bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন






‘আমার হাতে আট সপ্তাহ আছে’?
'আমার হিসাব তো তাই বলে। 'ডাক্তার মুচকি হেসে ছেলেটিকে আস্বস্ত করে।
‘আমি কিন্তু লেবার রুমে থাকবো’।
এবার ডাক্তার চোখ তুলে তাকায়। ‘আমাদের এখানে যে সেই ব্যবস্থা নেই। আপনি তো ওখানে যেতে পারবেন না।’
ছেলেটি জোড় দিয়ে বলে, ’আমি থাকলে আপনাদেরই বেশি সুবিধা হবে। ও খুব রিলাক্স থাকবে।'
ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লেখে, ’ওখানে তো শুধু আপনার বৌ একা থাকবে না। পাশে আরো অনেক মহিলা থাকবে।'
ছেলেটি নিরুপায় হয়ে জিজ্ঞেস করে, ’কোনো ভাবেই আমাকে রাখা যাবে না?’
‘ঠিক আছে আপনি বিদেশ ঘুরে আসুন। তারপর দেখা যাবে।‘
‘আমার তো মেয়েই হবে। তাইনা?’
ডাক্তার হেসে বলে, ’কেন? শপিং শুরু করবেন?’
ছেলেটি মাথা নাড়ে। মেয়েটি লজ্জায় কথা বলে না। ভাবে, ’পাগল নাকি?’

দুজনে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কত কথা! মেয়েটি বলে, ’তুমি কিন্তু আমাকে প্রতিদিন ফোন দিবে। আর চিঠি লিখবে প্রতিদিন।' ছেলেটি ভাবে, ’এবার বিদেশ যাওয়াটি বাদ দিলে কেমন হয়?' মেয়েটি চমকে উঠে, ’বল কি? তোমার পেপার প্রেজেন্টেশন? ওটা তুমি করবে না তো কে করবে?'
ছেলেটি ভাবে, ’তিন সপ্তাহ শ্রীলংকা আর এক সপ্তাহ থাইল্যান্ড। ডাক্তার তো বলল আট সপ্তাহ হাতে আছে।'
মেয়েটি আরো সাহস দেয়, ’তুমি নিশ্চিন্তে যাও। আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।’

ছেলেটি বিদেশে বসে দিন গুনে। পকেটে কয়েন জমিয়ে রাখে। রাস্তায় বেরুলে টেলিফোন বুথ খুঁজে ফিরে। দুই মাসের কাজ তিন সপ্তাহে শেষ করে রঙিন জামা কিনতে বের হয়। মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে, ’কি কিনবো?’
মেয়েটি হাসে, ’ব্যাঙের মাথা।’
ছেলেটি ব্যাগ ভর্তি ব্যাঙের মাথা কিনে থাইল্যান্ডে উড়াল দেয়। আর মাত্র সাত দিন। ছেলেটি ভাবে দিন শেষ হয় না কেন? মেয়েটি ও ভাবে দিন এতো বড় কেন?
ছেলেটি পেপার প্রেজেন্টেশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর ডাক্তারের কথা না মেনে সেই ছোট্ট বাচ্চাটি চার সপ্তাহ আগেই মা'র কোলে বসে জিজ্ঞেস করে, ’বাবা নাকি আমার জন্য ব্যাঙের মাথা কিনতে গিয়েছে?’
মেয়েটি বলে, ’হ্যাঁরে বাবা।'
ছেলেটি জিজ্ঞেস করে, ’সত্যি? ছেলে? আমি তো মেয়েদের জামা কিনেছি।’
মেয়েটি বলে, ’কি আর করবো? ওকে মেয়েদের জামাই পরাবো।’
ছেলেটি কনফারেন্স বাদ দিয়ে সেই যে প্লেনে উঠার জন্য হোটেলের রিসেপশানে দাঁড়িয়ে রইলো, কেউ ওকে আটকাতে পারলো না। ওরা বলে, ’সাতদিন আগে কোন টিকেট নেই। ছেলেটি ততই ব্যস্ত হয়ে বলে, ’আমি আজই ঢাকা যাব’।
ছেলেটি সারারাত জেগে থাকে। পাছে প্লেনে উঠতে দেরী হয়ে যায়।
রাতে অপরিচিত একজন মহিলা একগাদা ফুল নিয়ে ছেলেটির দরজায় টোকা দেয়। ছেলেটি মহিলাকে চেনে। আজ কনফারেন্স এ সবার সামনে বক্তৃতা দিয়েছে। ও শরীরে এইডস নিয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করছে। ফুলের তোড়াটি দিয়ে ছেলেটিকে বলল, ’আমি বেশী দিন বাঁচব না। কিন্তু তোমার বাচ্চা বেঁচে থাক অনেক দিন। কংগ্রাচুলেশনস’। ছেলেটি অবাক হয়ে মহিলার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ছেলেটি যখন এয়ারপোর্টে এলো – তখনও সবার চোখে ঘুম। ঘুম নেই কেবল ছেলেটির চোখে।
ক্লাসে প্রথম হয়নি – কিন্তু আজকে প্লেনে সবার আগে উঠার পরীক্ষায় ছেলেটি প্রথম। পাসপোর্ট আর ডলার এর ব্যাগ কাউন্টারে ফেলে দিব্যি দিল ছুট। এয়ারপোর্ট জুড়ে ছেলেটির নাম ডাকা শুরু হোল। ছেলেটি ভাবে, ’ওরা জানল কি করে যে আমি বাবা হয়েছি’?

বাবার এই গল্প ছেলেটি কত বার শুনেছে!
সেই বাবা আর মা'র ছেলেটি এবার ২০শে পা দিয়েছে। বড় হয়েছে। বিদেশ যাবে। নতুন মানুষ দেখবে। বাবা বলে, ’কোথায় যাবি?'
‘থাইল্যান্ড’।
‘ওখানে কেন’?
‘ভারী সুন্দর দেশ। আর একটি স্পেশাল জায়গায় যাবো’।
‘কোথায়’? বাবা জিজ্ঞেস করে।
‘এখন বলবো না। আগে ঘুরে আসি’। ছেলের চোখে মুচকি হাসি।

বাবা-মা ছেলের বাক্স গুছিয়ে দেয়। মা'র কত ইন্সট্রাকশন। কি কি খাবে, কাপড় কি ভাবে গুছিয়ে রাখবে? মা ছেলেকে মনে করিয়ে দেয়, ’তোমার বাবা কিন্তু এয়ারপোর্টে পাসপোর্ট আর ডলার রেখেই চলে আসছিলো। তুমি আবার বাবার মতো করো না।’
ছেলে হাসে। মা জানে ছেলেটি বড় হয়েছে।

একদিন সকাল বেলা থাইল্যান্ড থেকে ছেলে ফোন দেয়, ‘বাবা তুমি কোথায় যেন পেপার প্রেজেন্ট করেছিলে?'
-চিয়ান মাই। কেন?
-তুমি হোটেলের নামটি আমাকে টেক্সট করে দাও দেখি।
বাবা ২০ বছরের পুরানো কাগজ ঘেঁটে হোটেলের নাম বের করে। ছেলেকে টেক্সট করে। তারপর সাত দিন কেটে যায়। ছেলে মাকে কত ছবি পাঠায়। কোথায় কোথায় গেলো। কি কি খেলো। মা শুধু ভাবে ছেলের শরীর ঠিক আছে তো?

একদিন রাতে ছেলে বাবাকে ম্যাসেজ পাঠায়। ‘লগ ইন টু ফেসবুক।'
বাবা তড়িঘড়ি করে ফেসবুকে যায়। ছেলে একটি হোটেলের ছবি পাঠায়। নিচে লেখা, ’ইজ দিস ইওর হোটেল?'
বাবা চমকে উঠে। বিশ বছরেও সেই হোটেলের স্মৃতি হারিয়ে যায়নি। লাল ইটের এক বিশাল হোটেল। বাবা ছেলেকে লিখলো, ’হ্যাঁরে বাবা। এই সেই হোটেল। এবার হোটেলের ভিতরে যাও।’
ছেলেটি হোটেলের ভিতরে গিয়ে ক্লিক ক্লিক করে ছবি তুলে পাঠালো। বাবা পরিষ্কার দেখে বিশ বছরে তেমন কিছু বদলায়নি। বাবা তাড়াতাড়ি লেখে, ’ডান দিকে তাকাও। ওখানে রিসেপশন। বিশ বছর আগে ওই রিসেপশন এর সামনে একজন বাবা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়েছিল। এক ইঞ্চিও নড়েনি। শুধু একটি রিটার্ন টিকেট এর জন্য।'
ছেলেটি রিসেপশন এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে। ক্লিক ক্লিক।
বাবা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে ছবিগুলো। চোখ আবছা হয়ে যায়। স্মৃতি নাকি জল? বাবা টের পায় না।
বাবা দেখে, বিশ বছর আগে এক তরুণ লাগেজ নিয়ে একইভাবে ঐখানে দাঁড়িয়ে আছে। কত মানুষ তাকে সরে যেতে বলছে। কিন্তু সেই তরুণ নড়ছে না।
ছেলেটিও রিসেপশন এর সামনে গিয়ে একইভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলে।
বাবা আবার লেখে, ‘এবার হাতের বাম দিকে তাকিয়ে দেখো। ওখানে ফয়ার। ওখানে দাঁড়িয়ে একবার চোখ বন্ধ কর। নিঃশ্বাস নাও। দেখো একজন বাবা কি ভাবে ঢাক-ঢোল পিটাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই মানুষটির আগে পৃথিবীতে আর কেউ বাবা হয়নি। সেই বাবার হৃৎপিণ্ডের কম্পন, বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস - টের পাও? ওই হোটেলের দেয়ালগুলোকে জিজ্ঞেস কর, ওই ফয়ারের বাতাসকে জিজ্ঞেস করো। ওরা সেই বাবার কথা এখনো মনে রেখেছে। একজন বাবা জগতের সকল আনন্দ দুহাতে সবার মাঝে বিলিয়েছে। এইখানে। যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে আছো। আর সেই আনন্দের কারণ ছিল - তুমি। আমি তখনও তোমাকে দেখিনি। কিন্তু বিশ বছর আগে তুমি এখানেই আমার সাথে ছিলে। আমার বুকের ভিতর। এইবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নাও। দেখ আমি বসে আছি তোমার বুকের ভিতর।'
ছেলেটি লেখে, ’ইট ইজ এ ম্যাগনিফিসেন্ট মোমেন্ট।'
বাবা আবার লেখে, ’পিছনে তাকাও। ওখানে একটি গ্লাসের এলিভেটর আছে। ওটা দিয়ে তিন তলায় যাও। ওখানে আছে একটি বড় কনফারেন্স রুম। তুমি যখন মায়ের কোলে এলে, ঠিক তখন এই রুমে আমি পেপার প্রেজেন্ট করছিলাম। আর দরজার বাইরে দেখো একটি কয়েন বক্স। ওটা দিয়ে ঢাকায় ফোন করে জেনেছিলাম তোমার জন্মের কথা।’
ছেলেটি ম্যাসেজ করে, ’বাবা, কয়েন বাক্সটি আর নেই। বাট আই ক্যান ফিল। ইট ফিলস সো রিয়েল।’
বাবা লেখে, ’দিস ইজ এ সার্কেল অফ লাইফ। এ ম্যাজিক অফ লাইফ।’
ছেলেটি লেখে, ’বাই দ্যা ওয়ে, আই হ্যাভ লস্ট মাই ওয়ালেট’।
বাবা হাসে আর টাইপ করে, ’আই এম নট সারপ্রাইসড!’
ছেলেটি লেখে, ’বাবা, তোমার সব মনে আছে?’
'হ্যাঁরে বাচ্চা। আমার সব মনে আছে। আমাকে দেখে তোমার প্রথম হাসি, আমার কোল ভিজিয়ে দেবার ক্ষণ, আমার ঘাড়ে তোমার প্রথম দাঁতের কামড়। তোমার হাসি, তোমার কান্না, তোমার বেড়ে উঠা …… সব- সব মনে আছে।'
ছেলে আবার লেখে, ’বাবা, তুমি একটা পাগল।’
'হ্যাঁরে বাবা। জগতের সব বাবাই এমন পাগল।'
ছেলেটি এবার লেখে,’ আই লাভ ইউ বাবা।’
বাবা ভাবে জগতের এ এক আশ্চর্য খেলা। এক অদ্ভুত ক্ষণ। বুকের গভীরে লুকিয়ে থাকা ভালবাসাগুলো উথলে পড়ে আর বাবা নামের এক মানুষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,’ আহারে … আহারে জীবন আমার’।

ছেলেটির নাম ঋভু। আর বাবাটির নাম “বাবা”।



জন মার্টিন, সিডনি, জুন, ২০১৭





Share on Facebook               Home Page             Published on: 18-Jun-2017

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far