bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



ছোট গল্প


সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে
মোস্তফা আব্দুল্লাহ


টুইলাইট জোনে পৌঁছে মানসিক স্থবিরতাকে ঠেকাতে লেখা লেখির প্রয়াসে এক সময় অতি মাত্রায় হাইপার হয়ে - মনে মনে একটা পূর্ণদৈর্ঘ উপন্যাস লেখার বাসনা করে বসি। যার জন্য কাহিনীটাও মনে মনে ঠিক করে ফেলেছি। টেলিভিশন সাক্ষাতকারে এক বিখ্যাত লেখকের মুখে শুনলাম যে একটা উপন্যাস শেষ করতে তার তিন থেকে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত লেগে যায়। পর দিনই বিবিসির এক টক শোতে আমার সমবয়সী এক মহিলা বললেন যে তিনি সবুজ কলা কেনেন না – হলুদ হওয়া পর্যন্ত ভরসা পাননা! এর পর উপন্যাস লেখার বাসনাটা ত্যাগ করে, কাহিনীটাকে কেটে ছেঁটে, ছোট গল্পের আকারেই লিখলাম।
* * * *


প্রায়ই মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আবুলের। ঘুম ভাঙ্গে একই স্বপ্ন দেখতে দেখতে; মরিয়ম ছেলেটাকে কোলে করে নিয়ে এসে বলছে “এইযে, মনুরে থুইয়া গেলাম – কান্দে না যেন।”
“তুমি কোই যাও?”
“হে মুই কোম্মে কমু - বানের পানি কোন মুই থোন কোন মুই যায় হে কি কেও কইতে পারে?”
আবুল এক লাফে মরিয়মের পিছু পিছু ঘড়ের বাইরে গিয়ে ওকে ধরতে যায়। কোথায় মরিয়ম - কেও নেই কোথাও – ফিরে এসে ছেলেটাকেও কোথাও দেখতে পায় না। প্রাণপণে চিৎকার করতে থাকে মরিয়মের নাম ধরে। শত চেষ্টাতেও গলা দিয়ে কোনও আওয়াজ বের হয় না – এমনকি চোখ থেকে এক ফোটা পানি ও না। আবুল কান্না ভুলে গেছে বহু দিন থেকেই।

বছর ছয়েক আগের কথা - দিনভর প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসের সাথে কালো মেঘের প্রচণ্ড গর্জন ও ক্ষণে ক্ষণে বিজলীর চমকের সাথে অঝর বর্ষণ। আবহাওয়া অফিস কদিন থেকেই আসন্ন একটা সাইক্লোন ও তার সাথে সম্ভাব্য উপকূলীয় জলোচ্ছাসের সতর্ক বাণী প্রচার করে চলছিলো। আবুল কোন কাজেই মন বসাতে পারছিল না – যা কোনও দিনও হয় না তাই সে সেদিন করে ফেলল – বড় সাহেবের চায়ে ভুল করে চিনি দিয়ে ফেলল। অন্য দিন হলে নির্ঘাত একটা ধমক খেতে হত, আজ শুধু বললেন “যা ঘরে গিয়ে দু রাকাত নফল নামাজ পরে আল্লাহর কাছে তোর ছেলে বৌ এর জন্য দোয়া কর, ইনশাল্লাহ ওরা ভালই থাকবে”।

মরিয়মের পিরা পিরিতে এই ঝর বদলের দিনে ওদেরকে দেশের বাড়িতে দিয়ে এসেছিলো আবুল নিজেই। মরিয়মের বা দোষ কি – ছেলেটার বয়স ছয় মাস হতে চলল – নিজের বাপ মা ভাই বোনকে কার না ইচ্ছা হয় আদরের সন্তানটাকে দেখিয়ে আনতে? টানা দুই তিন দিন ভর প্রচণ্ড বৃষ্টি আর বাতাসের বেগ কিছুটা কমলেই আবুল রওনা দিল খেপু পড়ার উদ্দেশে। বাস লঞ্চ ষ্টীমার কিছুই চলছে না। দিন দু এক পর যখন খেপু পাড়া এসে পৌছালো ততক্ষণে সব কিছু শেষ – জনমানব হীন বিরান পাথার। আবুলের মতই আরো কয়েক জন লাশ খুঁজে ফিরছে। বানের পানি কাওকেই রেহাই দেয় নাই – ঘড় বাড়ি, গাছপালা, মানুষ, পশু পক্ষী – কাওকেই না। জোয়ারের পানির সাথে কিছু লাশ পারে এসে ঠেকেছিলো – এর মাঝেই পাওয়া গেল মরিয়মকে, বাচ্চাটার কোনও হদিসই পাওয়া গেলনা, সাতদিন খোজা খোজা খুঁজির পরও।

দিন দশেক পর আবুল যখন ফিরে এলো। ওর কঙ্কালসার চেহারার দিকে চেয়ে কারো আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না। বড় সাহেব তবুও জিজ্ঞেস করলেন “কিরে কোনও খবর পেলি?” আবুলের চেহারায় কোনও ভাবান্তর নাই – ফেল ফেল করে চেয়ে রইলো। বেগম সাহেব কাছে এসে আবুলের হাতটা ধরে বললেন “কিরে কথা বলছিস না কেন?” অন্য কোনও সময় হলে হয়ত আবুল মূর্ছা যেতো – প্রায় চব্বিশ বৎসর ধরে এ বাড়িতে আছে – বেগম সাহেবকে কোনও চাকর বাকড়ের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতে কেও কখনো দেখে নাই। বেগম সাহেবের হাতের ছোঁয়া হঠাৎ করে মায়ের কথা মনে করিয়ে দিল। মায়ের মুখটা আর আজ মনে করতে পারেনা আবুল, তবে চোখ বুজে ছোঁয়াটা অনুভব করতে চেষ্টা করে, কখনো কখনো। আজ খুব ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কানতে. কিন্তু কানতে যে ওর বড় ভয় – কান্না পেলেই মাথার ভিতর ওই চাপা স্বরের কথা গুলি বার বার শুনতে পায় “একটু যদি আওয়াজ বাইর করছ – গলাটা এক চাপ দিয়া এক্কেবারে শেষ কইরা দিমু”।

কদিন আগে মেজ ভাই বন্ধু বান্ধবদের সাথে কাকাতুয়া বেড়াতে গিয়েছিল। সেই আলাপই নাস্তার টেবিলে চলছিল। অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই সেখানে দেখা হয়ে যায় মেজ ভাইয়ের সেই শিশু বয়েসের খেলার সাথী রকিবের সাথে। রকিব ওখানে বিদেশীদের সহায়তায় চালিত একটি অনাথ আশ্রমের ডাক্তার। রকিবই বলছিল যে সেখানে বেশ কিছু শিশু আছে যাদের বাপ মা দের খুঁজে পাওয়া যায় নাই সেই বড় সাইক্লোন এর পর থেকেই। রকিব নাকি মেজ ভাইকে বলেছিল আশ্রমটা দেখে যেতে – সময়ের অজুহাতে সেটা আর হয়ে উঠে নাই। বেগম সাহেব শুনে মেজ ভাইয়ের সাথে বেশ রাগ করলেন; “এ রকম একটা খবর শুনে তোর একবারও মনে হল না যে একবার একটু গিয়ে দেখে আসি – এত দিনেও কি আবুলকে নিজেদের বাড়ির মানুষ বলে মনে হয় না তোদের?”

বড় সাহেব বিকালে ফিরলে ওনাকে ঘটনাটা বলে বেগম সাহেব বললেন “চল না আবুলকে নিয়ে এক বার কাকাতুয়া ঘুরে আসি”। বড় সাহেব আপত্তি করলেন না তবে বললেন “আগে ওকে জিজ্ঞেস কর – ও যেতে চায় কিনা – এই ছয় বত্সরে তো একবারও দেশে যাওয়ার নাম মুখে আনে নাই”। আবুল সারাটা জীবনই বেগম সাহেব যেমন যেমন বলেছেন তেমন মতেই চলেছে – এবারও মাথা নেড়ে জানালো “আপনেরা যা ভাল বুঝেন”।
সকাল সকাল রওনা দিয়েও কাকাতুয়া পৌছতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। ডাক্তার রকিব গেস্ট হাউসের এর রিসেপসনে অপেক্ষায় ছিলো। পরদিন সকালে রকিবই ওনাদের নিয়ে যাবে বলে বিদায় নিলে যে যার রুমে গেল রাত্রি যাপনের উদ্দেশে। এখানে আসার পথে সারাটা সময়ই আবুল একেবারেই চুপ চাপ - পাশে বসা আবুলেরই সমবয়সী ড্রাইভার দুই একবার এটা ওটা জিজ্ঞেস করে কোনও সারা না পেয়ে ওকে আর ঘাটায় নাই। পেছনে বসা সাহেব ও বেগম সাহেব এর সাথেও তেমন কোনও কথা হয় নাই। রুমে ঢুকেই ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো “কি মিয়া এক্কেবারে চুপ মাইরা গেলা কেন- তোমার তো এখন খুশি মনে থাকার কথা – আল্লায় চাইলে তোমার পোলাটারে পাইলে পাইতেও পার”। ওর কথার কোনও জবাব দেয় না আবুল – বাড়ির ড্রাইভার, দারোয়ানদের থেকে সব সময়ই ও কিছুটা দুরে দুরে থেকেছে।

আবুল বিছানায় শুয়ে সিলিং এর দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবে মরিয়ম ছেলেটাকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলতো “আমার মনুরে আমি লেহাপড়া শিখাইয়া জজ বারিস্টার বানামু – তোমার মতন মুখ্য-সুক্ষ থাকব না”। আবুল হাসে “তোমার যেমন মনে লয় তেমনই তোমার পোলারে মানুষ কোইরো”। আবুলের হাসি পায় – কোথায় মরিয়ম, কোথায় তাদের আদরের ধন। ভাবতে ভাবতে এক সময় মরিয়ম এর গলা শুনতে পায় “এই যে শুন, আমাগো মনুরে নিয়া কইল জজ বারিস্টার বানাইবা – হে যদি না করতে পার, এ জগতে আর তোমারে কোন দিন মুখ দেখামু না”। আবুল চেষ্টা করে মরিয়মকে কিছু একটা বোঝাবার জন্য – মরিয়ম কোন কথাই শুনতে চায় না “আগে কথা দেও - আমাগো পোলাডারে জজ বারিস্টার বানাইবা?”। আবুল অপারগ হয়েই জবাব দেয়, “হ কথা দিলাম”। মরিয়মের মুখটা হাসিতে ভরে উঠে, আনন্দে নাচতে নাচতে ও ঘড় থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়।

“এই মিয়া জলদি উঠো, তাড়াতাড়ি নাস্তা সাইরা চল দেহি তোমার পোলাটারে পাওয়া যায় কিনা”। ড্রাইভারের কর্কশ ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আবুলের - আবুল দরজার দিকে চেয়ে থাকে ফেল ফেল করে।

বেশ ছিমছাম অনাথ আশ্রমটা। ডাক্তার রকিব ঘুরে ঘুরে ওদেরকে সবটা দেখাল। এটা নাকি বহুদিনের একটি পুরনো প্রতিষ্ঠান – প্রথমে ছিল একটা গির্জার ভিতর, কিছুদিন হোল উঠে এসেছে বৃহৎ পরিসরে এই নিজস্ব ভবনে। কথায় কথায় জানা গেল এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া অনেক ছেলে মেয়েই আজ দেশ বিদেশে সম্মানজনক ভাবে প্রতিষ্ঠিত। কদিন আগেই ওদের একজন প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমানে সিডনিতে প্রতিষ্ঠিত নামি ব্যারিস্টার, অস্ট্রেলিয়া থেকে বেড়াতে এসে মোটা অঙ্কের অনুদান দিয়ে গেছে।

সাইক্লোন এর পর যে শিশুগুলি এখানে আশ্রিত হয়েছে তাদের দেখতে চাইলে রকিব জানালো যে আশ্রমের নিয়ম অনুযায়ী সেটা নিষেধ। তবে কেও যখন তাদের নিজেদের শিশু সন্তান এখানে আছে কিনা জানতে চায় – তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয় টিফিন এর সময় ঘুরে ঘুরে দেখে কাওকে তাদের নিজেদের সন্তান বলে মনে হলে অফিসে গিয়ে সেটা জানানো। অফিস তখন কেবল মাত্র সেই শিশুটিরই তথ্যাদি অনুসন্ধানকারীকে অবহিত করে।

পাঁচ ছয় বৎসর বয়েসের শিশুগুলি এক জায়গায় জটলা করে খেলা করছে। এর মধ্যে একটা শিশুর দিকে তিনজনই বার বার ঘুরে ফিরে দেখছিল। বেগম সাহেব আবুলকে ডেকে কিছু একটা বলতে গেল – আবুল ও কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গিয়ে বলল;
“জী আম্মা – কিছু বলবেন?”
“না, তুই কি বলছিলি বল”।
“না আম্মা আপনেই বলেন”।
“দেখত ছেলেটাকে, একদম তোর মত দেখতে না?”
“না আম্মা, ওইটারে তো মরিয়মের মতন লাগে”
বড় সাহেব ওদের কথা শুনছিলেন; “আমার কাছে তো ওদের দুজনের চেহারার সাথেই মিল আছে বলে মনে হচ্ছে”।

অফিস এর কাগজ পত্র ঘেঁটে জানা গেল যে মাছ ধড়ার জেলেরা সাইক্লোন এর পরদিন একটা কাঠের তক্তার ওপর ছেরা শাড়ি দিয়ে বাধা অবস্থায় একটি শিশুকে ভেসে যেতে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে গির্জার পাদ্রীর কাছে দিয়ে যায়। তার পর থেকে গত ছয় বছর ও এখনেই আছে। এখন পর্যন্ত ওর খোঁজে কেও কখনো আসে নাই। কিছু দিন আগে এক নিঃসন্তান অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি ওকে দত্তক নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। এ বিষয়ে তারা ইতিমধ্যে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দরখাস্তও করেছে। তাই এই ছেলের পিতৃত্বের দাবীদার কেও থাকলে তাদেরকে খুব জোরে শোরে দ্রুত গতিতে আগাতে হবে। এ ব্যাপারে আবেদনের জন্য ডাক্তার রকিব বড় সাহেবকে সব ধরনের কাগজ পত্র বুঝিয়ে দিয়ে বললেন; যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলি যেন পুড়ন করে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট ও ম্যাজিস্ট্রেট এর এভিডেভিড সহকারে তার কাছে ফেরত পাঠান। রকিব আরও জানালেন, এরপর হয়ত ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে, তবে সেটা যত শিগ্রই করা সম্ভব করা সেটা সে চেষ্টা করবে।

ঢাকা ফেরার পথে আবুলের চোখে বার বার কেবল ওই ছেলেটার মুখটাই আনা গোনা করছিল। আবুল চোখ বুজে ভাবতে চেষ্টা করে – কেমন হবে, যখন ও ওর ছেলেকে গিয়ে বলবে ওই তার বাবা? ছেলেটা হয়ত দৌরে এসে খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরবে – আবার এটাও তো হতে পারে যে ও আবুলের সাথে যেতে চাইছে না।
“ধ্যাত, সেটা কি কখনো হয় নাকি – আমার ছেলে আমার সাথে যেতে চাইবে না কেন?”
ছেলেকে নিয়ে আবুল যখন ইয়া মস্ত বাড়ির বিরাট গেটটার সামনে পৌছবে তখন কি সেও আবুলের মতই হাঁ হয়ে সব দেখবে? আবুলের যেমন হয়ে ছিল প্রথম দিন, যখন ছয় বৎসর বয়েসের বাপ মা হারা শিশুটিকে গ্রাম সম্পর্কের এক চাচা এখানে রেখে, আবুল কিছু বুঝার আগেই পেছন থেকে কেটে পরেছিল। ভাবতে ভাবতে অজান্তেই কখন আবুলের নিজের চেহারাটা ওর ছেলেটার চেহারার সাথে একাকার হয়ে যায়। আবুল বুঝতে পারে না ও কাকে দেখছে, ছেলেটাকে না নিজেকে; ছয় বৎসর বয়সের ছেলেটা খুব কানছে – শত প্রলোভন ও আদর দিয়েও কেও ওকে মানাতে পারছে না। বাড়ির পুরনো ড্রাইভার আলি কাছেই দাড়িয়ে দেখছিল,
“আম্মা, দুই একদিন এই রকম একটু আধটু কানব তার পর সব ঠিক হইয়া যাইব – দ্যান আমার লগে রাইতে থাকুক, আমি বুঝাইয়া শুনাইয়া ঘুম পারাইয়া দেই – কাইল সকালে উইঠা দেখবেন সব ঠিক ঠাক”।

কানতে কানতে এক সময় ঘুমিয়ে পরে ছেলেটা। প্রচণ্ড এক যন্ত্রণার অনুভূতিতে কখন যেন ঘুম ভেঙে যায় তার। কোন এক আসুরিক শক্তি যেন জাপটে ধরে তার ওপর চেপে বসেছে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার। পশুত্ব লালসার অপরিসীম যন্ত্রণার শিকার হয়ে চিৎকার করতে গিয়ে গলা দিয়ে গোঙানির শব্দ মাত্র বেরোল তার। আর ওমনি কে যেন শক্ত হাতে মুখটা ওর চেপে ধরে চাপা গলায় ফিশ ফিশিয়ে বলে উঠল “আর একটু যদি আওয়াজ করছস – গলাটা এক চাপ দিয়া একবারে শেষ কইরা দিমু” ।

ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চালাতে বামে আবুলের দিকে চোখ ফেরাতেই দেখতে পায় আবুলের চোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। কিছুটা আশ্চর্য হোয়েই গায়ে একটু ধাক্কা দিয়ে প্রশ্ন করল; “কি আবুল মিয়া, এখন আর কান্দনের কি আছে? এখন তো তোমার খুশি থাকনের কথা – কয়দিন পর পোলারে বাড়িত নিয়া আইসা আমার লগে দিয়া দিও – সাহেব, বেগম সাহেবরে কইয়া গাড়ি চালানটা শিখাইয়া দিমু নে – ভাত কাপড়ের আর কোন চিন্তা থাকব না”। আবুলের গায়ে মনে হল কে যেন চাবুক মারল, ড্রাইভার এর দিকে রক্ত চক্ষু করে অস্বাভাবিক প্রচণ্ড এক চিৎকার দিয়ে বলে উঠল;
“আর একবার যদি এই কথা মুখে আনছ, টুঁটিটা এক টানে ছিরা ফালামু”।
গত ছাব্বিশ বৎসরে কেও কোন দিন আবুলের এই রূপ দেখে নাই। বাকি পথটা কেও আর কোন কথা না বলেই পার করে এলো।

বাড়ি ফিরে সাহেব বেগম সাহেব সিরি দিয়ে উপরে উঠছিলেন – আবুল নিজের ঘরের দিকে না গিয়ে পেছন পেছন এসে বলল;
“আম্মা সাহেবের সাথে একটা কথা বলব”।
“সাহেব কাপড় চোপড় ছেড়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিক, তার পর আসিস”
“না আম্মা - কথাটা আমার এখনই বলতে হবে”
হতবাক ও বিরক্তির সাথে দুজনই ঘুরে দাঁড়াল আবুলের দিকে।
“ছেলে ওইটা আমার না, কার না কার সন্তান আইনা আমি পাপের ভাগি হইতে পারমু না – আপনেরা কাগজ পত্র গুলা জমা দিয়েন না”।
দুজনেই স্তম্ভিত হয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে সাহেব আস্তে আস্তে উপরে উঠে গেলেন। বেগম সাহেব এর পা নড়ছে না, আবুল মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে;
“তুই তোর ছেলেকে আনতে চাস না সেটা তোর নিজের ব্যাপার – কিন্তু তুই কি এক বার আমাকে বলবি কেন এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলি?”
আবুলের মাথা নিচু, স্বভাবসিদ্ধ নিচু স্বর “মরিয়মরে আমি কথা দিছি আম্মা – ওই কথার বরখেলাপ করতে পারলাম না”।



মোস্তফা আব্দুল্লাহ, সিডনি




Share on Facebook               Home Page             Published on: 18-Apr-2016

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far