bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













প্রয়াগরাজ / মলি আহমেদ



আগের অংশ


একজন বেশ স্বাস্থ্যবান, পরনে চিকন পাড়ের সাদা ধুতি আর গেরুয়া রঙের ফতুয়া, কপালে তিলক, প্রায় পুরোহিতের বেশ। অপর জন মনে হয় তার সাহায্যকারী হবে - হাতে ফুল, নারকেল,পূজার সামগ্রী!! “আরে আরে কে তোমরা??” শম্পা বিরক্ত।

একটু খটকা তো লাগলোই। হিন্দিতে কি সব বলা শুরু করল। অর্ধেক কথা তো বুঝতেই পারছিলাম না। শম্পা আমাদের এক মাত্র হিন্দি জানা ভরসা। ওদের সাথে বেশ ভালই কথা কাটাকাটি হচ্ছে। অনেক কষ্টে যেটা উদ্ধার করলাম সেটা হল - ওরা বলছে এটা একটা পবিত্র স্থান, মানুষের অনেক সৌভাগ্য থাকলে এসব জায়গায় আসতে পারে তাই সেই সৌভাগ্যের জন্য তাদের কাছ থেকে নারকেল, ফুল কিনে পূজা দাও, সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল হবে। আর শম্পার যুক্তি হচ্ছে – “আমরা দেখতে এসেছি কোন পূজা দিতে আসিনি। নেমে যাও নৌকা থেকে।” নেমে যাও বললেই কি আর নামে ওরা? কিছু রোজগারের সম্ভাবনা ছাড়বে কেন।

এদিকে আশীষ’দার সাথে পূজা করতে কত টাকা নেবে তাই নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়ে গেল। ওরা ততক্ষণে আসন বিছিয়ে ফুল, মালা, নারকেল, দুধের ঘট, প্রদীপ জ্বেলে পূজার প্রস্তুতি করে ফেলেছে। দেখা গেল দরদস্তুরের ব্যাপারে আশীষ’দার দক্ষতা তদের কাছে কিছুই না। তাদেরই জয় হল। আশীষ’দা হাল ছেড়ে বলল “আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে । করো কি করবে।” আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করা ঠিক। জিয়া নির্বাক নির্লিপ্ত মনে পুরো ব্যাপারটার মজা নিচ্ছিল আর ভিডিও করছিল।



শম্পা, আশীষ’দা পাশাপাশি বসেছে। নাম কি? কোথা থেকে এসেছে? আর কে কে আছে সংসারে? এই সব জিজ্ঞাসা করছিল। আশীষ’দা উত্তর দিল। পূজা শুরু করল। মন্ত্রপাঠ চলছে, হঠাৎ করে থেমে জানতে চাইল গোত্র কি? আশীষ’দা জানাল শাণ্ডিল্য গোত্র। হুঁ, বুঝলাম। অনেকক্ষণ অনেক মন্ত্র তন্ত্র পড়ে ঝাড় ফুক দিয়ে ফুল, প্রদীপের উঠা নামা করে নানা আশীর্বাদ আর মঙ্গল কামনা করে পূজা শেষ করল। আশীষ’দা আর শম্পা সরে বসতেই আমাদের দিকে ফিরে বলল এবার তোমরা বস। এমন একটা পরিস্থিতিতে কখনও পড়িনি। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। যদি আমরা না বসি ব্যাপারটার অন্য অর্থ হতে পারে। তা ছাড়া এক যাত্রায় পৃথক ফল জিনিসটাও বেশি সুবিধার নয়। আমরাও বসে পড়লাম।

“মোর জীবনে বিচিত্ররূপ ধরে
তোমার ইচ্ছা তরঙ্গিছে॥”

ঐসব আমাদেরকেও জিজ্ঞাসা করল। কোন মন্ত্রও তো বুঝতে পারছিলাম না শুধু সংস্কৃত শব্দের মধ্যে আমাদের ছেলে মেয়ের নাম জয়ন্ত, অরণি শুনে বুঝতে পারলাম ওদের জন্য মঙ্গল কামনা হচ্ছে। তারপর মাঝ পথে থেমে আমাদের কেও সেই একই প্রশ্ন করল - তোমাদের গোত্র কি? এবার আমিতো আর হাসি থামাতে পারছিলাম না। যাহ্ আমার গোত্র কি?! এতো আমাদের জন্য কঠিন প্রশ্ন। জিয়ার দিকে তাকালাম, সেও দেখি হাসি চেপে গম্ভীর থাকার চেষ্টা করছে। পিছন থেকে আশীষ’দা বলল, ঐ একই গোত্র। বেশ বেশ ভালই হল।

পূজা শেষ হল, সব গুটিয়ে জিনিস পত্র টাকা পয়সা নিয়ে নৌকা থেকে নেমে যাচ্ছিল দেখে শম্পা বলল, “তোমাদের এই ফুল মালা নারকেল সব জলে ফেলার কথা না? ফেলে দাও, ফেলে দাও।” ওরা ফেলবে না। শম্পা বলল, “না ফেল তো আমাদের দাও, বাড়ি নিয়ে যাব।”

একই নৈবদ্যে সারা দিন সব মানুষের জন্য পূজা করে যাচ্ছে। বার বার কিনতে গেলে কত পয়সা লাগবে। আশীষ’দা বলল “ছেড়ে দাও শম্পা, তুমি ফেলবে আর এখনই গিয়ে আবার জল থেকে তুলে আনবে। থাক এসব।” শম্পা বলল “আমি জানি ওরা এই সবই তো করে।” জিয়া বলল “করতে দাও, কিছু হবে না।”

ত্রিবেণী সঙ্গম দেখা হল। কুম্ভমেলায় না আসতে পারি মেলার স্থানটা তো দর্শন করলাম। অনেক আশীর্বাদ পেলাম না চাইতে। শেষ বিকেলের রোদ তখন নদী পাড়ের গাছগুলির উপর পড়েছে। নদীর পাড়ের বালুতে রোদ পড়ে ঝিকিমিকি আলো ছড়াচ্ছে। সূর্য অস্ত যাবার আগে তার শেষ রবির ছটা নদীর জলকে রক্তিমাভাসে আরক্ত করছে। আমাদের নৌকা ফিরে চলল ঘাটের দিকে।



এক একটা দিন যেন এক রহস্যতায় ভরা। এই শাশ্বত সত্য অসীম মহা বিশ্বে মহাকাশে এই যে আমাদের বাস, এই খানে এই খেয়ার কুলে আমাদের যে নিত্য আনাগোনা, প্রকৃতির মাঝে বিলীন হয়ে থাকা আমাদের জীবন তরী তার শুধুই আসা যাওয়া। আর সেই আসা যাওয়ার এই সন্ধিক্ষণে অকারণে মনটা ব্যাকুল হল। যে পথে এসেছি সে পথ এখন ফেলে চলে যাচ্ছি, মন মনরে আমার। মনে হল এই জগতে যা দিয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। আজ এই যে নদীর তীর, উন্মুক্ত প্রান্তর, অসংখ্য বন্ধন মাঝে মুক্তির স্বাদ। সেই অসীম লীলা খেলায় শেষের বেলায় সবাইকে প্রণাম করে যাই...

“প্রভাত হয়ে এসেছে রাতি, নিবিয়া গেল কোণের বাতি--
পড়েছে ডাক চলেছি আমি তাই॥”

পরের দিন ভোরে আমাদের লক্ষ্ণৌ যাবার যাত্রা শুরু। ঘুঙুরের আওয়াজ, মাহফিলের আমেজ, রুমির দারয়োজা, ভুলভুলিয়া, শাহী দরবার আর এই নবাবদের শহরে নবাবী কাবাব আস্বাদন করে আমাদের কি হাল হয়েছিল সে আর এক মজার কাহিনী।


৯ সেপ্টেম্বর ২০২০




আগের অংশ



মলি আহমেদ, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 9-Dec-2020

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far