bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



সেদিনের বড়দিন
রতন কুন্ডু



নীলখোলা পেরোতেই ইন্দ্র জ্যাঠা দাড়িয়ে যায়। হাতে বাঁশের কঞ্চি। গাই দুটোকে হাট হাট বলে উত্তর কোলায় নিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে জল আর জল। গাই দুটো এদিক সেদিক জংগল শুঁকছে মিঠা ঘাসের আশায়। কই যাও বাপ? সোনা হাতের গুলতি-বাঁশ পেছনে আড়াল করে জ্যাঠাকে পাশ কাটিয়ে যেতে উদগ্রীব হতেই খপ করে হাত ধরে ফেললেন- তোর জ্যাঠির কাছে যা। কাল নাড়ু মোয়া বানাইছে। সোনার চোখ চিক চিক করে। নাকে পাকানো গুড়ের গন্ধ ভেসে আসে। নারকেলের সাথে পোড়া গুড় মিলিয়ে কি অদ্ভুত নাড়ু! তিল মিশিয়ে মুড়ি দিয়ে তৈরি তিলের মোয়া, নারকেলি পুলি আর ক্ষীর লুকানো পাটি শাপ্টা। কাল চৈত্র সংক্রান্তি।

ওসমানের মা সন্তর্পণে সুপারি বাগানের ভেতর দিয়ে, পুকুরের কিনার ঘেঁষে ছাই এর মেদা বায়ে রেখে, বাঁশঝাড় আর কলাগাছের মাঝখান দিয়ে চুপিসারে কুন্ডু বাড়ির পেছনের দরোজায় উঁকি দেয়- সোনার মা আছো? কি কর বু? বিশাখা কাপড় ছাড়ছিল। সইয়ের গলার সুর শুনেই ভেজা কাপড়টা শরীরে জড়িয়ে বাইরে আসে। আহো বুজি। বারান্দায় আইসা বসো। না, বুজি আইজ বহুমনা, কাইল ঈদ। ম্যালা কাম। কাইল সোনারে নিয়া রাইতে আইও। খেজুর গুড়ের পায়েশ, তালের পিঠা আর দুধ-চিতই কাইলই বানায়া রাখছি। আহে কাইল সেমাই আর জর্দাটা রানমু। আইজ খাসি জবো দিছে ভাগায়। রাতা জবো দিবো দুইটা। আবার সোনার নাকে উৎসবের গন্ধ। জিভে জল আসে।

দেখতে দেখতে বাংলা বছর শেষ প্রান্তে। চৈত্র সংক্রান্তি পার হতেই হালখাতার ধুম। পরদিন বৈরাগী মেলা। মেজদার দেরাজ থেকে চুরি করা বারো আনা সোনার গোপন কুঠুরিতে জমা আছে। পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ বিহারের সামনের মাঠে এই মেলা। গেরুয়া কাপড়পরা চুল-বিহীন পুরোহিতরা মন্ত্র পড়ে। সোনাকে তা আকর্ষণ করেনা। তাকে আকর্ষণ করে গরম গরম ভাজা জিলাপি, গুড়ের সন্দেশ, নারকেলের বরফি, ছানার আমিত্তি আর পুতুল নাচ। সোনা মনে মনে ভাবে এই মেলা বছরে একদিন হয় কেন? অনেক দিন হয় না কেন?

পড়াশুনা সোনাকে আকৃষ্ট করেনা। তার সবচে খারাপ সময় যায় ডিসেম্বর মাসে। ঐ মাসে ফাইনাল পরীক্ষা। আবার ভালোও লাগে। পরীক্ষা শেষ হলেই বড়দিনের উৎসব। মনে প্রশ্ন আসে কিন্তু উত্তর পায় না। আচ্ছা সবাই বলে বড়দিন কিন্তু ঐ দিন সূর্যতো তাড়াতাড়ি ডুবে যায়। তাইলে এটা বড়দিন হয় কি করে। সাহস করে গীতা পিসিকে জিজ্ঞেস করে। গীতা পিসি বলে দেখিসনা গির্জায় ঘণ্টা বাজে আর তোরা সবাই দৌড়ে যাস। কেন যাস? সোনা বলে ওখানে পিঠা, পুলি, হালুয়া আর কেক বিতরণ করে। আমার খুব ভালো লাগে।

ধর্ম বিচারের বয়স সোনার এখনো হয়নি। সব ধর্মের ধর্মীয় উৎসবে চমৎকার চমৎকার খাবার, দাবার, মিঠাই মণ্ডা তাকে অনেক টানে। সে কোন পার্থক্য খুঁজে পায়না। দেখতেও সবাই একরকম। একটু পোশাক আসাকে পার্থক্য আছে এটা সত্যি। কেউ নামাজ পরে, কেউ পূজা করে আর কেউ প্রার্থনা করে। কোথাও মাইক বাজে, কোথাও ঘণ্টা আর কোথাও খোল-করতাল বাজে। সবাই মানবতার জয়গান করে, ঈশ্বরের বন্দনা করে।



দীর্ঘ এক যুগ ধরে খ্রীষ্টিয়ান ফেলোশিপ অব অস্ট্রেলিয়া প্রভু যীশুর জন্মদিন- বড়দিনের উৎসব পালন করে আসছে। যে বিশ্ব মানবতার কল্যাণের জন্য প্রভু যীশুর আবির্ভাব ঐ দিনটি অত্যন্ত ভাব-গম্ভীর পরিবেশে উদযাপন করা হয়। আমি প্রতিবছর সপরিবারে বড়দিনের উৎসবে যোগ দেই। সমবেত প্রার্থনা সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সবচে' আকর্ষণীয় হল সমস্ত শিশু, কিশোর, কিশোরীদের জন্য সান্টার উপহার। ঐসময়টা মনে হয় মাটির পৃথিবীতে স্বর্গ নেমে এসেছে। তারপর হরেক রকম নাড়ু, মোয়া, পিঠা, পায়েস, মিষ্টি, দই ও নানা ব্যঞ্জনের মধ্যাহ্ন ভোজে সবাই পরিতৃপ্ত হবার পরে এক বিরাট প্রশান্তি নিয়ে বাসায় ফেরে।



সিডনিতে আসার পর থেকেই প্রগতিশীল সংগঠনের একজন কর্ণধার ড. রোনাল্ড পাত্র’র সাথে পরিচয়। তাঁর আমন্ত্রণেই রকডেল ইউনাটিং চার্চে বড়দিনের উৎসবে যাওয়া। সেখানে পরিচয় হয় আমাদের একই এলাকার অনেক বন্ধুর সাথে। তাপসদা, মিতুদি, এ্যাডওয়ার্ড দা, মানিক দা, ষ্টিফেন দা, আগষ্টিন দা, গাব্রিয়েল দা, অশোক, মিঠু, লরেন্স, ন্যান্সি, শিল্পী সহ আরো অনেকের সাথে। ক্রমে ক্রমে আমরা তাদের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাই। শুধু আমরাই নই, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও বিভিন্ন অঞ্চলের লোক তাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বড়দিন উৎসব পালন করে। কখনো মনে হয় না এটি শুধু মাত্র একটি ধর্মের মিলন-মেলা। সব বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অব অস্ট্রেলিয়ার বড়দিন উৎসব। সততা, আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধাবোধের পুঁজি নিয়ে যারা এগিয়ে গেছেন। তাদের উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করছি।

ভালোবাসা দিয়েই ঈশ্বরের কৃপা অর্জন সম্ভব
হিংসা দিয়ে নয়
মানবতার জন্যই মহান যীশু-
অনুপম ক্রুশবিদ্ধ হয়।




রতন কুন্ডু, সিডনি





Share on Facebook               Home Page             Published on: 29-Dec-2017

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far