বিচ্ছেদের অনলে ডঃ রতন কুন্ডু
<< প্রথম আংশ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন
. . . . অফিসে কাজের লোড বেশী, আজ একটা কল ছিল, এক ক্লায়েন্টকে বিদায় করতে সময় লেগেছে, বাজারে গিয়েছিলাম মাগুর মাছ কিনতে, মফঃস্বলীয় এক দোস্ত দেরী করিয়ে দিল ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বিশ্বাস করিনা তুমি কান্দু পট্টি যাও। আমি বিশ্বাস করতে চাইনা তুমি অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট মহিলাকে নিয়ে কানামাছি আর লুকোচুরি খেল। আমি বিশ্বাস করিনা তুমি আমাকে আর ভালোবাসনা। কাজী সালাউদ্দিন রোড এর সংকীর্ণ বলয় আর শত্রুদের মুখে ছাই দিয়ে আমি তোমাকে নিয়ে চলে এলাম নিউজিল্যান্ড। এ জীবনে দ্বিতীয়বার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অনেক বৃষ্টি ঝড়ে তুমি এলে- যেন এক মুঠো রোদ্দুর, আমার দুচোখ ভরে। দুজনেই মেসি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী পেয়ে গেলাম। সুবাদে ওয়েলিংটনে একটি স্বপ্নের আবাস কিনে তৃতীয়বার সংসারী হলাম। এরই মধ্যে আমাদের সংসারে এলো দ্বিতীয় অতিথি “সমা”। যখন উত্তরোত্তর উন্নতি করছি তখনি হঠাৎ দেখলাম তোমার নৈতিক অবনতি। অসহায়ত্বের অজুহাতে কোন এক দেশী ভাবী তার সন্তানসহ সাহায্যপ্রার্থী হলেন আমাদের। আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারিনি। আমিই তোমাকে বলতাম তাকে সাহায্য করার জন্য। কারণ রাসুলুল্লাহ্ বলেছেন যে দুর্বলকে সাহায্য করে আমি হাশরের ময়দানে তাকে সাহায্য করব। সামান্য খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়ে প্রতিদিন আমার সাথে ঝগড়া করে তুমি আলাদা শুতে যেতে। আমি সারারাত ঘুমোতে পারতাম না। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকতাম। আমার মাকে চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা পাঠানোকে কেন্দ্র করে তুমি বাসায় তুলকালাম কাণ্ড শুরু করে দিলে। তমা- সমা ভয়ে তাদের দরজা বন্ধ করে থর থর করে কাঁপতে লাগল। আমি প্রতিবাদ করাতে তুমি আমার গায়ে হাত তুললে। তুমি যে এতোটা নিচে নামতে পারবে আমার আগে জানা ছিল না। আমার মনে সন্দেহ দানা বেঁধে ওঠে। আমি ইউনি থেকে অসুস্থ হয়ে একদিন বাসায় ফিরে আসি। মেয়েরা স্কুলে কিন্তু বাসার দরজা খোলা। এবং পরের ঘটনা তুমিও জান আমিও জানি। আমি সহ্য করতে পারলাম না। পার্ক ষ্ট্রীট এর ভাবীকে বিস্তারিত বললাম। রাগে- ক্ষোভে তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিলাম। এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় - কান্নায় আমি নীল হয়ে গেলাম। তুমি ফিরে এলেনা। ক্ষমা চাইলেনা। আমাকে সান্তনা দিলেনা। মেয়েদের আদর করলেনা। মহিলা আর তার সন্তানদের নিয়ে অকল্যান্ড চলে গেলে। তিতাস আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য ভালোবেসেছি। আমাদের সন্তানেরা বড় হচ্ছে। বাবার স্নেহ ওদের খুব প্রয়োজন। আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি। তুমি ফিরে এসো তিতাস। আমি তোমার প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি। আমার রক্তচাপ অনেক বেড়ে গেছে। ওষুধ দিয়ে রক্তনালী ফুলিয়ে চাপ কমাতে হয়। ডায়বেটিস ধরা পড়েছে। পরিশ্রম একদম করতে পারিনা। তোমার সন্তানের দোহাই- ফিরে এসো তিতাস। আমি আর পারছিনা ।
এক বসন্তের বিকেলে তিতাস ফিরে এলো ওয়েলিংটন। মেয়েরা গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি আমাদের ছেড়ে কোথায় গেলে! আম্মু আর হাসে না, কথা বলে না। তুমি আবার চলে যাবেনাতো? তমা- সমা দৌঁড়ে যায় মায়ের কাছে -আম্মু, আব্বু এসেছে। তাড়াতাড়ি এসো। সেতু তড়িঘড়ি করে ব্যস্ত হয়ে চোখের জল গোপন করে দৌড়ে আসে। অস্বস্তিকর নীরবতায় অনেকক্ষণ কেটে যায়। ভূমিকা হীন তিতাস মুখ খোলে- সেতু, জানোতো অকল্যান্ড খুব এক্সপেনসিভ এ্যরিয়া। একটি হাউজের জন্য ডাউন পেমেন্ট দিয়েছি। সেতু অতিকষ্টে উচ্চারণ করল- তার মানে তুমি এ বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে যেতে চাও। তোমার মেয়েরা, আমি কোথায় থাকব? তিতাস কোন কথা বলেনা।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি ২০০৬, হিলসডেল rlkundu@yahoo.com
|