bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













আকাশের ঠিকানায়!
মমতাজ রহমান চম্পা



জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প এই গানের কথাগুলি সত্য করে দিয়ে বড় অসময়ে চলে গেলেন আমাদের রাজশাহী তথা বাংলাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠ-শ্রমিক এন্ড্রু কিশোর। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরে জীবনের শেষ কনসার্টেও এটাই ছিল তাঁর শেষ গান! দেখলাম গাইবার সময় তাঁর গলা ধরে এসেছিল। নিজেকে কণ্ঠ-শ্রমিকই ভাবতেন তিনি। এ নামটাও তার নিজের দেওয়া।

এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে অনেকেই লিখেছেন। তবে বাংলাদেশের সিনেমার গানে তাঁর অবদান কি লিখে শেষ করা যায়, না সম্ভব? বাসায় সিনেমা দেখতে যাওয়া বারণ থাকলেও গান শোনায় আমাদের কোন বাধা ছিল না। ছোটবেলা থেকেই গান শুনতে ভাল লাগাতো। যে গানটা পছন্দ হতো সেটা মুখস্থ করে সারাদিন গলা ফাটিয়ে গেয়ে বেড়াতাম। তখন আমাদের বাসায় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল একটা রেডিও। সকল থেকে রাত অব্ধি বাজত সেটা। বড় পরিবার ছিল আমাদের তাই দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের পছন্দের গান শুনতে পেতাম। সকালে বাজত আম্মার পছন্দের গান। রেডিও শিলং থেকে সকাল সাড়ে ৮ টায় প্রতিদিন কে এল সায়গলের গান বাজানো হতো। এই গান শুনে আমরা বুঝতাম কয়টা বাজে তখন ভাই-বোনরা কেউ ইউনিভারসিটি কেউ কলেজ আর কেউ স্কুলে চলে যেত। আমি তখনো স্কুল শুরু করিনি, আম্মার পায়ে পায়ে ঘুরি। সায়গলের জীবনের দুঃখের গল্প শুনতাম আম্মার কাছে। কত অল্প বয়সে মারা গিয়েছেন উনি! মনে হয় ৩৬ বা ৩৭! আম্মাকে খুশি করতে গাইতাম “জাব দিলহি টুট গায়ে হাম জিকে কেয়া কারেংগে” বা “দিয়া জালাও জাগ মগ জাগ মগ দিয়ে জালাও” সব কথা ধরতেও পারতাম না মানেও জানতাম না তাও গাইতাম।

রেডিও থেকেই মান্না দে, কিশোর কুমার, হেমন্ত মুখার্জি, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা এবং এন্ড্রু কিশোরকে চেনা। রেডিও ছাড়াও আমার গান শোনার আরেকটা মাধ্যম ছিল সেটা হলো মাইক। আমাদের সময় পাড়ায় পাড়ায় নানা অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো হতো। দূর দূরান্ত থেকে কত গান ভাসে আসতো। দুর্গাপূজার সময় আমাদের কি আনন্দ। সারা দিন গান শোনা যাবে। বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ছিল এ্যারোহেড ক্লাবের পুজো মণ্ডপ। আমাদের বাসার ছাদ থেকে সব গান শোনা যেত। তখন এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলত - কোন ক্লাবের পুজো কত ভালো হবে। একদিন আমার ভাই খবর দিল উঁচু স্টেজ তৈরি হচ্ছে, রাতে গানের আসর হবে। অনেক ভাল ভাল শিল্পী গান করবে। সময় মতো ছাদে বসে থাকলাম গানের আশায়। রাতে পুজোর মণ্ডপে পা ফেলার যায়গা থাকত না। গান শুরু হল, কত সুরে বেসুরে গান। তাও কি যে আনন্দ। হঠাত একজন গেয়ে উঠলেন “ওগো নিরুপমা করিও ক্ষমা”! একটু নড়েচড়ে বসলাম। আ হা কি দরাজ গলা, ঠিক ঠিক কিশোর কুমারের মতন। পর পর আরও কত গান। পরে শুনেছি সেই গায়কের নামও কিশোর। তিনিই ছিলেন আমাদের এন্ড্রু কিশোর। সময়টা সম্ভবতঃ ১৯৭৬/৭৭ সাল।

এভাবেই পরিচয় উনার গানের সাথে। এভাবেই ধীরে ধীরে ভক্ত হয়ে উঠি উনার গানের। তিনি রাজশাহী বেতারে গান করতেন। তখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঢাকা রেডিও থেকে দুর্বার নামে সৈনিক ভাইদের জন্য একটি গানের অনুরোধের আসর প্রচারিত হতো। এন্ড্রু কিশোরের “ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে” গানটির জন্য অনেক অনুরোধ আসতো। ছোট বড় সবার মুখে মুখে ছিল গানটি। আমি নিজেও গাইতাম। শুনতে শুনতে গর্বে মনটা ভরে যেত কারণ উনি আমাদের রাজশাহীর ছেলে আর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠের অধিকারী। কত কত পুরস্কার জমেছে উনার ঝুলিতে।

আমি এবং কিশোর দা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও আমি সেখানে পা রাখার আগেই উনি সেখান থেকে বেরিয়ে গেছেন। আমাদের বাড়ির কাছেই রাজশাহীর খুব নাম করা ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চু’র গানের স্কুল “সুর ও বাণী” যেখানে কিশোর দা গান শিখেছেন। জানতাম তিনি প্রায়ই আসেন এখানে তাঁর ওস্তাদকে দেখতে। ঐ পথ দিয়ে যাবার সময় তাকিয়ে থাকতাম, যদি উনাকে একবার দেখতে পাই। ভেতরে যাবার ইচ্ছা হতো। ভাবতাম যদি গান শিখতে পারতাম। তা আর হয়ে ওঠেনি। অন্তরের ইচ্ছা অন্তরেই থেকে গেছে। তখন থেকেই রাজশাহীর মানুষের মুখে মুখে কিশোর দার নাম। রাজশাহী কে অনেককেই মফস্বল বলে হেও করতে শুনেছি আর সেই রাজশাহীর ছেলে বাংলাদেশের এক নম্বর গায়ক!

সিডনিতে ২০১৩ সালে
উনাকে আর দেখার সুযোগ হয়নি আমার। ঘটনাটা এমনই রয়ে গেল, “তারে আমি চোখে দেখিনি তার অনেক গল্প শুনেছি”। আমার বোন আর ভাবি ছিলেন ডক্টর শিখার পেসেন্ট। আমি একদিন ডক্টর শিখাকে দেখতে গিয়েছিলাম উনি কিশোর দার বোন বলে! সেই এড্রু কিশোর কে শেষ পর্যন্ত দেখতে পেলাম এই সিডনীতে ২০১৩ সালে। উনি পথ প্রডাকশনের আমন্ত্রণে সিডনী এসেছিলেন। তাঁকে দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমি পথ প্রডাকশনের ফয়সাল হোসেন ভাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এখনো মনে আছে খুব গরম ছিলো দিনটি। কাজ থেকে এসে খুব ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু এন্ড্রু কিশোরকে দেখার লোভ সামাল দেওয়া কঠিন ছিল। কত বছর পরে তাকে দেখার সুযোগ এসেছে তা কি হাত ছাড়া করা যায়! সামনের সারিতে বসে অনেক দিন পর উনার কালজয়ী গানগুলো আবার প্রাণ ভরে শুনলাম। বাইরে এসে কথাও হলো। উনি অত্যন্ত ভদ্র, লাজুক ও বিনয়ী ধরনের মানুষ। বিশ্বাসই হচ্ছিলোনা এন্ড্রু কিশোরকে দেখছি!

এর পর মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতন ডাক আসলো আমাদের রাজশাহী ইউনিভারসিটি এলামনাই এসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি ওবায়দুর রহমান পরাগ ভাই এর কাছ থেকে। উনার বাসায় এন্ড্রু কিশোর আসবেন তাই আমরা সবাই যেন আসি। উইকডে তে পার্টি থাকলেও আমি রাজি হতে একটুও দেরি করিনি। কিশোর দা ছিলেন পরাগ ভাইয়ের অনেক কাছের বন্ধু। সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম আমরা সেদিন উনার সান্নিধ্যে। অজস্র ধন্যবাদ পরাগ ভাইকে।

এরপর আরও দুই বার এন্ড্রু কিশোর সিডনি এসেছেন কিন্তু আমার আর যাওয়া হয়নি। যদি জানতাম উনি আর কোন দিনও সিডনিতে আসবেন না তাহলে হয়ত শত কাজ ফেলেও হাজির হতাম আমাদের রাজশাহীর সূর্য সন্তানকে সম্মান জানাতে।
হঠাৎ করেই খবরটা পড়লাম উনি অসুস্থ। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য যে বিপুল অর্থ প্রয়োজন তা উনার ছিলনা। রাজশাহীতে তাঁর নিজের বাড়িটিও বিক্রি করতে হয়েছে। খুবই খারাপ হয়েছিল মনটা এই ভেবে যে উনি বাংলাদেশের এক নম্বর শিল্পী হয়েও যদি অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ থাকে তাহলে দেশের সাধারণ শিল্পীদের কি হবে!

সারা দেশে এন্ড্রু কিশোর এর অসংখ্য ভক্ত! উনার কফিন ফুলে ফুলে ঢেকে যাবার কথা ছিল কিন্তু কোভিডের কারণে তার কিছুই সম্ভব হলো না! কী নিঃশব্দে তিনি চলে গেলেন! তবে উনি বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের অগণিত সঙ্গীত প্রেমীদের অন্তরে। এন্ড্রু কিশোর, আপনি যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন! আমার এই শ্রদ্ধাঞ্জলি আপনাকে আকাশের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম, আপনি নিশ্চয়ই দেখবেন।





মমতাজ রহমান চম্পা, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া





Share on Facebook               Home Page             Published on: 21-Jul-2020

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far