bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



আমার স্বপ্নের সাইকেল
মোস্তফা আব্দুল্লাহ







সম্ভবত সেটা স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনই হবে। তা প্রায় ৬৮ বৎসর আগের কথা – দিন তারিখের এক আধটু হের ফের হওয়া খুব একটা বিচিত্র নয়। বরং কথাটাকে যে এত দিন পরে মনে পড়ছে সেটাই বিচিত্র বলে মনে হয়। স্কুলের প্রথম দিন, বাবার হাত ধরে যাচ্ছিলাম স্কুলের পথে। হাতে নূতন খাতা পেন্সিল, গায়ে নূতন জামা কাপড়, পায়ে জুতা – সমস্ত পৃথিবীটাই যেন তখন আমার নিজের, যা চাইব তাই - আমার হতেই হবে! চাইলাম বাবার কাছে ওই সাইকেলটা – যেটার ওপর চড়ে প্রায় প্রতি দিন বিকেলে দেখি ওপাড়ার বড় বাড়িটার ছোট ছেলেটা, মাঠের চার পাশে ঘুরে বেড়ায়। বাবা বললেন; আচ্ছা – আর সেদিন থেকেই সাইকেলটা আমার হয়ে গেল - যখনি মনে পড়ত, সাইকেলটা চড়ে এক পাক ঘুরে আসতাম। কত যে ঘুরেছি তা আর বলে শেষ করা যাবে না।

সাইকেলটা ছিল একান্তই আমার, ওটাকে কেবল আমি ছাড়া কেও দেখতেও পেত না, ওটার কথা কেও জানতও না। কারণ বাবা যে সাইকেলটা আমাকে কিনে দিবেন বলেছিলেন সেটা তিনি কিনে দেননি। পরে বুঝেছি, দিতে পারেন নি। তাই বলে আমার সাইকেল চড়তে কোন বাধা হয়নি কখনো। যখনি চড়তে চেয়েছি তখনি চোখ বন্ধ করে সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পরেছি। কোথায় না গেছি সেই সাইকেল নিয়ে - চেনা অচেনা রাস্তা ঘাট বন্দর সাত সমুদ্দুর তের নদী পেরিয়ে কত না অজানা দেশে! চোখ খুলে যে সাইকেলটা নিয়ে কখনোই বেরনো হয় নাই, তা নিয়ে তখন হয়ত কোন দুঃখ বোধ হয়ে থাকলেও থাকতেও পারে, তবে সুখ বোধটা ছিল সম্ভবত তার চেয়ে অনেক বেশি- আর তা না হলে এত দিন পরে সে কথা মনে পরবেই বা কেন? আমার স্বপ্নের সাইকেলটাকে এখনো চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই, আর স্বপ্নের মধ্যে তো অহরহই দেখি।

বাবা অবশ্য সাইকেল এক সময় কিনেছিলেন – তবে সেটা আমার জন্য নয়, তার নিজের জন্য। ততদিনে আমি কলেজে যাওয়া শুরু করেছি, সাইকেল চড়ে তখন কলেজে যাওয়াটা আমার জন্য বেমানান, প্রেস্টিজের ব্যাপার তো! ছোট খাট একটা মোটর সাইকেল হলেও কথা ছিল। প্রতি দিন সকালে মার কাছ থেকে গুনে গুনে বাসের ভারা নিয়ে আমি বাবুর মত সেজে গুজে কলেজে যেতাম। আর আমার বাবা প্রতি দিন অফিস শেষে সাইকেল ঠেলে শহরের অপর প্রান্তে যেতেন জগন্নাথ কলেজে। পড়াতে নয় - পড়তে!

বাবার ইচ্ছা ছিল চাকুরী জীবন শেষে গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়ে শিক্ষকতা করবেন, আর তাই ওই বয়সে আবার লেখা পড়া শুরু করেছিলেন। মেট্রিক পাশের পর-পরি পিতা মাতা সহ ছয় কনিষ্ঠ ভাই বোনের ভরন পোষণের ভার এসে পরে তার ওপর, আর তাই শত ইচ্ছা থাকলেও পড়া শোনাটা তখন আর তার চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়ে উঠে নাই। শুনেছি ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় ওপারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা বাণিজ্য খোয়ানোর কারণেই নাকি পরিবারটি আকর্ষিক ভাবে এক রকম এক চরম দুর্বিষহ পরিস্থিতির মাঝে পড়ে যায়। আর তাই বাবাকেই জীবন শুরুর প্রায়ান্নে ওই বয়সেই সমস্ত পরিবারের জোয়াল কাঁধে নিতে হয়। এ নিয়ে বাবার মুখ থেকে কোন দিন কোন আক্ষেপ শুনি নাই – না দেখেছি আত্মরম্ভিতার আভাস। যে টুকু জেনেছি অন্যদের মুখ থেকে।

সেই বয়সেই বাবা চাকুরী নিয়ে বেরিয়ে পরেন দেশের বাড়ি থেকে আর প্রতি মাসেই বেতনের সিংহ ভাগ তার পিতার নামে ডাক করে পাঠিয়ে দিতেন। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়; যে ব্যক্তিটি জীবনের প্রারম্ভেই জীবন ধারণের জন্য অর্থের অপরিহার্যতা এত কঠিন ভাবে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছিলেন, তাকে কেন কোন দিন তেমন ভাবে অর্থের পেছনে ছুটতে দেখি নাই, যতটা না দেখেছি তার বিদ্যা অর্জনের পিপাসা। আমার ধারনা, সম্ভবত এটা তার নিজের জীবন অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। তিনি হয়ত বা উপলব্ধি করেছিলেন যে নশ্বর সহায় সম্পত্তি ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা বাণিজ্য যেখানে মোটা মুটি একটি সচ্ছল পরিবারকে আচ্ছাদন দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেখানে তখন তার নিজের যৎসামান্য বিদ্যা শিক্ষাই পরিবারটির ওপর ছাতা ধরা সম্ভব করেছিল।

আমার স্কুল জীবনের বন্ধু, বর্তমানে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, ঢাকাতে কলেজে পড়ার সময় এক দিন দেশ থেকে তার বাবার পাঠানো চিঠিতে জানতে পারেন যে যমুনার ভাঙ্গনে এক রাতের মধ্যেই তাদের পৈতৃক ভিটা, মসজিদ, মাদ্রাসা সহ সমস্ত সহায় সম্পত্তি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আগের দিনের একটা সচ্ছল পরিবার, পরের দিনই নিঃসম্বল গৃহহীন হয়ে পরে! চিঠিটির শেষ অংশে ঢাকায় অধ্যয়ন রত সন্তানদেরকে শিক্ষার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতার কথা বোঝাতে গিয়ে তাদের শিক্ষক পিতা লিখেছিলেন; জীবনে তেমন সম্পদ আহরণ করো না, যা নদীর ভাঙ্গনে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কি কঠিন উপলব্ধি – নিজের জীবন অভিজ্ঞতা দিয়ে!

প্রতি রাতে অফিস শেষে সাইকেল চালিয়ে আমার বাবা ঘড়ে ফিরে এশার নামাজ ও রাতের খাওয়া সেরে তার পড়ার টেবিলে বসতেন। ততক্ষণে আমি আমার পড়ার পাঠ চুকিয়ে চলে যেতাম বিছানায়। অনেক দিনই চেষ্টা করেছি শুয়ে শুয়ে জেগে থাকার, উনি কত রাত পর্যন্ত জেগে লেখা পড়া করেন, তা দেখার জন্য। প্রতি দিন ভোরে ঘুম ভেঙ্গেছে বাবার কণ্ঠের ফজরের নামাজের কেরাতের সুরে। আজো আমি যখনি ইচ্ছা করি, চোখ বন্ধ করলেই সেই কেরাতের সুমধুর সুরটা শুনতে পাই। আমার জন্য তিনি এই যে সম্পদটি রেখে গেছেন তা কখনো কোন ঝর ঝাপটা বা বানের জল আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। কেউ কখনো ছিনিয়ে নিতে পারবে না; তিনি আমাকে যে ভাবে প্রস্তুত করে গেছেন জীবনকে আলিঙ্গন করার জন্য। তিনি আমাকে আমার স্বপ্নের সাইকেলটা কিনে দিতে পারেন নাই – তবে আমার সাইকেল কেনার সামর্থ্যের জোগান দিয়ে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন স্বপ্ন দেখার আর তা বাস্তবায়নের।

জন্মদিনের উপহার হিসাবে আমাদের দুই নাতিকে আমার গিন্নি দুইটা সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। সাইকেল দুটি পেয়ে তাদের যে আনন্দ উচ্ছ্বাস তার বর্ণনা আমি তো দূরের কথা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদও কাগজের পাতায় সঠিক প্রতিফলন ঘটাতে পারবে কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সাইকেল দুটি নিয়ে যখন তারা রাস্তার এ পাশ থেকে ওপাশ করতে থাকল – আমি দেখলাম আমার সেই স্বপ্নের সাইকেল - যার পিঠে চড়ে কত না দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে গেছি। তবে আজ আর স্বপ্নে নয়, এবার বাস্তবে। আমি দেখছি - ওদের সাথে আমিও সাইকেলের প্যাডেল মারছি, মারছি তো মারছি, সাইকেল এর চাকা বন বন করে ঘুরছে – ছুটছি এপাশ থেকে ওপাশ। আহা - সেকি আনন্দ আমার, আকাশে বাতাসে! ধন্য ঈছা ধন্য উজায়ের, স্বপ্ন পূরণের সারথি আমার।



মোস্তফা আব্দুল্লাহ, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 29-Jun-2018

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far