bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



আগের অংশ
- ২য় অংশ -



আমি বাবা হয়েছি। বাচ্চা দুটা না হলে জানতামই না এই দুজনের জন্য আমার এতো ভালবাসা জমে আছে। আমার বাবার ভালবাসার রঙ কি এই আমার মতই ছিল? আমি যেমন ঋভু আর ঋষিতাকে আগলে রাখি, আমার বাবাও তার তেরজন ছেলেমেয়েকে এই ভাবেই আগলে রাখতেন। আমরা তেরজনই তার প্রিয় ছিলাম। আমার বাচ্চা দুটার অসুখ হলে আমি যেমন ছটফট করি – বাবাও হয়তো আমাদের জন্য তেমন করত।

আমরা এক এক করে দেশ ছেড়ে চলে এলাম- বাবা বেঁচে থাকলে আমাদের আসতে দিতেন? হয়তো বাবা আমাদের জন্য কাঁদতেন। খুব ভালো লাগে এই ভেবে – আমার চলে আসার কথা ভেবে বাবা হয়তো কাঁদতেন। যেমন আমি কাঁদি আমার ছেলের জন্য। ছেলে আমার পড়াশুনার জন্য সপ্তাহে পাঁচ দিন আমাদের কাছ থেকে দু ঘণ্টার দূরের বাড়িতে থাকে। তারপর ও মনে হয় প্রতিদিন ওকে দেখে আসি। আমার মত বড়দা, মেজদা,বড়দি, ছোড়দা, নেভেলদা, ছবিও হয়তো কাঁদে তাদের ছেলে-মেয়ের জন্য। কিন্তু কাউকে বলে না।

বাবা হচ্ছে ছায়া। বটগাছের ছায়া। ঝড়, বৃষ্টি, ভূমিকম্প, আগুন – কোন কিছুই বাবাদের আটকায় না। আমার খুব ইচ্ছে করে সেই ছায়ার নীচে বসে থেকে সবাইকে বলি, ‘আমি কিছু জানি না। আমার বাবাকে জিজ্ঞেস কর। উনি সব ঠিক করে দিবেন’।

কিন্তু আমাদের বাবা নেই। আমাদের মাথার উপরে সেই ছায়াটি নেই।

সেই আস্থা, সেই ভালবাসার, সেই বিশ্বাসের মানুষটি আমাদের কাছে নেই।

অনাথ মানে একা হয়ে যাওয়া।
অনাথ মানে ছায়াহীন দিন কাটানো।
অনাথ মানে একা একা কাঁদা।
অনাথ শব্দের অর্থ অনেক পড়ে বুঝলাম।

এবার বাবা দিবসের গল্প বলি।

উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট একজন সৈনিক। থাকতো ওয়াশিংটনে। সেই ১৮৬৩ সনে যুদ্ধ শেষে সংসার পাতলো। ওদের ঘরে পাঁচজন বাচ্চা এলো। তারা বেশ খুশী। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা মনে হয় খুশী হলেন না। উইলিয়াম এর বউ এলিজাবেথ হ্যারিস মারা গেল। এই ছোট বাচ্চা নিয়ে উইলিয়াম কি করবে? উইলিয়াম এবার এলিন ভিক্টোরিয়াকে বিয়ে করলো। এলিনও উলিয়ামের মত তিন বাচ্চা নিয়ে নিয়ে একা একা ঘর করছিল। দুজনের বেশ মিল হোল। ওরা আবার সংসার করল। ওদের কোলে আবার এলো আরও পাঁচটি মিষ্টি বাচ্চা। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা এবার ও হিংসা করল। ছয় নম্বর বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে এলিন মারা গেলো। উইলিয়াম চোখে অন্ধকার দেখলো। এর মধ্যে উইলিয়ামের বিধবা বোনের ছেলের দায়িত্ব তার উপর পড়ল। কি করবে? কতজন বললো, ‘আরেকটা বিয়ে করে নাও’। কিন্তু উইলিয়াম এর মন সায় দিল না। তার হাতে তখন নবজাত শিশু থেকে ১৯ বছরের ছেলে সহ ৯ জনের দায়িত্ব। নিজে পণ করল, ছেলেমেয়েকে নিজেই দেখাশোনা করবে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ির কাছে শ্রমিকের কাজ নিল। কিন্তু ছেলে-মেয়ে বড় করা তো চাট্টি খানি কথা নয়। বাবার এই দুর্গতি দেখে উইলিয়ামের মেয়ে সেনোরা সব বাদ দিয়ে বাবাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল। পরম যত্নে ভাই বোনকে বড় করতে লাগলো।

বাবা সারাদিন কাজ করে। এতগুলো ছেলেমেয়ের মুখে খাবার তো তুলে দিতে হবে? ওদের স্কুল আছে, স্কুলে খরচ আছে, অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আর এগুলো তো বিনা পয়সায় হবে না। অতএব কাজ না করে উপায় কি ?

বাবা দিন রাত কাজ করে। ছেলেমেয়ে গুলো বাবার জন্য অপেক্ষা করে। ভাবে বাবা একদিন কম কাজ করলে কি হয়? বাবা ভাবে একদিন কম কাজ করলে আমার কোন বাচ্চাটির ভাগে কম খাবার পড়বে ?

একদিন বাবা কাজ থেকে সময় মত বাড়ি ফিরল না। তার বাচ্চারা ভারী রাগ করল। তার মেয়ে সেনোরা খুব বিরক্ত হয়ে বাবার কাজের জায়গায় গেলো। বাবাকে আজকে আচ্ছা করে বকা দিবে। গায়ে খাটা শ্রমিকের মাঝ থেকে সেনোরা বাবাকে খুঁজে বেড় করল। বাবাকে দেখে ও আরো রেগে গেলো। বাবার কি আক্কেল-জ্ঞান হবে না?

সেনোরা গট গট করে বাবার কাছে হেঁটে গেলো। জোড়ে একটা ধমক দিল।

‘বাবা তুমি কি একটা বাচ্চা? দু পায়ে দুই রঙের মোজা পড়ে কাজে এসেছ’?

বাবা বলল, ‘আমি তো সাদা মোজাই পড়ে বেড়িয়েছিলাম’।

সেনোরা আরও রেগে গেলো,’ তাহলে একটা সাদা আর একটা লাল হোল কি করে’?

বাবা তাকিয়ে দেখে তার দু পায়ে দুই রঙের মোজা। বাবা নিজেও অবাক হয়। সকালে তো দুটা মোজাই সাদা ছিল।

হঠাৎ সেনোরা দেখল বাবার ডান পায়ের মোজাটি ভিজা। সেনোরা আরও কাছে গিয়ে দেখল, বাবার ডান পায়ের মোজাটি রক্তে লাল হয়ে আছে। বাবা কাজ করতে গিয়ে কখন যে নিজের পা কেটে ফেলেছে – তা খেয়াল করেনি।

সেনোরা কঠিন গলায় বাবাকে বলে, ‘তুমি কি জানো তোমার পা কেটে গেছে’?

বাবা অসহায়ের মত বলল, ‘হ্যাঁ জানি। কিন্তু কাজ ছেড়ে গেলে ওরা আমাকে পয়সা দিবে না’।

সেনোরার গলা ধরে গেলো। ও অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। কি বলবে? বাবা একটা বোকা? বাবা একটা পাগল? বাবা একটা অকর্মণ্য?

সেনোরা হু হু করে কেঁদে উঠল। বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।

‘বাবা, আমাকে ক্ষমা কর। তোমাকে কখনই আমরা প্রশংসা করিনি। কখনই বুঝতে চাইনি আমাদের জন্য তোমার ভালবাসার কথা’।

সেনোরা ডড ১৯০৯ সনে আমেরিকায় বাবা দিবসের শুরু করেন। মানুষ আদর করে তাকে ‘বাবা দিবসের মা’ বলে ডাকে।

এই গল্পটি কেবল উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট এর গল্প নয়। এটা আমার বাবার গল্প। আমার বাবা আর মায়ের আলাদা কোন জীবন ছিল না। আমাদের তেরজনকে বড় করে তোলাই ছিল তাদের জীবনের একমাত্র কাজ। আর এই কাজটির জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ বলার সুযোগটি হয়নি কখনও।

আমি জানি এই গল্প আপনার বাবার গল্পের মত। যাদের এখনও ধন্যবাদ বলার সুযোগটি রয়েছে, তারা আরেকবার বাবাকে বলুন না, ‘বাবা, তোমাকে ভীষণ ভালবাসি’।

সবাইকে বাবা দিবসের লাল মোজার শুভেচ্ছা।



আগের অংশ

জন মার্টিন, সিডনি - probashimartins@gmail.com






Share on Facebook               Home Page             Published on: 2-Sep-2015

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far