bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



আত্মার আত্মীয়
মোস্তফা আব্দুল্লাহ



আত্মার বাঁধনেই নাকি হয় আত্মীয়তা। এমনি এক আত্মার আত্মীয়র সাথে আত্মীয়তার সুমধুর ও করুন কাহিনী দিয়ে যদিও “টেক কেয়ার” লেখাটার ইতি টেনেছিলাম – তবুও সেটা শেষ হয়েও কিছুটা বাকি রয়ে গিয়েছিল। বাকি টুকু অনেক দিন লিখতে বসেও আর লেখা হোয়ে উঠে নাই। সেই লেখাটা পড়ে দুই এক জন কিছুটা তাগিদও দিয়েছিল – কি হোল, বাকি টুকু বললে না যে? বলার যে খুব বেশি একটা বাকি, তাও না – আবার একেবারে যে কিছুই লেখার নাই, সেটাও সঠিক নয়। তাই এর আগের বার যেখানে শেষ করেছিলাম সেখান থেকেই শুরু করা যাক।

সিডনী পৌঁছেই পরের দিনই দুই কন্যাকে সাথে নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়ি রেন্ডউইকে সেই পুরনো ঠিকানায়। পাঁচ বৎসর আগে যেমন দেখে গিয়েছিলাম ফ্লাট বাড়ীর ভবনটিকে – ঠিক তেমনি রয়েছে। সবগুলো ফ্লাটের সদর দরজাই বন্ধ। বেলা তখন ১১টার মত হবে – সবাই সম্ভবত যে যার কাজে চলে গিয়েছে, কেমন একটা গম্ভীর নীরবতা। একটা অজানা আশঙ্কায় বুকের ভিতরটা কেমন জানি হঠাৎ করেই ভারি হোয়ে উঠল। আমারা দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছি – দরজায় টোকা দিয়ে, যে কথাটি ভাবতে চাই না, সেটাই না জানতে হয়। এ কথাটাই মনের মাঝে আনা গোনা করতে করতে কিছুক্ষণ ইতস্তত করে দরজায় কড়া নাড়া দেয়ার কিছু পর এক মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা গেল ভিতর থেকে “কে ওখানে? কি চাও?”। শুনেতেই বুকের ভিতরটা হাল্কা হয়ে এক ঝাঁক বাতাস এসে ভর করল বুঝি – যাক আশঙ্কাটা অমূলক, আর তাই বোধ হয় আমার গলার স্বরটা কিঞ্চিত মাত্রায় অসংযত হয়ে উঠেছিলো। মোটা মুটি চিৎকার করেই বলে উঠলাম – “আমারা, বেরিয়ে এসে দেখো”। আর সেটাই হয়ে দাঁড়াল কাল – অমন ভারি গলায় ধমকের সুরে কথা বললে কেও কখনো দরজা খুলবে নাকি? আমার এই উঁচু গলার ধমকানো সুরে কথা বলার জন্য যথারীতি গিন্নীর কাছ থেকে এক গাল ঝাড়ি খেলাম। আর আমার পাঁচ বৎসরের কন্যাটিও হয়েছে এক তেঁদড় – মার কাছ থেকে বাবকে ঝাড়ি খেতে দেখলে ওর যেন হাসির বাধ মানতে চায় না। আর ছোটটির বয়স তখন সবে এক, ও কি বুঝল জানিনা – তারও হাসি যেন থামতে চায়না। কারো কারো হাসির পাত্র হয়েও যে এত আনন্দ পাওয়া যায় – সেটা ওদের কাছ থেকেই শেখা।

আমাকে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে দুই কন্যাকে দুই পাশে নিয়ে দরজায় মুখ রেখে দুই এক বার ডাকা ডাকি করার পর দরজাটা কিঞ্চিৎ ফাঁক হতেই গিন্নি ডাক দিয়ে বলে উঠলো “এইযে দেখো, তোমার গ্র্যান্ড ডটার দের নিয়ে এসেছি”। সাথে সাথেই পুরো দরজাটা হাঁ হয়ে খুলে গেল – চোখে পুরু চশমা পরা এক বৃদ্ধা দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপছে। দেখে মনে হোল যে কোন সময় পড়ে যেতে পারে। আমি ছুটে গিয়ে ধরতেই সমস্ত ভার আমার ওপর ছেড়ে দিয়ে বির বির করে বলে উঠল, “আমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছি – এটা সত্যি হতে পারে না”।

আমরা দুজন ধরা ধরি করে তাকে একটা সোফায় বসানোর পরও অনেকক্ষণ পর্যন্ত নির্বাক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে চেয়ে থেকে এক সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কানতে শুরু করল। উপায়ন্তর না দেখে, কন্যাদ্বয়কে নিয়ে তার কোলে বসিয়ে দিতে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললেনঃ
“বিধাতা সম্ভবত এই দিনটা দেখার জন্যই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন”।
বয়স তখন তার হয়ত বা আনুমানিক নব্বুই এর কাছাকাছি হবে! ঘুরে ফিরে বার বার একটা কথাই বলে চললেন কিছুক্ষণঃ
“আমার নিকট জনেরাও তো এত কাছাকাছি থেকেও কদাচিৎ আমার খোজ খবর করে না – আর তোমরা সেই বিদেশ বিভূঁই থেকে বেড়াতে এসে আমার জন্য এতটা সময় ব্যয় করছ”! তাকে কেমন করে বুঝাই - যে এটা আমাদের জন্য কোন ব্যয় নয়, বরং একটা বড় রকমের অর্জন, আপনার আশীর্বাদ - আমাদের কন্যাদের জন্য।

সেদিন ফিরে আসার বেলায় কথা দিয়ে আসতে হোল যে সিডনী থেকে ফিরে যাবার আগে আরেক দিন অন্তত তার সাথে দেখা করে যাব। সেটা অবশ্য কথা না দিলেও আমরা সম্ভবত করতাম। কথা মত ফিরে আসার আগে দেখা করতে গিয়ে দেখি উনি এক ব্যাগ ভর্তি রকমারি টুকরো কাপড় কিনে রেখেছেন আমাদের মেয়েদের জন্য। খুবই দুঃখ করে বললেন যে আজকাল চোখে একটা ভাল দেখতে পান না – তা না হলে আগের মত নিজের হাতেই সব গুলি সেলাই করে দিতেন। তার টেলিভিশন এর ওপর তখনো আমার মেয়ের দুই মাস বয়সের ছবিটা বসানো রয়েছে– তারই নিজের হাতের সেলাই করা জামাটা পড়া! বহু কষ্টে কারো একজনের সাহায্য নিয়ে দোকানে গিয়ে নিজের হাতে বাছাই করে কাপড় গুলো কিনে এনেছেন।

আমরা দেশে ফিরে এসে তার দেয়া প্রতিটা কাপড় দিয়ে আমাদের মেয়েদের পোশাক বানিয়ে দিয়েছি – আর তারা যখন তা পড়েছে, তখন দেখে মনে হয়েছে যেন এক দূরদেশী মাতামহের মমতাময় আশীর্বাদ তাদের সারা অঙ্গে জড়িয়ে আছে।

আরও তিন বৎসর পরের কথা – আবারো এসেছি সপরিবারে সিডনীতে। চলে আসলাম রেন্ডউইকে। বহুক্ষণ দরজায় টোকা দিয়েও এবার আর কোন সারা পেলাম না! কন্যা দের প্রশ্নের জবাবে বললাম যে হয়ত অন্য কোন ঠিকানায় চলে গেছে, মুখ ফুটে বলতে পারলাম না, না-ফেরার ঠিকানাতেও হয়ত গিয়ে থাকতে পারে। দরজার দিকে চোখ রেখে মনে মনে বললামঃ
“যেখানেই থাক, ভালো থেকো – Take Care”

দরজা থেকে সরে এসে বাড়ি থেকে বেরনোর সিঁড়িটার ওপর দাঁড়িয়ে বহু মধুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটার দিকে আবার ফিরে তাকালাম, হয়ত আর কখনো এইখানে এইভাবে ফিরে আসব না – এখানেই আমরা প্রথম সংসার বেঁধেছিলাম, এখানেই আমাদের প্রথম সন্তানের গৃহ প্রবেশ ঘটেছিল, আমাদের কন্যা পেয়েছিলো এক ভিনদেশী মাতামহকে, পেয়েছিলাম পড়শি অগ্রজ প্রতিম আলম ভাই ও ভাবির স্নেহ ভালবাসা আর তাদের প্রথম সন্তান নন্দিতের আহ্লাদে জড়ানো ছোট ছোট কথা। আর এ বাড়ীর পেছনের মাটিতে পোতা আছে আমাদের সন্তানের নাড়ি। মনের ভেলায় ভাসতে ভাসতে কখন চলে গিয়েছিলাম সেই যৌবনের রঙ মাখানো দিনগুলিতে। পেছন থেকে খুট করে যেন কিসের একটা শব্দ আর তার পরেই একটা দুষ্টু হাসির আওয়াজে মনে হোল যেন সম্বিত ফিরে পেলাম - কোন দূর দেশ থেকে ভেসে আসা খুব চেনা কার যেন কণ্ঠঃ

“এখন কেমন? আমাকে যেমন তোমরা ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছিলে, এবার আমি তোমাদের কেমন ফাঁকি দিলাম”!



মোস্তফা আব্দুল্লাহ, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 17-May-2018

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far