অন্য মাত্রা মোস্তফা আব্দুল্লাহ
বিদেশ থেকে ঢাকায় আসা এক আত্মীয়র সাথে বেড়াতে গিয়ে পরিচিত হলাম তারই এক কালের একজন সহকর্মীর সাথে। ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা দুইজনই যার যার কর্মস্থলে এক সময় দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন – বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। নিজেদের কোন সন্তানাদি নাই - নিঃসন্তান দম্পতির একমাত্র দত্তক নেয়া বিবাহিত কন্যাটি স্বামী সংসার নিয়ে আমেরিকায় বসবাস করে। সেই পালিত কন্যাটিকে দেখার জন্য প্রতি বৎসরই নিদেন পক্ষে একবার করে হলেও তারা আমেরিকাতে যাতায়াত করেন। বেশ কিছু দিন আগের কথা, সেবার তিনি একাই গিয়েছিলেন। ফিরে আসার দিন যথারীতি এয়ারপোর্টে এসে কন্যার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় কেমন জানি বুকের কাছটায় একটু চিন চিন ব্যথার মত মনে হোল – চোখের দৃষ্টিটাও স্থির রাখতে পারছিলেন না। একটু জিরিয়ে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে ভেবে কাছেই একটা সোফায় গিয়ে বসলেন। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে উঠতে যেতেই কন্যাটি তার হাত ধরে একরকম জোর করেই বসিয়ে দিয়ে বলল যে ডাক্তার দেখার আগে কোন ভাবেই যেন সে এখান থেকে না উঠে। "এতো এক উটকো ঝামেলায় পরা গেল" ভাবলেন ভদ্রলোক "কিছুক্ষণের মধ্যে যেতে না পারলে যে প্লেনই মিস হয়ে যাবে"।
মেয়েকে নানা ভাবে বোঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে একরকম জোর করেই উঠতে গেলে মেয়েটি দৃঢ় ভাবে বোলে দিলো যে সে যদি এখান থেকে এক পাও নরার চেষ্টা করে তবে সিকিউরিটিকে ডেকে জানিয়ে দেবে যে একজন চরম অসুস্থ ব্যক্তি প্লেনে উঠতে যাচ্ছে। অগত্যা তিনি আবার সোফায় গিয়ে বসলেন আর সাথে সাথেই সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লেন।
হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জানা গেল যে মারাত্মক রকম ভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রীড়া বন্ধ হয়ে প্রায় সমস্ত অঙ্গ সমূহই অকার্যকর হয়ে একেবারে কোমাতে চলে গেছেন তিনি। কয়েকদিনের জন্য লাইফ-সাপোর্টে রাখা হোল স্ত্রীর নিউইয়র্ক পৌছা অব্ধি। দিন দশেক পর জীবনের আর কোন আশা না দেখতে পেয়ে স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে লাইফ-সাপোর্ট খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল ডাক্তাররা। কিন্তু প্রচণ্ড রকম বাধ সাধল পালিত কন্যাটি। কিছুতেই সে লাইফ-সাপোর্ট খুলতে দেবে না। তার নিশ্চিত বিশ্বাস যে তার বাবা সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে জেগে উঠবেন। তার পিরা পিরিতে হাসপাতাল আরও দুদিনের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি হোল। দুদিন পর লাইফ-সাপোর্ট খুলতে গেলে ডাক্তারের পা জড়িয়ে ধরে মেয়েটি হৃদয়বিদারক কান্না শুরু করল – তার একটাই আকুতি, আর মাত্র একটি রাত্রি সময় দেয়ার জন্য। সেখানে উপস্থিত আমার সেই আত্মীয়র মুখে শোনা যে একমাত্র পাষাণহৃদয় ছাড়া কারো পক্ষে ওই কান্নাকে উপেক্ষা করা কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না। অগত্যা ডাক্তার আর এক রাত্রির সময় দিয়ে জানিয়ে দিলেন যে নিশ্চিত ভাবেই পরের দিন সকালে লাইফ-সাপোর্ট খুলে ফেলা হবে।
সাথে সাথেই মেয়েটি দরজার সামনেই সেজদায় বসে পড়ল। সেই বিকেল থেকে পরদিন ভোর অব্ধি সেই একই অবস্থায় পরে রইল। সকাল হতেই ডাক্তার তাকে পাশ কাটিয়ে ঘড়ে ঢুকে লাইফ-সাপোর্ট খুলে দিতেই ভদ্রলোক চোখ খুলে জানতে চাইলেন সেখানে তিনি কেমন করে আসলেন!
ঘটনটা যে একেবারেই অনন্য তেমন নিশ্চয়ই নয়। এধরনের আরও ঘটনার কথা অনেকেই শুনে থাকবেন হয়ত। আমার ধারনা আমার মত অনেকেই এটাকে একান্তই মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা বা এখতিয়ার বলে মেনে নেন। আবার কেও কেও মেনে নিয়েও মনে মনে নিজের কাছেই প্রশ্ন রাখেন; আরও বহু সন্তানইতো তাদের মৃতপ্রায় পিতা মাতার জন্য এভাবেই প্রার্থনা করে, তাদের অনেকেরই সে প্রার্থনা পূর্ণ হয় না কেন? আর কিছু সংখ্যক মেয়েটির সেজদায় বসে প্রার্থনা ও ভদ্রলোকটির চোখ মেলে চাওয়াকে সম-স্থানিকতা বা কো-ইনসিডেন্স বলে উড়িয়ে দেন। আমি সে সব তর্কে না গিয়ে বিষয়টাকে একটা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে পর্যালোচনা করার সাহস করছি।
শুরুতেই বলে নেই যে কোন এক সময় আমি পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। তবে কর্ম জীবনে পদার্থ বিদ্যার ধারে কাছেও যাই নাই। আজ সেই পদার্থ বিজ্ঞানেরই কোয়ান্টাম মডেল নিয়ে কথা বলার বাসনা পোষণ করছি। এটা অনেকটা "পিপীলিকার পাখা উঠে মরিবার তরে"এর মত। বলতে দ্বিধা নাই অনার্স ক্লাসে যখন কোয়ান্টাম মেকানিক্স পরেছি তখন তার এক বর্ণ ও বুঝি নাই – তাই বলে অবশ্য পরীক্ষার খাতায় পুরো নম্বর পেয়ে পাশ করতে বাধে নাই! আজ যে তা বুঝে ফেলেছি সেটা বললে পাগলের প্রলাপ হয়ে যাবে। তবুও আমার মত করে যেটুকু বুঝতে পেরেছি বলে মনে করছি, সে টুকুই আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি।
এত দিন আমরা জেনে এসেছি যে আমাদের চার পাশের সব কিছুরই গঠনের মৌলিক ক্ষুদ্রতম উপাদান হল পরমাণু। যার কেন্দ্রে বিন্দুতে রয়েছে একটি মূল-বস্তু, যাকে বলা হয় নিউক্লিয়াস। পরমাণুর বাকি অংশ জুড়ে রয়েছে ইলেকট্রন আর প্রোটন যা নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ঘুরে এবং এর সব গুলিই এক একটা জড় বস্তু। এটাই ছিল প্রচলিত জ্ঞান বা বিশ্বাস।
মৌলিক বস্তুর এই ধারনাকে আমূল বদলে দেয় কোয়ান্টাম তত্ত্ব। কোয়ান্টাম তত্ত্ব যুক্তি ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এটাকেই প্রমাণিত করে যে পরমাণুর কোন নির্দিষ্ট গঠন নাই এবং ইলেকট্রন বা প্রোটন, নিউক্লিয়াস এর চার পাশ দিয়ে কোন নির্দিষ্ট নিয়মেও ঘুরছে না। একই পরমাণু সময় ও স্থান কাল ভেদে কখনো জড় অবস্থায় বা কখনো অদৃশ্য শক্তি বা এনার্জি রূপে অবস্থান করতে পারে। পরমাণুটি কখন কি অবস্থায় থাকবে তা নির্ভর করে যিনি পরমাণুটি পর্যবেক্ষণ বা পরিমাপ করছেন সেই পর্যবেক্ষক এর প্রত্যাশার ওপর। অর্থাৎ পর্যবেক্ষক যদি মনে করেন যে একটি জড় বিন্দুর (ইলেকট্রন/প্রোটন) আবির্ভাব ঘটবে তখনই তার সামনে এসে একটি জড় বিন্দু উপস্থিত হয়। অর্থাৎ বিশ্ব জগতের মৌলিক ক্ষুদ্রতম উপাদান পরমাণুর গঠন ও রূপ, স্থান ও কাল বোধে পর্যবেক্ষক এর প্রভাব নির্ভর। এর মানে এই যে ক্ষুদ্রতম মৌলিক বস্তু সর্বদাই সম্ভব্য সব রকম অবস্থাতেই বিরাজমান, যে যখন যেটাকে যে ভাবে দেখতে চায়, অনুশীলন ও অনুধাবন এর মাধ্যমে সে সেটাকে সেই ভাবে দেখতে পারে। যেহেতু এটা স্থান ও কাল নির্ভর নয় – তত্ত্বগত ভাবে এটা মেনে নেয়া যায়; যে কোন স্থান ও কাল এর পরমাণুকে যে পর্যবেক্ষক যে ভাবে দেখতে চান সে ভাবেই দেখতে পাবেন!
আমরা সবাই এবং আমাদের চার পাশের সব কিছুই ক্ষুদ্রতম পরমাণু দিয়ে গঠিত। তবে ক্ষুদ্রতম পরমাণুর বেলায় যেটা সম্ভব সেটা ক্ষুদ্রতম পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর পরিসরের জন্য অসম্ভব হবে কেন? কেও যদি মন প্রাণ দেহ উৎসর্গ করে নিবিড়তম পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবনের মাধ্যমে তার কোমায় চলে যাওয়া পিতাকে সম্পূর্ণ সুস্থ রূপে দেখতে থাকে, বা চায়, বা প্রার্থনা করে – তাহলে পিতাটির শরীরের সমস্ত অসুস্থ পরমাণু গুলি সুস্ত পরমাণুতে পরিণত হয়ে তার কোমা থেকে জেগে ওঠাকে একেবারে অসম্ভব বলে মনে নাও হতে পারে।
তবে কথা থেকে যায় যে এ ভাবে সব সন্তানইতো তাদের মুমুর্ষ পিতা মাতাকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে দেখতে চায়, তাহলে সবার বেলায় সেটা ঘটে উঠে না কেন? আমি চেষ্টা করেছি ব্যাপারটাকে এ ভাবে দেখার জন্য: নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন ঢাকা শহরে ট্রাফিক লাইটে গাড়ি দাঁড়ানো মাত্রই এক পাল ভিখারি এসে হাত পাতে। সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না তাই যাকে সব থেকে সাহায্য উপযোগী বলে মনে হয় তাকেই দিয়ে থাকি। এর পর চলুন আর একটু বড় পরিসরে: অফিসে পদোন্নতির বেলায় ঊর্ধ্বতন কর্ম কর্তাই ঠিক করেন কে সব থেকে উপযুক্ত। শুধু উপযুক্ততা নয়, তাকে আরও ভাবতে হয় কাকে মনোনীত করলে সমগ্র অফিস এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মঙ্গলময় হবে। এর পর চলুন আরও একটু বড় পরিসরে: দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগের সময় দেশ-প্রধান অগ্র পশ্চাৎ, বর্তমান ভবিষ্যৎ, অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক, আর নানাবিধ বিষয় বিবেচনা করে তার কাছে যেটা দেশের দশের মঙ্গলের বলে মনে হয় সেটাই তিনি করেন। সব ক্ষেত্রেই আগ্রহী প্রার্থীরা নিজেকে সব থেকে যোগ্য প্রমাণের জন্য অন্তহীন চেষ্টা করে – কিন্তু ফলাফল ঠিক করার পেছনে এদের কাওরই তেমন কোন হাত থাকে না – ফলাফল ঠিক করেন যে ভিখারিকে ভিক্ষা দেন বা নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কর্তা। এবার হয়ত প্রশ্ন থাকবে তাহলে কি আমরা কোন কিছু অর্জনের জন্য চেষ্টা না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকব? একবার ভেবে দেখুন ঐ ভিক্ষুক গুলি যদি তাই ভেবে ঘরে বসে থাকে তাহলে ওদের কি অবস্থা হবে। মোদ্দা কথা হল আমাদের চেষ্টা আমাদেরই চালিয়ে যেতে হবে – চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে আমাদের তেমন একটা মুখ্য ভূমিকা নাই।
এ বিষয়ে আমার প্রয়াত পিতার জীবনের একটি অধ্যায়ের কথা আবারো এখানে পুনরুল্লেখ করছি। আমার স্কুল জীবনের শেষ দিকে তিনি তার সীমিত সঞ্চয় ও ধার দেনার মাধ্যমে মিরপুরে একটি আধা পাকা বাড়ি করেছিলেন। বাড়িটি আমার মেট্রিক পরীক্ষা চলা কালীন সময়ে ঝরে সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা মিরপুর থেকে সরে গিয়ে অন্যথায় বাস করতে থাকি। এ নিয়ে আমাদের মনকষ্টের অন্ত ছিল না। তিনি কিন্তু বরাবরই বলতেন যে এর মাঝে নিশ্চয়ই কোন মঙ্গল নিহিত আছে – কেন না মহান সৃষ্টিকর্তা বিনা কারণে কোন কিছু করেন না। এর প্রায় বছর আটেক পর ১৯৭১ শনে ২৫শে মার্চ রাতে মিরপুরের উর্দু ভাষী মুহাজিররা, যেখানে আমাদের বাড়িটি ছিল সেখান কার প্রায় সব বাঙ্গালীকে হত্যা করে। তখন বাবাকে বলতে শুনেছি যে সৃষ্টিকর্তা সম্ভবত ঠিক করে রেখেছিলেন যে আমাদের এই পরিবার টিকে বাঁচাবেন এবং সেই কারণেই হয়ত আমাদের বাড়িটা ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি কেন বেছে বেছে আমাদেরকেই বাঁচালেন আর অন্য দেরকে নয় সেটা বুঝবার ক্ষমতা আমাদের নাই। কেন না আমরা কেবল আমাদের বিচার বিবেচনায় সামনে যা দৃশ্যমান ও যা অনুধাবন করতে পারি তার উপর ভিত্তি করেই বুঝতে চেষ্টা করি। কিন্তু সর্বশক্তিমানকে সমগ্র বিশ্বব্রম্ভাণ্ড ও অনাদিকালকে বিবচনায় নিতে হয়।
অর্থার রবার্ট এশ জুনিয়ার ছিলেন প্রথম আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ টেনিস প্লেয়ার যিনি ১৯৬৮ সালে ইউ এস ওপেন ও ১৯৭৫ সালে উইমবেলডন জয় করে বিশ্ব সেরা টেনিস খেলোয়াড়ের সম্মান অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সজ্জন বলে পরিচিত ছিলেন। শেষ বয়সে এক দুরারোগ্য মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে খুবই মারাত্মক রকম যন্ত্রণায় ভুগেছিলেন। এক দিন তার এক ভক্ত তাকে সামনে পেয়ে আক্ষেপ করে বলল "বিধাতার এ কেমন বিচার, এত মানুষ থাকতে বেছে বেছে তোমাকেই কেন খুঁজে বের করলেন এত কষ্ট দিতে?" অর্থার এশ স্মিত হাস্যে জবাব দিয়েছিলেন; "আমিও তাই ভাবি, বেছে বেছে আমাকেই কেন, অসংখ্য কৃষ্ণাঙ্গ বালক বালিকা থাকতে - আমাকেই কেন বেছে নিলেন বিশ্বসেরা টেনিস খেলোয়াড়ের সম্মান দেয়ার জন্য?"
আজকের লেখাটা শেষ করব গ্রাম বাংলার প্রচলিত একটা পুরনো গল্প দিয়ে। গরিব দুঃখিনী মায়ের সন্তানটিকে প্রতিদিন গাড়ি ভারা দিয়ে স্কুলে পাঠানো সম্ভব ছিল না। তাই তাকে জঙ্গলের পথ ধরে একা একাই দুরের স্কুলে যেতে হত। মা বলে দিয়েছিল যে ভয় পেলে ভগবান কৃষ্ণকে ডাকিস সে তোর সংগ দেবে। ছেলেটি প্রতিদিন বনে ঢুকে কৃষ্ণকে ডাকতেই কৃষ্ণ এসে তাকে বনটা পার করে দিত। এর মাঝে শিক্ষকের জন্মদিন উপলক্ষে তাকে কিছু উপহার দেয়ার জন্য মার কাছে কিছু পয়সা চাইতে মা বললেন; আমার কাছে তো কিছু নাই বাবা, তুই তোর ভাই কৃষ্ণর কাছে কিছু চেয়ে নিস। কৃষ্ণকে বলতে কৃষ্ণ এক জগ দুধ দিয়ে বলল; এটাই তোর শিক্ষককে দিস। ছেলেটি খুবই খুশি মনে সেটা শিক্ষককে দিলে, অন্য সব উপহারের সামনে সেটাকে নিতান্তই নগণ্য বলে শিক্ষক পাচককে দিয়ে ভিতরে পাঁঠিয়ে দিল। পাচক যতবারই জগ থেকে দুধ ঢালে তত বারই আবার সেটা পূর্ণ হয়ে যায়। এই বিস্ময়কর কথাটি শিক্ষকে জানালে তিনি জানতে চাইলেন জগটি সে কোথায় পেয়েছে। বনে কৃষ্ণের কথা বলতে সবাই হেসে উড়িয়ে দিল; বনে আবার কৃষ্ণ থাকে নাকি, যত সব আজগুবি কথা। তার পরও ছেলেটির পিরা পিরীতে সবাই মিলে বনে গেলে ছেলেটি চিৎকার করে কৃষ্ণকে ডাকতে লাগল। অনেক ডাকা ডাকিতেও কৃষ্ণের কোন সারা না পেয়ে সব শেষ চেষ্টা হিসাবে খুবই মিনতি করে বলল "ভাই কৃষ্ণ, একবার তুমি একটু দেখা দেও। আমার শিক্ষক তোমাকে একটু দেখতে চায়"।
সমগ্র বন প্রতিধ্বনিত হয়ে শোনা গেল "তোমার শিক্ষক কেমন ভাবে আমাকে দেখতে পাবে, সে তো আমার অস্তিত্ব কেই বিশ্বাসই করে না"।
কিছুটা কোয়ান্টাম তত্ত্বের গন্ধ পাওয়া গেল না?
মোস্তফা আব্দুল্লাহ, সিডনি
|