bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia














শিকড়ের সন্ধানে
মোস্তফা আব্দুল্লাহ

“যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ ভাই, পাইলেও পাইতে পারো মানিক রতন”


এমনি মানিক রতনের সন্ধান পেয়েছেন আমাদের বাঙ্গালি মেয়ে সামিয়া খাতুন। ইতিহাসের ছাত্রী সামিয়ার গবেষণার বিষয়বস্তু ভারত উপমহাদেশের সাথে অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক যোগ-বন্ধন। এই বিষয়ের উপর সিডনি ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট করার সময় তিনি ব্রোকেন হিল গিয়েছিলেন তথ্য অনুসন্ধানে। ঘুরতে ঘুরতে উঠলেন গিয়ে ১৮৮০ সালে আফগান উট চালকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দুটি মসজিদের একটিতে। এক কোণে সংরক্ষিত কিছু বই পত্রের উপর চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎই এক জায়গায় এসে চক্ষুটা স্থির হয়ে গেল। নিজের দৃষ্টিকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না - এ কি করে সম্ভব! এখানে বাংলা বই? উনবিংশ শতাব্দীতে এই মহাদেশে বঙ্গ সন্তানের পদচারণা?

অন্যান্য বইয়ের সাথে এটাকে সংরক্ষিত করে রাখা হয়ে ছিল কোরান শরীফ মনে করে। সামিয়া তার মাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে ওটা একটা বাংলা পুথি। আরও অনুসন্ধানে জানা গেল পুথিটির নাম ‘কাসাসুল আম্বিয়া’ এবং সেটা প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৪৯ সালে কলকাতা থেকে। পুথি পাঠের প্রচলন ও প্রকাশ আজ নাই বললেই চলে। এক সময় সমগ্র বাংলা জুড়েই ধর্মীও, সামাজিক, বিনোদন মূলক আচার অনুষ্ঠানে পুথি পাঠের আচার ছিল। কাব্যিক ছন্দে লেখা নবী ও মনীষীদের জীবনালেখ্য সুরেলা কণ্ঠে আবৃতি করতেন মৌলানা সাহেব বা তেমন কেউ।

বইটির আবিষ্কার সামিয়াকে করে তুলল আরও অনুসন্ধানী। ছুটে গেলেন কলকাতা, শিকড়ের সন্ধানে – যেখান থেকে ওই পুথিটির যাত্রা শুরু হয়ে শেষ হয়েছিল ব্রোকেন হিলের এই মসজিদে উনবিংশ শতাব্দীর কোন এক সময়। ফিরে এসে আরও বহু পরিশ্রম ও তথ্য আহরণের পর লিপিবদ্ধ করলেন তার কয়েক বৎসরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল: Camels, Ships and Trains: Australia in an Indian Ocean Context। সামিয়ার আশা যে বইটা ২০১৫ সালের প্রথম দিকেই প্রকাশিত হতে পারে। সামিয়ার ভাষ্য মতে ভারতে ইংরেজদের উপনিবেশের সুবাদে অস্ট্রেলিয়ার জন্ম লগ্ন থেকেই দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত উপমহাদেশীয়রা এ দেশে আসা শুরু করে শ্রমিক, গৃহ-ভৃত্য, আয়া ও এ ধরনের অন্য সব পেশায়। মনে করা হয় ভারত উপমহাদেশ থেকে যারা প্রথম এ দেশে পদার্পণ করেন তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন জাহাজের বাঙ্গালি শ্রমিক। তখন কার ভাষায় তাদের বলা হতো লাস্কার যাদের বেশির ভাগকেই নিয়োগ দেয়া হতো কলকাতা বন্দর থেকে। উনবিংশ শতাব্দীতে বাঙ্গালীদের এই মহাদেশে পদার্পণের এক বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায় সিডনি গেজেট থেকে: ১৮০৬ সালের ২৩শে মার্চ কলকাতার লাস্কাররা সিডনির রাজপথে মহররম উপলক্ষে এক চিত্তাকর্ষণীয় কুচকাওয়াজের আয়োজন করে। এই লাস্কারদের জাহাজে করেই ১৮৬০ সন থেকে আসতে শুরু করে উট চালকরা। যদিও এই উট চালকরা শুধু ‘আফগান’ নামেই পরিচিত, প্রকৃত পক্ষে এদের মধ্যে ভারতের উপমহাদেশের অন্যান্য অংশের তথা পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ থেকেও আগতরা ছিল। এমনকি উপমহাদেশর অন্যান্য স্থান থেকে আগতদের মধ্যে যারা ফেরি করে বিভিন্ন সামগ্রী প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্রি করে বেড়াতেন তাদেরকেও স্থানীয়রা আফগান বলেই জানত ।

১৯০১ সালে White Australia Policy চালু হওয়ার পর থেকে ভারত উপমহাদেশ থেকে আগতদের সংখ্যায় কিছুটা ভাটা পড়ে তবে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায় নি। তবে মোটর যান চালু হওয়ার পর থেকে উটের প্রয়োজন কমার কারণে এই পেশার প্রয়োজন কমতে থাকে এবং এদের বেশির ভাগই অন্যান্য পেশায় জড়িয়ে পড়ে। এই আইন চালু হওয়ার পর ইউরোপিয়ানদের বৈষম্যমূলক ও বৈরী আচরণ বৃদ্ধির কারণে অনেকেই শহরাঞ্চল ছেড়ে স্থানীয় আদিবাসীদের কাছাকাছি বসবাস শুরু করে এবং অনেকেই তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে এদের মাঝেই মিলিয়ে যায়। সঠিক ভাবে খোঁজ করতে পারলে হয়ত এদের মাঝে আমাদের অনেক পূর্বসূরির বংশধরদের খোঁজ পাওয়া যাবে।

১৯৭০ সালে ওই জাতিগত বর্ণ বৈষম্য মূলক আইন বাতিল হওয়ার পর থেকে কিছু কিছু বাঙ্গালি পেশাজীবীদের আবার এদেশে অভিবাসন শুরু হয়। এর আগে থেকেও অল্প কিছু বাঙালী এদেশে বাস করতেন। এরা মূলত কোন না কোন ভাবে এখানে এসে স্থানীয় কাউকে বিবাহ করে বা অন্য কোন উপায়ে রয়ে গিয়েছিলেন। এদের কারো কারো সাথে সত্তুরের প্রথম দিকে যারা এসেছিলেন তাদের যোগাযোগও হয়েছিল। এমন একজনের কথা শুনেছিলাম ভূতত্ত্ববিদ জনাব নজরুল ইসলামের কাছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ চলা কালীন সময়ে ওনারা মুষ্টিমেয় কয়েকজন বাংলাদেশী যখন মুক্তি যুদ্ধের সপক্ষে সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন তখন একদিন একজন টেলিফোন করে বাংলাদেশের সমর্থনে যে কোন উপায়ে তার সহযোগিতার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। নজরুল ভাই তার সাথে দেখা করতে গিয়ে প্রথমে মনে করেন যে ভুল ঠিকানায় গিয়েছেন। পরিবারের কাউকেই বাঙ্গালী বংশোদ্ভূত বলে মনে হয়নি। পরে আলাপে জানা গেল যে পরিবারের প্রধান বহু আগে নাবিক হিসাবে এখানে এসে রয়ে যান। উল্লেখযোগ্য যে তিনি একটা ভালো অঙ্কের অর্থ সাহায্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। তবে অনুতাপের বিষয় যে সেই বাঙালী ভদ্রলোকের নাম ও ঠিকানা কেউই মনে করতে পারছেন না।

এমনি করে আমাদের অনেক শিকড়ই হারিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন – যদি না আমরা কেউ এই শিকড়ের সন্ধান শুরু করে তার সংরক্ষণ করি। কোনদিন যদি আমাদেরই কোন উত্তরসূরি জানতে চায় কোথায় তার শুরু, কারা তার পূর্বসূরি, কেমন ছিল তারা, কেনই বা তাকে আনা হয়েছিল এখানে, কেন সে বঞ্চিত হোল তার পূর্বপুরুষের পরিচয় থেকে – তখন অলক্ষ্যে থেকেও আর আমাদের গ্লানি ও লজ্জায় মুখ লুকবার অবকাশ থাকবে না। হয়ত আফ্রিকান বংশোদ্ভূত বারাক ওবামার মত একদিন এদেশের প্রধান মন্ত্রীও হবে আমাদেরই কোন উত্তরসূরি কিন্তু কেউ জানবেও না যে তার ধমনিতে বইছে আমাদেরই রক্ত।




* Shubha Singh of The Indian Diaspora এর সাথে ইমেইল এর মাধ্যমে সামিয়া খাতুনের সাক্ষাতকারের অংশবিশেষ অবলম্বনে সঙ্কলিত।

* সামিয়া খাতুনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ Samia Khatun is a McKenzie Postdoctoral fellow at the University of Melbourne and is collaborating with workers rights activists in Bangladesh to produce a 400-year history of textile workers from Mughal Bengal to contemporary Bangladesh. Taking a slices-through-time approach, Samia is investigating how workers have memorialised five key moments in the history of textile production through song and poetry beginning with Mughal Bengal and ending with the Rana Plaza collapse in contemporary Bangladesh. Samia completed her PhD in 2012 at the University of Sydney, where her research examined connections between South Asia and Australia using Aboriginal and South Asian language materials. Since then she has held postdoctoral fellowships at Zentrum Moderner Orient, Berlin and The Centre for Research on Colonial Culture, Dunedin as well as a writing fellowship at the Asian-American Writers Workshop, New York. Samia has also made documentaries on Australian race relations that have screened on SBS and ABC-TV. (The University of Melbourne এর School of Historical and Philosophical Studies এর ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহীত)

* কয়েক দিন আগে sydneybashi-bangla.com এ বিষয়ের উপর জনাব ফকরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর লেখাটি একটি সময় উপযোগী পদক্ষেপ বলে অভিনন্দন জানাই।

* photo courtesy: bdtruth.com.au / sbs.com.au / theindiandiaspora.com



মোস্তফা আব্দুল্লাহ, গ্লেনউড, সিডনি






Share on Facebook               Home Page             Published on: 19-Feb-2015

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far