bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন


গল্প

জীবন থেকে নেয়া
মাসুদ পারভেজ



গওহর রায়হান উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। অফিসে প্রায়ই ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট, জেন্ডার ব্যাল্যান্স, ওমেন ইন লিডারশিপ, ইত্যাদি বিষয়ে ওয়ার্কশপ, সেমিনারে যোগ দিয়ে মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে হয়। রায়হান অনলাইনে বাংলাদেশের পত্রিকাতেও দেখেন নারীর ক্ষমতায়ন, রাজনীতিতে নারী, বিশ্বায়নে নারীর ভূমিকা, ইত্যাদি নিয়ে ইদানীং বেশ আলোচনা হচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ে এসএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় ভাবসম্প্রসারনের প্রশ্নে ছিল কাজী নজরুল ইসলাম-এর নারী কবিতার দুই লাইন – “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”। আজকাল আরো মনে পড়ে নারী আন্দোলনের অগ্রদূত ও সমাজ সংস্কারক মহীয়সী বাঙ্গালি সাহিত্যিক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কথা। রায়হান ভাবে - মানবসভ্যতা বিকাশে নারী ও পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। সমাজের রূপরেখা, রাষ্ট্রের কাঠামো এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নের স্বার্থে সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সহযাত্রী হয়ে অগ্রসর হতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে নিজ নিজ পরিবার থেকে, সচেতনতা বাড়াতে হবে জনগণের মাঝে।

মাঝে মধ্যে কিছু লেখালেখির অভ্যাস থাকায় দেরি না করে অল্পদিনে রায়হান লিখে ফেলে তার উপন্যাস – “স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য”। প্রথম প্রকাশনী অনেক গড়িমসি করে হলেও সময় মতো এই উপন্যাস ছেপেছে। পাঠক সমাজ বিশেষ করে নারী ক্রেতাদের বিপুল চাহিদায় বইমেলাতে প্রথম এবং দ্বিতীয় সংস্করণ নিমিষেই শেষ হওয়াতে রায়হানের জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে বাংলাদেশ যেমন পেয়েছে বিশ্বের সম্ভাবনী প্রগতিশীল দেশের মর্যাদা অনেকটা তেমনি লেখক সমাজের মতো এলিট ক্লাবের সদস্য হতে পেরে রায়হান গর্বিত। বিভিন্ন প্রকাশক প্রায়ই রায়হানের সাথে যোগাযোগ করে, অনুরোধ করে তার পরবর্তী লেখা ছাপানোর জন্যে। বন্ধু মহল, প্রতিবেশী এবং সর্বোপরি নিজ স্ত্রী – নাজমা-র কাছে রায়হান একজন আদর্শ হাসব্যান্ড।

ইদানীং অফিসে কাজের চাপ বেশি রায়হানের। আর বিশেষভাবে আজ শুক্রবার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার ইচ্ছা থাকলেও অনেকগুলি মিটিং থাকায় কাজ শেষ করতে একটু দেরিই হয়ে যায়। অফিস থেকে বের হয়ে ট্রেন স্টেশনের পথে পা বাড়াতেই হঠাৎ দেখা হয় স্কুল-ফ্রেন্ড জামানের সাথে। সেই কবে বাংলাদেশ ছেড়ে সিডনিতে আসার পরে অনেক বছর পরে দেখা। জামান তার পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে মাইগ্রেশন নিয়ে এসেছে গত সপ্তাহে - শুনে ভালো লাগলো রায়হানের। কাছাকাছি এক ক্যাফেতে বসে ডিনার খেতে খেতে অনেক দিনের জমে থাকা গল্প গুজবে, পারিবারিক আলাপে দুজনের বেশ ভালোই লাগে - দ্রুত সময় ফুরিয়ে যায়। আগামীকাল শনিবার জামানের পরিবারের সবাইকে বাসায় আসার আমন্ত্রণ দিয়ে রায়হান বিদায় নেয়।

বেশ রাত হওয়াতে নিঃশব্দে, ধীরে-ধীরে গেটের চাবি খুলে বাসায় ঢুকতেই নিচতলা থেকে রায়হান শোনে দোতালাতে নাজমা বাংলা পড়াচ্ছে মেয়ে অরোরাকে। প্রাণ ভরে শুনতে থাকে অরোরা পড়ছে – “জোনাকি পোকা অন্ধকারে মিটি মিটি করে আলো ছড়াচ্ছে”। ভাবতে ভালোই লাগে - উচ্চ শিক্ষিতা নাজমা সপ্তাহে ফুল-টাইম কাজ করে, রান্নাবান্না করে, ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে, উইকএন্ডে দাওয়াত দিয়ে কিংবা দাওয়াতে গিয়ে, ব্যস্ততায় সময় কাটালেও নিয়মিতভাবে প্রতি শুক্রবারে বাংলা পড়ায় অরোরাকে। যুক্ত অক্ষরে অরোরার দুর্বলতা রয়েছে আর তা দূর করার জন্যে নাজমা চেষ্টা করে যাচ্ছে নিরলস-ভাবে। নাজমা “অন্ধকার” বানান করাচ্ছে - “অ”, তারপরে “ন”-এর নিচে “ধ” হলে হয় –“অন্ধ”, তারপরে “কা”, “র” -“অন্ধকার”। বেশ কঠিন লাগছে মনে হয় অরোরার তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছে। কয়েকবার বানান শেখানোর পরে নাজমা “অন্ধকার” বানান লেখার জন্যে অরোরাকে বলাতে, অরোরা বলছে – “আম্মু বাংলা এতো কঠিন কেন, ইংলিশে অন্ধকারকে বলে DARK, কত সহজ D, A, R, K আর অন্ধকারে “ধ” তো দেখা যায় না, লিখবো কিভাবে”? রায়হান ভাবছে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের স্মরণীয় উক্তি – “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, তোমাদের আমি এক শিক্ষিত জাতি দেবো”। আর মনে মনে ঠিক করে তার পরবর্তী বইয়ের নাম হবে – “জীবন থেকে নেয়া”। হঠাৎ চড়ের শব্দ আর অরোরার কান্না শুনে দ্রুত গতিতে সিঁড়ি বেয়ে রায়হান মেয়ের ঘরে ঢুকে অরোরাকে উদ্ধার করে। বাবাকে দেখে অরোরার কান্নার মাত্রা এবং গতি বেড়ে যায় স্বাভাবিক ভাবেই। আজকের পড়া এখানেই শেষ বলে অরোরাকে নিয়ে গল্প বলা শুরু করে রায়হান। কিছুক্ষণের মধ্যে অরোরা আনন্দে মেতে ওঠে। এদিকে রাত বেশ হওয়ায় অরোরাকে ঘুম পাড়িয়ে রায়হান নিচতলায় নেমে পকেট থেকে দুটি মোবাইল ফোন সেট - একটি নিজের আরেকটি অফিস থেকে দেয়া বের করে চার্জারে প্লাগ ইন করতে করতে নাজমাকে একটু চা দেয়ার জন্যে বলে ওয়াশরুমে যায়।

হঠাৎ টিং শব্দ করে অফিসের মোবাইল সেটে এক মেসেজ আসে। একটু পরে আরেকটি টিং। রায়হানের অফিস থেকে জরুরী কোনো সংবাদ আছে ভেবে নাজমা দেখে স্ক্রিনে ভেসে রয়েছে - Zaan NEW থেকে পরপর দুইটি মেসেজ –

প্রথমটিতে - Today, we had a very nice time together.

দ্বিতীয়টিতে - Looking for the next one !!!

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রায়হানের কাছে ইতিমধ্যে বাসার আবহাওয়া বঙ্গোপসাগরে লঘু চাপ সৃষ্টি হওয়ার মতো বেশ উত্তপ্ত ও গোমট মনে হলো। কি করবে বুঝতে পারে না রায়হান, আর এরই মধ্যে কিছুটা ঝাঁজালো কণ্ঠে শুনতে পেল -

এতো রাতে কোথা থেকে ফিরলে?

কেন অফিস থেকে।

তা, আজকাল অফিসের পরে কোথাও যাওয়া হয় কি?

কেন?

না, মানে সারাদিন তোমার ফোন অফ ছিল। কয়েকবার ফোন করে পাইনি। এদিকে ঢাকা থেকে জামান সাহেব তোমাকে কয়েকবার ফোন দিয়ে না পেয়ে কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফোন করে জানিয়েছেন তোমার উপন্যাস – “আদর্শ স্বামীর গুণাবলী” ছাপা শেষ হয়েছে। আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া এবারের বইমেলাতে বিজয় প্রকাশনীর স্টলে থাকবে। দারুণ এক্সসাইটমেন্ট তাই না?

রায়হান কিছু বলার আগেই…

আর তোমার অফিসের মোবাইল ফোনে দেখো, মনে হয় জরুরী মেসেজ এসেছে। একেই বলে -“আদর্শ স্বামীর গুণাবলী”?

মেসেজ দেখে রায়হান বলে - আচ্ছা আমি কি কিছু বলতে পারি?

কি আর বলবে? তুমিতো আবার আদর্শ স্বামী। আচ্ছা বলো। তাও শুনি - কিভাবে সত্য গোপন কিংবা মিথ্যা কথা বলতে হয়।

আচ্ছা শোনো - কাজের চাপে অফিস থেকে দেরি করে বের হওয়ার পরে হঠাৎ জামানের সাথে দেখা হওয়া, তারপরে ডিনারের কথা বলে যায় রায়হান এক নিঃশ্বাসে। Zaman-এর ফোন নাম্বার সেভ করতে গিয়ে দেখি নিজের মোবাইলে কোনো চার্জ নেই সম্পূর্ণ ডেড। তাই অফিসের মোবাইলে তাড়াতাড়ি লিখতে গিয়ে Zaman- এর m বাদ পড়াতে তা হয়েছে Zaan। আর আমার কন্টাক্ট লিস্টে বেশ কয়েকজন জামান থাকাতে NEW লিখেছি। বিশ্বাস না হলে ফোন দিয়ে দেখতে পারো। তাছাড়া আমি জামানকে বলেছি তুমি ভাবীর সাথে কথা বলবে আগামীকাল আমাদের বাসায় তাদেরকে আসার জন্যে।

নাজমা কি জানি ভেবে ফোনটা নিয়ে স্পিকার অন করে ডায়াল করল Zaan NEW-কে।

কয়েকবার রিং হওয়ার পরে অপর প্রান্ত থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে - জামান বলছি।

ভাই, আমি নাজমা ভাবী, আপনার স্কুল-ফ্রেন্ড রায়হানের ওয়াইফ। কেমন আছেন? শুনলাম সিডনিতে সেটেলল্ড হচ্ছেন? বাচ্চারা, ভাবী কেমন আছে?

জামান একে একে উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলো - আপনারা কেমন আছেন, অরোরা এখন কোন ক্লাসে পড়ছে?

নাজমা উত্তর দিয়ে বলছে - আগামীকাল কিন্তু আমাদের সাথে ডিনার করবেন। জামান কিছু বলার আগেই, আচ্ছা ভাবীকে দেন।

হ্যালো ইলোরা ভাবী - নাজমা বলছি। কেমন আছেন? শুনে খুব ভালো লাগছে আপনারা সিডনিতে মাইগ্রেশন নিয়েছেন।

থ্যাংক ইউ - নাজমা ভাবী, খুব খুশি হয়েছি আপনি ফোন দিয়েছেন।

নাজমা-ইলোরা ভাবীর কনভারসেশন শুনে রায়হানের মনে হচ্ছে খুব সহসাই ফোন শেষ হবে না। তাই অনেকটা আনমনা হওয়ার ভান করে আই-প্যাড নিয়ে বাংলা পত্রিকায় চোখ রাখলেও শুনতে পাচ্ছে, নাজমা বলছে - আগামীকাল শনিবার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজি আর গরুর মাংস রাঁধবো। আপনারা আসবেন, আমরা একসাথে ডিনার করবো। আপনারা সবাই তৈরি থাকবেন, সন্ধ্যা ৭টায় গাড়িতে করে রায়হান আর অরোরা আপনাদের নিয়ে আসবে। ভাবী, তাহলে কালকে দেখা হবে এই বলে নাজমা সালাম দিয়ে ফোন শেষ করলো।

রায়হান সোফায় গা এলিয়ে আনমনা ভঙ্গিতে আই-প্যাডে গভীর নিমগ্ন। হঠাৎ মৃদু কণ্ঠে শুনতে পেল - তোমাকে গ্রিন টি না শিলং টি দেবো?

বছর ঘুরে আবারো বইমেলা। নিজেকে আর অনন্য পাবলিশার্সকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী “জীবন থেকে নেয়া” বই বের হয়েছে। অধীর আগ্রহে রায়হান অপেক্ষা করছে পাঠক পাঠিকার মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা পাওয়ার জন্যে। এর আগের দুইটি বইয়ের মন্তব্য-সমালোচনা পড়ে রায়হান-নাজমার মনে হয়েছে - বেশির ভাগ রিডার বিবাহযোগ্য তরুণী কিংবা বিবাহিতা নারী। নাজমাও মন্তব্য-সমালোচনা পড়ে বেশ আনন্দ পেয়েছে।

ইতিমধ্যে “জীবন থেকে নেয়া” বইয়ের মন্তব্য আসা শুরু হয়েছে -

প্রিয় লেখক - আপনার লেখা - “স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য” ও “আদর্শ স্বামীর গুণাবলী” বই দুইটি পড়ে মনে হয়েছে আপনি শুধু মহিলাদের জন্যে লেখেন। কিন্তু “জীবন থেকে নেয়া” বই পড়ে তা মনে হলো না। জেন্ডার ব্যাল্যান্সের জন্যে ধন্যবাদ এবং শুভ কামনায় - সাব্বির, নোয়াখালী থেকে।

শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক - আপনার আগের বই দুইটি পড়ে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু এবারের বইটা পড়ে ছোট বেলায় শোনা - “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না” - বিশেষভাবে মনে পড়ছে। ভালো থাকবেন। ইতি ফাহিম, ক্রিয়েটিভ ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

সুপ্রিয় - ওয়ার্কশপ, সেমিনারে মোটিভেশনাল স্পিচ দেয়া আপনাদের মতো পুরুষদের সবসময়ই বাসায় একটু চাপের মধ্যে রাখা ভালো। আপনি হয়তো ভুলে গেছেন - বিয়ের মাধ্যমে পুরুষ তার ব্যাচেলর ডিগ্রি হারায় আর নারী অর্জন করে মাস্টার্স ডিগ্রি। লাল গোলাপের শুভেচ্ছা রইলো - নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

ভাইজান - সালাম নেবেন। সাহসী লেখার জন্যে রক্তিম শুভেচ্ছা। বাস্তব-ধর্মী বইয়ের একনিষ্ঠ পাঠক হয়ে আপনার প্রতি আমাদেরও কিছু কর্তব্য আছে। দেনমোহরের পরিমাণ খুব বেশি হওয়ায় আপনার সামর্থ্যে যদি না কুলায় তাহলে জানাবেন। আমরা চাঁদা তুলে আপনার পাশে থাকবো, তবুও লেখা চালিয়ে যান। সবসময় মনে রাখবেন – Life is a Gift, Take Care of it - আল্লাহ আপনার সহায় আছেন। চর ফ্যাশনের ছোট ভাই ইলিয়াস।

মন্তব্য-সমালোচনা এখনো আসছে…



মাসুদ পারভেজ, সিডনী, অস্ট্রেলিয়া, mmparvez@yahoo.com




Share on Facebook               Home Page             Published on: 31-May-2018

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far