মৃত্যু মাসুদ পারভেজ
চিকিৎসক এক বন্ধুর প্রাণপ্রিয় মা ৪০দিন লাইফ সাপোর্টে থেকে সিডনির এক হাসপাতালে গত সপ্তাহে চলে গেলেন না ফেরার গন্তব্যে। অত্যাধুনিক চিকিৎসা আর সবার প্রচেষ্টায় ঠেকানো যায়নি এই মৃত্যু। সপ্তাহের কর্ম-দিবসে যোহরের নামাজ শেষে জানাজায় অংশ নিলাম। হালকা ঝোড়ো বাতাসের মাঝে শোকার্ত শুভাকাঙ্ক্ষীদের অংশগ্রহণে, দোয়া আর সমবেদনায় ভেজা চোখে চির বিদায় দিলাম। মনে হলো প্রকৃতিও অংশ নিয়েছে আমাদের সাথে।
ডেভিড গুডঅল এর জন্ম ১৯১৪ সালে লন্ডনে। ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন প্রফেসর গুডঅল। পূর্ণকালীন কাজ থেকে ১৯৭৯ সালে অবসর নেয়ার পরেও মাঠ পর্যায়ে গবেষণার সাথে ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পার্থে এডিথ কাওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা বেতনে গবেষণা করতেন। এ বছরে এপ্রিল মাসে ১০৪বছরে পা দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে, কেক কেটে যথাযথ মর্যাদায় জন্মদিন পালন করেছেন। বয়সের তুলনায় শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও তিনি মনে করেন এ বয়সে কোন স্বাধীনতা নেই, অন্যের ওপর নির্ভরশীল। পুরানো বন্ধুদের সাথে এখন আর দেখা হয়না, চলাচল সীমিত হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় বেঁচে থাকা অর্থহীন। এবারের জন্মদিনে বিজ্ঞানী গুডঅল বলেন – “এই জীবন নিয়ে মহা-বিরক্ত, আর বাঁচতে চাই না, আমার মতো বৃদ্ধের নিজের মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ নাগরিক অধিকার থাকা উচিত, আমি চাই, নিষ্কৃতি মৃত্যুতে”। অস্ট্রেলিয়ায় নিষ্কৃতি মৃত্যু বেআইনি হওয়ায় সুইজারল্যান্ড পাড়ি দিয়েছেন তিনি। গত ১০ই মে সুইজারল্যান্ডের বাসেলের এক ক্লিনিকে অস্ট্রেলিয়ায় নিষ্কৃতি-মৃত্যুর সমর্থক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে নিষ্কৃতি মৃত্যু হয়েছে প্রফেসর গুডঅল এর।
টেলিভিশনের খবরে গতকাল দেখলাম - অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ কেন-এর নেতৃত্বে একদল গবেষক আবিষ্কার করেছেন বয়স কমানোর ঔষধ। রক্ত কোষের ডিএনএ এর পরিবর্তন রোধে সক্ষম আবিষ্কৃত এই ঔষধ হৃদ্রোগ, ক্যানসার, কোলেস্টেরল কিংবা বাতের মতো ডিএনএ পরিবর্তন-জনিত রোগও প্রতিরোধ করতে পারবে।
প্রফেসর গুডঅল ১০৪ বয়সে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় জর্জরিত, বাঁচতে চেয়েছিলেন যুবকের মতো। কিন্তু বয়সের ভারে তা সম্ভব হয়নি। আর বন্ধুর মা চলে গেলেন মাত্র ৬০বছর বয়সে। মৃত্যু তার প্রধান দায়িত্বটি পালন করে দেহকে মুক্তি দিয়ে আত্মাকে অন্যলোকে নিয়ে যায়। নতুন এই ঔষধ হয়তো বদলে দিতে পারবে মানুষের বেঁচে থাকার ও মৃত্যুর ধরন - আশাবাদী হতে চাই।
সৃষ্টির অমোঘ নিয়মে, দেহ একসময় অনিবার্য কারণে ক্লান্ত হয়ে আত্মার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হয়। এই অমোঘ নিয়তি এড়ানোর ক্ষমতা নেই কোনো জীবের। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভাষায় – “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?”
মাসুদ পারভেজ, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া, mmparvez@yahoo.com
|