bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



৭১ এর ঝাপসা স্মৃতি!
মম্‌তাজ রহমান


পরের অংশ

বিজয়ের মাসে আমার বাংলাদেশের বিজয় দেখার স্মৃতি সবার সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা হোল। তখন আমি খুবই ছোট। অধিকাংশ আম্মা আর বোনদের কাছে শোনা। কিছু কিছু আমারও যে মনে নাই তা না। মনে হয় দুঃসময়ের স্মৃতি সহজে মুছে যায় না। যেমন ১৪ই এপ্রিলের '৭১ এর কথা, সকাল বেলা অনেক ভোরে উঠেছি, দেখলাম আমাদের একটা বেলি ফুল গাছে প্রথম ফুল আসছে। আমি আর আমার বোন নার্গিস কি যে খুশী! দৌরে গেলাম আম্মা কে খবর টা দেওয়ার জন্য। আম্মা গাছ ফুল খুব ভালবাসেন, কোন ফল খেয়ে বীজ টা মাটিতে পুতে ফেলেন, গাছ হোক বা না হোক। আমাদের বাড়ী এভাবে উনি ভরে ফেলেছেন না না ফলের গাছে। আম্মার এ স্বভাব আমার ভিতর কেমন করে যেন চলে এসেছে! সেদিন আম্মা খুবই ব্যস্ত। উনি বললেন পরে দেখব। তোমরা নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নাও আমরা তোমার নানা বাড়ী, ইন্ডিয়া যাব। আমি তাঁর পর আম্মার পায়ে পায়ে ঘুরতে লাগলাম। এটা ওটা অসংখ্য প্রশ্ন করতে লাগলাম। আম্মা ব্যস্ততার মধ্যেও উত্তর দিলেন। পাকিস্তানী আর্মি রাজশাহীতে ঢুকে পড়েছে আমাদের পালাতে হবে। না তো আমাদের ওরা মেরে ফেলবে। অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠলাম। দৌড়ে ছাদে গেলাম, আমাদের বাড়ির ছাদটা বেশ বড়। ছাদ থেকে চারিদিকে অনেক কিছুই দেখা যায়। বাড়ীটা আয়তনে এক বিঘার বেশী, সামন ও পিছন দুদিকে রাস্তা চলে গিয়েছে। ছাদে এসে দেখলাম আমাদের প্রতিবেশী জয়ন্তরা হাঁসগুলো কে ডাকছে পাড়ে আসার জন্য। বেচারা হাঁস তো পাকিস্তানী বাহিনীর খবর জানেনা অভ্যাসবশত পুকুরে নেমে পড়েছে ভোর বেলা! মনটা কেমন যেন খারাপ হয়ে গেল। দেখলাম পাশের রাস্তা দিয়ে অনেক মানুষ বাক্স প্যাটরা নিয়ে, কেউ বা মাথায় করে বড় পোটলা নিয়ে জোরে হেঁটে যাচ্ছে। রিকশা করেও যাচ্ছে কেউ কেউ। নীচে এসে আম্মাকে বললাম। আম্মা তখন গুছাতে ব্যস্ত। সংসারে একটা একটা করে কত কি না জোগাড় করেছেন। একটা দেখেন আবার রেখে দেন। আমি আমার খুব প্রিয় দুটো পিতলের চামচ উনার হাতে তুলে দিলাম উনি বললেন না মা ভারী হয়ে যাবে কে টানবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন একদিন এভাবেই এক কাপড়ে ওদেশ থেকে চলে আসতে হয়েছিল আবার সেভাবেই ওখানে যেতে হচ্ছে!

ভারত বিভাগের পর আরও দুই বছর আমার দাদা ভারতে থেকে যান। তিনি হুগলী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন পরে তিনি এই মাদ্রাসাকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে রূপান্তরিত করেন। সে কারণে তিনি খান বাহাদুর খেতাবও পেয়েছিলেন। এলাকার হিন্দু-মুসলমান সবাই তাঁকে খুব সম্মান করতো। কিন্তু দেশ ভাগ হয়ে যাবার পর পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে। তিনি সেটা সহ্য করতে না পেরে ১৯৪৯ সালে রাজশাহীতে এক হিন্দু উকিলের সাথে বাড়ি বদল করে এদেশে চলে আসেন। অনেকটা পালিয়ে আসা। হুগলী তে অনেক শখ করে উনি দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ী বানিয়েছিলেন। আম্মা বলতেন রাজশাহী তখন হুগলীর তুলনায় জঙ্গল! আমার দাদা রাজশাহীতে এসে যাতায়াতের সুবিধার জন্য একটা রিক্সা কেনেন, ওটার নম্বর ছিল ৩! আমার দাদী মনের দুঃখে শুধু বুক চাপড়াতেন আর দেয়ালে মাথা ঠুকতেন! আম্মাও আসতে চাননি ছোট বোনদের আর বাবা কে ফেলে রেখে। কিন্তু আমার দাদা তাঁর সিদ্ধান্তে ছিলেন অটল কাওকে কিছু না জানিয়েই তিনি নিজের বাড়ির বৈঠকখানায় বসেই বাড়ীর দলিল বদল করেন। পরে কোর্টে রেজিষ্ট্রি হয়।

১৯৪৯ এ ভারত থেকে আসা আর ১৯৭১ ভারতে ফিরে যাওয়ার মধ্যে প্রধান পার্থক্য হোল ১৯৪৯ এ আম্মাকে কোন ভার নিতে হয়নি। মাথার উপর শশুড়, শাশুড়ি, স্বামী সবাই ছিল। আমার দাদী কয়েকজন আয়া খানসামাও এনেছিলেন সাথে করে। আর আজ ১৯৭১ এ আম্মার সাথে নয় জন ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। আমাদের বাবা মাত্র ৪২ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আমার মাকেই সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তখন। তাই কয়েক দিন ধরে আব্বার কিছু বন্ধু (আমরা চাচা বলে ডাকতাম) আমাদের বাসায় আসতে দেখেছি। উনাদের সাথে আম্মাকে কথা বলতে শুনেছি। কোন অর্থই বুঝিনি। তাঁরাই আম্মাকে ছেলে মেয়ে নিয়ে ভারতে আমার নানার কাছে চলে যাবার পরামর্শ দেন।

এর কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে একটা নাটক করে। নাটকের রিহার্সাল আমাদের বাইরের ঘরে হতো। আমার আব্বাও আওয়ামী লীগের রাজশাহী শাখার সক্রিয় কর্মী ছিলেন উনার জীবদ্দশায়। আমার বড় ভাই যে ব্ল্যাক লিস্টে আছে তা সবাই জানত। তারই ফলশ্রুতি এই গোছগাছ। তাড়াতাড়ি রাজশাহী ছেড়ে যেতে হবে মিলিটারি রাজশাহীর বর্ডার দখল করে নিলে আর যাওয়া যাবে না। ভাইরা বাইরে থেকে খবর আনল। তার সাথে দুজন লোকও জোগাড় করে আনল যারা আমাদের বর্ডার পাড় করে কানলায় নানার বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। আমাদের বাড়িতে এক বিহারী দারওয়ান আব্বার সময় থেকেই থাকত নাম রশিদ। সে আমাদের বাইরের বাড়ীর একটা ঘরে থাকত। আমাদের পোষা গরুর দেখাশোনার কাজে আম্মাকে সাহায্য করত। বাজার করে আনত। তাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে আমরা অবশেষে পায়ে হেঁটে রওনা হলাম। প্লান ছিল নৌকা করে পদ্মা নদী পার হয়ে ওপারে যাওয়া হবে। রাস্তা একেবারে চুপচাপ। আমরা মেইন রাস্তা দিয়ে না গিয়ে ভিতর ভিতর গলির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি, আমার মতো মানুষের বাড়ী ঘর গাছ ফুল দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম, সবই নতুন রাস্তা। আম্মা আমাকে রাস্তা দেখে হাটার জন্য সতর্ক করে দিচ্ছিল বারবার। আমার বড় বোন কিছু কাপড় আর একটা বালিশ নিয়ে রওনা হয়েছিল। তার কাছে কেন বালিশটা এত গুরুত্ব পেয়েছিল আমি এখনও জানি না। মনে আছে কয়েক বার তার হাতের পোটলা থেকে বালিশ রাস্তায় পড়ে যাচ্ছিলো। আমার আরেক বোন মাত্র ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছিল। সে তার বেশ কিছু মোটা মোটা বই সাথে নিয়েছিল। ফলে ভারী সুটকেস টানতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল সেটা মনে আছে। আমার আরেক বোন ছোট থেকেই কবি ধরনের সে অন্যমনস্ক হয়ে গোবরের মধ্যে পা দিয়ে দিল আর আম্মার কাছে মার খেল সে জন্য।

আরও কিছু মানুষ যাচ্ছিলো আমাদের সাথে। তারা বলল শহরের অবস্থা ভাল না। কিছু মানুষকে দেখলাম বারান্দায় বসে তসবি গুনছে। পরিবেশটাই কেমন যেন। অবশেষে আমরা পদ্মার বাঁধের কাছে পৌঁছলাম। দূরে চরে দেশলাইয়ের কাঠির মতো মানুষ দেখা যাচ্ছিলো। আমাদের সাথের একজন বলল ওরা মুক্তিবাহিনী। আমার খুব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছিল তাই কে যেন কোলে তুলে দেখাল। আরেকটু আগাতেই মাথায় জলপাই রঙ এর হেলমেট পরা সার সার মাথা দেখা গেল খুব কাছে। তাদেরকে আমার বড় ভাই একটু এগিয়ে গিয়ে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ওপারে যাওয়া যাবে? ওরা উত্তর দিল 'আইয়ে আইয়ে'। আমার ভাই আম্মাকে বললো, মনে হয় পাকিস্তানি আর্মি বর্ডার দখল করছে আর যাওয়া যাবে না। মাটিতে সাদা কাল কি সব পড়ে আছে, মনে হলো ওগুলো মানুষের লাশ । যারাই কাছে যাচ্ছে তাদের মেরে গর্তে ফেলে রাখছে। ওরা সবাই দেখলো, আমি অবশ্য দেখতে পাইনি, ভয়ে কান্না শুরু করে দিলাম। আম্মা বলল তাহলে এখানে থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে চল। ওরা যদি গুলি শুরু করে তাহলে কেউ আর বাঁচবে না। সেই তখন আমি আমার প্রথম হার্ট বিট শুনতে পেলাম। এত ভয় পেয়েছিলাম সেটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। নানা বাড়ী যাওয়ার আনন্দ এক নিমেষে কোথায় যে মিলিয়ে গেল, যোগ হোল মৃত্যু আতঙ্ক! ওরা মনে হয় সংখ্যায় কম ছিল, পদ্মার বাঁধ পাহারা দিচ্ছিল আর ওরা ছিল অনেক নীচে আমরা উপরে তাই মনে হয় আর কাছে এসে গুলি করেনি। যারা কাছে গিয়েছে ওদের ডাক শুনে তারা আর ফিরে আসেনি। অনেকেই পরে বলেছে আমাদের ভাগ্য ভাল ছিল! আমরা বাড়ীর দিকে রওনা হলাম। আর হাঁটতে পারছিলাম না বলে আমার মেজো ভাই আমাকে কাঁধে করে ফিরল। বাড়ী এসে অনেক ধাক্কা-ধাক্কির পর সেই রশিদ দরজা খুলল। সে ধরেই নিয়েছিল আমরা আর কোন দিনও ফিরব না রাস্তায় গুলি খেয়ে মরব। তখন সে হবে এই বাড়ীর মালিক। আমরা ফিরে আসায় সে যে খুশী হয়নি তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। ঐ সময়ে আম্মার মনোবল আর দূরদর্শিতা এখনও আমাকে অবাক করে। ভাইরা খবর আনল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর্মি দখল করেছে। বাজারের দোকান পাটে আগুন দিচ্ছে। আম্মা ভাবলেন ব্যাঙ্ক ও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় টাকা উঠিয়ে নিয়ে আম্মা তাড়াতাড়ি চাল, ডাল, আটা, কেরোসিন তেল, বড় এক বাক্স লবণ, আলু, আঁখের গুড়, আর গরুর জন্য অনেক খর, কিনে বারান্দা ভরে ফেললেন। যা খেয়ে পরবর্তী সময় আমারা প্রাণ রক্ষা করি।

পরের দিন ১৫ই এপ্রিল খবর এলো বিভিন্ন যায়গায় মিলিটারির বর্বরোচিত হত্যা আর অত্যাচারের খবর। ঐ দিনই তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক কে উনাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়, উনারা আর কোন দিনও ফিরে আসেননি। তাঁদের মধ্যে আমার শ্বশুর, গণিত বিভাগের অধ্যাপক শহীদ হাবিবুর রহমান, অন্যতম। উনাকে পরবর্তীতে মরণোত্তর একুশে পদক দেন বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য। এর মধ্যে কয়েক জন বিহারী এসে বড় ভাইয়ের খোঁজ করে গিয়েছে। ওরা বাড়ী থেকে পালিয়ে গিয়ে মসজিদে রাতে থাকতো। এর পর আম্মা শুরু করলেন নামাজ কালাম করা। আমরা মৃত্যু আতঙ্ক নিয়ে থাকি, বাড়ীর বিশাল উঠান হামাগুড়ি দিয়ে পার হই। যদি পাশের বাড়ীর ছাদ থেকে কেউ দেখে ফেলে। রান্না হয় কেরোসিনের চুলায়, শোয়ার ঘরে। যদি ধুঁয়া দেখে ফেলে কেউ। আম্মা আমাদের ঘরে তালা বন্ধ করে রাখতেন অধিকাংশ সময়। হারিকেনের আলোয় রাতে সব করতে হতো। এমনিও কার্ফু থাকতো বেশী ভাগ সময়। রান্না, ধোয়া-মোছার কাজ চলত কুয়ার পানিতে। কুয়াতে বালতি ফেলতে হতো শব্দ না করে। গোসল করতাম বাড়ীর পাশেই একটা পুকুর ছিল সেখানে। একদিন আমার মেজো বোন প্রায় ডুবেই যাচ্ছিল, অনেক কষ্টে আমার ভাই তাঁর চুল ধরে পাড়ে নিয়ে আসে। আমরা কেউই সাঁতার জানতাম না। অনেক রাতে আমি, আমার চার বছরের বড় বোন আর আম্মা মিলে দূরে এক বাড়ীর টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি এনে রাখতাম। আমি ছোট তাই একটা জগ নিয়ে যেতাম। আম্মার সাথে ছায়ার মতো লেগে থাকতাম। তখন আমাকেও কিছু দোয়া শিখানো হয়। অনেক রাতে আম্মা একা একা পুকুরে গিয়ে কাপড় ধুতেন।

একদিন দেখলাম আম্মা ছোট ছোট গোল করে মাটির ঢ্যালা রোদ্রে শুকাতে দিয়েছেন, জিগ্যেস করলে বললেন ওগুলো দিয়ে বাড়ী বাঁধবেন। মনে একটু সাহস হল। তাহলে আমাদের বাড়িতে মিলিটারি ঢুকতে পারবে না। আম্মার নির্দেশ অনুযায়ী বাড়ীর চতুর্দিকে ঐ মাটির ঢ্যালা অনেক ভক্তি ভরে রেখে আসলাম আমরা ছোট তিন ভাই বোন। আমরা কোন কোন সময় পুকুর পাড় বা আসে পাশের মাঠ থেকে ঘাস কেটে নিয়ে আসতাম গরুর জন্য আর আমাদের জন্য নটে শাঁক তুলে আনতাম। একই খাবার কত খাওয়া যায় কিন্তু কোন দিনও মুখে টু শব্দ করিনি। সেই নটে শাঁক আমাদের মাথায় এমন ভাবে গেঁথে গিয়েছে আমি আজও অস্ট্রেলিয়া তে আমার সবজির সাথে ঐ শাঁক সার আর পানি দিয়ে লালন করি। আমার বোন ক্যানাডায় রাস্তা থেকে এই শাঁক তুলে এনে রান্না করত! এ এমনি নস্টালজিয়া!

একদিন পাড়ার এক ছেলে আম্মাকে এসে বলল রাস্তা দিয়ে মিলিটারির জীপ যখন যাচ্ছিল আমাদের বাড়ীর সেই দারওয়ান নাকি ওদের গাড়ি থামিয়ে উর্দুতে বলছিল এই বাড়িতে বাঙ্গালী থাকে। ঘরের শত্রু বিভীষণ! ওরা গাড়ি থামিয়ে বাড়ীর দিকে দেখছিল। আমাদের বাড়ীর খিলানের উপরে আমার দাদা নিজে হাতে আরবি তে কলেমা খোদাই করে লিখেছিলেন। সেই কলেমার জোরেই হোক বা আম্মার মাটির ঢ্যালার জোরেই হোক সে যাত্রা তারা চলে যায়।

(চলবে...)



মম্‌তাজ রহমান, সিডনি

পরের অংশ




Share on Facebook               Home Page             Published on: 17-Dec-2015

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far