bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



হৈমন্তী পূর্ণিমা / রতন কুন্ডু


আগের অংশ


হৈমন্তী কথা-

একদিন কাক ডাকা ভোরে সুব্রত বাবু ও মালবিকা দেবী এসে হাজির হন ছেলের হোস্টেলে। একটু থিতু হতেই মা জিজ্ঞেস করেন -
- হ্যাঁরে নীল, তোর অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপারটা কতদূর হলো? ওখানে কি না গেলেই নয়? তুই চলে গেলে আমরা থাকবো কি করে? মৃদুল মাথা নিচু করে। মাতৃত্বের কাছে তার ভাষা পরাজিত হয়। কোন কথা বলতে পারেনা। বলতে ইচ্ছে করে-
- তোমরাতো আমার ইচ্ছার মূল্যায়ন কোনদিন করনি। তোমাদেরতো আরও একটি ছেলে, দুটি মেয়ে আছে। আমি নির্বাসন চাই। এ মাটি-জল থেকে অনেক দূরে চলে যেতে চাই। প্রকাশ্যে বললো-
- এ নিয়ে এতো ভাবছো কেন? আমি ইচ্ছে করলেতো বছর বছর আসতে পারবো। তাছাড়া বাবা রিটায়ার করেছে। নীলার না হয় বিয়ে হয়েছে। বুবলি-মিঠুন ওদের পড়াশুনা ভবিষ্যৎ কি হবে? মা অসহিষ্ণু হন
- ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
এরপর মা সন্তর্পণে নিজের পার্স খুলে একটা ফটো বের করে নাড়াচাড়া করতে থাকেন।
-বর্ধমানের কায়স্থ পরিবারের একমাত্র সন্তান, গ্রাজুয়েশন নিয়েছে। একেবারে মাটির মত মেয়ে। সবার খুব পছন্দ। তুই যদি একবার বর্ধমান যেতিস! মায়ের কথা শেষ না হতেই মৃদুল উপসংহার টানে-
- আমাকে দেখতে হবেনা। তোমরা যা ভালো বোঝ কর।
হৈমন্তী যখন মৃদুলকে প্রথম দেখে তখন অবাক হয়। এত সুন্দর মানুষ পৃথিবীতে আছে! এতদিনের ভয় সন্দেহ বাসর রাতেই উবে যায়। হীরেণের মুখটা ভেসে উঠেই আবার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে। এরকম কেন করলে হীরেণ? কেন কেন কেন? যাক যা করেছো ভালই করেছো। হৈমন্তী ঘোমটা দিয়ে চোখ আড়াল করে। অবশ্য গীতা পিষি বলেছিল-
- মারে, তুই হরিণ কপালী। ছেলে দেখতে রাজপুত্রের মত। একদম ফর্সা, লম্বা, ঠোঁটের উপর পুরু গোঁফ, কোঁকড়ানো চুল। মাইরি বলছি, কাত্তিকও তার সাথে পারবেনা। তার উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। মালা বদলের দিন থেকে হৈমন্তী অনিচ্ছাসত্ত্বেও মৃদুলকে মেনে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। একে একে অহনা, অঙ্গনা আসে তাদের সংসারে। মৃদুল, অনিকেত - অনুরাধার শরণাপন্ন হলে সিডনীর পশ্চিম অঞ্চলের বনেদী পাড়ায় একটি বাড়ি কিনে থিতু হয়। কিন্তু বিধি বাম, হৈমন্তী হঠাৎ করেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র শরীর সর্বস্ব হয়ে বেঁচে থাকে। নিত্যকর্ম খাওয়া-ঘুম ছাড়া কিছুই তার ভালো লাগেনা। মৃদুল একান্তে কান্না করে।
- হে ঈশ্বর, একি করলে তুমি? কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছ আমাকে! প্রথম দিকে অসহিঞ্চু হলেও পরে সে একে নিয়তি বলেই মেনে নেয়। কিন্তু কষ্ট ভোলার জন্য ধীরে ধীরে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। কষ্ট হলেই ছুটে যেত রাহুল-রূপাদের বাসায়। রাহুল যেদিন রূপাকে নিয়ে সিডনি এয়ারপোর্ট নেমেছিল মৃদুল সেদিন তার ট্যাক্সি নিয়ে বসেছিল তাদের প্রতীক্ষায়। রাহুল পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল- আমার দাদা। রূপা পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার করে সলজ্জ চোখে তাকায়। অস্ট্রেলিয়াতে তার প্রথম আত্মীয়- তার ভাই। নির্ভরযোগ্যতার দুটি হাত আর বিশ্বস্ততার মন। সেই থেকে মৃদুল তাদের পরিবারের একজন হয়ে যায়। রূপাও তার ঘরের দরোজা মৃদুলের জন্য সারাক্ষণ খোলা রেখে দিয়েছে।
- দাদা আপনি আমার জন্মের ভাই না, তার থেকেও অনেক বেশী। আপনি আমাদের কাছে আপন ভাইয়ে চেয়েও অনেক বড়। এই বোনকে দেখতে যখন খুশি চলে আসবেন। আমরা যা খাই আপনিও তাই খাবেন। মৃদুল ব্যক্তি জীবনের কষ্ট অনেকটা ভুলে যায়। এর পর মৃদুলের জীবনে নেমে আসে আরেকটি দুর্ঘটনা। বড় মেয়ে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় শহরের কাছাকাছি। মৃদুল প্রতিবাদ করেনা। একেবারে হঠাৎ করেই হৈমন্তী একটি প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্ম দেয়। কেউ জানতোনা যে সে পোয়াতি। সে নিজেও কাউকে বলেনি। হয়ত সেটা বোঝার শক্তিটাও বোধ হয় হৈমন্তী হারিয়ে ফেলেছিলো। মৃদুলের জ্ঞান ফিরতেই দেখে তার বিছানার চারপাশ ঘিরে অনিকেত, রাহুল, প্রিয়তোষ, অনুরাধা, রূপা, কাজল, অহনা ও অঙ্গনা। সে কিছুটা অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সবাই একসাথে চীৎকার করে ওঠে “শুভ জন্মদিন”। কর্তব্যরত নার্সরাও অংশ নেয়। হাসপাতালে বেডে এক মৃতপ্রায় রোগীর জন্মদিন পালন! সবার চোখে জল। আজ লোকটি আছে। জন্মদিনের কেক খাচ্ছে! কাল সে থাকবেনা! ভাবতেই বুকফাটা কান্না বেড়িয়ে আসে।


শেষের কথা-

অঙ্গনার হাত থেকে কেকের টুকরাটা মুখের নিয়ে সন্দিগ্ধ চোখে জিগ্যেস করে-
- মামনি, তোমরা সবাই আমার জন্মদিন হাসপাতাল বেডে করছো কেন? আমি কবে বাড়ি যাব? ডাক্তাররা কি বলেছে? আমি কি আর ভালো হবো না? অনেক কাজ বাকী পরে আছে। তোমরা সেগুলো সামলাতে পারবেনা। তোমার মায়ের অবস্থাতো জানোই। তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এতো কাজ জমে আছে! আমার আর এখানে থাকতে ভালো লাগছেনা। তোমরা আমাকে বাসায় নিয়ে চলো। অঙ্গনার মুখ থেকে কোন কথা আসেনা। শুধু চোখের জল গাল বেয়ে টপটপ করে মৃদুলের বুক ভিজিয়ে দেয়। মৃদুল চোখ বন্ধ করে।

আজ ৪ঠা ডিসেম্বর। জ্যোতির্বিদরা বলেছে এ বছরের হৈমন্তী পূর্ণিমা অনেক উজ্জ্বল হবে। সবচে' বড় আর উজ্জ্বল চাঁদ উঠবে পৃথিবীর আকাশে। মৃদুলের ঘুম ভাঙতেই জানালার ওপাশে বিকেল উকি দেয়। জাকারান্ডার বেগুনী ফুলগুলো টুপটাপ ঝড়ে পরছে। বেলি ফুলের গন্ধে ওয়েষ্টমিড হাসপাতাল মাতোয়ারা এর মধ্যেই পুব আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উকি দেয়। মৃদুলের স্মৃতিতে জীবনানন্দ হামাগুড়ি দেয়।

“তখন আকাশে ছিল পূর্ণিমার চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ
বঁধু তার নেই শুয়ে পাশে, ছিলনা শিশুটিও
অথচ প্রেম ছিল, আশা ছিল জ্যোৎস্নায়
তবে সে দেখিল কোন চাঁদ?
ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল,
লাশ কাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি!”

জানালা গলে হৈমন্তী পূর্ণিমার চাঁদ চলে আসে মৃদুলের বিছানার কাছে। মৃদুল জ্যোৎস্নায় ঢেকে যায়। এক অনঙ্গ মানব এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে, স্বজন ছেড়ে পাড়ি দেয় দূর অজানায়।



আগের অংশ




Share on Facebook               Home Page             Published on: 6-Feb-2018

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far