আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস মাসুদ পারভেজ
আজ ১লা অক্টোবর, বিশ্ব প্রবীণ দিবস। বিশ্বব্যাপী প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ প্রতিবছর পহেলা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এবারের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য Pandemics: Do They Change How We Address Age and Ageing?
কোভিড-১৯ মহামারীর ২০২০ সাল - জাতিসংঘের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের ৩০ বছর পূর্তি। এই বছরটিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নার্স ও মিডওয়াইফের বছর হিসাবেও স্বীকৃতি দিয়েছে। নার্সিং পেশার বিশেষ স্বীকৃতিসহ প্রবীণ ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ভূমিকা, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মহামারীগুলোর প্রস্তুতির জন্যে জাতিসংঘ গুরুত্ব আরোপ করেছে এই বছরে। কোভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকেই জাতিসংঘ বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও দেশ পর্যায়ে যৌথ প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপে প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী আজ বেশিরভাগ মানুষ তাদের ষাটের দশক বা তারও পরে বেঁচে থাকার আশা করতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ২ বিলিয়ন জনসংখ্যা ৬০ বছর বা তারও বেশি বয়সী হবে যা ২০১৫ সালের তুলনায় ৯০০ মিলিয়ন বেশি। বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধির গতিও নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৫০ সালে বিশ্বব্যাপী প্রবীণদের ৪০% নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে বাস করবে।
বিশ্বে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে তা আরও বেড়ে যাবে। একটি দীর্ঘ জীবন কেবল একজন প্রবীণ ব্যক্তি কিংবা তাঁর পরিবারই নয় বরং সমগ্র সমাজের জন্যও সুযোগ নিয়ে আসতে পারে। অতিরিক্ত বছরগুলো আরও নতুন শিক্ষা কিংবা নতুন ক্যারিয়ার করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে প্রবীণদের জন্যে। এভাবে প্রবীণ ব্যক্তিরা তাঁদের পরিবার এবং কমিউনিটির জন্য বিভিন্ন উপায়ে অবদান রাখতে পারেন।
প্রাকৃতিক নিয়মে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ ব্যক্তিদের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে এই অবস্থায় তাঁর অস্তিত্ব পরিবারে অনেকটা বোঝার মতো হয়ে যায়, তাঁর বেঁচে থাকাটা অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক ক্রমেই শিথিল হতে থাকে। অনেকটা অবহেলা অযত্নের মধ্যেই তাঁকে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয় - এই অবস্থা অত্যন্ত মর্মান্তিক।
আজকের এই লেখা যখন আমি লিখছি - তখন জানালা দিয়ে তারা ভরা আকাশ থেকে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় আলোকিত হচ্ছে আমার চারপাশ। ভাবছিলাম - সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনায়, বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ দেশের জনগণ আজ দীর্ঘ জীবনযাপন করছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায়, উন্নত খাদ্য ব্যবস্থায়, আধুনিক জীবন যাত্রায়। আরও ভাবছিলাম বিশ্বব্যাপী বেশির ভাগ প্রবীণদের জীবনের সঙ্গে আজ আমরা অতিরিক্ত বছর যোগ করতে পেরেছি কিন্তু বাড়তি বছরগুলোতে প্রবীণদের জন্যে কি আমরা জীবন যোগ করতে পেরেছি?
আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে - প্রবীণরা অভিজ্ঞতার সম্পদ, তরুণ সমাজের উজ্জীবনী শক্তি, চলমান ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক - এই হোক প্রতিদিন আমাদের সবার চিন্তা ও চেতনায়, আমাদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে।
মাসুদ পারভেজ, সিডনি / mmparvez@yahoo.com
|