bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













বিদেশী ট্রেন
মমতাজ রহমান চম্পা




আজকাল আমার বিদেশী ট্রেনের খুব মন খারাপ থাকে। সে অবশ্য মুখে কিছু বলেনি। আমি বুঝতে পারি ওর হাবভাবে, চলা ফেরায়। কেমন যেন শ্লথ গতিতে চলে আজকাল! আজকেই যখন এই লেখাটা লিখছি তখন হঠাৎ করেই ১৫ মিনিটের জন্য দাঁড়িয়ে গেল। আমি তো ওকে জন্মের পর থেকেই দেখছি। সব সময় কি ফিটফাট, পাংচুয়াল ছিল। ভোর ৬টা থেকে রাত ১২:৩০ পর্যন্ত বিরামহীন কি দৌড়াদৌড়ি। তার কত চিন্তা, যাত্রীরা যেন স্কুলে, ইউনিতে বা অফিসে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারে তাই ৪ মিনিট পরপর তাকে দৌড়াতে হয়। কোন থামাথামি নেই। ট্রেন যেমন বিদেশী তার জন্য আশেপাশের সাজ-সজ্জার মধ্যেও একটা বিদেশী ভাব আছে। একটু ভেঙ্গে বললেই বুঝতে পারবেন।

সিডনি মেট্রো রেলের কথা বলছি। অনেক দিন থেকেই দেখছিলাম কাজ চলছে। আশে পাশের অনেক কিছুই ভাঙ্গতে দেখেছি। শুনেছি মেট্রো রেলের কাজ চলছে। গুরুত্ব দিয়ে দেখিনি, কারণ আমার ধারণা ছিল আমি এই মেট্রো রেলের কোন সুবিধা পাবো না, খামোখা মাথা ঘামিয়ে লাভ কি। যখন চলবে তখন তো দেখতেই পাবো।

অফিস যাওয়ার সময় দেখেছি বড় বড় পিলারগুলোকে। এর মাঝে আমার এক সহকর্মী জানালো এই ট্রেন নাকি সরাসরি আমার কর্মস্থলের লাইনের সাথে যুক্ত হবে। এরপর থেকে আমার উৎসাহ বেড়ে গেল। আমি খোঁজ নিতে লাগলাম। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। টিভিতে প্রচারিত হলো ২৬ মে ২০১৯, রবিবার থেকে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হবে। ঐ দিন যাত্রীরা বিনামূল্যে ভ্রমণ করতে পারবেন। আমিও রেকি করতে অন্য সবার মতো বাড়ির কাছের স্টেশনে গিয়ে হাযির হলাম। সব দেখে আমার তো চক্ষু চড়কগাছ! দেখলাম প্রতিটি টিভি চ্যানেল থেকে রিপোর্টাররা এসেছে। লাইভ কাভারেজ দিচ্ছে। মানুষের ভিড়ে বসা তো দূরের কথা পা রাখারও জায়গা নেই। ৪ মিনিট পরপর ট্রেন। ঘন্টা খানেক দাঁড়িয়ে থেকে ট্রেনে উঠেছিলাম, কিন্তু অন্য কাজ থাকায় আমার কর্মস্থল পর্যন্ত যাইনি। মাঝ পথ থেকে ফিরে এসেছিলাম মেট্রো রেলের দেয়া বেশকিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে।

এতদিন কন্সট্রাকশন এলাকাগুলি ঢেকে রাখা হয়েছিলো বলে বাইরে থেকে বুঝিনি এত সুন্দর প্রতিটি স্টেশন! বাংলাদেশ থেকে বাইরে বেড়াতে গেলে যেমন সবকিছু চকচকে মনে হয়, দীর্ঘদিন অস্ট্রেলিয়ায় আছি তারপরও স্টেশনগুলি দেখে মনে হচ্ছিলো যেন বিদেশে কোথাও চলে এসেছি। প্রতিটা স্টেশনের সাথে বিনামূল্যে ৭০০/৮০০ গাড়ি পার্কিং এর জায়গা। ড্রাইভার ছাড়া কি সুন্দর চলছে ট্রেনগুলো। বাইরে অপেক্ষা করার জন্য যে বসার জায়গা সেগুলোও কী চমৎকার। তাই আমি এর নাম দিয়েছি বিদেশী ট্রেন। মেট্রো রেল নিয়ে আমার এই উচ্ছ্বাস দেখে আমার ভাগ্নে, রাতুল, হাসে আর বলে আমাকে মেট্রো রেলের এম্বাসেডর করা উচিৎ ছিল। কি করব এত আয়েশ করে অফিস যেতে পারব কখনো কি কল্পনা করেছি! সিডনিতে আমার প্রথম দেখা স্টেশন সেভেন-হিলস। সেই তুলনায় আমার বিদেশী ট্রেন স্টেশন যেন হেভেন অন আর্থ!

কিন্তু হঠাৎ করে গেল বছর থেকে যখন মরণ ব্যাধি করোনা দেখা দিল কেমন যেন সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। বিদেশী ট্রেনের সারা গায়ে, জানালায়, সিটে ব্যান্ডএইড এর মত স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হল। উপচে পড়া ভিড় অদৃশ্য হয়ে গেল। মানুষগুলোকে মাস্কের আড়ালে আর চেনা যায়না। তারা আর আগের মত কলকাকলিতে মেতে উঠে না। হাতে গোনা যে কজন যাত্রী তারা সবসময় যেন ভয়ে গুটিয়ে থাকে। হাসলেও সে হাসি দেখা যায়না মাস্কের আড়ালে। আমার বিদেশী ট্রেন হয়তো ভাবে, কত যাত্রী ছিল আগে, তারা হয়তো আর ফিরবে না। কেউ কেউ হয়তো এ পাড়ের পাট চুকিয়ে একেবারেই চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। বিশাল পার্কিং খাঁখাঁ করছে। সারাদিন সানিটাইজ করা হচ্ছে। বিদেশী ট্রেন হয়তো ভাবে, তার জন্য যদি ভ্যাক্সিন বের হতো তাহলে তাকে কেও আর ভয় পেত না। আবার আগের মতন যাত্রী বোঝাই করে মনের আনন্দে চলতে পারতো সে!




মমতাজ রহমান চম্পা, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া





Share on Facebook               Home Page             Published on: 31-Aug-2021

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far