bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...


মেলবোর্নে কয়েকদিন
মাসুদ পারভেজ

শরতের সুন্দর সোনালী সকাল শুক্রবার ২৭শে মার্চ ২০১৫। সিডনি থেকে পরিবারের সবাই গাড়িতে রওয়ানা হয়েছি মেলবোর্নের উদ্দেশ্যে। সিডনি থেকে এম-৫ মোটরওয়ে আর হিউম হাইওয়ে ধরে প্রায় ১০০০কিলোমিটার দূরত্বের পথে গোলবার্ন, গান্ডাগাই এবং অলব্রি-তে যাত্রা বিরতি নিয়ে প্রায় ১১ঘন্টায় মেলবোর্নে পৌঁছলাম রাত সাড়ে আটটার দিকে। প্রতিটি স্থানে আধা ঘণ্টার যাত্রা বিরতিতে সকালের নাস্তা-কফি, লাঞ্চ এবং বিকালের/সন্ধ্যার চা-বিস্কুট খাওয়ার মাঝে কিছু হাঁটা-ব্যায়ামের মধ্যে তেমন শারীরিক ক্লান্তি হলো না এই দীর্ঘ যাত্রাপথে।

পরদিন শনিবার মেলবোর্ন শহর থেকে রওয়ানা হলাম বন্দরনগরী জিলং, এপোলো বে আর গ্রেট ওশান রোড ধরে টুয়েলভ এপোস্টেলস’র উদ্দেশ্যে। অস্ট্রেলিয়ান হেরিটেজ লিস্টের অন্তর্ভুক্ত - গ্রেট ওশান রোড। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে আসা সৈনিকরা প্রায় ১৩বছর (১৯১৯-১৯৩২) অক্লান্ত কঠোর পরিশ্রম করে এই রাস্তা নির্মাণ করেছেন যুদ্ধে নিহত সহযোদ্ধাদের নামে উৎসর্গের জন্যে। প্রায় ২৫০কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রেট ওশান রোড আজ তাই পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ওয়ার মেমোরিয়াল। গ্রেট ওশান রোড ধরে ন্যাশনাল পার্কের পাহাড়িয়া রাস্তার চিত্তবিনোদনকর নয়নাভিরাম দৃশ্য সত্যিই খুব চমৎকার। মেলবোর্ন শহর থেকে যাত্রা শুরু করে জিলং এবং এপোলো বে ভ্রমণ করে প্রায় ৭ঘন্টা পরে টুয়েলভ এপোস্টেলস-এ পৌঁছলাম সন্ধ্যার কিছু আগে। “এপোস্টেলস”-র আভিধানিক অর্থ “দূত কিংবা “বার্তাবাহক”। প্রায় ২০মিলিয়ন বছর আগে ভিক্টোরিয়া স্টেটের পোর্ট ক্যাম্বেল ন্যাশনাল পার্কের কাছাকাছি সমুদ্র সৈকতে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত ১২টি চুনাপাথর কিংবা লাইম-স্টোন স্ট্যাক। সোনালী-বাদামী রঙের ১২টি লাইম-স্টোন স্ট্যাকের মধ্যে এখন শোভা পাচ্ছে মাত্র ৭টি। সময়ের পরিক্রমায় বাকি ৫টি বিলুপ্ত হয়েছে - কিন্তু টুয়েলভ এপোস্টেলস’র নাম আগের মতোই রয়েছে। পাহাড়ের ওপর থেকে সমুদ্র সৈকতের দিকে তাকিয়ে দিনের শেষে রক্তিম আভায় সূর্যাস্তের অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে সৃষ্টিকর্তার বাণী প্রচারের জন্যে নির্বাচিত এপোস্টেলসরা বার্তাবাহকের আইকনিক রূপে দাঁড়িয়ে আছে। সারাদিনে ৬০০কিলোমিটারের এই দীর্ঘ আনন্দদায়ক ভ্রমণের সমাপ্তি হলো প্রায় ১২ঘন্টা পরে।

রোববার ২৯শে মার্চ - ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৫-র ফাইনাল খেলা মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড - এমসিজিতে। পরিবারের সবাই বেশ সকালে পৌঁছে গেলাম মেলবোর্ন সিবিডিতে। স্পেন্সার আউটলেট সেন্টার, এইচ-এম, মায়ার, ইত্যাদি শপে কিছু কেনাকাটায় সকালের কয়েক ঘণ্টা দ্রুত ফুরিয়ে গেলো। ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট আর ফ্লিন্ডার্স লেনের মাঝে পথচারী হাঁটার হোসিয়ার লেন মডার্ন মেলবোর্নের এক ল্যান্ডমার্ক। এই হাঁটার পথে দুপাশের বিল্ডিং-এর দেয়ালে দক্ষ হাতের স্প্রে-পেইন্টের নিপুণ রঙিন কারুকার্যের গ্রাফিটি/চিত্রাঙ্কন/বিজ্ঞাপন/চলচ্চিত্রের দৃশ্য/রাজনৈতিক কিংবা স্লোগানের অভিব্যক্তি প্রকাশের স্ট্রিট-আর্ট ওয়ার্ক দেখতে ভালোই লেগেছে।

লাঞ্চ কিনে ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট স্টেশন থেকে নদীর পাশ দিয়ে জনসমুদ্রের সাথে ধীরে ধীরে হেঁটে অল্প সময়ে পৌঁছে গেলাম এমসিজিতে। প্রায় এক বছর আগে কেনা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৫-র ফাইনাল খেলার টিকেট নিয়ে যখন আমাদের নির্ধারিত আসনে গিয়ে পৌঁছলাম তখন এক অবিস্মরণীয় অনুভূতি। এমসিজির লেভেল ফ্লোরে আমাদের নির্ধারিত আসন থেকে পিচের ঠিক মাঝখান এবং ইলেকট্রনিক ডিজিটাল বড় স্ক্রিন সামনে দেখা যায়। খেলার শুরুতে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা ১৪টি দেশের জাতীয় পতাকার মাঝে বাংলাদেশের পতাকা দেখে অনেকের মতোই আমরাও গর্বিত হয়েছি। বোলার/ব্যাটসম্যান/ফিল্ডিং/স্পাইডার ক্যামেরার গতিবিধি, বড় স্ক্রিনে খেলোয়াড়দের পরিচিতি/পরিসংখ্যান, খেলার রি-প্লে/খেলার ফলাফল, স্টেডিয়ামের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শকদের ছবি, ইত্যাদি দেখতে দেখতে মাত্র ৪৫ওভারে ১৮৩রান করে নিউজিল্যান্ডের সবাই আউট হয়ে গেলো অল্প সময়ে। অস্ট্রেলিয়া দল মাত্র ৩৩.১ওভারে স্টিভ স্মিথের জয়সূচক বাউন্ডারিতে ১৮৬রানে ৭উইকেটে খুব সহজেই নিউজিল্যান্ডকে পরাস্ত করে শিরোপা অর্জন করলো। এমসিজিতে ক্রিকেট খেলায় রেকর্ড সংখ্যক ৯৩,০১৩জন দর্শনার্থীদের কেউই কাঙ্ক্ষিত রুদ্ধশ্বাসের ফাইনাল খেলার উপহার পেলো না - সত্যিই এক ডিসএপয়েন্টমেন্ট এর অনুভূতি। তবুও অস্ট্রেলিয়ান সাপোর্টারদের সাথে বাংলাদেশের জার্সি পরে অস্ট্রেলিয়ান পতাকা হাতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পাওয়ার সম্মান নিয়ে এমসিজি থেকে ফিরে আসা আনন্দের ছিল। ফিরে আসার আগে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল বড় স্ক্রিনে যখন ভেসে এলো – See you in England in 2019 তখন মনে হলো ২০১৫তে প্রত্যয় দীপ্তে বাঘের হুঙ্কারে প্রিয় বাংলাদেশ দল ক্রিকেট বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও উচ্চতার শিখরে ওঠার স্বপ্ন ভঙ্গের অঙ্গীকার হবে আগামী দিনের শক্তি ও প্রেরণা।

অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ঘনবসতি শহর মেলবোর্ন গত চার বছর ধরে পৃথিবীর সেরা বাসবাসোপযোগী শহর নির্বাচিত হয়েছে। পরিবারের সবাই মিলে ২০১১সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন দেখতে যাওয়া ছাড়াও বেশ কয়েকবার মেলবোর্নে গিয়েছি। নিরাপদে প্রায় ২৬০০কিলোমিটার পথ ৪দিনে পাড়ি দিয়ে ৩১মার্চ ২০১৫ সোমবার রাতে সিডনি পৌঁছিয়ে মনে হয়েছে - ক্রিকেট বিশ্বকাপের আমেজে মেলবোর্নে এবারের কয়েকদিন ভিন্ন অভিজ্ঞতায় নতুন আঙ্গিকে স্মৃতিপটে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


মাসুদ পারভেজ, সিডনী, mmparvez@yahoo.com








Share on Facebook               Home Page             Published on: 16-Apr-2015

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far