bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন





ড. জাফর ইকবাল এবং ড. ইয়াসমিন হক সিডনি এসেছেন।
আমি সেই ছোট বেলা ড. জাফর ইকবালের গল্প পড়েছি। পড়তে পড়তে বড় হয়েছি । আর এখন উনার লেখা কোথাও ছাপা হলে একদমে পড়ে ফেলি। সেদিন কে যেন বলছিল যে পত্রিকায় উনার লেখা ছাপা হলে, সকালের নাস্তার আগে উনার লেখাটি খেয়ে নিত। আমিও সেই দলে ছিলাম।
এই মানুষটি স্বপ্ন দেখান। আমি বলি উনারা স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। দিনভর স্বপ্ন ফেরী করে বেড়ান। আমরা সেই স্বপ্নে ডুবে থেকে বড় হয়েছি। তারপর উনার কত গল্প শুনেছি। উনি আমেরিকা ছেড়েছেন, সব গুটিয়ে দেশে চলে এসেছেন, সিলেটে গিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেছেন – এমন আরো কত গল্প! সিডনিতে সেই মানুষটির কথা শুনার জন্য আমিও ছুটে গেলাম।
আমি দূর থেকে দুজনকে দেখলাম। কাছে যাবার প্রচণ্ড ইচ্ছে হোল। কিন্তু কাছে যাব কি ভাবে? সবাই তো দুজনকে ঘিরে রেখেছে।
দূর থেকে একটি অনুরোধ পাঠালাম। অনুরোধটি এই রকম, ‘আমি বড় হয়েছি উনার গল্প পড়ে। এবার আমাদের গল্প উনাকে বলতে চাই। উনি কি শুনবেন’?
একজন বললেন, ‘পাঁচ মিনিট সময় দিতে পারব’।
আমি আকুতি-মিনতি করি, ‘উনাকে একটু বলে দেখুন না? উনি যদি একটু বেশী সময় দেয়?’
আবার পাল্টা উত্তর, ‘নারে ভাই। উনি অনেক ব্যস্ত । অনেকগুলো প্রোগ্রাম। আপনাকে খুব বেশী হলে দশ মিনিট সময় দিতে পারি’ ।
একজন বললেন, ‘অনুষ্ঠানের সময় দেখা করবেন। আমি উনার সাথে কথা বলিয়ে দিব’।
অনুষ্ঠান শুরু হোল। সবাই ব্যস্ত। কে আমাকে উনাদের কাছে নিয়ে যাবে? কাউকে তেমন চিনি না। আমার কথা বলার সুযোগ নেই । ভাবলাম অনুষ্ঠানে নিশ্চয় প্রশ্ন করার সুযোগ থাকবে। ড. জাফর ইকবালকে সরাসরি অনুরোধটি করে ফেলব। হাত তোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কারো চোখে পড়লাম না। নাগরিক সন্ধ্যায় চুপ করে উনাদের কথা শুনলাম। কি চমৎকার কথার যুগলবন্দী! আমার আর প্রশ্ন করা হোল না। মানুষের তো কত ইচ্ছে থাকে। আমারও যে তেমন একটি ইচ্ছে হয়েছে। ড. জাফর ইকবালকে আমাদের গল্প বলবই বলব ।
হঠাৎ করেই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনের সাথে পরিচয় হোল। ভারী বিনয়ী ছেলে। কি ভাগ্য, ছেলেটি আমাকে আগেই চিনতো। আমার আর ভূমিকার প্রয়োজন হোল না। জাফর স্যারকে আমার গল্প শুনানোর ইচ্ছেটি সুদানকে বললাম। কোন ভণিতা না করেই ও বলল, ‘কালকের মধ্যে আপনাকে জানাব’।
ছেলেটি কথা রেখেছিল। পরেরদিন সকালে বলল, ‘স্যার আপনাদের গল্প শুনবে। আপনাকে পাক্কা এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট সময় দিবে’।
আমার বিশ্বাস হয়নি। আমি তো শুধু নব্বই সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাঠিয়েছিলাম। আর বলেছিলাম যে আমাদের গল্প বলার জন্য দরকার এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট। উনি কি ওটা দেখেই আমাকে এই লম্বা সময় দিলেন?
আমরা প্রস্তুত হলাম এবং ড. জাফর ইকবাল ঘড়ি ধরে ঠিক এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট আমাদের গল্প শুনলেন। একটি কথাও বললেন না। অন্ধকারে ড. ইয়াসমিন কে নিয়ে পিন পতন নিস্তব্ধতায় আমাদের নাটক দেখলেন। উনাদের পাশে বসেছিলেন যারা তারা বললেন, ‘অন্ধকারে ড. জাফর ইকবাল আর ড. ইয়াসমিন হোক চোখ মোছার জন্য টিসু পেপার খুঁজছিলেন’। আমরা নাটক শেষে দুজনকে মঞ্চে তুলে নিলাম। ড. ইয়াসমিন এবং ড. জাফর ইকবালের চোখ তখনও ভিজে আছে। ড. ইয়াসমিন বললেন উনারা দুজন অন্ধকারে কেবল চোখ মুছেছেন। বার বার মনে হয়েছে নাটকের গল্পগুলো তাদের নিজেদের ঘটনা। বললেন অসাধারণ অভিনয় আর গল্পের আর নাটকের কথা। গভীর ভালবাসা নিয়ে বললেন, ‘একটি ফ্ল লেস নাটক’।
আমি তখনও অপেক্ষা করছি ড. জাফর ইকবালের কথা শুনার জন্য । উনি আবারও স্বপ্নের কথা বললেন। বললেন যে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার হয়েছে। আমাদের অনেক কিছু হয়নি কিন্তু আবার অনেক কিছু হয়েছে। আমরা একটু একটু করে সঠিক পথে হাঁটছি । আর মৌসুমিকে ধরে বললেন, ‘উই আর নট লিভিং ইউ এলোন’।
আমার মন বলছিল উনি এমন কথাই বলবেন। ড. জাফর হাল ছেড়ে দেবার মানুষ নয়।
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এই দুজন মানুষকে যে আমাদের কত কিছু বলার ছিল। আলাপনের সবার মনে হয়েছে- উনি আমাদের কথা শুনতে এসেছেন। আমাদের রাগ, অভিমান আর কষ্টের কথা প্রিয় মানুষকেই তো বলা যায়। একঘণ্টা পাঁচ মিনিট আমাদের গল্প বলেও মনে হোল কত কিছু বলা হয়নি। উনি আমাকে ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা এতো সুন্দর করে প্রবাসেও যে নাটক করো – আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। এখানকার দর্শক কি দাওয়াত বাদ দিয়ে নাটক দেখতে আসে?’
আমি মুচকি হেসে বললাম, ‘কোলেস্টেরোল আমাদের বড় শত্রু ’।
উনারা দুজন মুচকি হাসলেন। ড. জাফর ইকবালের সাথে আমার অনেক মিল। উনি যে দেশে জন্মেছেন, আমিও সেই দেশে জন্মেছি। উনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন। আমিও মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। উনি বলেছেন যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছে তাদের জিন, ক্রোমোজোম বদলে গ্যাছে। তারা সবকিছুতেই মুক্তিযুদ্ধ খুঁজে ফিরে’।
অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের নাটক করেন কেন?’ ড. জাফর ইকবাল আমার জন্য একটি ভাল উত্তর রেখে গেলেন। আমি নির্দ্বিধায় বলব,‘আমার জিন, ক্রোমোজোমও বদলে গ্যাছে’।
আমাদের দুই অতিথি সিডনি’র দুই মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান তরুণ আর এনায়েতুর রহিম বেলাল এর হাতে তুলে দিলেন ‘লিভ মি এলোন’ নাটকের পোস্টার। ড. জাফর ইকবাল সবাইকে অটোগ্রাফ দেন। এবার আমাদের আলাপনের সকল কর্মী অটোগ্রাফ দিয়ে ড. জাফর ইকবালকে নাটকের পোস্টার উপহার দিল। উনি হেসে বললেন, ‘ভাল করেছ’।
এই আমাদের সহজ সরল লেখক। যার লেখা পড়ে আমরা স্বপ্নে ডুব দিয়েছিলাম সেই কৈশোরে। নাটক শেষে বাড়ি ফেরার পথে মৌসুমি বলছিল, ‘কখনো কি ভেবেছি – যার লেখা পড়ে বড় হয়েছি সেই মানুষটি আমার নাটক দেখতে আসবে? আমাকে বলবে উই আর নট লিভিং ইউ এলোন’।
পরের দিন সকালে আকাশে ভারী মেঘ জমল। আমার মনে হোল দেশের জন্য জমে থাকা আমাদের অনেক কথা ঐ মেঘে জায়গা করে নিয়েছে। এতো ভারী আর গভীর ভালবাসা কি মেঘ ধরে রাখতে পারে? মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হোল । সেই বৃষ্টির ফোঁটা ড. জাফর ইকবাল এবং ড. ইয়াসমিন হকের গাঁ ভিজিয়েছে। উনারা বৃষ্টিতে ভিজে সিডনি ছাড়লেন। কিন্তু নিশ্চিত জানি আমাদের এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিটের গল্প উনাদের মন এবং চোখ ভিজিয়েছে। এই সিডনির বাতাস কানে কানে বলেছে, ‘প্রবাসী বাঙ্গালীরা হারিয়ে যায়নি। কারণ ওরা রাজাকারের নয়, বরং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরি’।




জন মার্টিন, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 5-May-2019

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot