bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল এর স্মৃতি সংরক্ষণ জরুরি
মোশাররফ হোসেন মুসা


জাপানের কিয়োতো শহরে রাধাবিনোদ পাল এর স্মৃতি-ফলক


বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তকে কিছু পড়িনি, তাঁকে নিয়ে সভা-সেমিনারে কোনো আলোচনাও চোখে পড়েনি; বিধায়, তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত না জানাই স্বাভাবিক। এদেশের মানুষ তাঁকে যথাযথভাবে স্মরণে না রাখলেও সুদূর জাপানে তাঁর নাম অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, বলা হয়‘ভারতীয় জাপানি বন্ধু’। তাঁর পরম বন্ধু বিশিষ্ট জাপানি ব্যক্তিত্ব শিমোনাকা ইয়াসাবুরোও এবং তাঁর যৌথ নামে কানাগাওয়া-প্রিফেকচারে রয়েছে ‘পাল-শিমোনাকা স্মৃতি-জাদুঘর’, টোকিও এবং কিয়োতো শহরে রয়েছে দুটি নান্দনিক স্মৃতিফলক।

বিজ্ঞজনেরা বলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী জাপান আর বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপান এক নয়। জাপানিরা সাম্রাজ্য বিস্তারের চিন্তা ত্যাগ করে জাতি গঠনে মনোনিবেশ করে। জাপানি জনগণের এই বিরাট পরিবর্তনের পেছনে টোকিও মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বলে কোনো কোনো গবেষক মনে করেন। এই বিচারে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এই বিচারের অন্যতম বিচারক ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের নাগরিক বিচারপতি ড.রাধাবিনোদ পাল। তিনি ইংরেজিতে লিখিত ১২৭৫ পৃষ্ঠার এক ব্যতিক্রম, বিচক্ষণ ও সাহসী রায়ের মাধ্যমে জাপানকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ এর অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে এক বিশ্ব-ইতিহাস সৃষ্টি করেন,যা আজ বিশ্বব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ এক শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে বিবেচিত। জাপান প্রবাসী বিশিষ্ট লেখক ও রবীন্দ্র-গবেষক প্রবীর বিকাশ সরকারের একাধিক লেখা পড়ে তাঁর সম্পর্কে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়। আমার জানা ছিল যে তিনি কুষ্টিয়া জেলার কোনো এক নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৬ সালে। আমার এক অগ্রজ বন্ধু দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা শামীম রেজার সঙ্গে একদিন তাঁর সম্পর্কে আলোচনা করি। তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বলেন,‘তিনি তো আমাদের গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছেন! তাঁর চাচার সম্পত্তি আমার ভগ্নীপতির দাদা জসিমউদ্দীন মণ্ডল বিনিময় সূত্রে পেয়েছেন।’

রাধাবিনোদ পালের চাচার বাড়ি সরজমিনে দেখার জন্য গত ৫ মার্চ ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক মাসুদ রানাকে সঙ্গে করে তারাগুনিয়া গ্রামে যাই। শামীম রেজা, স্বপন মোল্লা ও ফয়সাল মোল্লা আমাদেরকে তাঁর চাচার বাড়িতে নিয়ে যান। সেই বাড়িতে বর্তমানে বসবাস করছেন তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হযরত আলী মাস্টার। তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগমও একজন শিক্ষিকা। তিনি তারাগুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন। তারাগুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং গত জানুয়ারি মাসে বেশ জাঁকজমক ভাবে স্কুলটির শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। শোনা যায়, বিচারপতি পালের পৃষ্ঠপোষকতায় স্কুলটি এম.ই. (Middle English) স্কুল নামে যাত্রা শুরু করেছিল। তিনি প্রথমে এলপি স্কুলে(বর্তমানে তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) ও পরে কুষ্টিয়া হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯২৫ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

হযরত আলী মাস্টার বলেন, ‘বাড়িটি ছিল রাধাবিনোদ পালের চাচা লক্ষ্মীনারায়ণ পালের। রাধাবিনোদ পালের পিতা বিপিনবিহারী পাল সন্ন্যাসী প্রকৃতির লোক হওয়ায় সংসার বিরাগী ছিলেন। সেজন্য বিনোদ পাল চাচার বাড়িতে লালিত-পালিত হন। তিনি স্থানীয় গোলাম রহমান পণ্ডিতের মক্তবে (ঈমানী পণ্ডিত নামে পরিচিত) লেখাপড়ায় হাতেখড়ি নেন।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল অবিভক্ত নদিয়া জেলার করিমপুর থানার আরবপুর গ্রামে। তাঁর পিতা জসিমউদ্দীন মণ্ডল বিগত ১৯৪৭-৪৮ সালে বিনিময় সূত্রে বাড়িটি পান। তাঁর পিতা শিশুকালে তাঁদেরকে বলতেন, ‘এই বাড়ি থেকে একজন জগৎখ্যাত ডক্টরেট হয়েছেন, তোমাদেরকেও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।’ অবশ্য তাঁর ভাই ড.ফজলুল হক ডাবল ডিগ্রিধারী হয়েছেন এবং ঢাকা সায়েন্স ল্যাবরেটরির পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁরা বাড়িটির অবয়ব অক্ষুণ্নরেখে দিয়েছেন আজও। বিশেষ করে, বহিরাঙ্গন, পুকুর, রান্নাঘর, ল্যাট্রিন, বসত ঘর ইত্যাদি। এমনকি, লক্ষ্মীনারায়ণ পালের কাঠের বাক্স, আলনাও যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। স্থানীয়দের কাছে এলাকাটি ‘জজ পাড়া’ নামে পরিচিত। শামীম রেজা বলেন, ‘তার দাদা ইউসুফ আলী মোল্লা হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি আনুমানিক ১৯৩৩ সালে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন। বিচারপতি পাল খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করেন এবং সেই মামলায় আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

বিচারপতি পালের জীবন ও কর্মকাণ্ড অত্যন্ত বর্ণাঢ্য। গণিতশাস্ত্রের অধ্যাপক থেকে ভারত সরকারের ইনকাম ট্যাক্স বিষয়ে লিগ্যাল অ্যাডভাইজার, আইনশাস্ত্রের অধ্যাপক, টেগোর ল প্রফেসর, আইনজীবী, আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ, কলিকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে টোকিও মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের (১৯৪৬-৪৮) অন্যতম বিচারকের পদ অলঙ্কৃত করেন। অর্জন করেন ভারত সরকারের ‘পদ্মবিভূষণ’ পদক এবং জাপানের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পার্পল রিবন।’ ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় বার জাপান সফর করেন। জাপানিরা তাঁকে বিপুলভাবে সংবর্ধিত করেন। ৪৫ দিনের এই সফরে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন তিনি জাপানি জনজীবনে। ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনরায় উঠে দাঁড়ানোর নিমিত্তে প্রবল উৎসাহ যোগান। ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।

তাঁর জীবনের অবিস্মরণীয় ঘটনা টোকিও ট্রাইব্যুনালের অন্যতম বিচারপতি হিসেবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ও শেষ সামুরাই যোদ্ধা জেনারেল তোজো হিদেকিসহ ২৮ জন আসামিকে অভিযোগ থেকে খারিজ করে দেওয়া। তিনি তাঁর সুদীর্ঘ রায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরেন, এর মধ্যে টোকিও ট্রাইব্যুনালকে তিনি ‘বিচারের নামে প্রহসন’, ‘বিজিতের ওপর বিজয়ীর উল্লাস’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করেন। তিনি যুক্তিদ্বারা দ্ব্যর্থ-হীন কণ্ঠে বলেন, ‘জাপানের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, সেসব যুদ্ধাপরাধ মিত্র বাহিনীও করেছে, যেমন হিরোশিমা নাগাসাকি শহরদ্বয়ে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ।’তিনি তাঁর রায়ে জাপানকেও দোষী করে বলেন,জাপান শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে অনুসরণ করে একাধিক ভুল করেছে।

১৯৫২ সালে হিরোশিমা শান্তি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করে এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আগত শতাধিক বরেণ্য ব্যক্তির সামনে অকুণ্ঠ চিত্তে টোকিও ট্রাইব্যুনালের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন,‘এটা ছিল ভিক্টরস্ জাস্টিস (বিজয়ীদের পাতানো বিচার)।’ চীনে যদি জাপানি সৈন্য গণহত্যার জন্য দায়ী হয়ে থাকে, তাহলে আমেরিকাও নিরপরাধ অগণিত শান্তিপ্রিয় মানুষকে আণবিক বোমা দ্বারা হত্যার জন্য দায়ী, আমেরিকারও বিচার হওয়া উচিত।’


টোকিওতে রাধাবিনোদ পাল এর স্মৃতি-ফলক
বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে এত বড় মাপের একজন সাহসী বাঙালিকে ভারত ও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ চিনে না বললেই চলে। কলকাতায় আজ পর্যন্ত বিচারপতি পালের একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়নি, বাংলাদেশেও নয়। তবে মিরপুর কাকিলাদহে তাঁর পৈতৃক ভিটার কাছাকাছি স্থানীয় তরুণরা তাঁর নামে একটি মডেল স্কুল স্থাপন করেছেন (তথ্যসূত্র: প্রবীর বিকাশ সরকারের ‘বাঙালি পাল - জাপানি শিমোনাকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ)।

এ প্রসঙ্গে সঙ্গে থাকা তরুণ রাজনীতিক মাসুদ রানা বলেন,‘বিশ্বযুদ্ধ বারবার সংঘটিত হয় না। আমরা সেটা কামনাও করি না। বিশ্বের শান্তি ও সভ্যতার স্বার্থে বিচারপতি রাধাবিনোদ পালের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি। তিনি জাপান-বাংলাদেশ মৈত্রী বন্ধনের প্রতীক। ’আমরা তারাগুনিয়া অবস্থানকালে জাপানে প্রবাসী প্রবীর বিকাশ সরকারের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলি এবং বাড়িটির পুরাতন অবকাঠামো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখাই। তিনি এতে খুশি হন এবং বলেন, সেখানে কোনো স্মৃতি জাদুঘর কিংবা স্মৃতিফলক স্থাপন করা যায় কি না, চিন্তা-ভাবনা করছেন। তাছাড়া তিনি আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে এসে তারাগুনিয়া গ্রামে যাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এখন প্রয়োজন দেশের সচেতন মহলের আন্তরিক সহযোগিতা।




মোশাররফ হোসেন মুসা
Center for Democratic Local Governance
E-mail : musha.pcdc@gmail.com, সেল- ০১৭১২-৬৩৮৬৮২
ঈশ্বরদী, পাবনা




Share on Facebook               Home Page             Published on: 26-Apr-2021

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far