bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...


থার্ড ক্লাস সিটিজেন
মোস্তফা আব্দুল্লাহ



প্রথম আলোয় প্রকাশিত দু'টি লেখার অংশ দিয়ে আমার লেখাটা শুরু করছি -

" ‘তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে আর যুক্তরাজ্যে আর থাকতে চাই না। অনেক দিনই তো থাকা হলো। সন্তানরাও এখন বড় হয়ে গেছে। আমিও মোটামুটি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। জানুয়ারির ১৪ তারিখ দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছি।’ - কিন্তু তাঁর আর দেশে ফেরা হলো না। অপেক্ষা শেষ হওয়ার আগেই তিনি না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। তিনি মিল্টন আকবর, বাংলাদেশের জনপ্রিয় ড্রামবাদক ও মিউজিশিয়ান। তিনি দেশীয় চলচ্চিত্রের শক্তিমান অভিনেতা প্রয়াত শওকত আকবরের ছেলে" - প্রথম আলো - ৩০ নভেম্বর ২০১৪

"বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরী চলে গেলেন। দেশের বা বিদেশের কোনো হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকা অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেননি। নিজের বাড়িতে শেষশয্যায় প্রিয়জন পরিবেষ্টিত অবস্থায় তিনি মারা যাননি। মৃত্যুর আগে চিকিৎসকদের তো নয়ই, স্ত্রী-পুত্রের হাতের পরশও পাননি। শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে আধা ঘণ্টার মতো নিজের ঘরের ধোপদুরস্ত বিছানায় নয়, জগলুল পড়ে রইলেন রাজধানীর সবচেয়ে অভিজাত রাজপথের চৌরাস্তায়। ওই রাস্তায় তখন যাতায়াত করছিল শত শত মানুষ, দায়িত্ব পালন করছিলেন এক ডজনের বেশি পুলিশ। যে মিনিবাসটির চালক জগলুল আহমেদ চৌধূরীকে গাড়ি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় তাকে ‘ঘাতক’ বলতে মন্ত্রীর তরফ থেকে নিষেধ করা হয়েছে" - প্রথম আলো ২ ডিসেম্বর ২০১৪

মৃত্যু সংবাদ সর্বদাই শোকাবহ – তা তিনি যে বা যে শ্রেণীরই নাগরিক হোন না কেন। আমরা তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি একই ভাবে। প্রথম জন বিদেশে ‘তৃতীয় শ্রেণির’ নাগরিক হওয়ার মনকষ্ট নিয়ে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন ও জানার সুযোগ পেলেন না যে স্বদেশে গিয়ে ঠিকই তার নাগরিকত্বের বা নাগরিক অধিকারের উন্নয়ন ঘটতো কিনা। পরের জন পেশায়, শিক্ষায় ও সামাজিক অবস্থানের কারণে নিশ্চিত ভাবে স্বদেশে নাগরিক শ্রেণীবিন্যাসে (?) অনেক ওপরের দিকে অবস্থান করেও জেনে যেতে পারলেন না যে হত্যাকারী মিনিবাসটির চালকের নাগরিক অবস্থান দেশ-কর্তাদের স্বার্থে এতই ওপরে যে সে আইনেরও ধরা ছোঁয়ার বাইরে!

এই নাগরিক শ্রেণীবিন্যাসটা তাহলে কি? এর কি আদৌ কোনো অস্তিত্ব আছে বর্তমান পৃথিবীর কোথাও? অনেক খোজা খুঁজি করেও এ ধরনের কোনো নাগরিক শ্রেণিবিন্যাসের অস্তিত্ব পৃথিবীর কোনো দেশেই আছে বলে আমি খুঁজে পাই নি।

তার পরেও আমি যে বিদেশে একজন ‘থার্ড ক্লাস সিটিজেন’ হিসাবে বসবাস করি এই কথাটা প্রায়ই আমার কিছু বিজ্ঞ বন্ধু জনদের এর কাছ থেকে শুনতে হয়। বিশেষ করে একজন যিনি কর্ম জীবনে কোনো এক কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে অবসর নিয়েছেন - তার আপসোসের অন্ত নেই আমার জন্য। সময়ে সুযোগে আমাকে জানাতে ভুলেন না যে তিনি চাইলেই বিদেশে বসবাস করতে পারতেন – তবে ‘থার্ড ক্লাস সিটিজেন’ হিসাবে তা কোনো দিনই তিনি করতে চান নি। তার কথায় কখনো কখনো কিছুটা হীনমন্যতাতেও ভুগি – তবে কি এই শেষ বয়েসে বিদেশে এসে ভুল করে ফেললাম ? প্রতি বারের মত এবারও যখন দেশে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসেছি, আমার সেই অবসর প্রাপ্ত চেয়ারম্যান বন্ধু পাশে এসে বসে আস্তে আস্তে বললেন ‘দোস্ত তুইই বুদ্ধিমানের কাজ করেছিস, সময় ও সুযোগ থাকতে কেন যে বিদেশ চলে গেলাম না’। হঠাৎ ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম – এ দেখি ভূতের মুখে রাম নাম। হঠাৎ করে প্রাক্তন চেয়ারম্যান মহোদয়ের ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন থেকে থার্ড ক্লাস সিটিজেন হওয়ার বাসনা কেন হলো বোধগম্য হলো না!

কদিন আগে তিনি গিয়েছিলেন তার প্রাক্তন কর্মস্থলে নিজের অবসরের ফাইল পত্রের কিছুটা সুরাহা ও তদবিরের তাগিদে। ডিরেক্টর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর অফিসে ঢোকা মাত্র তার প্রাক্তন অধস্তন কর্মকর্তা ডিরেক্টর মহোদয় যারপরনাই আদব কায়দা ও সম্মানের সাথে ওনাকে তার সামনের চারটি চেয়ারের একটিতে বসার আমন্ত্রণ জানিয়ে পিয়নকে চা আনার তাগিদ দেন। পিয়নকে সাবধান করে দেন যেন নিশ্চিত ভাবে ভি আই পি কাপে (ফার্স্ট ক্লাস?) চেয়ারম্যান সাহেবকে চা দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান মহোদয় চেয়ারে বসে যেই না কথা বলা শুরু করেছেন অমনি চারজন যুবক কোন রকম অনুমতি বা আমন্ত্রণের তোয়াক্কা না করেই ঘরে ঢুকে তিনটি খালি চেয়ারে বসে পরল ও চতুর্থ জন চেয়ারম্যান মহোদয়ের চেয়ারের হেলান দেয়ার জায়গাটিতে হাত রেখে তার পাশে দাড়িয়ে রইলো। অবস্থা দৃষ্টে মনে হলো নির্ঘাত এই যুবকরা ক্ষমতাসীন দলের কোনো লীগ বা দলের পাণ্ডা। এমতাবস্থায় ডিরেক্টর সাহেব চেয়ারম্যান সাহেবকে বিনীত অনুরোধ করলেন চেয়ারটা ছেড়ে দিয়ে পাশেই একান্ত সচিবের কক্ষে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার জন্য ! বোঝা গেল চেয়ারম্যান সাহেবের জন্য এটা মেনে নেওয়া ছিল বেশ কষ্টকর – অবসরের কারণে ‘ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন’ থেকে ‘থার্ড ক্লাস সিটিজেন’, এ রকম পদাবনতি? এ কেমন কথা?

বন্ধুর জন্য কিছুটা কষ্ট বোধ হলেও নিজের এই বিদেশে আসার ব্যাপারে আর আমার তেমন গ্লানি বোধ রইলো না। যদি বা থার্ডক্লাস সিটিজেন হয়েও থাকি তবুও এই থার্ডক্লাস থেকে আমার আর পদাবনতির কোনো সম্ভাবনা নাই। কথার কথাই ধরা যাক; ‘মনে করি এদেশে আমার কোনো ব্যক্তিগত কাজে কোনো সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গেছি – অন্য আর দশ জনের মত আমাকেও লাইনেই দাঁড়াতে হবে – যেমন দাড়াতে হবে স্বয়ং প্রধান মন্ত্রীকেও, যদি তিনি কোনো ব্যক্তিগত কাজে এসে থাকেন’। এ দেশে যে একেবারেই বৈষম্য বা নিয়মের একটু আধটু এদিক ওদিক হয় না - তাও না। তবে তাকে অনুৎসাহিত করে তার নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকারের (check & balance) জন্য রয়েছে কার্যকর আইন ও তার প্রয়োগ। এই উপমাটা দিয়ে নাগরিকত্ব যে ব্যক্তি বিশেষ বা সময়ের হেরফেরে ওঠা নামা করে না তা সম্ভবত আমার বন্ধুকে বোঝাতে পেরে ছিলাম।

এ দিক থেকে অবশ্য আমাদের প্রিয় জন্মভূমির কথা ভিন্ন - যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন, তখন তারা ও তাদের তল্পিবাহকরা রাতারাতি বনে জান ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন আর এর বাইরে যে বিশাল জনগোষ্ঠী - তাদের যে আদৌ কোন ক্লাস আছে কিনা তা একমাত্র বিধাতাই বলতে পারেন।


মোস্তফা আব্দুল্লাহ, গ্লেনউড, সিডনি






Share on Facebook               Home Page             Published on: 19-Dec-2014

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far