bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













এবারের মাহে রমজান
মাসুদ পারভেজ



রমজানুল মোবারাক - প্রতি বছরের মতোই ফিরে এলো পবিত্র মাহে রমজান। আরবি বছরের নবম মাস রমজান - সিয়াম সাধনার মাস। এবারের রমজান মাস এসেছে নতুন প্রজন্মের ভাইরাসের অদৃশ্য শক্তিতে দ্রুত বদলিয়ে যাওয়া পৃথিবীর প্রচলিত পরিবেশে, উদ্বেগের, উৎকণ্ঠার, আতঙ্কের মধ্যে।

পৃথিবীর বহু দেশ করোনা ভাইরাসের আক্রমণে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, উপাসনালয়, ইত্যাদি বন্ধ করে দিয়েছে - বিশ্ব এখন স্তব্ধ। পৃথিবীর বড়-বড় দালান কোঠা, রাজপ্রাসাদ, আইকনিক স্পট জীর্ণশীর্ণ হয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধ হয়েছে অলিম্পিক গেমস, আরো কতো কিছু। সৃষ্টির প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিদিনের মতোই সবুজ বৃক্ষরাজি দিনের আলোতে বিশুদ্ধ অক্সিজেন তৈরি করে নিরলস ভাবে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসে। এই অক্সিজেনের নিয়মিত গ্রাহক মানুষ আজ বিপদগ্রস্ত। আজ প্রায় সবাই মুখোশ দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে রেখেছে। মনে হয় জোরে নিঃশ্বাস নিলেই অদৃশ্য কোভিড-১৯ বুকের ভেতরে ঢুকে যাবে। টেলিভিশনে দেখতে পাই ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সবার আপাদমস্তক পিপিই-র আবরণে ঢাকা। অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ এখন শুধু শ্রবণ-বিদারী নয় হৃদয়-বিদারীও বটে।

ভাবতে অবাক লাগে - পৃথিবীর প্রায় ৬ বিলিয়ন মানুষ ঘরে বন্দি, উপাসনালয়গুলো খালি পড়ে রয়েছে, ডাক্তার রোগী দেখছে টেলি-হেলথের/টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে, অসুস্থ প্রিয়জনের শয্যা পাশে বা অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায় নেই প্রিয়জন। মানুষ ঘরে বন্দি হয়ে নিয়মিত বিশ সেকেন্ডের হাত ধোয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। যে ভাইরাসকে দেখতে শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ লাগে সেই ভাইরাস এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীকে গৃহ-বন্দী করে রেখেছে।

বিগত বছরগুলোতে স্থানীয় মসজিদে প্রতিরাতে প্রায় ৩০০ জন মুসুল্লির সাথে মনোযোগ দিয়ে খতমে-তারাবীহ নামাজ আদায় করতাম। অস্ট্রেলিয়াতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের ওপর যে স্থগিতাদেশ আছে তা মসজিদে তারাবীহ নামাজ আদায়ের জন্যেও প্রযোজ্য। আর তাই এবারে - সারাদিন রোজা রেখে, সরকারি নির্দেশনায় বাসা থেকে অফিসের কাজ সেরে, ইফতারি করে, তারাবীহ নামাজ জামাতে সবার সাথে আদায় করা সম্ভব নয়। পত্রিকায় দেখলাম সৌদি আরবের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় পবিত্র রমজান মাসে বাড়িতে তারাবীহর নামাজ আদায়ের নির্দেশনা সংবলিত এক ঘোষণা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ঘর থেকেই সপরিবারে তারাবীহ, জুমা ও ঈদের জামাতের আয়োজন করেছে নিউইয়র্কের মুসলিম কমিউনিটি।

ছোট বেলায় শেখা ধারাপাতের নামতায় আর বড় হয়ে শেখা স্ট্যাটিসটিক্সের ভাষায় পারমুটেশন-কম্বিনেশনে মেলাতে পারি না কোভিড-১৯এ মানুষ মারা যাওয়ার পরিসংখ্যান। পৃথিবীর অনেক দেশে অক্সিজেন সরবরাহকারী ভেন্টিলেটরের অভাবে আজ অগণিত মানুষ মারা যাচ্ছে। ভাবছিলাম - পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মস্তিষ্কের প্রাণীকে আজ কঠিন বেগ পেতে হচ্ছে মস্তিষ্ক বিহীন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে - কি এক অসহায় অবস্থা! তবে আশার বাণী - সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এখন কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এবং নতুন প্রজন্মের এই অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্যে অক্লান্ত চেষ্টায় ব্যস্ত। এটি এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এরই মাঝে আমরা হয়তো হারিয়ে যাবো অনেকেই, আমাদেরকে হারাতে হবে অনেককে, আমরা হয়তো হারাব অনেক কিছু। বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী “সায়েন্স”র এবারের সংখ্যায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা নিবন্ধে এসেছে - মানুষের মধ্যে যদি স্থায়ীভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে, তাহলেও এটি বিলুপ্ত হতে সময় লাগবে পাঁচ বছর বা তার কিছু বেশি দিন। মনে হচ্ছে - পৃথিবীকে আইসিইউ-তে পাঠিয়ে দিয়ে, প্রকৃতি তার আগের অবস্থা ফিরে পাওয়ার জন্যে সেলফ আইসোলেশনে একটু জিরিয়ে নিয়ে, ধীরে-ধীরে, নিজের সেবা-শুশ্রূষা নিজেই করে নিচ্ছে। আর আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবতে সময় দিচ্ছে – ভবিষ্যতে, কিভাবে প্রকৃতিকে লালন করতে হবে, কিভাবে পারমাণবিক যুদ্ধ না করে ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে হবে, কিভাবে পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হবে। পরিবেশ আন্দোলনের ওপরে পঞ্চাশ বছর আগে লেখা রেইচেল কারসন-এর “সাইলেন্ট স্প্রিং” বই থেকে পড়া - “কীটনাশকের নির্বিচার ব্যবহারে প্রকৃতি কিভাবে দূষিত হয়ে নির্জীব হয়ে যাচ্ছে” - আজ প্রায়ই মনে পড়ে।

আশাকরি অনিশ্চয়তার দৃশ্য চিরস্থায়ী নয় - এই দৃশ্য বদলাবে। আর তাই করোনা ক্রাইসিসের সময়ে পুরাতন শব্দ নতুন করে শেখা – প্যানিক-বায়িং, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন, সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং, ফিজিক্যাল ডিস্ট্যানসিং, লকডাউন-এর অবসানে -

“আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে
আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে।
আমাদের দেখা হোক জীবাণু ঘুমালে,
আমাদের দেখা হোক সবুজ সকালে।
আমাদের দেখা হোক কান্নার ওপারে,
আমাদের দেখা হোক সুখের শহরে।
আমাদের দেখা হোক হাতের তালুতে,
আমাদের দেখা হোক ভোরের আলোতে।
আমাদের দেখা হোক বিজ্ঞান জিতলে,
আমাদের দেখা হোক মৃত্যু হেরে গেলে।
আমাদের দেখা হোক আগের মত করে।
আমাদের দেখা হোক সুস্থ শহরে...!!!”

স্টে হোম সেভ লাইফ, দূরে থেকে পাশে থাকুন, আইসোলেটেড নট অ্যালোন - কোভিড-১৯ মহামারীর এই কঠিন সময়ে আশা-নিরাশার মাঝে আশাবাদী হতে চাই। আমাদের চেনা শহরে দ্রুত ফিরে আসুক স্বাভাবিক কোলাহল, স্বাভাবিক প্রাণস্পন্দন - সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক।


২৪/০৪/২০২০




মাসুদ পারভেজ, সিডনি / mmparvez@yahoo.com




Share on Facebook               Home Page             Published on: 24-Apr-2020

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far