অস্ট্রেলিয়ার পাখ-পাখালী (২) রফিক হক
প্রথম পর্বে বলেছিলাম অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি পাখী তাদের স্বকীয় স্বাতন্ত্র্যে অনন্য এবং নিজ নিজ স্বভাবের বৈশিষ্ট্যে অদ্বিতীয়। এবার এমন একটি জলজ পাখীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব যার স্বভাবে প্রকৃতির মাধুর্য নয় বরং স্বার্থপরতাই বেশি পরিস্ফুট। লেক বা নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে এই পাখীটাকে অবশ্যই দেখে থাকবেন। খাবারের লোভে অনেক সময় হয়তো আপনার কাছাকাছিও চলে এসেছে। বিশেষ কিছু আগ্রাসী স্বভাবের জন্য আমি এই পাখীটিকে “বদ-মেজাজী পাখী” তকমা দিয়েছি।
অস্ট্রেলিয়ান বা ইউরেশিয়ান কূট (Australian or Eurasian Coot - Fulica atra)
হাঁসের চাইতে ছোট, লম্বা লম্বা কালচে পা, কালো থেকে কালচে ধূসর রং, বুকের দিকটা কিছুটা হালকা ধূসর, তবে লক্ষণীয় ভাবে তাদের সুতীক্ষ্ণ ঠোঁট থেকে মাথার কিছুটা অংশ সাদা এবং চোখগুলি টকটকে লাল। এবার নিশ্চয়ই পাখীটাকে মনে করতে পারছেন। এই অস্ট্রেলিয় নেটিভ পাখীটি অস্ট্রেলিয়া সহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মিঠা-পানির জলাশয়ে দেখা যায়।
ব্রিডিং সিজনে এই পাখীর একেকটা জোড়া জলাশয়ের একেকটা এলাকা একরকম জবর দখল করে নেয়। তারপর সেই এলাকা প্রতিরক্ষা করতে গিয়ে স্বজাতি সহ অন্য যে কোন পাখীদের সাথে তারা ভয়ানক হিংস্র আচরণ করতে থাকে। এই সময়ে তাদের আক্রমণে ছোট ছোট জলজ পাখীদের প্রাণ হারাতেও দেখা যায়। অথচ নন-ব্রিডিং সিজনে তারা কিন্তু মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভাবে ঝাঁক বেঁধে থাকে। তারা উড়ে বেড়াতে বিশেষ পছন্দ করে না, পানির কিনারায় শুখনো ঘাস দিয়ে বাসা বানায়, তবে সেখানে আগে থেকে অন্য পাখীদের বাসা থাকলে সেই বাসা দখল করে নিতেও তাদের মধ্যে কোন প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা যায় না। ডিম ফুটে বের হবার পর বাচ্চাদের গায়ে পশমের মত পালক থাকে, যার শেষের অংশ হলুদ দেখা যায়। ঠোঁট লালচে হয়ে থাকে, কিন্তু ঠোঁটের মাথা হলুদ দেখা যায়। তারা বছরে ২-৩ বার ৮-১০টি করে ডিম পাড়ে। কিন্তু তবুও এই পাখীর পপুলেশন কখনো বেশী হয় না। International Union for Conservation of Nature (IUCN) এর লিস্ট অনুযায়ী এই পাখির পপুলেশন Least Concern হলেও পপুলেশন ক্রমাগত কমে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ, এই জাতের মা-বাবা পাখীদের চরম স্বার্থপরতা, নিজের বাচ্চাদের ব্যাপারেও তাদের মমতা এবং ধৈর্য অত্যন্ত সীমিত। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই পাখীর বাচ্চা অনাহারেই বেশি মারা যায়। ডিম ফুটে বের হবার পর মাত্র প্রথম আট-দশ দিন বাচ্চারা মায়ের উপর নির্ভরশীল থাকে। এই সময়ে খাবারের জন্য বাচ্চারা বেশী বিরক্ত করলে বদমেজাজি মা-পাখী বাচ্চাদের ঠুকরিয়ে মেরে ফেলতেও ইতস্তত করে না।
এই পাখী জলাশয়ের ৯ মিটার গভীরে ২০ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত ডুব দিয়ে খাবার সন্ধান করতে পারে, সেই সাথে তাদেরকে জলাশয়ের ধারে ডাঙ্গাতেও চড়ে খেতে দেখা যায়। তাদের খাদ্য তালিকায় সব কিছুই আছে, এমন কি অন্য পাখীর বাসার ডিম ঠুকরিয়ে খেতেও তাদের কোন অরুচি হয় না।
 রফিক হক, সিডনি
|