বাংলাদেশ হাই-কমিশনারকে লেখা খোলা চিঠি প্রসঙ্গে মোস্তফা আব্দুল্লাহ
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশীদের একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন নিশ্চয়ই এখন একটি সময়ের দাবি। সপ্তাহ কয়েক আগে ডঃ স্বপন পালের বাংলাদেশ হাই-কমিশনারকে লেখা এ ব্যাপারে খোলা চিঠিটি নিঃসন্দেহে একটি উৎসাহ ব্যঞ্জক উদ্যোগ। ডঃ পাল ঠিকই বলেছেন যে এ ব্যাপারে আমদেরকেই মূল উদ্যোগটি নিতে হবে। তার পরও তিনি ভাবছেন যে হাই-কমিশন একটা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা সবাই খুবই খুশি হব যদি সেটা সম্ভব হয়। তবে আমার ধারনা এটা তাদেরকে একটি অহেতুক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় যে সমস্ত সংগঠনের সমন্বয়ে ফেডারেশন গঠিত হতে পারে তার উল্লেখযোগ্য ও সরব অংশ হচ্ছে দেশের রাজনীতির এই পাশ বা ওই পাশের সমর্থক। যদিও বা অনেক ক্ষেত্রেই একই দলের সমর্থক হওয়ার পরও নিজেদের মধ্যে বিভাজনের কারণে একই মতানুসারীদের বিভিন্ন সংগঠনও রয়েছে। এই সব সংগঠন এর নেতৃত্ব দানকারীরাই মূলত প্রস্তাবিত ফেডারেশন এর নেতৃত্বতে আসার বাসনা প্রকাশ করবেন। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় যে সেক্ষেত্রেই মূল সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
এটা একটা সর্বজনবিদিত অপ্রিয় গোপন সত্য যে অন্যান্য আরও কিছু দেশের মত আমাদের দেশেও যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসেন তখন সরকারী সংস্থা ও তাদের আমলা সমূহকে স্বেচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছাই হোক, সরকারী দলের রাজনৈতিক অনুসারীদের প্রতি আনুপাতিক পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ প্রদর্শন করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে হাই-কমিশনকে সহায়ক এর ভূমিকা পালন করার অনুরোধ না করাই বাঞ্ছনীয় বলে আমার মনে হয়। সহায়ক ভূমিকা পালন করতে গিয়ে হাই-কমিশনকে না মিছে মিছি ও অনাবশ্যক পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ শুনতে হয়।
প্রস্তাবিত ফেডারেশন এর মূল উদ্দেশ হবে; অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস কারী বাংলাদেশীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের প্রতিনিধিত্ব করা। খেয়াল রাখতে হবে যে ফেডারেশনটি যেন কোন ভাবেই কোন ব্যক্তি বা দলের রাজনৈতিক ফয়দা লাভ বা স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশে ব্যবহৃত না হয়। এই নিশ্চয়তাটা আর যাই হোক যারা দৃশ্যমান বা সক্রিয় ভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল সমূহের ক্রিয়া কর্মের সাথে জড়িত বা সহায়ক তাদের অনেকের কাছ থেকেই আশা করা সঙ্গত হবে না।
সুতরাং আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কোন সার্থক সংঘটন কেবল একমাত্র যারা দৃশ্যমান বা সক্রিয় ভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্রিয়া কর্মের সাথে যুক্ত নয়, তাদের দারাই সংঘটিত হতে পারে। অন্যথায় এধরনের একটি সংঘটন গঠন করার সম্ভাবনা খুবই কম আর সংঘটিত হোলেও এর মূল উদ্দেশ অর্জিত হবে কিনা বলা মুশকিল।
উল্লেখ্য যে এধরনের সংঘটন আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের রয়েছে বিভিন্ন দেশে এবং আমরা এখনো তা করে উঠতে পারি নাই। বিদেশে দেশের বা জনগণের স্বার্থে আমাদের একক সাংগঠনিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে খুব একটা আশাবাদী হওয়া কঠিন। আমরা একই মত ও আদর্শের অনুসারী হয়েও ভিন্ন ভিন্ন দল গঠন করতে যতটা আগ্রহী, সেই অনুপাতে সার্বিক স্বার্থে এক হয়ে কাজ করতে ততটাই আমাদের অনীহা।
অনেকেরই মনে থাকার কথা নব্বুই দশকের দিকে বাংলাদেশর তদানন্তিন অনারারি কনসাল জেনারেল এন্থনি কাউরির এই ধরনের একটি প্রচেষ্টা ও তার পরিণতি। মূলত রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবান্বিত ব্যক্তি বর্গের নেতৃত্বতে থাকার বাসনার প্রতিযোগিতা সেই দিনের প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দিয়েছিল। শুনেছি জনাব এন্থনি কাউরি সর্বশেষে এই উদ্যোগটি নেয়ার জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী হয়ে সেই দিনের মত নিষ্কৃতি পান।
মোস্তফা আব্দুল্লাহ, সিডনি |