিস্তানের বঙ্গোপসাগরের জলসীমার অদূরে আমেরিকার সপ্তম নৌবহরকে ঠেকিয়ে দিল রাশিয়ার ১০ম ফ্লিট। আমেরিকার সপ্তম নৌবহর হলো একটি ক্যারিয়ার টাস্ক ফোর্স, যা টাস্ক ফোর্স ৭৪ (TF 74), ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। এর লক্ষ্য ছিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সাহায্য করা। টাস্ক ফোর্স ৭৪ হলো পারমাণবিক চালিত বিমান বাহক এন্টারপ্রাইজ যা কিনা ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সজ্জিত ও ব্যবহার করা হয়েছিলো। এই ফ্লিট উভচর অ্যাসল্ট ক্যারিয়ার ত্রিপোলি; ধ্বংসকারী ডেকাটুর, ম্যাককিন এবং অরলেক; গাইডেড-মিসাইল এসকর্ট ওয়াডেল, কিং এবং পার্সনস; পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন গুর্নার্ড এবং সরবরাহ জাহাজ উইচিতা সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছিলো। ১৫ই ডিসেম্বর, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের একদিন আগে, টাস্কফোর্স ঢাকা থেকে প্রায় ১০৯০ মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারতের পক্ষে, অ্যাডমিরাল ভ্লাদিমির ক্রুগ্লিয়াকভের অধীনে তার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের ১০ তম অপারেটিভ ব্যাটল গ্রুপকে ভ্লাদিভোস্টক থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর তার মিশন বাতিল করে এবং বঙ্গোপসাগর ছেড়ে চলে যায়। এরপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনী মিলে পাক সেনাদের পরাস্ত করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করলে ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হয়।





ড. রতন কুন্ডু, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া






Share on Facebook               Home Page             Published on: 25-Mar-2023

Coming Events: