ফ্লাড এইড ইভনিং মাসুদ পারভেজ
২০১৭র জুলাই-আগস্ট মাসের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ বন্যা-কবলিত। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেমে গিয়েছে। বন্যা-কবলিত মানুষ হুমকির মুখে পড়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন কাটাচ্ছে। প্রায় প্রতি বছরে প্লাবনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মানুষের জন্যে নতুন কিছু নয়। এর আগে এপ্রিল ২০১৭তে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চল প্লাবনে তলিয়ে গিয়েছে। প্রতি বছরেই হাওরের বাঁধে ফাটল হয়ে ফসল-হানির কথা শোনা যায়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে পাহাড়ি ঢলে ডুবে গিয়েছে সারা বছরের বোরো ফসল। ভেঙেছে লাখো কৃষকের স্বপ্ন।
বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ডিজাস্টার রিলিফ কমিটি (বিএডিআরসি) ১৯৯৮সাল থেকে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন দুর্যোগের সময় দুর্গতদের আর্থিক সাহায্য করছে। এবারো বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা-কবলিত মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে বিএডিআরসি।
সিডনির রকডেলের রেড রোজ ফাংশন সেন্টারে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর (রোববার) বন্যার্তদের সাহায্যার্থে “ফ্লাড এইড ইভনিং” নামে এক দেশাত্মবোধক গানের সন্ধ্যা ও তহবিল সংগ্রহের জন্যে ডিনারের আয়োজন করে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ফাংশন সেন্টারে উপস্থিত প্রায় সাড়ে তিনশ বাংলাদেশীদের সমবেত কণ্ঠে প্রথমে বাংলাদেশ ও পরে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সাধারণ সম্পাদক জনাব আফসার আহমেদ তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বিএডিআরসি-র কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। এরপরে সিডনি-প্রবাসী স্থানীয় স্বনামধন্য সংগীত শিল্পী - নাবিলা, মিঠু, রোকসানা বেগম, আনিসুর রহমান, মিজানুর রহমান মিজান, অমিয়া মতিন এহসান আহমেদ এবং সিরাজুস সালেকীন গান গেয়ে শোনান। এছাড়া আবৃত্তি করেন লরেন্স ব্যারেল, যন্ত্র শিল্পী ছিলেন - তাইফ রহমান, আলী কাওসার এবং রাকিব ফেরদৌস। রাতের খাবারের আগে সভাপতি ডঃ মাকসুদুল বারী বিএডিআরসি-র অতীত এবং বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের বিশদ বর্ণনা দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতার জন্যে সিডনির বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও তিনি বিএডিআরসি-র সার্বিক সমন্বয়ে আয়োজিত “ফ্লাড এইড ইভনিং”-এ সিডনির ২৫টি সংগঠনের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার জন্যে এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। সিডনি থেকে প্রকাশিত মুক্তমঞ্চ পত্রিকার সম্পাদক জনাব শামীম আল নোমান ভোট অফ থ্যাংকস জানান। রাতের খাবারের পরে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সুমধুর দেশাত্মবোধক গানের মাঝে মনের অজান্তেই অনেকই ফিরে যায় প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে।
মাতৃভূমি থেকে অনেক দূরে, প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে এই মহাদেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশপ্রেমে সবাই “ফ্লাড এইড ইভনিং”-এ অসহায় বন্যার্তদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, “ফ্লাড এইড ইভনিং”-এ বিশ হাজার ডলারের তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কমিউনিটি কন্সালটেশন মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগৃহীত পুরো অর্থই যাবে বন্যার্তদের কাছে - “পরিবর্তন চাই”, “আহসানিয়া মিশন” এবং “প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল”- এর মাধ্যমে।
আর্ত মানবতার সেবায় বিএডিআরসি-র ছায়াতলে সিডনির প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংবাদিকসহ ২৫টি সংগঠনের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার দৃষ্টান্ত সিডনিতে এই প্রথম। লাল-সবুজের প্রবাসী সৈনিকদের চেতনায় রয়েছে - “তুমি কি দেখেছ কভু, জীবনের পরাজয়”!!! সবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাহায্যে, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন্যা দুর্গতদের হাজারো কষ্ট একটু হলেও লাঘব হবে, হাসি ফোঁটাতে পারে অনেকেরই। প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরে আসার সময় মনে হয়েছে উদ্বেগের-উৎকণ্ঠার অবসানে সুরের মূর্ছনায়, সঙ্গীতের প্রশান্তিতে আর কিছু অর্থনৈতিক সাহায্যে বাংলাদেশের বন্যার্ত মানুষ আবারো গেয়ে উঠবে - “একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, তুমি সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার” - প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রত্যাশা।
মাসুদ পারভেজ, সিডনি, mmparvez@yahoo.com
|