bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



হৈমন্তী পূর্ণিমা
রতন কুন্ডু

পরের অংশ



পূর্বকথা-

মৃদুল, তুই পূর্ণিমাকে নিয়ে বড় বেশী ভাবিস, বেশী বাড়াবাড়ি করিস। কি দিয়েছে পূর্ণিমা তোকে? হতাশা, বঞ্চনা আর বেদনা ভরা চিকচিকে রাত, বেহাত হাওয়ার অনুভব, যন্ত্রণা! কেউ জানেনা কতটা নিষ্ঠুর এই আকালী পূর্ণিমা। তোর মনে আছে! প্রার্থিত শৈশবে মায়ের কোলে করে রথের মেলা, খাল পাড়ের রোদেলা বিকেলের মায়াবী সোহাগ কিংবা শ্যামলীর সাথে ছিয়া বুড়ি ছপ্পন খেলা? মনে পড়ে! স্কুল পালানো মন, দূর্বাঘাসে গড়াগড়ি, কাঁটাবনে পায়লা ফলের খয়েরী রঙে লোভাতুর দৃষ্টি; পায়লা পাকে শুয়া-পাখী ডাকে। এক দৌড়ে বড় রাস্তায় গিয়ে গাড়ীর হর্ণ আর যাত্রীদের হাঁক-ডাক মাখানো ভালো লাগার পরশ নিয়ে সাগর দীঘিতে গা ভাসিয়ে দেয়া? তারপর একটু একটু করে বড় হলি। দুর্গাপুরের বিদ্যাসাগর পল্লী বায়ে রেখে বড় রাস্তা পেরোতেই টাটা নগর। সার-বেঁধে নারী-পুরুষ যাচ্ছে টাটা ফ্যাক্টরিতে, দুর্গাপুর সদর অথবা বর্ধমান, আবার কেউ কেউ আসানসোল। সেই তুই মায়ের কোল ছেড়ে হাটতে শিখলি, দৌড়াতে শিখলি আর পাড়ার দুর্গাপূজায় মোদকের বড়ি খেয়ে কি আরতিই না করেছিলিস! টিনা, বচু, রিতি, রাকেশ, শ্যামা আর সুজয়া তোর বন্ধু হয়ে গেল। এ নিয়ে বাসব-রাকেশ দের সাথে মারামারিও কম করিসনি! সেই তুই সেবার বাঁকুড়া মাসি বাড়ি থেকে ফিরে এসে একদম অন্য মানুষ হয়ে গেলি! কারুর সাথে মিশিসনা, কথা বলিসনা। বাসব, বাবাই, বুবাই তোকে পাকড়াও করল সি.পি.এম অফিসের সামনে। এই শালা কোথায় হাপিস হয়ে গেলি বলতো? আমরা ভাবলাম জ্যাঠামনি খচে গিয়ে তোকে দেরাদুন চালান করে দিয়েছে। বাসব ফোড়ন কাটে। বুবাই আরও খানিকটা ত্যাড়া করে টেনে টেনে সরেস কাটে :
- নারে দোস্ত, মৃদুল নামের ভদ্দরলোক চোলাই খায়না। বড় সড় গাজন পুকুরে ডুব দিয়ে এসেছে। চেহারা তো রস মালাই, মুখে দেয়ার সাথেই লালা বেড়িয়ে আসবে। মা কালির দিব্বি, আমার মনে হচ্ছে মাসি বাড়িতে কোন ছেলেধরা ওকে সিল মেরে দিয়েছে। মাইরি বলছি, মৃদুল খরচ হয়ে গেছে! এক সাথে সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।

কথাটা একেবারে মিথ্যে বলেনি বুবাই। মাসতুতো বোনের বান্ধবী পূর্ণিমা। সবে অষ্টম শ্রেণীতে রোল কল করছে। সাইকেল চালানো পেলব উরুতে মৃদুলের দৃষ্টি আটকে যায়। মৃদুলের পোশাক ঠেলে বেড়িয়ে আসতে চায় অবাধ্য বুক, ঠোটে ঝোলানো তৃতীয় তিথির চাঁদ। মৃদুলের বুকে মাদল বাজে। পূর্ণিমাও বুঝতে পারে মৃদুল নামের দুষ্ট হাওয়া ছুঁয়ে দিচ্ছে তার নাক, মুখ, বুক, চোখ, কান সহ সব ইন্দ্রিয়কে। প্রথম দর্শনেই পূর্ণিমার চাঁদ পশ্চিম গগনে হেলে যায়। তারপর কোন বাহানা নিয়ে পারমিতার কাছে যাওয়া, আড় চোখে মৃদুলকে দেখা, শুনিয়ে শুনিয়ে দুষ্ট ছেলেদের গল্প বলা আর অকারণে খিলখিল হাসি, তার বৈকালিক কাজ হয়ে গেল।


সত্য কথা-

ওয়েস্টমিড হাসপাতালের স্নায়ু বিভাগে এক মখমলে বিছানায় শুয়ে আছে মৃদুল। বিছানায় পাশেই দর্শনার্থীদের বসার জন্য একটি সোফা, পাশে ক্যাবিনেট, টেবিল, খাবারের ট্রলি আর শেষপ্রান্তে প্রসাধনী কক্ষ। একটি ছোট্ট দূরদর্শন ঝুলে আছে ছাদ থেকে। মৃদুলের ইচ্ছেতেই বিছানাটা জানালার কাছে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ঝিরঝিরে হাওয়ায় জেসমিনের সুগন্ধ ভেসে আসে। রুমের আলোগুলো ডিম করে দেয়া আছে। মৃদুলের শরীরের বিভিন্ন অংশে তার লাগিয়ে ইলেকট্রিক যন্ত্রের সাথে জুড়ে দিয়েছে। কোনটা নিঃশ্বাস, কোনটা হৃদযন্ত্র, কোনটা তাপমাত্রা আবার কোনটা ব্রেনের কার্যকলাপ মনিটরিং করছে। মৃদুল ঘুমিয়ে আছে মখমলের বিছানায়। মহিন্দর সিং দরোজা ঠেলে সস্ত্রীক ভেতরে ঢুকেন। দেখে আরেকটি পরিবার বসে আছে। ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল কেমন আছেন মৃদুল? প্রিয়তোষ নিচু গলায় বললেন-
আমরা এসেছি আধাঘণ্টা হবে। কিন্তু এখনো জ্ঞান ফেরেনি। নার্স বলছে বিকেল পাঁচটার আগে ঘুম ভাঙবেনা। প্রতিদিনকার মতো অনিকেত ও অনুরাধা এসে দুপুরের খাবার খাইয়ে গেছে। ওরা রাতে আবার আসবে। মহিন্দর দম্পতি মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলেন। অনিকেত এর প্রসঙ্গে উঠতেই চোখটা উজ্জ্বল হল।
হ্যাঁ অনিকেতকে তো আমি চিনি। আমরা সবাই অর্থাৎ মৃদুল, অনিকেত ও আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি।


স্মৃতিকথা-

বিকেলে ঘুম ভাঙতেই মৃদুল চোখ মেলে তাকায়। ততক্ষণে প্রিয়তোষ ও মহিন্দর দম্পতি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে চলে গেছে। রাতের খাবার নিয়ে রুমে আসে রাহুল ও রূপা। রাহুলের সাথে মৃদুলের পরিচয়টা কাকতালীয় । রাহুল একটি ক্যারাটে টীমের সদস্য হয়ে অস্ট্রেলিয়া এসেছিলো, জীবিকার প্রয়োজন সে রোজবেরী, মাসকট, রেডফার্ন, প্যারামাটা শহরে হন্যে হয়ে ঘুরছে কাজের আশায়। টিমের অন্য সদস্যদের সাথে মাসকটে একটি রুটি তৈরির কারখানায় বদলি শিফটে দুই একদিন কাজ পায়। তাতে বাসা ভাড়াও হয়না। দেশ থেকে সর্বশেষ সঞ্চয় যা এনেছিল তা খরচ করতে হয়। এক বিকেলে ক্লান্ত দেহ-মন নিয়ে বাসায় ফিরছে। পেছন থেকে একটি গাড়ীর হর্ণ শুনে ফিরে তাকায়, না প্রাইভেট কার না, একটা ট্যাক্সি। তার হাসি পায়, খাবার পয়সা নাই আবার ট্যাক্সিতে ওঠার আমন্ত্রণ। সে আবার হাটা শুরু করতেই আবার হর্ণ। এবার এক সুদর্শন বাঙালী অবয়বের এক সুপুরুষ ট্যাক্সি থেকে বেড়িয়ে এলেন।
- এই যে দাদা, শুনুন। দেখেতো বাঙালি মনে হচ্ছে তাই ডাকলাম। কোথায় যাবেন বলুন? নামিয়ে দিয়ে আসি। পয়সা দিতে হবে না। তারপর ট্যাক্সিতে বসে আলাপ পরিচয়। সেই যে তারা বন্ধু হল সেই বন্ধুত্ব শেষ পর্যন্ত আর বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ থাকলনা। তারা প্রবাসে একে অপরের ভাই হয়ে গেল। একে অপরের সংকটে-সংগ্রাম সাথী হয়ে গেল। অন্যদিকে মৃদুলের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু অনিকেত। অনিকেতের সাথে মৃদুলের জীবনের সমান্তরাল রেখা দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই পাশাপাশি এসে একটি রেখায় পরিণত হয়ে গেছে। এর মধ্যে মৃদুল প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছে। মৃদুল তার জীবনের সবকথা অনিকেতের সাথে শেয়ার করত। অনিকেতও তেমনি। পড়ালেখায় মৃদুল বরাবরই ভাল। তার জীবনে অসাফল্য বলতে কিছু নেই। প্রাইমারী, জুনিয়র, ইন্টারমিডিয়েট ও ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করেছে। এতো সাফল্যের মধ্যেও একটি কষ্ট তাকে বারবার কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। একবার হঠাৎ করেই কাউকে না জানিয়ে মাসী বাড়ি, বাঁকুড়া চলে গিয়েছিল। পূর্ণিমা মাত্র দুটো লাইন লিখেছিলো:
- “তোমাকে বোধ হয় আর এ জীবনে পাওয়া হলোনা বন্ধু। দেখা হবে ঐপাড়ে।”পূর্ণিমা মৃদুলকে বন্ধু বলে ডাকত। তাদের বাড়ি এই প্রণয়ে সায় দেয়নি। মা মৃদুলকে ডেকে বললেন -
- বাবা এখন বড় হয়েচিস, নিজের ভালোমন্দ বুঝিস। আমিতো তোদের ঘরে পরগাছা হয়েই জীবন কাটিয়ে দিলাম। তোর বাবাকে তো চিনিস। বনেদী পরিবারের নীলরক্ত। ছোট পরিবারের মেয়েকে এ ঘরের বৌ হিসেবে কোনদিন মেনে নেবেনা। তার উপর তোর নর গণ, আর ওর রাক্ষস গণ। শুনেছি মেয়েটি নাকি মাঙ্গালিক। মৃদুল প্রতিবাদ করেছিল: আমি রাশি-নক্ষত্র মানিনা, গন-গোত্রের পরোয়া করিনা, মাঙ্গলিকের অর্থ বুঝিনা। ওকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে আমি জীবনে সঙ্গী করতে পারবনা। ব্যস। ছেলের প্রতিজ্ঞা শুনে মা কেঁদে ফেলেন:
- তোর বাবা বলেছে ঐ মেয়ে বিয়ে করলে সে আত্মহত্যা করবে। ভেবে দেখ বাবা।

মৃদুল ছেলেবেলা থেকেই একরোখা। রাগ করে ঐ মুহূর্তেই বাড়ি ছেড়ে পাঞ্জাব চলে যায়। যেদিন পূর্ণিমার চিঠি পেল পরদিনই ব্ল্যাকে টিকেট কেটে কালকা মেইলে বাঁকুড়া । কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে। সে যখন রথখোলা পার হয়ে, কাজল দিঘীর পাড় বেয়ে, সোজা রাস্তায় মাঠ পাড়ি দিল তখন একটি শবযাত্রার মুখোমুখি হল - হরিবোল-হরিবোল-হরিবোল। ন্থানুর মত দাড়িয়ে দাড়িয়ে শবযাত্রা দেখতে লাগল মৃদুল। হঠাৎ মাসতুতো বোন পারমিতা, তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল-
-দাদা তুই এস্চিস্। অনেক দেরী করে ফেললি ভাই । পুনোতো কাল রাতেই চলে গেছে। পূর্ণিমাকে সবাই আদর করে পুনো বলেই ডাকতো। শোনামাত্রই মৃদুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল।


মধ্যকথা-

অনিকেত ডক্টরেট শেষ করে অভিভাষণ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে আসে। সাথে তার প্রিয়তমা- নব বিবাহিতা স্ত্রী অনুরাধা। তার মনন-ভালবাসা-আবেগ, রাগ-অনুরাগ সব অনুরাধাকে নিয়ে। শিশুর সারল্যে ভরা মায়াময় মুখটি তার প্রবাসের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। তার ঘুমন্ত মুখে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। অণু তোমার কষ্ট আমি বুঝি। নিঃসন্তান হওয়ার কষ্ট নয়। প্রিয়জনকে সার্বক্ষণিক কাছে না পাওয়ার কষ্ট। মনের কথাগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার কষ্ট। কত মান অভিমান জমে আছে। পাহার সমান। বলা হয়না কিছুই। কিন্তু সত্যি জেনো, আমি তোমাকেই ভালবাসি। কাব্য- স্লোগানে তোমাকেই আবৃত্তি করি। তোমার আবদারকে কখনো অত্যাচার মনে করিনা। মৃদুলের প্রতি তোমার ভালবাসা আমাকে নিষ্কৃতি দিয়েছে সাত্ত্বিক দংশন থেকে। ঐ দিন তুমি অনেক কেঁদেছিলে। কেন কেঁদেছিলে তাও আমি জানি। মৃদুল তোমার শুধু বন্ধু নয়, ভাই নয়, এক আপত্য স্নেহের পরিভাষা দেখি তোমার চোখে। তোমার কষ্টের জরায়ু ছিঁড়ে মৃদুল নামের একটি সন্তান জন্ম নেয়। অনিকেত ঘুমিয়ে গেল অনুরাধা জেগে ওঠে। নিজেকে অপরাধী মনে হয়। ঘুমন্ত অনিকেতের মুখের দিকে তাকিয়ে একটি মায়া অনুরাধাকে আচ্ছন্ন করে।
- বিরল রাতের মরমী ছোঁয়া, কত মান অভিমান, ডাহুক ডাকা রাতি- আমার নিত্য সাথী। ঈশ্বর জানেন আমি মনের কাছে কতটা সৎ! আমার পূজার ফুল কতটা পবিত্র! আমার মনটা গর্বে আনন্দে ফুলে ওঠে যখন দেখি তুমি মৃদুলের পাশে, আর আমাদের দুঃসময় মৃদুল আমাদের কাছে। একটি নিষ্পাপ মেয়েকে সে জীবন-সাথী হিসেবে পেয়েছে, কিন্তু বিধাতা তার সুখ কেড়ে নিয়েছে। কি অপরাধে? আমরা কেউই জানিনা।

মৃদুল ও অনিকেত দুই রেখার মাঝে অনুরাধা হয় কেন্দ্র বিন্দু। জীবন পরিক্রমায় সে বিন্দুকে কেন্দ্র করে রচিত হয় বন্ধুত্বের আবর্ত যা কিনা একটা নির্দিষ্ট বৃত্তে রূপ নেয়। মৃদুলের জীবনে যে মানুষটি অনাহুত ভাবে প্রবেশ করেছিল তার নাম হৈমন্তী।



পরের অংশ






Share on Facebook               Home Page             Published on: 6-Feb-2018

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far