একালের “নানা চাকা” মমতাজ রহমান চম্পা
আমার জীবনের প্রথম গল্পের বইয়ের নাম ছিল, “নানা চাকা”। রুশ ভাষায় ভ্লাদিমির সুতেয়েভ এর লেখা গল্পের বাংলা অনুবাদ। সে বয়েসে “নানা চাকা” কথাটার মানে বুঝতাম না। তখনও ভাল করে পড়া শিখিনি আমি। ভেবেছিলাম চাকাদের নানা বুঝি। আবার ভাবতাম একটা চাকার আবার নানা-নানী, মামা-মামি হয় নাকি? তখন শুধু পাতা উল্টে উল্টে ছবি দেখতাম। কোন কোন সময় বড় ভাই বোনদের বলতাম পড়ে দেবার জন্য।
আমার ছোট বেলায় অনেক সুন্দর সুন্দর রাশিয়ান গল্পের বাংলায় অনুবাদ করা বই বাজারে পাওয়া যেত। যেমন মজার গল্প তেমনি মন কাড়া রংবেরঙের ছবি ছিল সেই বইগুলিতে। এখনো চোখে ভাসে- সাত রঙা ফুল, পিঁপড়ে আর বোম-নাবিক, বুদ্ধিমতী মাশা, ক্ষুদে ইভান বড় বুদ্ধিমান আরও কত কী! সব নাম এখন আর মনে নাই। তবে সবচেয়ে পছন্দের বই ছিল “নানা চাকা”। কতো সহস্র বার যে পড়েছি তার ইয়ত্তা নাই। বাড়ির বড়রা যখন তাদের পড়ার বই নিয়ে বসতো আমি তখন আমার “নানা চাকা” নিয়ে বসে যেতাম তাদের সাথে। পড়তে পড়তে বইয়ের পাতাগুলি ছিঁড়ে আলাদা আলাদা হয়ে গিয়েছিল! হঠাৎ একদিন একজন মেহমান বেড়াতে এলেন আমাদের বাড়িতে। তিনি আরেকটা “নানা চাকা” বই এনেছিলেন আমার জন্য। তখন বাচ্চাদের বই দেয়ার রেওয়াজ ছিল। ঝকঝকে নতুন আরেকটা “নানা চাকা” পেয়ে আমার খুশী দ্যাখে কে।
“নানা চাকা” মানে হলো- নানা ধরনের, নানা মাপের চাকা। গল্পটা ছিল এমন, মোরগ, সজারু, মাছি আর ব্যাং চার বন্ধু। বনের ধারে ওরা একটা গাড়ি পড়ে থাকতে দেখে। গাড়িটা ছিল একটা ভাল্লুকের। সে ওটা চালাতে না পেরে বনের মধ্যে ফেলে রেখে গেছে। চার বন্ধু মিলে পরামর্শ করে কি ভাবে চাকাগুলো অন্য কাজে লাগানো যায়। তারা অনেক কিছু করেছিলো ওই চাকাগুলি দিয়ে।
হঠাৎ এই “নানা চাকা” বইটার কথা মনে পড়ার কারণ হলো আমাদের বাড়ির কাছেই রাস্তায় পড়ে থাকা কতগুলি চাকা। কে যেন ফেলে গিয়েছে, পড়েই আছে দিনের পর দিন। হঠাৎ করে আমি যেন ছোটবেলায় পড়া গল্পের সেই মোরগ, মাছি, সজারু আর ব্যাং হয়ে গেলাম। কোভিডের অবসরে মেতে উঠলাম চাকা নিয়ে।
অনেককে দেখছি এই কোভিড কালে অনেক কিছু করছেন নিজেকে ব্যস্ত রাখতে। ফেসবুকে দেখি- কেউ গান করছেন, কেউ কবিতা পড়ছেন, কেউ লাইভ অনুষ্ঠান করছেন আবার কেউ তৈরি করছেন মজাদার সব খাবার। আমার মত যাদের কিছুই করার নাই তারা চেষ্টা করে দেখতে পারেন- ফেলে দেয়া জিনিস দিয়ে কিছু বানিয়ে ফেলুন। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবেন সেই সাথে পেতে পারেন অনাবিল আনন্দ।
ভাবুন তো হঠাৎ যদি একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখেন ফেসবুক, ইন্সটিগ্রাম, ইউটিউব সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে তখন কি হবে? আমাদের ছোট বেলায় এত কিছু ছিল না কিন্তু তাই বলে আনন্দের কোন ঘাটতি ছিল না কখনো। তবে কিছু বানানোর আগে অবশ্যই নানা চাকা বইটি পড়ে নিতে ভুলবেন না, গুগলে “নানা চাকা” নাম দিয়ে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।
মমতাজ রহমান চম্পা, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|