আন্তর্জাতিক নারী দিবস মাসুদ পারভেজ
আজ ৮ই মার্চ ২০১৫সাল - আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ডেনমার্কে সাম্যবাদী নারীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১৯১০সালে এই দিবসের প্রস্তাব করা হলেও ছয় দশক পরে ১৯৭৪সালে জাতিসংঘ আজকের দিনকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করে। এই দিবস উপলক্ষে পৃথিবীর ২৯টি দেশে আজ সরকারী ছুটির দিন।
স্রষ্টার সমগ্র সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষকে তার নিজস্ব অধিকার এবং ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির ধারা অব্যাহত রাখা এবং পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার জন্যে নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা এবং অবদান প্রয়োজন। পুরুষের সাথে নারীর সমতা অর্জনের বিষয়টি শুধুমাত্র নারীর মানবাধিকার ও ন্যায্যতার মৌলিক অধিকার নয় - বরং এর ওপর যেকোনো দেশ ও জাতির উন্নয়ন এবং অগ্রগতি নির্ভরশীল। উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশে নারীরা আজ শুধুমাত্র নানী-দাদী, মা-শাশুড়ি, স্ত্রী-ভাবী, বোন-শালী কিংবা কন্যা-পুত্রবধূ নয় - বরং পুরুষের পাশাপাশি নারীরা আপন নিজস্ব পেশাগত পরিচয়ে পরিচিত। সকল পেশায় আজ নারীদের পদচারণা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় -
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”
সৃষ্টির প্রাকৃতিক নিয়মে ৭.২ বিলিয়ন জনসংখ্যার পৃথিবীতে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা কিছুটা বেশী - আনুপাতিক হারে ১.০৬ জন পুরুষের বিপরীতে ১জন নারী। জন্মের সময় “পুরুষ-নারী” অনুপাতের তেমন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য না থাকলেও বয়স (১৫-৬৫ বছর) বাড়ার সাথে সাথে আরব পেনিনসুলার দেশ - সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারে এই অনুপাত ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। কাতারে এই অনুপাত ১৫-২৪বছর বয়সে ২.৮৪ : ১ এবং ২৫-৬৫ বছর বয়সে ৪.৬১ : ১ - যা’ পৃথিবীতে সর্বোচ্চ।
২০১৪সালের UNESCO-র তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীর ৮৭% প্রাপ্ত-বয়স্কা নারী (পুরুষের তুলনায় ৫শতাংশ কম) লিখতে ও পড়তে পারে। আফগানিস্তানে এই সংখ্যা মাত্র ১৩%। “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত এবং সভ্য জাতি দেবো” - নেপোলিয়ান বোনাপার্টের এই উক্তি নারী শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে আফ্রিকার এমন অনেক দেশে আজ বিশেষ প্রয়োজন।
পরিবার, সমাজ এবং দেশের শান্তির জন্যে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। রাজনীতি এবং দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রেও নারীর অবদান কম নয়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ সংখ্যক (৫৬%) নারী সাংসদ রয়েছে আফ্রিকার দেশ - Rwanda-র জাতীয় সংসদে। নারী সাংসদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে (উন্নত দেশের মধ্যে প্রথম) (৪৫%) রয়েছে সুইডেন। মাত্র ৫বছর আগে ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়াতে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেও দুই যুগ ধরে বাংলাদেশের সরকারী এবং প্রধান বিরোধী দলীয় রাজনীতির নেতৃত্বে রয়েছেন নারী।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতিসংঘের এ’বছরের থিম হলো - “Empowering Women - Empowering Humanity : Picture It”। প্রিয় বাংলাদেশ সহ সব দেশে নারীর কল্যাণে পৃথিবীতে আসুক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা আর শান্তি, জয় হোক মানবতার। আজকের দিনে এই কামনা করি।
মাসুদ পারভেজ, সিডনী mmparvez@yahoo.com ৮/৩/২০১৫
|