bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...



ঋষিতার আট বছর হল। ওর মনে অনেক প্রশ্ন।
‘মা আমি যখন তোমার পেটে ছিলাম, তখন আমি কথা বলতাম’?
মৌসুমি চটপট উত্তর দেয় – ‘হ্যাঁ। তুমি তো সারাদিন কথা বলতে’।
‘তুমি শুনতে’?
‘হ্যাঁ, শুনতাম’।
‘তুমি কি হেডফোন দিয়ে শুনতে’?
এবার মৌসুমির হাসার পালা । ‘তোমার বাবা তোমার কথা হেডফোন দিয়ে শুনত’।
‘ও ! বাবা তোমার টামিতে হেডফোন লাগিয়ে শুনত’? ঋষিতার বিস্ময় আর বাড়ে ।
‘তুমি বাবাকে জিজ্ঞেস কর, বাবা বলবে তুমি কি কথা বলতে’? মৌসুমি এবার ঋষিতাকে আমার দিকে ঠেলে দেয়।
ঋষিতা আমার দিকে তাকায়। ‘বাবা তুমি কি হেডফোন দিয়ে আমার কথা শুনতে? কোন হেডফোন কানে দিতে’?
‘নারে মা। আমি হার্ট ফোন দিয়ে শুনতাম’। আমি মিটিমিটি হাসি।
‘ওটা কি বাবা’?
‘তুমি জান যে তোমার ঐ বুকের মধ্যে একটা ছোট্ট বাবা বসে আছে? ঐ বাবাটা তোমার সব কথা শুনতে পেত’।
ঋষিতার অবাক করা চোখ। ‘কই আমি তো দেখি না’?
‘তুমি দেখবে কি ভাবে? আমি তো ঐ বুকের ভিতরে’।
এবার ঋষিতা পাল্টা প্রশ্ন করে, ‘আচ্ছা, আমি যা খাই তুমি সেটা টেস্ট করতে পার’?
আমি আমতা আমতা করে বলি, ‘হ্যাঁ পারি’।
ঋষিতা হুট করে মুখে একটা চিপস দিয়ে বলে , ‘বলতো আমি এখন কেমন টেস্ট করছি’?
আমি বিপদে পড়ে গেলাম। সর্বনাশ। এখনই তো আমার সব খেলা ফাঁস হয়ে যাবে। আমি আড় চোখে চিপসের প্যাকেট দেখি। ভাগ্য দেবতা সব সময় আমার ডান ঘাড়ে বসে থাকে। চিপসের প্যাকেট টা আমার পরিচিত। আমি চোখ বুজে বলি, ‘একটু একটু ঝাল, আর ক্রিপ্সী, একটু সল্ট, একটু পেপার’।
'ওয়া এমেজিং। তুমি ঠিক টেস্ট করেছো’।
আমি পরীক্ষায় পাশ করে যাই। কিন্তু সেই থেকে যে আমার নতুন পরীক্ষা শুরু হল তা চলে সারা বছর।
ও নতুন কিছু খেলেই জিজ্ঞেস করবে , ‘বাবা বলতো আমি কি খাচ্ছি’? আমার তখন কঠিন গবেষণায় নামতে হয়। কিন্তু যদি ঋষিতার প্রিয় কোন খাবারে একটু ভাগ বসাতে চাই তাহলে চটপট বলে দিবে , ‘ তুমি তো টেস্ট করতে পারছ তাহলে আমারটা খাবে কেন’?
আমি তখন আমেরিকা । মেয়ে আমাকে একদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করে, ‘বাবা, বলতো আমি কি খাচ্ছি’?
আমার এবার ধরা পরতে হবে। এতদূর থেকে আমি আমার খেলা খেলব কি ভাবে? আমি মৌসুমির সাথে কথা বলতে চাইলাম। কিন্তু মেয়ে কথা বলতে দিবে না। আমি কথা বদলাতে চাইলাম। মেয়ে আমার বেশ সেয়ানা, ‘বাবা তুমি চালাকি করছ’।
ভাগ্য দেবতা আমাকে সব সময় বাঁচিয়ে দেয়। আমি অনুমানে বললাম , ‘তুমি স্ট্রবেরীর চুইংগাম খাচ্ছ’। আমার অনুমানটি ঠিক ছিল। ঋষিতা চমকে উঠল। ও যত না বিস্মিত হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি আমি। হাতে চিমটি কেটে নিজেকেই জিজ্ঞেস করেছি , ‘আমি কি আসলেই চুইংগামের টেস্ট পাচ্ছিলাম’?
মনে হল এটা আসলে খেলা না। এটাই সত্যি । আমার ভিতরেও ছোট্ট ঋষিতা বসে থাকে।

ঋষিতার অনেক সিক্রেট। ওর স্কুল নিয়ে, বন্ধুদের নিয়ে, খেলনা নিয়ে, খেলা নিয়ে। আমি ওর বেড়ে উঠা দেখি আর আমার মনোবিজ্ঞানের বইয়ে পড়া গল্পগুলোর সাথে মিলাই। নিজের বিছানায় সব পুতুলগুলো ঘুম পাড়িয়ে সে আমাদের বিছানায় বিড়ালের উম খুঁজে। ওর বিছানায় ঘুমের জায়গা নেই যে ! ওর কোন সিক্রেট যদি আমি জেনে যাই, তাহলে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি এটা জানলে কেমন করে’?
আমি বলি, ‘আমার বুকের মধ্যে একটা ছোট্ট ঋষিতা বসে আছে। ও আমাকে সব বলে দেয়’।
কথাটা বলে বেশ ভুল করলাম। ও একদিন আমার কাছে এসে বলে, ‘বাবা, তোমার সার্টটা খোল তো’?
‘কেন রে মা’? তোমার ছোট্ট ঋষিতাকে আমি নিয়ে নেব’?
আমি কিছু বলার আগেই হাত দিয়ে খপ করে আমার বুকের ভিতর থেকে ছোট্ট ঋষিতাকে নিয়ে দৌড়।
ব্যাপার কি ? ব্যাপার কি ?
পরে দেখি মেয়ে ওর খেলনা খুঁজতে গিয়ে আমার পড়ার ঘরের তেরটা বাজিয়ে রেখেছে। ও চায়নি এই সিক্রেট টা ঐ ছোট্ট ঋষিতা আমাকে বলে দিক। মেয়ের বুদ্ধি দেখ ।

ঋভুর সাথে খেলাটি ছিল অন্য রকম। ও আমাদের নাটক করতে দেখেছে, আমাদের সাথে নাটক করেছে। বিষাদ সিন্ধু আমাদের দুই পর্ব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার নাটক । সেই নাটকে হোসেন যখন কারবালায় যুদ্ধ করে- তার সাথে যোগ দেয় তরুণ বালক ওহাব। হোসেনের পুত্র। ঋভু এই নাটকের রিহার্সাল দেখেছে অনেকবার। নাটকের একটি দৃশ্যে ওহাব যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত হয়ে হোসেনের কাছে ছুটে আসে।
‘পিতা, পানি দেন, পানি। গলা শুকাইয়া কাঠ ’। যুদ্ধে ক্লান্ত ওহাব ফিরে এসেছে পিতার কাছে। পানির জন্য ।
কারবালার সেই মরুভূমিতে হোসেন পানি পাবে কোথায়? ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কোলে নেয়।
অসহায়ের মত বলে, ‘পানি যে নাই রে বাছা। আয় আমার জিহবা চুষিয়া দেখ তৃষ্ণা মিটে নাকি’।
এর পর ওহাব বর্ণনা দেয় , ‘অতঃপর পুত্র তাহার পিতার গলা জড়াইয়া পিতার জিহবা চুষে। আহা, জগতের সকল তৃষ্ণা মিটিয়াছে যেন’।
আহারে সন্তানের জন্য পিতার কি অসীম ভালবাসা । আমি এই নাটকে যখন সূত্রধর হয়ে পিতা পুত্রের এই বেদনা আর অসহায়ত্বের কাব্য বর্ণনা করতাম, আমি বুঝতে চাইতাম হোসেনের কষ্ট । জগতের কোন শব্দ দিয়ে পুত্রের জন্য পিতার কষ্টের কথা বর্ণনা করা যায়?
এই সংলাপগুলো ঋভুর মুখস্থ ছিল। ও স্কুল থেকে আসার সময় একটু গরম পড়লেই বলত, ‘বাবা, গলা শুকাইয়া কাঠ। তোমার জিহ্বাটা দাও তো? আমি চুষিয়া দেখি, তৃষ্ণা মিটে কিনা’।
আমার ভিতরে তখন হোসেন এসে বাসা বাঁধে । ঋভুকে আমার মনে হয় সেই ওহাব।
হোসেনের বুকের কোন জায়গাটায় সেদিন অঝরে রক্ত ঝড়ে ছিল?
ওহাব বাবার জিহবা চুষিয়া, তৃষ্ণা মিটাইয়া সেই যে যুদ্ধে গেলো আর ফিরে এলো না। হোসেনের কেমন লেগেছিল সেদিন?
খরা দুপুরের রোদে এয়ার কন্ডিশন চালিয়ে, গাড়িতে বসে সেই মরুভূমির উত্তাপ হয়ত আমি টের পেলাম না । কিন্তু মনের গভীরে পুত্রের তৃষ্ণা আর পানির আকুতি পিতার বুকে কেমন রক্ত ঝরায় তা একটু একটু বুঝতে পারছিলাম।

ঋষিতাকে অনেকদিন হোল সময় দিচ্ছিলাম না। বিষয়টি ভাল লাগলো না। এক শনিবারে ওকে নিয়ে সুইমিং এ গেলাম। মেয়ে আমার মাত্র সাতার শিখছে । ওকে সাতার কাটতে দেখলে আমার একুরিয়াম এর অ্যাঞ্জেল ফিস এর মত মনে হয়। আমার বড় একুরিয়ামে দুটা এঞ্জেল ফিস ছিল। মাছগুলো সাতার কাটতো আর আমি সব কাজ বাদ দিয়ে ঐ একুরিয়ামের দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকতাম । ঋষিতা ভাল ডুব সাঁতার দিতে পারে না । ওর নাকি দম বন্ধ হয়ে যায়। ডুব দিতে বললেই চটপট উত্তর দেয়, ‘আমার ব্রেথ টা বেশি বড় না’।
ও একটু ডুব দিয়েই মাথা তুলে ফেলে। আমি ওকে দম বাড়ানোর ট্রেনিং দেই। উহু! আমার ট্রেনিং ওর কাজে লাগে না।
ওর মাথায় নতুন বুদ্ধি এলো। আমার কাছে এসে বলে, ‘বাবা আমার একটা আইডিয়া আছে’।
‘কিসের বুদ্ধি’?
‘ব্রেথ টা কে বাংলায় কি বলে’?
‘ব্রেথ কে বাংলায় দম বলে’।
‘তোমার দমটা আমাকে দাও, তাহলে আমার দমটা অনেক বড় হবে’।
আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
‘কি হল দাও’? ও আবার তাড়া দিল। তারপর আমার কাছে এসে হাত দিয়ে খপ করে আমার বুক থেকে আমার দম টা নিয়ে পানিতে ডুব দিল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম ঋষিতা এক দমে আগের চেয়ে অনেক বেশি দূরে চলে গ্যাছে।
ঋষিতা পানি থেকে মাথা উঠিয়ে চিৎকার করে বলে , ‘ বাবা, ইট ওয়ার্কস’।
আমি একরাশ বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আহারে বাচ্চা আমার। তোর দমই তো আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। তুই দম নিলেই তো আমি দম নেই।

আমাদের আদর মাখা আর পাগল করা মেয়েটির আজ জন্মদিন।
ওর জন্মদিনে আমার কেবলই বলতে ইচ্ছে করে , ‘মাগো, আমাদের ব্রেথটা বেশি বড় না। তোমার দমটা আমাদের দিলে তবেই না আমাদের দমটা বড় হয়’।
সকল বাবা-মায়ের দমটা তো ঠিক এভাবেই বড় হয়।



সিডনি, ২০১৪






Share on Facebook               Home Page             Published on: 24-Nov-2014

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far