bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



সুলেমান ও সুলেমান
জন মার্টিন




সুলতান সুলেমান আমার বাড়িতে এসেছে 'নেটফ্লিক্স' দিয়ে।
মৌসুমীর সাথেই উনার প্রথম পরিচয়। আর মৌসুমী আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো হুররাম এর সাথে। আমি বিস্মিত হয়ে হুররামের অভিনয় দেখি। ওই অভিনেত্রীর চোখ, মুখ, ঠোঁট, নিঃশ্বাস একসাথে কি চমৎকার ভাবে ‘হুররামের’ কথা বলে। অনেকদিন পর মুগ্ধতা নিয়ে আমি হুররামের অভিনয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। মৌসুমী টিপ্পনী কাটে, 'বিষয় কি ? সব বাদ দিয়ে এখানে আটকে আছো কেন?' আমি যতই বলি, 'তোমাকে সঙ্গ দিচ্ছি। তুমি একা একা দেখছো তাই ....' কিন্তু এই অজুহাত দিয়ে বেশীদিন টেকা গেলো না। অতঃপর সরল স্বীকারোক্তি, ‘ হুররাম কেবল দেখতেই সুন্দরী নয়, ওর অভিনয়ও ঈর্ষা করা যায়। '

আমরা রুটিন করে সুলতান সুলেমান দেখা শুরু করি। নেটফ্লিক্স এ এটার নাম 'ম্যাগনিফিসেন্ট সেঞ্চুরি’। আমাদের সাথে যোগ দিলো আমার শাশুড়ি। উনি ইংরেজি সাব-টাইটেল আমাদের মতো পড়তে পারেন না। তারপরও বসে বসে দেখেন। মাঝে মাঝে আমরা একটু বাংলা অনুবাদ করে দেই। কিন্তু হুররাম স্ক্রিনে এলেই আমি বাংলা করতে ভুলে যাই।

শাশুড়ি তার বোনের কাছে শুনলেন যে ঢাকায় সুলতান সুলেমান দেখাচ্ছে। ওটা নাকি ইউটিউব এ আছে। শাশুড়ির আর দেরী সহ্য হয় না। এক্ষুনি দেখতে হবে। আমি ইউটিউব এ সুলেমানকে খুঁজে বের করি। তারপর থেকে আমার শাশুড়ি সেই যে টেলিভিশন এর সামনে বসলো, আর উঠার নাম নেই । আমাদের খাবার টেবিলে আগের মতো ভাজি, ভর্তার দেখা মিলে না। উনি টেলিফোনে এখন তেমন সময় দেন না, হাটতে যান না। সুলতান সুলেমান এখন উনার প্রিয় বন্ধু।

শাশুড়ি একদিন ইউটিউব এ সুলেমানের লিংক হারিয়ে ফেললেন। আমি উনার না দেখা পর্ব খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খেলাম। উনি বললেন চল্লিশ পর্ব পর্যন্ত দেখেছেন তারপর আর খুঁজে পাচ্ছেন না। আমি নেটফ্লিক্স এর সাথে মিলিয়ে দীপ্ত টিভির বাংলা সুলতান সুলেমানের চল্লিশ পর্ব খুঁজে বের করলাম। শাশুড়ি বললেন, 'আরে না । আমি এখনও এই পর্যন্ত আসি নাই। ' আমি যতই বলি আসল সিরিয়ালে এটাই পঞ্চাশ পর্ব, আমার শাশুড়ি ততই বলে, 'না । আরো আগের পর্ব দেখাও তো ?' ইউটিউব এ এই মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত কয়েকবার দৌড়াদৌড়ি করে বুঝলাম যে মূল পর্বের মত দীপ্ত টিভির সুলতান সুলেমান একই ভাবে ভাগ করা নয়।

আমি আর মৌসুমী শখ করে বাঙ্গালী সুলেমানকে দেখতে বসলাম।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছি। বিষয় কি ? ভুল শুনছি না তো ? ভুল দেখছি না তো ?

আমি আবার ভালো করে দেখলাম। মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। মৌসুমী ও তাই করলো।

আমরা দুজনই ঘর থেকে উঠে গেলাম। আমাদের বিশ্বাস হচ্ছিলো না। ম্যাগনিফিসেন্ট সেঞ্চুরি সিরিয়ালটির এই করুন দশা হয়েছে। ডাবিং করা সিনেমা দেখা নতুন কিছু নয়। এমন প্রচুর ছবি দেখেছি যে ভালো করে খেয়াল না করলে বুঝাই যাবে না যে এটা অন্য ভাষায় ডাবিং করা। ঠোঁট মিলে গ্যাছে ওই অন্য ভাষায় শুটিং করা ছবিতে। কিন্তু বেচারা সুলেমানের অবস্থা তো ত্রাহি ত্রাহি। ঠিক আছে ধরে নিলাম - ঠোঁট মিলানো সম্ভব হয় নি। কিন্তু গলার স্বর এমন বিকট আর বিকৃতি করে কথা বলতে হবে কেন ? আমি অনুমান করছি স্রেফ পয়সা বাঁচানোর জন্য এক মানুষকে দিয়ে তিনটি গলার স্বর বানিয়ে তিনটি ভিন্ন চরিত্রের ডাবিং করা হয়েছে। সবার তো আর তিনটি স্বরে কথা বলার দক্ষতা নেই। তাই একবার চিকন গলা, একবার খ্যাস-খ্যাসে গলা আর একবার স্বাভাবিক গলার স্বর রেখে একই মানুষ 'এক সিটিং' এ তিনটি চরিত্রের ডাবিং শেষ করেছে। প্রযোজক ভারী খুশি হয়েছেন। বুকের বোতাম খুলে হয়তো বলেছে, 'দেখলা, কেমনে পয়সা বাঁচানো যায়?'

উনি হয়তো পয়সা বাঁচালেন, কিন্তু সর্বনাশ করলেন সুলতান সুলেমানের। যে শিল্পীরা ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেঞ্চুরি’তে অভিনয় করেছেন তারা কিন্তু যদু-মধু -কদু নয়। তাদের অভিনয় এবং সংলাপে যে মুনশিয়ানা মূল সিরিজে দেখিয়েছেন - তার একফোঁটাও এই কাঁচা, মাসুম, বাঙালি 'ডাবিং-ওঁলাদের' গলায় নেই। থাকবে কি করে ? জঘন্য কর্কশ গলায় সংলাপ দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায়। কিন্তু বুঝা যায় না ওই দৃশ্যে, ওই মুহূর্তে, ওই চরিত্রটি কি ভাবছিলো ? মূল সিরিজে চরিত্রটি আলো, পোশাক, মিউজিক দিয়ে যে ইলুউশনটি তৈরি করেছিল - তা ফুস করে উড়ে গেলো দীপ্ত টিভি নামের এক বালকের 'ডাবিং -ডাবিং' খেলায়।

নেটফ্লিক্স এ কেবল ৪৮ টি পর্বের সিজন-ওয়ান আছে। আমি আর মৌসুমী প্রায় রাতেই প্ল্যান করেছি শুধু একটি পর্ব দেখবো। সিজন ওয়ান এর প্রতিটি পর্ব প্রায় ৪৫-৬০ মিনিটের। কিন্তু স্ক্রিপ্ট রাইটার ভারী সেয়ানা। এমন ভাবে নাটকের শেষ ৫ মিনিটে গল্প গুছিয়ে নিবে, যে আপনি খেতে ভুলে যাবেন, ঘুমাতে ভুলে যাবেন আর মনে হবে, 'আহা এরপর কি হলো ?' ঘড়ির কাটা রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে এগুতে থাকে। মনে হবে এই আর একটি পর্ব দেখবো তারপরই ঘুমাবো। কিন্তু রাইটার আপনার টেম্পার বুঝে গেছে। আর আমরাও বার বার ওই ফাঁদে পা দিয়ে রাত তিনটা , চারটা বাজিয়ে পরের দিন লাল চোখ নিয়ে কাজে গিয়েছে। নাটকের ভাষায় এটাকে বলে 'ক্লিফ হ্যাঙ্গার।' মানে আপনাকে ঝুলানোর কায়দা। গল্পের মধ্যে আপনি ডুবে যাবেন। স্ক্রিপ্ট রাইটার তো সেটাই চাইবে। কিন্তু দীপ্ত টিভির 'ডাবিং-ডাবিং' খেলায় কি হলো ? মূল সিরিজে যেখানে পর্বটি শেষ হয়েছে, সেখানে চমৎকার ভাবে আপনাকে ধরে রাখার ফাঁদ পাতা হয়েছে। কিন্তু বাংলার সুলতান সুলেমানের পর্ব ওই একই ভাবে শেষ হয় নি। সম্ভবত এটা করা হয়েছে ১ ঘণ্টার সিরিয়ালকে একবার না দেখিয়ে, কাঁচি দিয়ে কেটে দু পর্বে দেখানোর ফন্দিতে। বেশি এপিসোড, বেশি বিজ্ঞাপন, বেশি লাভ। কিন্তু মূল স্ক্রিপ্ট রাইটার কি এটা চেয়েছিলো? এই কাণ্ডটি করার জন্য যে নাটকটির তেরোটি বাজানো হলো এটা কিন্তু কেউ খেয়াল করলো না। এখন বুঝলাম, কেন আমার শাশুড়িকে চল্লিশ পর্ব খুঁজে দিতে পারিনি? এক বন্ধু বললো মূল সিরিজে মোট একশ ঊনচল্লিশটি এপিসোড আছে। আর বাংলায় সুলতান সুলেমান নাকি ২০০ কে ছাড়িয়ে গেছে। সিজন টু তে একটি পর্ব আছে ২ ঘণ্টা ১২ মিনিট। ওটাকে নিশ্চয় চার পর্বে দেখানো হবে। হায়রে কপাল।

ম্যাগনিফিসেন্ট সেঞ্চুরি অনেকগুলো ভাষায় প্রায় ৬০টি দেশে দেখানো হয়েছে। সারা পৃথিবীতে এর দর্শক সংখ্যা ২০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে । এটা তৈরি করতে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। আমি তো বলি অনেক কমই খরচ হয়েছে। আর অভিনয় করেছে নামি দামী শিল্পীরা। এমন একটি জনপ্রিয় শিল্পের তেরোটা বাজিয়ে দীপ্ত টিভি বাংলাদেশের মানুষকে জগা-খিচুড়ি করে দেখাচ্ছে - এটা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করছে না। কেউ বলছে না এর ডাবিং অত্যন্ত নিচু মানের, গলায় কোনো উঠা-নাম নেই, নেই সেই পরিপক্ব এক্সপ্রেশন। কর্কশ গলা বানিয়ে ডাবিং হচ্ছে, একটি ভালো কাজকে নষ্ট করে দেখানো হচ্ছে। কেউ বলছে না, ‘বন্ধ করো। শিল্প চাল ডালের ব্যবসা নয়’। দীপ্ত টিভি হয়ত বলবে, ‘মানুষ গোগ্রাসে সুলতান সুলেমান দেখছে’। হ্যাঁ দেখছে। মানুষ দেখছে বাংলা ডাবিং এর জন্য নয় বরং দেখছে সিরিয়ালটির সামগ্রিক উপস্থাপনার জন্য, গল্পের জন্য, অভিনয়ের জন্য। ভাবুন তো দেশের ভালো অভিনেতা/অভিনেত্রীদের দিয়ে যত্ন নিয়ে যদি ডাবিং করা হতো, তাহলে এর বাংলা ভার্সনটি কি আরো ভালো হতো ? আর ওই যে হুররামের উজ্জ্বল উপস্থিতি ঢাকার জন্য ওর গায়ের উপর একটি আবছা সার্কেল ছায়ার মতো লাগিয়ে দিয়েছে - ওটার কি প্রয়োজন ছিল ? কেন ? পরিচালক হুররামকে ওই ভাবেই উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। আমি তো ওখানে কোনো নগ্নতা খুঁজে পাইনি। আমার ভারী জানতে ইচ্ছে করছে, দীপ্ত টিভি সুলতান সুলেমানকে যে ভাবে প্রচার করছে মূল পরিচালক/ প্রযোজক কি সেটা জানেন?

শিল্প নিয়ে দীপ্ত টিভি যে এমন একটি বাণিজ্যিক খেলা খেলছে, একটি ভালো সিরিয়াল স্রেফ বাণিজ্যিক কারণে, অত্যন্ত নিচু মানের ডাবিং দিয়ে, বাজে ভাবে প্রচার হলো এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার ছিল। এই প্রতিবাদ তো করবে দেশের শিল্পীরা। কিন্তু এগুলো নিয়ে কেউ কথা বললো না। প্রতিবাদ ঠিকই হলো । কিন্তু শিল্পকে বাঁচানোর জন্য নয়। আমাদের শিল্পীরা প্রতিবাদ করলো বাণিজ্যিক কারণে। এর সাথে যোগ হোল বিজয় দিবসে ভিনদেশী সিরিয়াল প্রচারের জন্য। বলা হোল তুরস্ক আমাদের যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সমালোচনা করেছিল তাই সেই দেশের একটি সিরিয়াল আমাদের দেশে দেখিয়ে দীপ্ত টিভি দেশের জন্য আমাদের ত্যাগ অবমাননা করেছে। আমার মনে পড়ছে ১৯৭১ সালের সপ্তম বহরের কথা। আমেরিকা ওই সময় আমাদের "স্বাধীনতা যুদ্ধের পরম বন্ধু (??)" হিসাবে জাহাজ ভর্তি কি যেন নিয়ে এসেছিল? আমরা কি তাদের কোন সিরিয়াল, কোন পণ্য ব্যবহার বন্ধ করেছিলাম? ওই সময় আমেরিকায় কিন্তু শিল্পীরা বাংলাদেশের জন্য কনসার্ট করেছিল। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আর শিল্পীদের অবস্থান এক নয়। তুরস্কের সাম্প্রতিক তির্যক মন্তব্যের উচিত উত্তর আমাদের দেশ দিয়েছে। কিন্তু এর সাথে ‘সুলতান সুলেমান’ কি ভাবে জড়িয়ে গেল ? দীপ্ত টিভি ঐদিন এই সিরিয়াল না দেখালেই পারত। কিন্তু ওরা কি বিজয় দিবসের কোন অনুষ্ঠানই প্রচার করেনি? যারা প্রতিবাদ করলো তারা আমার বন্ধু, আমার বাতিঘর। কিন্তু তারা ‘সুলতান সুলেমান’কে শিল্পকর্ম হিসাবে দেখলো না। সুলতান সুলেমান কি শুধুই বাণিজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী? আমার ভালো লাগেনি।

আমার নাটকের সহযাত্রীরা একদা মহিলা সমিতি কাঁপিয়েছে বিদেশী নাটকের অনুবাদ দিয়ে। আমরা দেখেছি আর ভেবেছি, 'আমরাও একদিন ছুঁয়ে দিবো আমাদের গল্প দিয়ে'। আমরা ছুঁয়েছি। সেই যে শুরু করেছিলাম ওথেলো, ম্যাগবেথ, ইন্সপেক্টর জেনারেল, কোপারনিকের ক্যাপ্টেন দিয়ে। তারপর আমাদের ঝুড়িতে জমেছে কীর্তনখোলা, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এই দেশে এই বেশে মত কত নাটক। এখন সেই একই মুখগুলো কেবল নিজেদের হিসাবের খাতা নিয়ে চোখ বুলাবে অংকে? আমার প্রিয় মুখগুলো যোগ দিবে ওই বাণিজ্য নামের খেলায়? তাহলে 'শিল্পে বাঁচি, শিল্প বাঁচাই' এই স্লোগানের কি হবে ?

আমার ভালো লাগেনি। আমিও চাই আমাদের শিল্প নীতিমালায় চলুক। আমিও চাই দেশের শিল্পীদের কদর বাড়ুক, দেশের শিল্পীদের কাজের সুযোগ হোক। কিন্তু দরজা-জানালা বন্ধ করে অচলায়তন তৈরি করব কেন?

বন্ধুরা, আমার সত্যি ভালো লাগেনি।



জন মার্টিন, সিডনি





Share on Facebook               Home Page             Published on: 22-Dec-2016

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far