bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন






-মার্টিনদা, একদম নড়বেন না ।

কিরীটীর কড়া নির্দেশ। আমি ওর কথা শুনলেও মৌসুমি ওর কথা এক কানে শুনত আর আরেক কান দিয়ে বের করে দিত।

‘তুমি তোমার মার্টিন দার ছবি আঁক। আমি পাথরের মত বসে থাকতে পারব না’ । এই বলে মৌসুমি উঠে গেল। ও কিরীটীর জন্য রান্না করবে। ছেলেটা হোস্টেলে থাকে। কে ওকে রান্না করে খাওয়াবে ?

কিরীটী রঞ্জন বিশ্বাস। ছবি আঁকে, ঢোল বাজায়, গান গায়, আর রাস্তায় গলা ছেড়ে শ্লোগান দেয়। ওর এত গুণ বলেই ও ঢাকা পদাতিকে আমাদের সাথে নাটক করতে এলো। নাটক মানে তো আর সাজুগুজু করে মঞ্চে উঠে সংলাপ বলা নয়। নাটকের পিছনে যে অনেক কাজ। মঞ্চ বানানো তো আর ঐ অভিনেতার কব্জায় নেই। ওগুলো বানাত হাবিব, অশোক, কিরীটী সহ আর বেশ কিছু নাট্যকর্মী ।

কিরীটীর ঢোল বাজানো জামিল ভাইয়ের চোখে পড়ল। আর সেই থেকে শুরু হল আমাদের বিষাদ সিন্ধু নাটকের ঢোলক এর কাজ করা। ও তখন চারুকলায় পড়ে। প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের তরুণ। একদিন রাতে রিহার্সালের পর ও আবদার তুলল।

‘মার্টিনদা, মৌসুমি আপা, আজকে আপনাদের বাসায় থাকব’।

‘বেশ ভাল। চলে আস’। আমি মনে মনে ভাবি – ‘আজকে মনে হয় আড্ডা মারার আর কোন বন্ধু নেই, তাই আমাদের ঘাড় মটকালো’।

মৌসুমি তাড়া দেয়, ‘তাড়াতাড়ি বাড়ি চলো। ওর জন্য রান্না করব’।

আমি আরও ঢিলা তালে মোটর সাইকেল চালাই, ‘ দূর, বাদ দাও। ও আসবে না। একটু পড়ে কোন বন্ধু মিলে যাবে তারপর আমাদের বাড়িতে আসার কথা ভুলে যাবে’।

মৌসুমি ধারনা কিরীটী অবশ্যই আসবে। কেবল ওর হাতের রান্না খেতেই আসবে।

কি আর করা? আমরা বাড়িতে ফিরলাম রাত দশটায়। আর এগারটায় আমাদের কলিং বেল বেজে উঠলো। কিরীটী মশাই উপস্থিত।

‘মার্টিন দা, একটু দেরী হয়ে গেল। হলে পেন্সিল আর তুলি আনতে গেছিলাম। আজকে রাতে আপনাদের দুজনের ছবি আঁকব’।

‘তুমি ছবি আঁকলে – ওটা দেখে বুঝা যাবে যে ওগুলো আমাদের ছবি’?

‘পাত্তা দিলেন না? আগে দুইজনে বসেন’।

ও ঠিকই ব্যাগ থেকে, ক্রেয়ন পেন্সিল বের করল। কাগজ মেলে ধরল। তারপর মিলিটারির আদেশ দিল, ‘এইখানে দুইজনে চুপ কইরা বসেন’।

আমার তো বেশ লাগলো। আমি কালো বলে এ জীবনে কেউ আমাকে মডেল বানাল না। স্রেফ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলবে – তাতে ও মানুষের কত কৃপণতা। আর কিরীটী কিনা ক্রেয়ন দিয়ে আমার ছবি আঁকবে?

আমি ওকে বললাম, ‘শোন, আমার একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি আছে। সেইটা দেই – তুমি সারা রাত ধরে ছবি আঁক’।

কিরীটীর মনে হয় এবার গোস্বা হল, ‘ঠিক আছে, আপনি বাদ। মৌসুমি আপার ছবি আঁকব’।

মৌসুমি রাজি হোল। কিন্তু শর্ত দিল, ‘দশ মিনিট পর পর আমাকে উঠতে দিতে হবে’। কিরীটী তাতেই রাজি।

সেই আনন্দেই কিরীটী আবার আমাকে সুযোগ দিল। আমি আর এবার কথা না বাড়িয়ে সুবোধ ছেলের মত বসে রইলাম। মৌসুমি নড়াচড়া করলেও আমি স্থির –মূর্তি হয়ে রইলাম।

আমার ছোটবেলায়, পায়ে হেটে প্রতিদিন একটা ছবির দোকানের পাশ দিয়ে হেটে স্কুলে যেতাম। ওখানে একজন শিল্পী পেন্সিল দিয়ে মৃত মানুষের ছবি স্কেচ করত। সব বুড়োদের ছবি। পুরানো, ভাজ খাওয়া, বিবর্ণ সাদাকালো ছবি গুলো বড় করে এঁকে ফ্রেমে বাঁধিয়ে দোকানে সাজিয়ে রাখতো। আমি কতদিন ঐ দোকানের সামনে দাড়িয়ে ঐ লোকের জাদুর হাতের কারসাজি চুরি করে শিখতে চেয়েছি ! সব কাজ কি সবাইকে দিয়ে হয় ?

আমি আজ ও ভাবলাম, কিরীটী ঐ রকম করে আমার ছবি আঁকবে। হঠাৎ মনে হোল, ‘মরে টরে যাব না তো? নতুবা কথা নেই, বার্তা নেই, কিরীটী কেন আমার ছবি আঁকবে’?

কাউকে আর কিছু বুঝতে দিলাম না।

কিছুক্ষণ পর পর জিজ্ঞেস করি, ‘এখন কি আঁকছ? নাক নাকি চোখ? আমাকে চেনা যায়’?

কিরীটী হাসে, ‘কাজটা শেষ হোক’। ততক্ষণে মৌসুমি আমার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ওকে জাগাতে চাইলাম। কিরীটী জাগাতে দিল না।

‘তুমি কি ওর ঘুমিয়ে থাকার ছবি আঁকবে’? কিরীটী আবার হাসে।

‘মৌসুমি আপার ছবি শেষ। উনি ঘুমাতে পারে। এখন আপনাকে আঁকছি’।

‘মানে ? এই দেড় ঘণ্টা আমি পাথরের মত বসে রইলাম কেন’?

‘একটু প্র্যাকটিস করলেন। এখন আর নড়বেন না । এখন আমি আপনাকে আঁকছি’।

আমি ঘড়ির কাঁটায় দেখি রাত দেড় টা ।

কিরীটী রাত ভোর করে ছবি আঁকলো। কিন্তু আমাকে দেখতে দিল না।

‘দুইজনে একসাথে দেখবেন। এখন ঘুমাতে যান’।

পরের দিন সবাই বেশ দেরী করে উঠলাম। নাস্তা করলাম। আমার তো মন উশখুশ করছে। ছবিটা কি আমার ? আমাকে কি ঠিকই চেনা যাবে?

কিরীটী ক্রেয়নে করা আমাদের দুজনের ছবি দেখাল।

ওমা !! এটা তো সত্যি সত্যি আমার ছবি !

আমি মৌসুমিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কি দেখতে এমন’?

মৌসুমি ও কম যায় না, ‘না । ছবিটা তোমার মত হয়নি। আমার আগের জামাইয়ের মত হয়েছে’।

কিরীটীর চোখে কেমন জানি অতৃপ্তি ।

‘নাহ, মন ভইরা আঁকতে পারি নাই। মার্টিন দা, আপনার চেহারায় ব্রাউন কালারের দারুণ মজার শেড আছে। ক্রেয়ন দিয়ে ওটা আঁকা যায় না। দরকার হইল রঙ আর পানি’।

আমি ওর ইঙ্গিত টি বুঝতে পারলাম না ।

আমি দিনের আলোতে আপনাদের একটা জলরঙের পোর্টট্রেট করব’।

‘মানে আবার ও বসে থাকতে হবে’?

‘এইবার বেশি কষ্ট হবে না। আপনাদের দুইজনকেই নড়াচড়া করতে দিব’।

কিরীটী দুপুর বেলা কাজ শুরুই করল। একবার আমি বসি। কিছুক্ষণ পর আবার মৌসুমি বসে। বিশ মিনিট পর আবার আমাদের দুজনকে বসায়।

আমি অবাক হয়ে দেখলাম, ও পেন্সিল ছুঁয়ে ও দেখল না। কেবল আমাদের দিকে তাকিয়ে আমাদের গায়ের রঙ্গের সাথে মিলিয়ে রঙ বানাল, আর কি সাহস নিয়ে ওর ক্যানভাসে ছবি আকলো।

আমার সারাক্ষণ মনে পড়ছিল স্কুলে যাবার পথে সেই শিল্পীর কথা। বেচারা কত কষ্ট করেই না কাগজে পেন্সিল দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে, মেপে মেপে ঐ মুখগুলো আঁকত। আর কিরীটী তো দেখি একেবারে রঙ দিয়ে আঁকা শুরু করলো।

আমি ওকে আবার জিজ্ঞেস করি, ‘ভুল হলে রং উঠাবা কি করে? রং উঠানোর তো আর রাবার নাই’।

কিরীটী আমার কথা শুনে হো হো করে হাসে। ‘আপনি এমন দুষ্টামি করলেই ভুল হবে। চুপ করে বসেন তো’?

আমি আর মৌসুমি চুপ করে বসে রইলাম। আমাদের বেশ ভালই লাগছিল।

ছবি আঁকতে নাকি দুজনে গা ঘেঁষে বিড়ালের মত বসে থাকতে ?


পুনশ্চ: আজ কিরীটী রঞ্জন বিশ্বাসের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমী।
ওর এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করেছি।

কিরীটী, তোমার জন্য আমাদের অনেক আদর, ভালবাসা, অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা।

তুমি জেনো, তোমার ঐ প্রদর্শনীতে আমার আর মৌসুমির মনটা ঘুরবে আর দেখবে তোমার নিখাদ তুলির স্পর্শ।

আমি আবারও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করব, ‘ভুল হলে রং উঠাবা কেমন করে? রং উঠানোর তো রাবার নেই’।

আমি নিশ্চিত তুমি এবারও মিষ্টি করে হাসবে আর বলবে, ‘আমি চোখ বন্ধ করেও বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে পারি। আমার কোন রাবার লাগে না। কারণ আমি বাঙ্গালী’।



জন মার্টিন, সিডনি , অগাস্ট, ২০১৫







Share on Facebook               Home Page             Published on: 24-Aug-2015

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far