জেমস মার্টিন এখন মার্টিন প্লেসে! মাসুদ পারভেজ
সিডনির প্রাণ-কেন্দ্রে “মার্টিন প্লেস” সবাই চেনেন কিন্তু যার নামে জায়গাটার নাম মার্টিন প্লেস হয়েছে তাঁকে হয়তো অনেকেই চেনেন না। তাঁর নাম জেমস মার্টিন। আজ ৫ই নভেম্বর ২০২০, ১২ বছর বয়সী জেমস মার্টিন এর একটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়েছে মার্টিন প্লেসে। কে ছিলেন এই জেমস মার্টিন! কেন তাঁকে দেয়া হয়েছে এই দুর্লভ সম্মান!
আয়ারল্যান্ডের মিডলটন শহরে জেমস মার্টিনের জন্ম। প্রায় দুইশ বছর আগে বাবা-মায়ের সাথে এক বছর বয়সে জেমস মার্টিন অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান। তারা বসবাস শুরু করেন সিডনির প্যারাম্যাটা এলাকায়। তাঁর শৈশব-কিশোর কেটেছে দারিদ্র্যতার মাঝে। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি ছিল তাঁর অদম্য আগ্রহ। তাদের আশে পাশে কোন স্কুল ছিল না। তার বাবার পক্ষেও সম্ভব হয়নি ছেলেকে সিডনিতে বাসা ভাড়া করে দেয়া। তাই ১২ বছর বয়সী জেমস মার্টিন প্যারাম্যাটা থেকে নিয়মিত সিডনির হাই-স্কুলে পড়তে যেত পায়ে হেঁটে। এখনকার সময়ে প্যারামাটা থেকে সিডনি সিবিডি’র দূরত্ব ট্রেনে প্রায় ২৫ কিলোমিটার, এক্সপ্রেস ট্রেনে সময় নেয় ৩০ মিনিট। ১৮৩২ সালে এই পথ পায়ে হেঁটে আসা-যাওয়া করতে কত সময় লাগতো কিশোর জেমস মার্টিনের!
মাত্র ছেষট্টি বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে স্যার জেমস মার্টিন (১৮২০-১৮৮৬) উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যে তিনবার প্রিমিয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও এটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্বও পালন করেছেন স্যার জেমস মার্টিন। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
১৮৯২ সালে স্যার জেমস মার্টিনের সম্মানে সিডনির শহরের কেন্দ্রীয় ফিনান্সিয়াল এলাকা হিসেবে পরিচিত এই চত্বরটির নামকরণ করা হয় মার্টিন প্লেস। অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ব্যাংক, কমনওয়েলথ ব্যাংক, ম্যাককুয়ারি ব্যাংক, ওয়েস্টপ্যাক ব্যাংক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও ব্যবসায়িক কর্পোরেশন, সিডনি জিপিও এবং সেভেন নেটওয়ার্কের সংবাদ কেন্দ্র সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এই মার্টিন প্লেস কে ঘিরে।
লেখাপড়ার প্রতি জেমস মার্টিনের আগ্রহ জয় করেছে অনেক মানুষের হৃদয়। এরই ফলশ্রুতিতে প্রায় ৫ বছর আগে নেয়া এক প্রজেক্টে ১২ বছর বয়সী জেমস মার্টিন সাদৃশ্য দুইটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য তৈরি করে তা প্যারামাটা ও মার্টিন প্লেসে স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কাজের সুবাদে অনেকের সাথে আমারও এই প্রজেক্টে জড়িত থাকার বিরল সৌভাগ্য হয়েছে। আজ ৫ই নভেম্বর ২০২০, নিউ সাউথ ওয়েলস সরকারের মাননীয় ট্রেজারার Dominic Perrottet মার্টিন প্লেসে জেমস মার্টিন এর ভাস্কর্য উন্মোচন করেন।
অনাড়ম্বর এই অনুষ্ঠানে নিউ সাউথ ওয়েলস সরকারের মাননীয় এটর্নি জেনারেল Mark Speakman, মাননীয় প্ল্যানিং মিনিস্টার Rob Stokes সহ সরকারী এবং বিরোধী দলীয় অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে সিডনির মেঘলা আকাশ থেকে ঝরে পড়া অকস্মাৎ বৃষ্টির আর ঠাণ্ডা বাতাস সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে জেমস মার্টিনের জন্মস্থান আয়ারল্যান্ডের আবহাওয়ার কথা। মনে হলো প্রকৃতিও অংশ নিয়েছে আজকের অনুষ্ঠানে।
সিডনির বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ইভেন্টে অংশ নিতে প্রতিবছর অনেক মানুষের সমাগম হয় মার্টিন প্লেসে। ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকের সরাসরি সম্প্রচার, ২০০৮ সালে স্টোলেন জেনারেশনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং অনেক রাজনৈতিক বিক্ষোভের আয়োজন হয়ে থাকে এখানে। ১৯২৭ সাল থেকে প্রতিবছর ২৫শে এপ্রিল এ্যানজ্যাক ডে’র ডন সার্ভিস অনুষ্ঠিত হয় এখানেই। এছাড়াও প্রতিবছরের “ভিভিড সিডনি” চলাকালীন সময় ভিজুয়াল আর্ট ডিসপ্লে এবং সারা বছর ধরে অনেক আউটডোর কনসার্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মার্টিন প্লেসে।
আমাদের সবার জন্যে অনুপ্রেরণার বাণী - জেমস মার্টিনের উক্তি দিয়ে শেষ করি আজকের লেখাঃ “Either I’ll find the way or I’ll make it”.
মাসুদ পারভেজ, সিডনি / mmparvez@yahoo.com
|