bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



একটা দুঃস্বপ্নের গল্প...
মম্‌তাজ রহমান



হঠাৎ করে দেশে গিয়ে দু’সপ্তা হলো ফিরে এসেছি। ফেরার পথে প্লেনে আমার যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেটা স্বপ্ন না বাস্তব সেটা বুঝে উঠতেই আমার দু’সপ্তা লেগে গেল। সেই ঘটনাটা যেন আমাকে তাড়া করে ফিরেছে সারাক্ষণ। কাঁটার মতন গেঁথে আছে মাথায়, কিছুতেই উপড়াতে পারছিনা তাই এই লেখা! নিজেকে ভার মুক্ত করার চেষ্টা।

অনেক দিন দেশে যাওয়া হয় না, কত দিন আম্মাকে দেখি না খুব মন খারাপ ছিল। সব কাজই হয় শুধু আম্মাকে দেখতে যাওয়া হয় না। মাঝে চায়না থেকেও ঘুরে আসলাম। মনে মনে ঠিক করলাম পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের পর কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে একাই ঘুরে আসব দেশ থেকে। হঠাৎ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স আমার এই ভাবনাটা একটু সহজ করে দিল। ট্রাভেল এজেন্ট ইমেইল করেছে মে মাসে প্রায় অর্ধেক দামে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। আমি আর ছুটির অপেক্ষা না করে টিকেট করে ফেললাম। মে মাসে দেশে যাব একটু ভয় হচ্ছিল না জানি কি গরম হবে। যাচ্ছি আবার মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে করে! যে দেশের একটা প্লেন আকাশে বেমালুম উধাও হয়ে গেল আজও কোন খবর নাই। কিন্তু আম্মাকে খুব দেখতে ইচ্ছা হল। এই মে মাসে আম্মা তাঁর এক মেয়ে আর এক ছেলে কে হারিয়েছেন। আমাকে দেখলে হয়তো উনার ভাল লাগবে। আমার না হয় একটু গরমই লাগবে এর বেশী আর কি। এই দেশেই ত আমি বড় হয়েছি। এই ভেবে মনে মনে দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। টিকেটের এই বিশেষ ছাড় পহেলা মে থেকে তাই আমি ঐ দিনই বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য প্লেনে উঠলাম। আম্মার এখন আর তেমন কোন চাহিদা নাই, আগেও যে খুব একটা ছিল তা নয়। তাই কিছু খাবার জিনিস আর উনার সব চেয়ে পছন্দ আমার গাছের কাগজী লেবু নিলাম সাথে।

অনেক রাতে ঢাকা এয়ার পোর্টে নামলাম। ভাল লাগলো দেখে আগের মতন অযাচিত ভাবে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না। অনেক ট্রলি। আগে টাকা দিয়ে ট্রলি নিতে হতো। এসব পরিবর্তন চোখে পড়ার মতন। ঝামেলা ছাড়াই বের হয়ে এলাম । ঐদিন ছিল শব-এ-বরাতের রাত। মনটা খুশিতে ভরে গেল হালুয়া রুটি খাবার আশায়। রাস্তায় গাড়ি খুব কম। আমার ভাতিজা, আনন্দ বললো দেখেন শব-এ-বরাতের কারণে রাস্তা কেমন খালি! কয়েক দিনের ছুটি পেয়ে সবাই ঢাকা ছেড়েছে! বেশ মজার ব্যাপার, ১৫ মিনিটেই বারিধারায় পৌঁছে গেলাম। কিন্তু মন খারাপ হল যখন শুনলাম বাংলাদেশের মানুষ এই রাত শুধু নামাজ কালাম করেই কাটায়। হালুয়া রুটির চল প্রায় উঠেই গেছে। এটা নাকি বেদাত (মানেই জানি না) তাই কেউ তাকে হালুয়া-রুটি দেয়নি বলে আমার ভাতিজী, নাবিলা, রাগ করে ইউটিউব থেকে রেসিপি নিয়ে নিজেই গাজরের হালুয়া বানিয়েছে। ভাগ্যিস ও বানিয়েছিল না হলে তো হালুয়া ছাড়াই আমার শব-এ-বরাত হতো! খুব ভাল বানিয়েছিল নাবিলা, আমার খাওয়া শ্রেষ্ঠ হালুয়া। ভাবলাম আমরা যখন ছোট ছিলাম হালুয়া রুটি ছাড়া শব-এ-বরাত ভাবতেই পারতাম না। আমরা মোমবাতি দিয়ে বাড়ী সাজাতাম, বাজী পোড়াতাম। সেই জন্য কখনো নামাজ কালাম ব্যাহত হতো বলে মনে হয় না!

দেশে এবার যেটা সব থেকে বেশী স্বস্তি দিয়েছে তা হল গত বারের মতন পেট্রল বোমার ভয় ছিল না এবার। চারিদিকে বৃষ্টি ধোয়া সবুজ গাছ দেখলে এমনিতেই মন ভাল হয়ে যায়। আম গাছ ভরে আছে কাঁচা আমে। অনেক দিন এমন দেখিনি। আরেকটা সেবা খুবই উপভোগ করেছি এবার সেটা হল উবার। আগে কোথাও গেলে রাত করে ফেরার চিন্তায় আতংকিত হতাম। উবার আসায় সে চিন্তা নাই। উবার এর সেবা অসাধারণ। মোবাইলে একটা এ্যাপ ডাউনলোড করে নিলেই হল। কাছে টাকা না থাকলেও সমস্যা নাই ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থেকে সরাসরি ভাড়া মিটিয়ে দেয়া যায়। তবে রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামটা আগের মতনই ভয়ঙ্কর আছে! একদিন হাতিরপুলে গিয়েছিলাম আসা যাওয়া মিলে ৪ ঘণ্টা! আমি আর তাই ঢাকাতে বাড়ী থেকে বের হইনি। ঢাকার রাস্তা কাটাকাটি কোন দিনও মনে হয় শেষ হবে না। আগে যে গুলশান বনানীর সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। আমার ছেলে বলতো বাংলাদেশের সিডনী! এখন আর সেই সৌন্দর্য নাই। যে যার মতন বাড়ী বানাচ্ছে, রাস্তা কেটে মাটি, ইট, রড রাস্তার ধারে উঁচু করে জমা করে রেখেছে। আবর্জনার স্তূপও চোখে পড়লো অনেক। মানুষের মধ্যেও অনেক পরিবর্তন দেখলাম ঘরে বাইরে সব যায়গায়! ধর্মের প্রতি অতি আগ্রহ চোখে পড়ার মতন। পোশাক-আশাক চাল-চলনে এই পরিবর্তন প্রকট! তাই দেখলাম জামা-কাপড়ের দোকানগুলো তাদের ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সাজিয়েছে। মাঝে মাঝে ভুলেই যাচ্ছিলাম আমি বাংলাদেশে না সৌদি আরবে!

যাক ভাল-মন্দ নিয়ে দেখতে দেখতে আমার ছুটি শেষ হয়ে গেল। যাবার দিন ঘনিয়ে এলো। মনটা খারাপ। আবার কবে আসবো কে জানে? বাসা থেকেই চেক-ইন করলাম। একটু হাতে সময় নিয়েই এয়ারপোর্ট এ গেলাম। এয়ারপোর্টে ঢোকার মুখে লম্বা লাইন দেখে আত্মা শুকিয়ে গেল। সবাই মালয়েশিয়ার যাত্রী। আমার ভাতিজী তাড়াতাড়ি একটা ট্রলি জোগাড় করে আনল আর ওর জন্য পাস কিনল, যাতে লাগেজ জমা করা পর্যন্ত আমার সাথে থাকতে পারে। সত্যি ও না থাকলে আমি খুবই অসুবিধায় পড়তাম। এখানে চেক-ইন করা থাকলেও লাইনে দাঁড়াতে হয়। তবে এয়ারলাইন্স এর কর্মীদের প্রশংসা করতেই হয়। তারা খুবই করিৎকর্মা এবং বিনয়ী। তারা আমাকে বিজনেস ক্লাস এর লাইনে দাঁড়াতে বলল সাথে আশাও দিল বিজনেস ক্লাস শেষ করেই আমার লাগেজ জমা করবে। আমি লাইন দাঁড়িয়ে মানুষ-জন দেখছি। ইকনমি ক্লাস এর লাইন ভয় পাওয়ার মতন লম্বা। মনে হচ্ছিল প্লেন চলে যাবে এই লাইন তবুও শেষ হবে না। হঠাৎ দেখলাম একটি মেয়ে, সুন্দর সাজগোজ করা, পায়ে সোনালি চপ্পল কিন্তু কি বিকট ভাবে চীৎকার করছে। এয়ারপোর্ট ফেটে যাচ্ছে তার চিৎকারে! খেয়াল করে দেখলাম তার এই চীৎকার এক অসহায় বয়স্ক লোককে কেন্দ্র করে। উনি তাড়াহুড়া করে ঐ মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। এখানে যে লাইন ছিল সেটা বুঝতে পারেননি। সাহায্যকারীরা উনাকে সরিয়ে নিয়ে গেলেও মেয়েটির চীৎকার থামলোনা! অনেক অন্যদেশের যাত্রীরাও ছিল সেখানে। তারা অবাক হয়ে মেয়েটিকে দেখছিল! সত্যি এত পরিপাটি সাজে সজ্জিত কেউ এভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে পারে দেখে খুব অবাক হলাম!

এক সময় আমার ডাক আসলো। তখন দেখলাম আমার লাইনে একজন হুইল চেয়ারে বসা যাত্রী এলেন। পাশে উনার স্ত্রী। সাধারণত হুইল চেয়ারে বসা যাত্রীদের একটু বেশী যত্ন নেয়া হয়। আগেও দেখেছি। এরপর আরও কয়েক বার উনাদের সাথে দেখা হলো। ভদ্রমহিলার সাথে চোখাচোখিও হলো কয়েক বার কিন্তু কথা হয়নি। বেশ মার্জিত রুচিশীলা ভদ্রমহিলা সেটা খেয়াল করেছি।

নিরাপত্তা তল্লাশির পর প্লেনে উঠার আগে উনারা আমার সামনেই ছিলেন। প্লেনে আমার চুপচাপ বসে থাকতে ভাল লাগে। চলে যাচ্ছি সবাইকে ছেড়ে মনটা এমনিতেই ভার হয়ে আছে। আম্মাকে অনেক দুর্বল লাগলো এবার। পরের বার আসলে দেখতে পাবো তো? কত ভাবনা কত স্মৃতি ভীর করছিলো মনে। ফিরে যাচ্ছি ১৭ই মে, আমার ভাই এর মৃত্যুদিনে। কুয়ালালামপুরে ৪ ঘণ্টা যাত্রা-বিরতি ছিল। এই সময়টা এয়ারপোর্ট এর প্রিমিয়াম লাউঞ্জে কাটিয়ে আবার গেট ৫৬ তে এসে দাঁড়ালাম সিডনীর প্লেনে ওঠার জন্য। অনেকের মধ্যে সেই হুইল চেয়ারে বসা যাত্রীটিকেও দেখলাম। প্লেনে উঠলাম একসাথে।

আমার একটা বদ অভ্যাস আছে, প্লেন চলতে শুরু করলেই আমি ঘুমিয়ে পড়ি। কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না। হঠাৎ সব যাত্রীদের কথা আর বিচিত্র এক ঘোষণায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। যাত্রীরা যে যার সিটে দাঁড়ানো। চোখে-মুখে ভয় এবং উৎকণ্ঠা। ভাবলাম নিশ্চয় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে অথবা প্লেন ক্রাশ করতে যাচ্ছে! গায়ের রক্ত আপনাতেই হিম হয়ে গেল। পরে ভাল করে খেয়াল করলাম, ডাক্তার খোঁজা হচ্ছে যাত্রীদের মধ্য থেকে। আমার এক সিট সামনে বসা এক তরুণ উঠে দৌড়ে গেল। কানে আবছা আসলো বাংলাদেশ বাংলাদেশ। দেখলাম সেই হুইল চেয়ারের যাত্রী ভদ্রলোকটি মাটিতে পড়ে আছেন আর সেই তরুণ ছেলেটা (নিশ্চয় ডাক্তার) উনাকে CPR দিচ্ছে। তার স্ত্রী পাথরের মতন বসে আছেন পাশে। অনেকেই দেখছে বলে সব যাত্রীদের নিজ নিজ সিটে বসে থাকতে অনুরোধ করা হল। আমার মন ওখানেই পড়ে ছিল। আরও কয়েকবার উনাকে দেখে আসলাম। বেশ অনেকক্ষণ, প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট উনাকে নিয়ে চেষ্টা চললো। অনেক বয়স্ক যাত্রীদের মুখ খুবই ভয়ার্ত দেখাচ্ছিল। আর উঠতে পারছিলাম না, সিট থেকেই দেখলাম ঐ ডাক্তার ছেলেটা ভদ্রমহিলাকে প্লেনের সামনে পর্দা দিয়ে ঘেরা যায়গায় নিয়ে গেল। আমি আমার পেছনের সিটের যাত্রীর কাছে জানতে চাইলাম রোগীর খবর। সে জানালো রোগীকে পেছনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আর দেখা যাচ্ছে না। ভাবলাম সেরে উঠেছেন। এরপর সব স্বাভাবিক। শুধু ডাক্তার ছেলেটিকে খুবই বিষণ্ণ লাগলো। সে ব্যাগ থেকে নোটবুক বের করে কি যেন লেখালেখি করছে। একটু পরে ড্রিংকস দিতে এলো একজন কেবিন-ক্রু। আমি তার কাছে সেই যাত্রীর কথা জানতে চাইলাম। মনে কেমন যেন অশান্তি লাগছিল। উনি নির্লিপ্ত কণ্ঠে জানালেন তাঁর ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল এবং উনি মারা গিয়েছেন।

আমি ঠিক শুনছি না ভুল শুনছি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যিনি একটু আগেই আমার সাথে এত রাস্তা পাড়ি দিলেন এখন উনি লাশ হয়ে পড়ে আছেন প্লেনের ভেতরেই! আমি এত কাছ থেকে এভাবে কাউকে মারা যেতে দেখিনি। আমার বাবা যখন মারা যান তখন আমার মৃত্যু কি সেটা বোঝার বয়স হয়নি। এক ভাই আর এক বোন মারা গিয়েছে কিন্তু আমার থেকে অনেক দূরে, দূর-দেশে ছিলেন তারা। ফোনে খবর পেয়েছি। কিন্তু আজকের এই যাত্রীর মৃত্যু বড় হৃদয়বিদারক!

একরাশ মন খারাপ নিয়ে প্লেনে বসে থাকলাম আরও ৫/৬ ঘণ্টা। জানিনা সেই ভদ্রমহিলা কি করছিলেন তখন। প্লেন সিডনিতে ল্যান্ড করার পরে আরও ৪৫ মিনিট প্লেনের মধ্যেই বসে থাকলাম আমরা। পুলিশ এসে মৃতদেহ নিয়ে যাবার পর আমরা বের হলাম প্লেন থেকে। ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গলো মনে হল। এয়ারপোর্টের ঝকঝকে দোকানগুলকে কেমন যেন ম্লান লাগছিল। এখনো ভুলতে পারছিনা সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি। পরে সিডনিতে পরিচিতা একজনকে ঘটনাটা বলাতে সে জানালো তিনিও শুনেছেন এই ঘটনা। সিডনিতে উনাদের ৩ ছেলে থাকে। তাঁরা সিডনিতে আসছিলেন একসাথে রোজা আর ঈদ করার জন্য, যা আর কোন দিনও করা হবে না।




মম্‌তাজ রহমান, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 1-Jun-2018

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far