পারিবারিক পিঠা উৎসব মাসুদ পারভেজ
শীতের মৌসুমে বাংলাদেশের গ্রামে ঘুরে দেখা যায় - হয়তো মেয়েরা ঢেঁকিতে চাল গুড়ো করছে, খেজুর গাছ থেকে নিয়ে আনা রস দিয়ে কেউ হয়তো নানা ধরনের পিঠা বানাচ্ছে, ভাপা পিঠার মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে অনেক দুরে...। পিঠা উৎসব বাংলা সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য-এর এক অনন্য প্রতীক। জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশে যেমন জাতীয় পিঠা উৎসব পালিত হয় তেমনি পৄথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীরা পিঠা উৎসব পালন করেন। অস্ট্রেলিয়াতেও গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সাবার্বে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় বিভিন্ন সংগঠন সফলভাবে শীতকালীন পিঠা উৎসব আয়োজন করে আসছে।
১০ই আগস্ট রোববার ব্যতিক্রমধর্মী এক পারিবারিক পিঠা উৎসবের আমন্ত্রণে পরিবারের সবাইকে নিয়ে গিয়েছি সিডনীর বিশিষ্ট কবি জনাব হায়াত মাহমুদ পরিবারের কোগরাস্থিত বাসভবনে। হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা মেঘলা আকাশের নীচে বেশ কনকনে শীতের সকালে কোগরা এবং তার পার্শ্ববর্তী সাবার্বে বসবাসরত আমন্ত্রিত বাংলাদেশী পরিবারের আগমনে বাড়ির ব্যাকইয়ার্ড কানায় কানায় ভরে উঠেছিল। এদেশে পারিবারিক অনুষ্ঠানে উঠতি বয়সের বাচ্চাদের যেতে আগ্রহ কম থাকে আথচ এই অনুষ্ঠানে সবচেয়ে লক্ষণীয় দৃশ্য ছিল - হাইস্কুল/ইউনিভার্সিটিতে পড়ে এমন অনেক বাচ্চাদের উপস্থিতি। কয়েকজন ভাবী একের পর এক গরম গরম ভাপা পিঠা বানিয়ে আর বাসা থেকে বানিয়ে আনা রকমারি পিঠায় সাজিয়ে তুলেছিলেন পিঠা উৎসবের টেবিল। সেখানে থরে থরে শোভা পাচ্ছিল - ভাপা-পিঠা, চিতই, মুগ-পাকন, মুগ-পুলি, পাটিসাপটা, নারিকেল, তেলের, তিলের - - আরো নানা ধরনের লোভনীয় পিঠা। আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু পিঠার পাশাপাশি, হাতে বানানো রুটি, গরু আর মুরগির মাংসের তরকারী ছিল নাস্তার মেন্যুতে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেঘলা আকাশ থেকে ঝলমলে সূর্য বেরিয়ে এসে মিষ্টি রোদ সবাইকে হেলাল ভাইয়ের রান্না করা গরম বিরিয়ানির আমন্ত্রণ জানায়
। রকমারি পিঠা-পুলি, সুস্বাদু খাবারের সমাহার আর সুঘ্রাণের পরিবেশকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে রেকর্ডারে বাজানো জনপ্রিয় বাংলা সংগীতের অনবদ্য মূর্ছনা...
সবার সাথে দেশ- বিদেশের রাজনীতি, শিক্ষা-ব্যবস্থা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে আলাপচারিতায় ডিসপোজেবল প্লেটের ওপর কুইন্সল্যান্ড থেকে আনা কচি কলা পাতাতে পিঠা এবং অন্যান্য খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে রোববারের সকাল থেকে দুপুরের কয়েকটি ঘণ্টা দ্রুত ফুরিয়ে গেলো...ফেরার সময় হয়ে এলো...দিনের পরবর্তী কমিটমেন্ট রাখার জন্য...। অনেকদিন পরে শহুরে পরিবেশে বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির স্বাদ পেলাম
। কয়েকজন বড় বাচ্চারা নারিকেল আর তেলের পিঠা খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে করা কমেন্ট কানে এসেছিল -
these pithas taste better than the fast food
।
মনে হলো...আমাদের দেশে দাদী-নানীরা যেভাবে পিঠা বানিয়ে আপ্যায়ন করতেন - তা' আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেকেই দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত...এখানে অনেক বাচ্চারা পিঠা খাওয়াতো দূরের কথা, বিভিন্ন ধরনের পিঠা চেনেও না।
সুদূর প্রবাসে ঘরোয়া পরিবেশে ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজনে হায়াত পরিবার সহ অন্যান্য সবাইকে সহযোগিতা আর অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ।
মধ্য দুপুরে গাড়িতে উঠে পরিবারের সবাই সকালের কয়েক ঘণ্টার আনন্দ মুখর অনুভূতি নিয়ে রওনা হলাম ৪০ কিলোমিটার দূরে একই সাথে বন্ধুর ছেলের জন্মদিনের আর তার হাউসওয়ার্মিং-এর দাওয়াতে...। গাড়িতে বাচ্চারা মনে করিয়ে দিল - পিঠা উৎসবের পর বসন্ত মেলা!!!...সত্যিই তো' তাই
বসন্ত সমাগত।
এসো হে বসন্ত...অনন্ত জীবন হোক জীবন্ত...। আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর ২০১৪তে কোগরাস্থিত Jubilee Oval-এ অনুষ্ঠিতব্য বসন্ত মেলা-তে কোগরাবাসীদের পক্ষ থেকে সবাইকে আমন্ত্রণ।
mmparvez@yahoo.com
সিডনী ১৫/০৮/২০১৪
|