বৈশাখী মেলা: বারউড থেকে ANZ স্টেডিয়াম মাসুদ পারভেজ
সিডনির সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলার আয়োজক - বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে ২০১৬সালের বৈশাখী মেলা ANZ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলা সংস্কৃতির প্রাণের টানে প্রতি বছর মেলায় আগত অসংখ্য মেলা প্রেমিকদের সাথে আমি এই ঘোষণাকে উষ্ণ স্বাগত জানাই।
সিডনি অলিম্পিক ২০০০ উপলক্ষে গ্যালারিতে ১১০,০০০আসন ক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়াম ১৯৯৯সালে ৬৯০মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ব্যয়ে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে স্টেডিয়াম রি-কনফিগারেশনের ফলে বর্তমানে সর্বোচ্চ আসন সংখ্যা ৮৩,৫০০। সিডনি অলিম্পিকের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান, ২০০৩সালের রাগবি বিশ্বকাপ ফাইনাল, ২০১৫সালের এশিয়ান ফুটবল কাপ ফাইনাল খেলা ছাড়াও সারা বছর ধরে বিভিন্ন খেলাধুলা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয়-বৃহত্তম এই স্টেডিয়ামে।
অলিম্পিক অ্যাথলেটিক সেন্টারে গত এক দশক ধরে বৈশাখী মেলা সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এ’বছরে অলিম্পিক টেনিস সেন্টারে আয়োজিত বৈশাখী মেলার সামগ্রিক আয়োজন মেলা প্রেমিক দর্শনার্থীদের কাছে এক ডিসাপয়েন্টমেন্টের অভিজ্ঞতা। প্রবাস জীবনে ব্যস্ততার মাঝে দেশীয় আমেজে একটু প্রশান্তি পাওয়ার জন্যে, বাংলা সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্যে, পরবর্তী জেনারেশানকে নিজ সংস্কৃতির সাথে পরিচয়/যোগাযোগ স্থাপনের জন্যে - মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সারা বছর অপেক্ষা করে। বৈশাখী মেলার জনপ্রিয়তা আজ শুধুমাত্র সিডনি-বাসীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় - সমগ্র অস্ট্রেলিয়াতে। আয়োজকদের আন্তরিক চেষ্টার ফলেই তা’ সম্ভব হয়েছে।
গত দুই দশকে সিডনির বৈশাখী মেলার ব্যাপ্তি-আকার, মেলায় আগত লোকসংখ্যার পরিমাণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মান, স্টলের সংখ্যা, ইত্যাদির সব কিছুতেই ব্যাপক পজিটিভ পরিবর্তন এসেছে। আর তাই ভেন্যুর কাছাকাছি পর্যাপ্ত টিকেট বুথের এবং পার্কিং ব্যবস্থা, একই সাথে প্রবেশ ও ঘণ্টা ভিত্তিক নির্ধারিত মূল্যে কিংবা ফ্ল্যাট রেটে পার্কিং টিকেট কেনার ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত ভলান্টিয়ার নিয়োগ, ইত্যাদির প্রয়াস আগামী মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মূল্যবান সময়ের অপচয় রোধে সহায়ক হবে। এছাড়া সিঙ্গেল টিকেটের পাশাপাশি সুলভ-মূল্যে/ডিসকাউন্ট রেটে ডাবল ও ফ্যামিলি প্যাক টিকেট, প্রি-পেইড পার্কিং টিকেট, প্রযুক্তি এবং প্রশাসনিক সুবিধা সাপেক্ষে অনলাইন কিংবা বিভিন্ন সাবার্বের গ্রোসারী দোকান থেকে অগ্রিম টিকেট কেনার ব্যবস্থা, ইত্যাদির প্রচলন করা যায় কিনা তা’ ভেবে দেখার সময় এসেছে।
সিডনির বৈশাখী মেলা সম্পর্কে এপ্রিল ২০১৫তে বাংলা-সিডনি ডট কম-এ আমার এক আর্টিকেলে লিখেছিলাম – “প্রথম/দ্বিতীয়/তৃতীয় জেনারেশানের বাংলাদেশী/বাংলাভাষীদের দেশ - অস্ট্রেলিয়াতে সিডনির বৈশাখী মেলার আয়োজন এখন শুধুই এক মিলন-মেলা নয় বরং এক মহা উৎসব। সফল আয়োজকদের আন্তরিকতা আর প্রচেষ্টায় সিডনিতে খোলা বাতাসের পরিবেশে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আমাদের প্রতিটি বৈশাখী মেলা আগামীতে আরো বড় আকারে অনাবিল আনন্দের হবে - এই আমাদের প্রত্যাশা”। আমার/আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে শুনে আনন্দিত।
বারউডের মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক সম্মানজনক ANZ স্টেডিয়ামের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে, নরম ঘাসে কিংবা গ্যালারিতে বসে নিজ পরিবার/প্রিয়জন/বন্ধু-বান্ধব/আত্তিয়-স্বজনদের সাথে খাওয়া-দাওয়া আর আলাপচারিতার মাঝে স্টেজ থেকে সরাসরি কিংবা ২৩মিটারx১০মিটার Panasonic HD LED পর্দায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ শেষে রঙিন আতশবাজির বর্ণিল বিশাল আয়োজনের বৈশাখী মেলা ২০১৬-র অপেক্ষায়…
বৈশাখী মেলার আয়োজকদের অগ্রিম শুভেচ্ছা।
মাসুদ পারভেজ, সিডনী, mmparvez@yahoo.com
|