রমজানুল মোবারক মাসুদ পারভেজ
বছর ঘুরে ফিরে এলো পবিত্র মাহে রমজান - রমজানুল মোবারক।
আরবি বছরের নবম মাস রমজান - সিয়াম সাধনার মাস। রমজান মাসে রোজা রাখা - ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সংযম-চর্চায় আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে সমগ্র ধর্মপ্রাণ মুসলমান জাতি এই রমজান মাস অত্যন্ত যত্নের সাথে পালন করেন।
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার বিধান থাকায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন দেশে ঋতুচক্রে দিনের দৈর্ঘ্যের তারতম্য রয়েছে। আর সেজন্যে বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের জন্যে প্রতিদিনের রোজার দীর্ঘতার পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। দিনের দৈর্ঘ্য যেখানে যতই দীর্ঘ হোক না কেন কিংবা প্রাকৃতিক/রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে/প্রতিকূলে থাকুক না কেন ধর্মভীরু-ধর্মপ্রাণ প্রকৃত মুসলিমরা রমজান মাসে সিয়ামের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে তাদের প্রাণপণ চেষ্টা করেন। লুনার ক্যালেন্ডারে ৩৫৪.৩৭দিনে এক বছর। এইজন্য সোলার ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে ৩৬৫/৩৬৬দিনের ইংরেজি বছরে আরবি মাস ১১/১২দিন এগিয়ে আসে। ফলে প্রতি ৩৩বছরে একই সময়ে/ঋতুতে আবার ফিরে আসে পবিত্র রমজান। আগামী ১০বছর পরে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মকালে আসবে পবিত্র রমজান মাস।
প্রাগৈতিহাসিক যুগের তুলনায় সময়ের পরিবর্তনে, বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায়, আধুনিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কারে বর্তমানে মানুষের জ্ঞানের পরিধি অনেক বিস্তৃতি লাভ করেছে। ফলে নতুন চাঁদের জন্ম, চাঁদের বয়স, খালি চোখে চাঁদ দেখার টাইমিং, ইত্যাদি বিষয় আজ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সফটওয়ারের মাধ্যমে সহজেই নির্ণয় এবং বিশ্লেষণ করা যায়। কিন্তু তবুও অধিকাংশ মুসলিমরা আকাশে খালি চোখে চাঁদ দেখে রোজা শুরু কিংবা ঈদ পালন করে থাকে।
ইসলাম ধর্ম ছাড়াও আরো অনেক ধর্মে ভিন্ন আঙ্গিকে ফাস্টিং করার নিয়ম আছে। ফাস্টিং-এর ফলে শরীরের ওজন কমার পাশাপাশি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস পায়। এছাড়া শরীরের মেটাবোলিজম, হরমোন, পরিপাকতন্ত্র, ইত্যাদির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাওয়ার বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ রয়েছে।
ছোটবেলা থেকে দেখেছি সবাই খেজুর দিয়ে ইফতারি শুরু করে। প্রতিটি খেজুরে রয়েছে - ৩১গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ইত্যাদি যা’ ইফতারিতে তাৎক্ষনিক ভাবে শরীরে শক্তি যোগায়।
আমার স্থানীয় মসজিদে প্রতিরাতে প্রায় ৩০০জন মুসুল্লির সাথে মনোযোগ দিয়ে খতমে-তারাবীহ নামাজ আদায় করা এক পরম প্রশান্তির। সারাদিন রোজা রেখে, অফিসের কাজ সেরে, ইফতারি করে, ক্লান্ত দেহে - ইমাম সাহেবের শ্রুতিমধুর কণ্ঠের প্রায় দেড় ঘণ্টার ২০রাকাত তারাবীহ নামাজ আদায়ে মাঝেমধ্যে অন্যমনস্ক হলে – নীরবে প্রার্থনা করি – “ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু”!
রমজান মাসে সারাদিন শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা নয় বরং রোজা পালন মানুষকে আত্মশুদ্ধি, দানশীলতা, উদারতা ও মহত্ত্বের শিক্ষা দেয়। রমজান মাসের শেষ দশদিনের যেকোনো একটি বেজোড় রাতে রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও সেরা রাত – “লাইলাতুল কদর”। এরপর- “রমজানের ঐ রোজার শেষে আসবে খুশির ঈদ” - সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক।
১০/০৩/২০২৪
মাসুদ পারভেজ, সিডনি / mmparvez@yahoo.com
|