bangla-sydney.com News and views of Bangladeshi community in Australia
ইনোভেটিভ আইডিয়া মাসুদ পারভেজ
কোভিড-১৯ মহামারীর এবছরে মার্চ মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি প্রতি মাসেই বাড়ছে। আর পরীক্ষার তারিখও একইভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেলেও বেশি দিন স্কুলে-কলেজে যাওয়ার সুযোগ পায়নি এবছরে।
সবাই বলছে যেকোনো দিন এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হতে পারে। জুয়েল এবছরের এইচএসসি পরীক্ষার ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষার্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না কেন - এ নিয়ে জুয়েলের গবেষণার শেষ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার পেছনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন - সংক্রমণের হার কমলেও এখনো রোগী পাওয়া যাচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কতটা সম্ভব হবে তা পরিষ্কার নয়, পরিবহন ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়বে, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অভিভাবকরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন, ইত্যাদি বিবেচনা করছেন বলে জুয়েলের মনে হয়।
করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ ছুটিতে বাসায় লকডাউনে থেকে, অনিয়মের ধারাবাহিকতায় সেই কবে যে চেয়ারে বসে টেবিলে বই রেখে পড়তে বসেছে তা আর জুয়েলের মেমোরিতে নেই। অনেকদিন পরে জুয়েল আজ অফিসিয়ালি পড়তে বসেছে চেয়ার-টেবিলে। নিজের সাথে শপথ নিয়েছে - আজ আর অনলাইন কিংবা ফেসবুক নয়, সত্যি সত্যি টেক্সটবুক নিয়ে পড়বে। জুয়েলের রুমে মা এসে জুয়েলকে মনযোগী হয়ে পড়তে দেখে এক গ্লাস দুধ এনে বলেন – “বাবা, মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করো, আর ঘুমানোর আগে দুধটুকু খেয়ে নিও। অনেক রাত হয়েছে - আমি ঘুমাতে গেলাম, কোনো প্রয়োজন হলে ডাক দিও”। জুয়েল ভাবছে - মায়ের তুলনা অতুলনীয়।
অনেকদিন ম্যাথ করা হয় না ভেবে বই খুঁজতে প্রায় দশ মিনিট চলে গেলো কিন্তু ম্যাথ বই নিখোঁজ। জুয়েলের মনে হলো - আজ বাংলা আর ইংলিশ সাবজেক্ট না পড়ে বরং একাউন্টিং কিংবা ইকোনমিক্স পড়লে এই দুর্যোগময় সময়ে দেশের অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ মহামারী কি কি প্রভাব ফেলেছে তা বুঝতে সহজ হবে। তাছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বের হলে সারা দেশের মানুষের জন্যে ভ্যাকসিন কেনা ও সেজন্যে আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী দেশ সহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বন্ধুত্ব থাকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইকোনমিক্সের ভাষায় তাই “ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক পার্টনারশিপ এন্ড ফ্রেন্ডশিপ” বিষয় জানা অপরিহার্য। জুয়েলের হঠাৎ মনে হলো – “ফ্রেন্ড” আর “বেস্ট ফ্রেন্ড” এর মধ্যে পার্থক্য কি? বাসায় তো এখন আর কেউ জেগে নেই, সবাই গভীর ঘুমে। জেগেই বা থাকবে কিভাবে, রাততো আর কম হয়নি? অন্ততঃ আপুকে জিজ্ঞেস করলে এই পার্থক্যটা বলতে পারতো, কিন্তু সে ও তো এখন ঘুমিয়ে রয়েছে। জুয়েলের মনে হলো - ফেসবুকে “ফ্রেন্ড আর বেস্ট ফ্রেন্ড-এর মধ্যে পার্থক্য কি” জিজ্ঞেস করলে, তার ৭১৩জন ফ্রেন্ডের কেউ না কেউ এখনও জেগে আছে, নিশ্চয়ই একটা উত্তর পেয়ে যাবে। কিন্তু ফেসবুকের প্রসঙ্গ আসাতেই জুয়েলের হৃদয়ে ধাক্কা এলো - পড়তে বসার আগে শপথ নিয়েছে আজ অনলাইন কিংবা ফেসবুক নয়, শুধু টেক্সটবুক নিয়ে পড়বে। মনকে অনেক বুঝিয়ে শপথের একটু এমেন্ডমেন্ট করে জুয়েল ঠিক করলো মাত্র পাঁচ মিনিট ফেসবুকে থেকে জেনে নেবে - “ফ্রেন্ড আর বেস্ট ফ্রেন্ড”-এর পার্থক্যটা। যেই ভাবা সেই কাজ। পোস্ট করার ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর এলো কোনো দিন দেখা হয়নি এমন এক ফ্রেন্ড - প্রিন্সের কাছ থেকে –– “পা পিছলে কাদায় পড়ে গেলে “ফ্রেন্ড” তোকে নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে হাসবে, আর “বেস্ট ফ্রেন্ড” তোর কাদা-মাখা ছবি তুলে সেটা ফেসবুকে আপলোড করবে”। প্রিন্সের উত্তর পাওয়ার পরে জুয়েলের মেজাজ খারাপ হলেও কোলাহল মুক্ত, সুনশান, তারা ভরা আকাশের এই গভীর রাতে জুয়েল বুঝতে পারে – “ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড” সত্যিকারের “ফ্রেন্ড” নয়। আর গত পাঁচ বছরে তাদেরকে নিয়ে জুয়েল কতই না মাতামাতি করে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অহেতুক সময় নষ্ট করেছে! নিজের মনেই জুয়েল এখন খুঁজছে – “ডিফারেন্স বিটুইন “ফ্রেন্ড, বেস্ট ফ্রেন্ড এন্ড ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড”। মনের দুঃখে, জুয়েল তার ফেসবুকে থাকা ৭১৩জন সব ফ্রেন্ডকে ব্লক করে সিস্টেম থেকে লগ আউট হয়ে অফলাইনে গিয়ে, শপথ নিল - পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে আর ফেসবুক নয়।
জুয়েলের কাছে সবসময় সাবজেক্ট হিসেবে ইংলিশের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন লাগে একাউন্টিং কিংবা ইকোনমিক্স। ছোটবেলা থেকেই টেকনোলজির ওপর জুয়েলের আগ্রহ অনেক বেশি। বাসার টুকটাক মেরামত কাজে জুয়েলের পারদর্শিতায় সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যদিও জীবনের কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় জুয়েল গোল্ডেন ৫ পায়নি তবুও জুয়েলের ইচ্ছা ভবিষ্যতে দেশের যানজট কমাতে ট্রাফিক কন্ট্রোল, পার্কিং কন্ট্রোল, জিওলজিকাল সয়েল সার্ভে/বোরিং, রোড সেফটি, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া। “নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন”-এর মিছিলে জুয়েল সব সময়ই গিয়েছে। দুঃখ ভরা মনকে খানিকটা সতেজ করতে জুয়েল ভাবলো - গুগল সার্চে কিংবা ইউটিউবে বহির্বিশ্বে জুয়েলের কাঙ্ক্ষিত ইনোভেটিভ সাবজেক্টের অগ্রগতি দেখার। জুয়েলকে হতাশ করেনি গুগল। রাত তিনটায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে জুয়েল শপথ নিল – “ভালো রেজাল্ট তাকে করতেই হবে। তাই আর সময় নষ্ট নয়। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার এখনই সময়। আগামীকাল থেকে শুধুই পড়াশুনা করবে টেক্সটবুক নিয়ে”।
সকালে ঘুম থেকে উঠে জুয়েল জানতে পারে - ২০২০সালের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা সবাই এবছরে পাশ করবে। আর নিজ নিজ জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের ভিত্তিতে তাদের এইচএসসি-র মূল্যায়ন করে রেজাল্ট দেয়া হবে। আগামী বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া হতে পারে গত বছরের মতোই গুচ্ছ পদ্ধতিতে।
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় জীবনে গোল্ডেন ৫ না পাওয়া এবছরের এইচএসসি পরীক্ষার ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষার্থী জুয়েল ভাবছে - প্রায় ১৫লাখ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি-যুদ্ধে আমি কি তৈরি হয়েছি? আমি কি আমার কাঙ্ক্ষিত ইনোভেটিভ সাবজেক্টে আগামী বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবো?
মাসুদ পারভেজ, সিডনি / mmparvez@yahoo.com
Share on Facebook               Home Page             Published on: 12-Oct-2020