bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...

আবিষ্কার
মাসুদ পারভেজ


মুক্ত আকাশে পাখির মতো ওড়ার আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয় Wright ভাতৃদ্বয়ের। ধীরে ধীরে মেধা, শ্রম আর নিষ্ঠার সাথে সফলভাবে ১৯০৩ সালে আবিষ্কার করেন ফ্লাইং মেশিন - এরোপ্লেন, যা' সময় ও দূরত্বকে করেছে জয়। আকাশে আজ বাণিজ্যিকভাবে পাখা মেলে উড়ছে প্রায় সব দেশের পতাকাবাহী প্লেন - গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে যাত্রী, পণ্য, সেবা। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রিয়জনের কাছে ফেরা, প্রিয়জনকে ছেড়ে যাওয়া, সফলতার আনন্দ কিংবা বিফলতার বেদনা নিয়ে ফিরে আসা, চির বিদায় দেয়া কিংবা নেয়া...আরো কতোই না অনুভূতির নীরব সাহ্মী এই বিস্ময়কর আবিষ্কার…

১৯৮০ সালে বাংলাদেশে ফ্যাক্স মেশিনের ব্যবহারের শুরুতে দেখেছি - কি এক আশ্চর্যজনক এই মেশিন কাগজে লেখা শত শত বার্তা, চিঠিপত্র, জরুরী ডকুমেন্ট মুহূর্তেই পৌঁছে দিচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। গুরুত্ব আর ব্যবহারের ক্ষেত্রে পেছনে পড়তে শুরু করলো টেলিগ্রাম আর টেলেক্স - সংবাদ ও বার্তা প্রেরণের জন্য এক সময়ের অনন্য আবিষ্কার। ফ্যাক্স মেশিনের অত্যাধুনিক ব্যবহার দেখে সেই সময়ের এক বৃদ্ধ ব্যক্তির মন্তব্য আজও কানে ভাসে – "…ভবিষ্যতে হয়তো এমন মেশিন আসবে যার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে পৃথিবীর যেকোনো গন্তব্যে মুহূর্তেই পৌঁছে যাবে মানুষ…আর প্রয়োজন হবে না প্লেনে ওঠার..."

Alexander Fleming-এর ১৯২৮ সালে পেনিসিলিনের আবিষ্কার চিকিৎসাক্ষেত্রে বিশেষভাবে সংক্রামক বাধি প্রতিরোধে আর প্রতিকারে এনেছে অনন্য অবদান। ১৯৪০ থেকে ১৯৬০ সালে "সবুজ বিপ্লবের" জনক - Norman Borloug কৃষিক্ষেত্রে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি আর টেকনোলজি ট্রান্সফারে এনেছেন অভাবনীয় সাফল্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আধুনিকতায় আজ রোগ নির্ণয়ে, বিশ্লেষণে, নিরাময়ে কিংবা প্রতিকারে, বাণিজ্যিকভাবে নতুন নতুন ঔষধ আর ফসলের ভ্যারাইটি উদ্ভাবনে...বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি, মলিকুলার বায়োলজি....দিয়েছে অসীম শক্তি...প্রতিনিয়ত আমাদের শোনায় নতুন আবিষ্কারের আশার বাণী...

আধুনিক বিশ্বের মাইক্রো ক্রেডিটের আবিষ্কারক প্রফেসর ইউনুস গরীব দেশের মহিলাদের অংশগ্রহণে দারিদ্র মোচনে এক বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন - এই অনুকরণীয় প্রচেষ্টা আর সাফল্য এখন পৃথিবীর অনেক দেশে। ২০০৬ সালে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ের সম্মান শুধু প্রফেসর ইউনুসের নয় - সমগ্র বাংলাদেশীদের।

১৭১২ সালে উদ্ভাবিত স্টিম ইঞ্জিন সময়ের পরিক্রমায় রূপান্তরিত হয়েছে বুলেট স্পীড আর ম্যাগনেটিক ট্রেনে; Graham Bell-এর ১৮৭৬ সালে আবিষ্কৃত টেলিফোন থেকে জন্ম নিয়েছে স্মার্ট-ফোন, স্যাটেলাইট-ফোন, iPad, ট্যাবলেট…,..বেড়েছে গতি, যোগাযোগ ব্যবস্হা, ব্যবসা-বাণিজ্য...। প্রতিটি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে জন্ম হয়েছে আরেকটি আবিষ্কারের জন্য নতুন ভাবনা, নতুন দিক-নির্দেশনা...আর তাইতো আজ আমরা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জীবিকা আর জীবনের অংশ হিসেবে আলিঙ্গন করেছি - ইমেইল, ফেসবুক, Twitter...

আজ রাতে বাসার সবাই যখন ঘুমিয়ে, আমি তখন লিখছি আমার এই লেখা - আর ভাবছি…Thomas Edison যদি ইলেক্ট্রিসিটি আর ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার না করতেন, কাগজ-কলম, কম্পিউটার-সফটওয়্যার যদি আবিষ্কৃত না হতো, ১৯৯০ সালে Tim Berners-Lee যদি World Wide Web কিংবা ইন্টারনেট আবিষ্কার না করতেন - তাহলে কি আমার এই পাণ্ডুলিপি ছাপার অহ্মরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মুহূর্তে পৌঁছে যেতো?...কি অপূর্ব যোগসূত্র - এক আবিষ্কারের সাথে আরেক আবিষ্কারের…!!!

যেকোনো আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে এক বা একাধিক ব্যক্তির অনন্য মেধা, অক্লান্ত শ্রম, নির্ভেজাল সততা, একান্ত নিষ্ঠা আর চরম একাগ্রতা। আবিষ্কার যতোই ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ হোক না কেন, তার স্থায়িত্ব স্বল্প কিংবা দীর্ঘমেয়াদী হোক না কেন - প্রতিটি আবিষ্কার এনেছে - প্রকৃতি আর জীবের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন, কল্যাণ, সহজ আরামপ্রদ হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা…। আবিষ্কারের অপপ্রয়োগে অপবাবহারে - প্রকৃতি হয়েছে বিপন্ন, শুরু হয়েছে যুদ্ধ, সংঘাত, সন্ত্রাস, বিঘ্নিত হয়েছে মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা...।

পাহাড় কাটা, সুড়ঙ্গ তৈরি করা, স্থাপনা ভাঙ্গার জন্য ১৮৬৩ সালে Alfred Noble বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে আবিষ্কার করেন শক্তিশালী এক বিস্ফোরক পদার্থ -"Noble's Safety Powder"; পরবর্তীতে নিজেই এর নাম পরিবর্তন করেন ইংরেজি শব্দ "Power"-এর গ্রীক ভাষার প্রতিশব্দ -"Dynamite"-এ। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জঙ্গি বিমান থেকে জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকি শহরে এটম বোমার আঘাতে পৃথিবীর বুকে তৈরি হয়েছে নির্মম এক কালো ইতিহাস। ১৯৪৮ সালে মৃত্যুর আগে প্লেনের অন্যতম আবিষ্কারক Orville Wright দুঃখ করে বলেছিলেন -"…I lived long enough to see the dropping of the atomic bomb…"

Hiroshima Peace Memorial Museum আর Nagasaki Atomic Bomb Museum-এ দেখেছি - ১৯৪৫ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে জঙ্গি বিমান থেকে এটম বোমা ফেলার ভয়ঙ্কর দৃশ্যের চিত্র, সংরক্ষিত নমুনা, ধ্বংসাবশেষ, ধারাবর্ণনাকারী ভিডিও প্রতিবেদনে অসহায় মানুষের আহাজারি, ইত্যাদি...আর ভেবেছি - মানুষের কল্যাণে, সময় আর দূরত্বকে জয় করার জন্য যে প্লেন আবিষ্কৃত হয়েছিলো - তা' ব্যবহৃত হয়েছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের হত্যাকান্ডে, প্রকৃতিকে ধ্বংস করার জন্যে…, নিউক্লিয়ার রেডিয়েশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আজও সাক্ষী দেয় সভ্য সমাজের বর্বর আচরণের…। একই সাথে আরো ভেবেছি - দূর দৃষ্টিসম্পন্ন আবিষ্কারকরা শুধুমাত্র বিনোদন আর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্যই টেলিভিশন আর ক্যামেরা আবিষ্কার করেননি - ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা লাভের জন্যও…

প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৪৭ সালে Mikhail Kalashmikov আবিষ্কার করেন স্বয়ংক্রিয় রাইফেল AK-47 যা' আজ পৃথিবীর ১০০টিরও বেশী উন্নত-অনুন্নত দেশে, সরকারী-বেসরকারিভাবে, বৈধ-অবৈধভাবে যুদ্ধে, সংঘাতে, সন্ত্রাসে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগে Mikhail এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন - …যুদ্ধ আর সন্ত্রাসে সর্বাধিক ব্যবহৃত এই জনপ্রিয় AK-47কে পৃথিবীতে অশান্তির জন্য দায়ী করা উচিত নয় - কারণ তার উদ্ভাবন অনেক দেশে এনে দিয়েছে স্বাধীনতা…??!!

জোনাকি পোকা থেকে আলো নিঃসরণকারী জীন এবং তার রাসায়নিক কাঠামো আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে। নিকট ভবিষ্যতে হয়তো এই জীন সংযোজিত হবে লাল গোলাপে - যা' রাতের আঁধারে মিটিমিটি করে আলো ছড়িয়ে শান্তির প্রতীক হয়ে থাকবে…আরেকটি আবিষ্কারের প্রতীক্ষায়…

মাসুদ পারভেজ
mmparvez@yahoo.com
সিডনী
১৪/০৪/২০১৪






Share on Facebook               Home Page             Published on: 24-Apr-2014

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot