প্রসঙ্গ: প্রকাশনা উৎসব “বিশ্বায়নে শহীদ মিনার” নির্মল পাল পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা যেভাবে সিডনিবাসীসহ পৃথিবীর প্রায় সকল একুশ-প্রেমীর দৃষ্টি আকর্ষণে এসেছিল, ঠিক একই ভাবে না হলেও অনেকটা ভিন্ন ধাঁচে “বিশ্বায়নে শহীদ মিনার” গ্রন্থটি বাংলাদেশ এবং সিডনিবাসী একুশ-প্রেমীদের দৃষ্টি কেড়েছে। বিশেষ করে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণের নজরুল মঞ্চে একুশের বইমেলায় গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় খবরের অংশ হওয়া ও বইমেলার প্রচারণায় খবরে প্রাধান্য পাওয়ার পর সিডনিতে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল আয়োজিত সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলায় প্রায় ১৪-১৫ হাজার বাঙালির উপস্থিতিতে মান্যবর হাই কমিশনার মোড়ক উন্মোচন করায় গ্রন্থটি নিয়ে সর্ব সাধারণের মধ্যে বাড়তি কৌতূহল হওয়াটা স্বাভাবিক। গ্রন্থটি কেন বাংলাদেশ সরকার, সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিশিষ্ট গুণী ব্যক্তিগণ এবং মিডিয়ার নজর কাড়ল এই প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। বস্তুত: এই কৌতূহলের অবসান এবং একুশের কর্মকাণ্ডে সকলকে সম্পৃক্ত করার লক্ষে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসবের আয়োজনের মুখ্য উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য ক্যনবেরাস্থ হাই কমিশন অফিস গ্রন্থটি বিশ্বের সকল বাংলাদেশ হাই কমিশন অফিসে সরবরাহ করার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে একুশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে অনুমোদনের পর থেকেই সিডনিবাসীর শহীদ মিনারের স্বপ্ন বাস্তবায়নে গঠনমূলক মোড় নেয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সিডনিতে পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বহুবিধ নতুন প্রত্যাশার জন্ম দিলেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা, কৌতূহল, যুগপৎ সুদীর্ঘ পরিকল্পনার সকল গতিই থমকে যায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংগঠনিক জটিলতা বা অস্বচ্ছতার কারণে। পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধের কৌতূহলী নকশা ও স্থাপত্য কলায় একুশের বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিকতার যে মৌলিক চেতনা সন্নিবেশিত হয়ে স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, গোড়াপত্তন হয়েছে নতুন ইতিহাসের, তার অন্তঃস্থিত তথ্য অজানা থেকে গেছে সংশ্লিষ্ট অথবা আলোচনা-সমালোচনা মুখর সকলের কাছে। একুশের বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জনে সকল ভাষাভাষীকে আমাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ম্লান হয়ে আমাদের প্রথাগত বইমেলার মোড়কেই আটকে পড়েছে, থমকে গেছে একুশের বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিকতা, সর্বশেষে বাধাগ্রস্ত হয়েছে “বিশ্বায়নে শহীদ মিনার” গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন। এমতাবস্থায়, বহুজাতিক সমাজে আমাদের শুধুই বইমেলার বন্ধ্যত্বের মোড়ক থেকে পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রতিষ্ঠিত চেতনাকে পুনর্জীবিত করার জন্য “বিশ্বায়নে শহীদ মিনার” গ্রন্থটির রচনার অনিবার্যতা এখন প্রমাণিত সত্য এবং ছিল জরুরী। আর এই মহান একুশের বৈশ্বিক চেতনার ভিত্তি ও গৃহীত কৌশলকে বেগবান করার আঙ্গিকে বাঙালির সকল মাতৃভাষা রক্ষার দায়বদ্ধতা এবং প্রদেয় প্রতিশ্রুতিকে কিভাবে পুনর্জীবিত করা যায় সেই পরিকল্পনা নিয়ে এই প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন।
প্রকাশনা উৎসবে থাকছে ‘একুশ’, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’, ‘একুশের বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিকতা’, এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধে বিধৃত একুশের ঐতিহ্যের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা। তারপর গ্রন্থে উত্থাপিত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল উপস্থিত সুধিজনের সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে গ্রন্থটির বিষয়াদির উপর গঠনমূলক ও সমন্বিত মতামত গ্রহণ। উপস্থিত সুধিজনের একুশ ভিত্তিক ব্যক্তিগত মতামত, কৌতূহল ও প্রশ্ন নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা। সবশেষে একুশের বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিকতা পরিকল্পনা বিষয়ে সার্বিক আলোচনার বিষয়াদি প্রকাশনা উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে বিবেচিত।
আসছে ৮ই জুন রবিবার বিকাল ৩-৮টায় কোগরা স্কুল অব আর্টস এ অনুষ্ঠিতব্য এই প্রকাশনা উৎসবে আমাদের মহান একুশের বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিকতার আলোকে আমার আপনার সকল একুশ-প্রেমীর সক্রিয় অংশগ্রহণ সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণের সুদূর প্রসারী বিশ্বজনীন পথ পরিক্রমায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
|