রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে সিডনিতে গণ-সমাবেশ
নাইম আবদুল্লাহ: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া এবং ভিটে-বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে উত্তাল বিক্ষোভ সমাবেশে প্রকম্পিত হলো অস্ট্রেলিয়ার সিডনির প্রাণকেন্দ্র মার্টিন প্লেস চত্বর।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর (রোববার) সিডনিতে প্রবাসী সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সিডনি প্রেস ও মিডিয়া কাউন্সিলে’র আয়োজনে চ্যানেল সেভেন ভবনের সামনে ওই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সিডনির প্রাণকেন্দ্র মার্টিন প্লেস চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভের জন্য সময় দুপুর ৩টা নির্ধারণ করা হলেও দুপুর ২টার মধ্যেই বিশাল চত্বরটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। শুরু হয় বিক্ষিপ্ত শ্লোগান ও বক্তব্য। প্রতিবাদ মুখর স্লোগান তোলেন নারী, পুরুষ, শিশু সহ সব বয়সের মানুষ। শত শত বছর ধরে আরাকানে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, গণ-ধর্ষণ, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে ভস্ম ও দেশান্তরিত করার প্রতিবাদে মরিয়া হয়ে উঠেন সিডনি-বাসী।
সমাবেশে অস্ট্রেলিয়া বসবাসরত বিভিন্ন দেশের প্রায় অর্ধ শতাধিক সংগঠন এবং কয়েক হাজার মানুষ এতে অংশ নেয়। এদের বেশির ভাগের হাতে রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ সম্বলিত লেখা, নির্যাতনের সাম্প্রতিক ছবি, বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ছিল।
বিক্ষোভ মিছিলের মূল স্লোগান ছিল মিয়ানমার সরকার ও অং সান সু চি-র বিরুদ্ধে এবং হত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপের দাবিতে।
প্রায় দুই ঘণ্টা-ব্যাপী চলা এ বিক্ষোভ সমাবেশে প্রতিবাদ মুখর স্লোগান তোলেন নারী শিশু সহ সব বয়সের মানুষ। সিডনি প্রেস ও মিডিয়া কাউন্সিলের সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুল্লাহ ইউসুফ শামিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠান শুরুর পর স্বাগত বক্তব্য দেন কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মেদ আব্দুল মতিন ও সদস্য ডঃ রতন কুণ্ডু।
সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মেদ আব্দুল মতিন তার বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মমও নৃশংস নির্যাতন এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধ হওয়ার পরও বিশ্ব বিবেক আজ নীরবতা পালন পালন করছে। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই অসহায় মানুষদের সাথে আছি। তিনি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়া সরকার, মায়ানমার হাই কমিশন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারক লিপি পাঠানোর কথাও জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মিয়ানমারে লেডি হিটলার অং সান সুচির সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও হত্যা দেখে বিশ্ব বিবেক স্তব্ধ। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তায় হুমকি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে’।
সমাবেশে অতি দ্রুত রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের উপর অর্থনৈতিক অবরোধসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক আদালতে এ গণহত্যার বিচারের দাবি জানান তারা।
বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে সিডনি প্রবাসী সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকসহ লেবানিজ, রোহিঙ্গা, ভারত এবং পাকিস্তানের কমিউনিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নাইম আবদুল্লাহ, সিডনি
|