bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













অবৈজ্ঞানিক...
পুরুষোত্তম চক্রবর্তী



আপনার চারপাশের লোকজনকে পৃথিবীর পাঁচজন শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিকের নাম জিজ্ঞেস করুন তো? আইনস্টাইন আর নিউটন বাদ দিয়ে বলতে বলুন। দেখবেন, বলতে পারছে না!

ঠিক আছে, এবার জিজ্ঞেস করুন, পাঁচজন ভারতীয় বিজ্ঞানীর নাম করুন তো? দেখা যাবে, অতি কষ্ট করে আমতা আমতা করে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, মেঘনাদ সাহার নাম বলতে পেরেছেন।

কিন্তু ...বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্র নাথ বসু আর চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমনের মতো বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর কথা মনেই পড়লো না?

ঠিক আছে, এবারে জিজ্ঞেস করুন তো এই বৈজ্ঞানিকেরা কি বিষয় নিয়ে কাজ করেছিলেন? ডিটেলস্ দরকার নেই, মোটামুটি ওপর ওপর বলতে পারলেই হবে। দেখবেন, পারছেন না!

আচ্ছা, এবার জিজ্ঞেস করুন পাঁচজন বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম বা পাঁচজন ক্রিকেটারের নাম। দেখবেন, লোকজন শুধু তাঁদের নাম নয়, কে কোথায় থাকে, কার কি দক্ষতা, কে কার সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে, সব নাড়িনক্ষত্র গড় গড় করে বলে দেবে।

আসলে, বিজ্ঞান আটকে আছে পরীক্ষার নম্বর, উচ্চ মাধ্যমিকের সায়েন্স স্ট্রীম, জয়েন্ট এন্ট্রান্স, গ্রেড, ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ, পে-প্যাকেজ, আর আই-টি ইন্ডাস্ট্রিতে। এর বাইরে বিজ্ঞান নেই।

বিজ্ঞানী হতে হবে না, বিজ্ঞানমনস্ক হলেই চলবে। বিজ্ঞানমনস্কতা মানুষকে সচেতন করবে, যুক্তিবাদী করবে, বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা প্রদান করবে এবং সর্বোপরি সংস্কারমুক্ত করবে। বিজ্ঞানের ছাত্ররাও বিজ্ঞানের মৌলিক দর্শন জানে না, বিজ্ঞানের ইতিহাস পড়ে না, ফলসিফিকেশন কাকে বলে জানে না, হাইপোথেসিস কাকে বলে জানে না। অনেক বিজ্ঞানীদের দেখেছি জ্যোতিষীর কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন, আঙুলে কয়েকটি মূল্যবান পাথর ধারণ করছেন বা কবোজ, তাবিজ গলায় ঝোলাচ্ছেন। এঁরা পুঁথিগত ভাবে বিজ্ঞানের চর্চা করলেও আসলে এঁদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা জাগ্রতই হয়নি।

তাই বলছিলাম, বিজ্ঞানকে মন থেকে বা হৃদয় দিয়ে ভালো না বাসলে বিজ্ঞান না পড়াই উচিৎ। তবে এটা যে কোন বিষয়ের ক্ষেত্রেই কিছুটা সত্যি।

তাই, চারদিকে এত অবৈজ্ঞানিক চিন্তা রমরমা কেন, সেটা নিয়ে হা-হুতাশ করে লাভ নেই। বিজ্ঞানমনস্কতা কঠিন অভ্যাস এবং অধ্যবসায়ের দ্বারা অর্জনের জিনিস। অনেকটা সিক্স-প্যাকের মত। অর্জনের পরেও তা রীতিমতো এবং নিয়মিত ঘষামাজার মাধ্যমে ধরে রাখতে হয়। অবৈজ্ঞানিক চিন্তা হলো ইমোশনাল প্রোডাক্ট, সেটা বাই-ডিফল্ট গজায়, অনেক টা শরীরে মেদের মত। তাই তার উদযাপনও সহজ, কেন না তা মনকে একপ্রকারের আরাম দেয়।

অলস জীবন ছেড়ে বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের দিকে আমাদের উৎসাহ নেই। সেটা মানুষের দোষ নয়, কেন না স্কুল-কলেজে, সামাজিক ক্ষেত্রে সেই মানসিকতা গড়ে তোলার চিন্তা বা পরিকাঠামো নেই, আয়োজনও নেই।

জীবনের সঙ্গে বিজ্ঞানের যোগ যতদিন না ওতপ্রোত হবে, ততদিন এই ট্র্যাডিশন সমানে চলবে।




প্রফেসর পুরুষোত্তম চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে






Share on Facebook               Home Page             Published on: 15-Oct-2020

Coming Events: