bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













অতিমারী আবহে এবছরের দুর্গাপুজো
সম্পর্কে আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি

পুরুষোত্তম চক্রবর্তী



দুর্গাপুজো আমাদের তথা বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব। আমাদের প্রাণের উৎসব। আমাদের হৃদয়ের উৎসব। আমাদের আবেগ বা সেন্টিমেন্ট জড়িত এই উৎসবের সাথে। এই মহা উৎসবের সাথে ছোট মাঝারি বা বড় ব্যবসা এবং নানাধরনের ক্ষুদ্রশিল্প জড়িত, জানি। এই উৎসবের সাথে শত শত মানুষের রুজি - রোজগার জড়িয়ে আছে, তাও জানি। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে শিল্পের নৈপুণ্য ও উৎকর্ষতা বিভাসিত হয়। আমরা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সারাটা বছর ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত থাকি মা-দুর্গার আগমনবার্তা টি শুনবার জন্য। এ নিয়ে বিন্দুমাত্র কোন দ্বিমত নেই। তবু মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন জাগে, পরম সংকটকালেও কি এই উৎসব পালন করাটা কি এতটাই জরুরি?
অতিমারী করোনা আবহে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয় জনসমক্ষে পেশ করতে চাই যা হৃদয়বিদারক ও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমি একজন রোটারিয়ান হিসেবে কলকাতার বা বাংলাদেশের রোটারি ক্লাবের সদস্যদের সাথে আমার কিছুটা ব্যক্তিগত পরিচিতি বা সখ্যতা আছে। সম্প্রতি কলকাতার রোটারি ক্লাবের নর্থ সাবার্বান শাখার সভাপতি মাননীয়া শিপ্রা দুবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন। শ্রীমতী দুবে একজন মহীয়সী নারী ছিলেন। তাঁর সুমধুর ব্যবহার ও আন্তরিকতা প্রতিটি মানুষকে স্পর্শ করেছে। একজন উঁচু মানের রোটারিয়ান হিসেবে তাঁর কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি ছিল অসীম ও সুদূরপ্রসারী। বিগত কয়েক মাস ধরে তিনি নিরলস ভাবে জনসেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এই অতিমারী করোনার করালগ্রাসকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তিনি যেভাবে বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন, তার উদাহরণ তিনি একমাত্র নিজেই। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক জনসেবায় আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি এবং প্রতিটি রোটারিয়ান সমৃদ্ধ হয়েছে। একজন সুস্থ ও প্রাণবন্ত মানুষকে করোনা কিভাবে হঠাৎ ছিনিয়ে নিতে পারে তা বর্ণনা করা দু:সাধ্য। শুধু মানুষের সেবা করতে গিয়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত হলেন এবং টানা দু’সপ্তাহের বেশী মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। যেন মনে হল, মা দশভুজার আগমনের আগেই মর্তে আরেক দশভুজা নারীর চিরবিদায় ঘটলো! তাঁর এই অকালমৃত্যু আমাদের আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে করোনা কত ভয়ঙ্কর হতে পারে!

আচ্ছা, যুদ্ধ লাগলে কি দেশে উৎসব পালিত হয়? কেউ মারা গেলে সেই বাড়িতে সেবছর শাস্ত্রমতে পুজোআর্চা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকে শুনেছি। অথচ করোনার মত একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেলেন এবং এখনও আক্রান্ত হচ্ছেন; সারা বিশ্ব একরকম স্তব্ধ! এই মুহূর্তে আমাদের দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক। তবুও প্রতিবারের মত পুজো করতেই হবে? ঠাকুর দেখতেই হবে?

ডাক্তারদের জন্য থালা বাজাব শুধু, তাঁদের মৃত্যুকে সম্মান দেখাতে নিজেদের আনন্দে কণামাত্র ছাড় দেব না? এ কেমন সমাজে বাস করছি আমরা? আমেরিকার জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে সহানুভূতিতে এবং প্রতিবাদে মুখর হয়েছি আমরা, কিন্তু আমাদের শত শত চিকিৎসাকর্মী, সমাজসেবী এবং সাধারণ মানুষের জীবনদানের সমর্থনে কোনো সহানুভূতির বাণী নেই? নাকি আমরা শুধু বাণীতেই প্রতিবাদ জানাই, কাজে করতে চাই না?

আচ্ছা, পারি না কি সবাই আমরা একজোট হয়ে বলতে, চাই না এবছর মণ্ডপের পুজো, হোক ভার্চুয়াল পুজো? ভার্চুয়াল শ্রাদ্ধ-ক্রিয়া করতে শিখলাম, স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ভার্চুয়াল ক্লাস নিতে শিখলাম, প্রিয়জনদের মৃত্যুতে তাঁদেরকে চোখের দেখাটুকু পর্যন্ত না দেখে শেষ বিদায় জানানোর হৃদয়বিদারক ঘটনাও মেনে নিলাম, এমনকি বড় বড় আন্তর্জাতিক সেমিনারে অনলাইন বক্তৃতাও দিলাম, আর পুজোর প্যান্ডেলে জমায়েত হয়ে আনন্দ বা উল্লাসটুকু ছাড়তে পারব না? একটা তো মাত্র বছর, একটু না হয় কষ্টই করতাম এ বছরটা!

আপনাদের কারো এমনটা কি মনে হয় না? কজন বলতে প্রস্তুত, এবছর পুজো বাইরে গিয়ে নয়, ঘরে বসে করবো? এবছর আনন্দযাপন নয়, শোকযাপন! এবছর উৎসবের উদযাপন নয়, আমরা ব্যতিক্রমী হতে চাই। এবছর আমরা মানুষের ধর্ম পালন করবো। এইটুকু করলে অন্যের প্রাণদানের মূল্য যদি নাও দিতে চাই, নিজেদের এতদিন ইঁদুরের মত ঘরে বসে কাটানোরও একটা মানে হবে, একটা ভবিষ্যৎ থাকবে। নইলে সব বৃথা হয়ে যাবে! ধর্মীয় আবেগের চেয়ে জীবনের মূল্য যে অনেকগুণ বেশী, সেই সহজ সত্যটুকু জীবন দিয়ে বুঝবার সময় কি এখনও আসেনি?

আমরা কি জোর গলায় একরকম মাথার দিব্বি দিয়ে বলতে পারছি যে এবার পুজোমন্ডপে ভিড় করবো না, গায়ে - গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেবো না, প্রত্যেকে মুখে মাস্ক পরে থাকবো, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবো, একসাথে জটলা করে আসর বসাবো না বা ভোজসভায় অংশগ্রহণ করবো না, আনন্দের জোয়ারে গা - ভাসিয়ে দেবো না? তা যদি না পারি, তাহলে আমাদের এতদিনের কৃচ্ছসাধন সব ব্যর্থ হয়ে যাবে, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাঙালির অভিমান, গর্ব এবং অহংকার ভূলুণ্ঠিত হবে। শ্রীমতী শিপ্রা দুবের মত আরো অজস্র মানুষকে আমরা হারিয়ে ফেলবো।




প্রফেসর পুরুষোত্তম চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে






Share on Facebook               Home Page             Published on: 25-Oct-2020

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far