bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia
















সকালবেলা আমি ফোন ধরি না। তখন ফোন ধরে কথা বলার চেয়ে কয়েক মিনিট বেশী ঘুমাতে পারলে আমার আনন্দ লাগে। কিন্তু এই নিয়ে পাঁচ বার থেমে থেমে ফোন বাজলো। আমি চারবার ফোনের ডাকে মন দিলাম না। কিন্তু পাঁচ বারের বার মনে কেমন খটকা লাগলো। কেউ কি আমাকে পাগলের মতো খুঁজছে? বিপদে পড়লেই মানুষ এমন আচরণ করে। বহুবার এমন ঘটনা ঘটেছে।

তাড়াতাড়ি ফোন ধরলাম।

-তুমি কি এখনও ঘুমাচ্ছ? সারা পৃথিবী দৌড়াদৌড়ি শুরু করছে আর তুমি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছ?

ভাবী ফোন করেছেন। উনি এই ভাবেই কথা বলেন। ‘যাহা প্রয়োজন তাহা না বলিয়া উনি ইনিয়ে বিনিয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বলিয়া যাইবে’ – এই কথা দিয়ে আমার বন্ধু উনাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল কবে মনে নেই। তবে ভাবীর জন্য এই কথাটি ভীষণ খাটি।

-আমি তো কাজে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিলাম – তাই ফোন ধরিনি।

ভাবী সাথে সাথে হুকুম জারি করলেন, ‘শোন, আজকে আমি তোমার প্রথম ক্লায়েন্ট। আমাকে সবার আগে দেখতে হবে’।

আমি বিপদ গুনি। ভাবীকে বুঝিয়ে বলি, ‘আজকে তো আমি আপনাকে দেখতে পারব না। সকাল-সন্ধ্যা বুকিং হয়ে গ্যাছে’।

উনি ক্ষেপে গেলেন, ‘আমার চেয়ে জরুরী আর কারো কেস হতে পারে না। আমি ঠিক নয়টায় আসছি।’

আমি আবার অনুরোধ করলাম, ‘বেশী জরুরী হলে টেলিফোনে কথা বলি। ‘উনি কি আর একবার বললে রাজি হবেন? মোটেও নয়। উনাকে রাজি করার জন্য মাখন এর দরকার হয়। আমি বেশ বুঝি। উনাকে টেলিফোনে কথা বলার জন্য রাজি করিয়ে আমি কথা শুরু করলাম, ‘কি ব্যাপার বলেন তো? এই সাত সকালে এই অবস্থা?’

‘কি আর বলব? তোমার বন্ধু আমার সর্বনাশ করছে’।

আমি একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম, ‘আমার বন্ধু আবার কি করলো? ও তো ইটালি একটি কনফারেন্স এ গিয়েছে।’

এতক্ষণে ভাবী মুখ খুলল, ‘কথা নেই, বার্তা নেই উনি এসে হাজির।’

আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কবে এলো?’

গতকাল রাতে। আমি বলি, ‘আপনার তো খুশী হবার কথা। এতো মন খারাপ করে আছেন কেন?’

‘তোমার যা বুদ্ধি। তুমি কি কোন খবর রাখো? সিডনি এয়ারপোর্টের খবর রাখো? করোনা ভাইরাসের খবর রাখো? সারাদিন তো রুমের মধ্যে বইসা থাকো। তুমি কি জানবা?’

‘ঠিক আছে আমি জানি না তো আপনি আমাকে এই জগত সংসার সম্বন্ধে কিছু বলেন’।

‘এয়ারপোর্ট থেকে বের হবার সময় ওরা একটা কাগজ হাতে দিল। বাড়িতে এসে পড়ে দেখি সর্বনাশ হইছে। তোমার বন্ধুকে এখন ১৪ দিন বাড়িতে থাকতে হবে’। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কি আমার বন্ধুকে আনতে গিয়েছিলেন’?

ভাবী একটু বিরক্ত হলেন, ‘তুমি তো আর আনতে যাবে না। তাই আমাকেই যেতে হোল।’

‘কিন্তু আপনি গিয়ে যে সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিলেন। বন্ধুর সাথে আপনাকে এখন বাড়িতে ১৪ দিন আলাদা থাকতে হবে’।

ভাবী ক্ষেপে গেলেন, ‘ফাজলামি কইর না। আমার তিনটা মেয়ে। এদের স্কুলে কি তুমি দিয়া আসবা? ওদের কোচিং থিক্যা কি তুমি উঠাইবা, ওদের নাচের ক্লাসে কি তুমি নিয়া যাইবা?’ ক্ষেপে গেলে ভাবীর মুখে এমন মধুর শব্দ শোনা যায়।

আমি বিষয়টি বুঝিয়ে বললাম। যেহেতু বন্ধু আমার দেশের বাইরে থেকে এসেছে -এবং ভাবী তার সাথে এক গাড়িতে এসেছে, এক বাড়িতে উঠেছে, এক বিছানায় শুয়েছে – অতএব বন্ধুর যদি এই ভাইরাস থাকে তাহলে ওটা ভাবীর কাছে ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশী।

ভাবী আকাশ থেকে পড়লেন, ‘এই চৌদ্দ দিন আমি বাড়িতে বসে থাকবো? বাড়িতে বসে কি করবো? আমি তো পাগল হয়ে যাব’।

‘শুনুন শুধু আপনি আর আমার বন্ধু একা বাড়িতে থাকবেন না। আপনার তিন মেয়েও কিন্তু বাড়ির বাইরে যেতে পারবে না’। আমার কথা শুনে উনার বিরক্তি আরও বেড়ে গেল। প্রায় গলা ছেড়ে চিৎকার করার অবস্থা, ‘তাইলে আমার মেয়েদের কি হইব?’

আমি ঠাণ্ডা গলায় বলি যে চিন্তার কোন কারণ নেই। এই চৌদ্দ দিনকে ভাবুন একটি উৎসবের ছুটি। ঘর ভর্তি খাবার। বাইরে যাবার কোন চিন্তা নেই। অতএব বিভিন্ন পরিকল্পনা করা যেতে পারে। এই যেমন অনেকগুলো কাজ অনেকদিন ধরে করা হচ্ছিল না। সময় নেই। এবার তো হাতে সময় জমলো। শুরু করুন আপনার পুরানো কাপড় গোছানর কাজ। বাড়ির সব পুরানো কাপড় ছোট ছোট ব্যাগে ভরুন। বাড়ির পাশেই তো স্মিথ ফ্যামিলির বড় ডাব্বা আছে। ওগুলো ওখানে দিলে কত মানুষের কাজে লাগবে।

ভাবীর মন একটু নরম হোল। ‘ঠিক আছে সেটা না হয় করলাম। কিন্তু আমার বাড়িতে এতো পুরানো কাপড় নেই যে চৌদ্দ দিন লাগবে’।

আমাকে নতুন লিস্ট তৈরি করতে হোল। ‘কবিতা পড়েন না কত দিন হোল? এই সময়ে কবিতা পড়ুন। নতুন নতুন কবিতা পড়ুন। গল্পের বই ও পড়তে পারেন। বই মেলা থেকে তো বেশ কয়েকটি বই কিনেছেন, ওগুলো পড়া শুরু করুন। অথবা পুরানো গল্পের বই আবার নতুন করে পড়তে পারেন।’

‘তোমার যা কথা। এক বই দুইবার পড়ার সময় কই?’ ভাবীর গলায় উষ্মা টের পাই।

‘আসলে পুরানো গল্প দু’বার পড়লে নিজেই দেখবেন গল্পটি নতুন করে পড়ছেন। আমি সেদিন অশনি সংকেত দেখলাম। সেই হাফ প্যান্ট পড়ার সময়ে সিনেমাটি দেখতে গিয়েছিলাম। কারণ আমরা ববিতাদের বাড়ির পাশে থাকতাম। তাই উনাকে দেখতে গিয়েছিলাম। সিনেমার গল্পটি কি, কেন গল্পটি এমন করে বলা হোল? এগুলো কিছুই আমার মাথায় ঢুকেনি। আমি শুধু ববিতাকে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এতদিন পর যখন আবার দেখলাম – আমি বিস্মিত হলাম ববিতার অভিনয় দেখে। কি অসাধারণ ছোট ছোট অভিব্যক্তি। পুরো সিনেমাটি আমি নতুন চোখ দিয়ে দেখলাম।’

ভাবীর মন আরও একটু নরম হোল। ‘তাহলে একটা সিনেমার লিস্ট পাঠাও তো।’

আমি বিপদ গুনলাম। ভাবীকে বললাম, ‘ইন্টারনেট এ সার্চ দিন। মরে যাবার আগে ১০০ ছবি দেখার তালিকা পেয়ে যাবেন। সব বিখ্যাত ছবির নাম।’

ভাবী হাসল। ভাবল আমি হয়তো ভাবছি উনি মরে যাবেন তাই এই লিস্ট দেখতে বললাম। আমি আশস্থ করলাম যে করোনাতে সবাই মারা যায় না। শুধু মাত্র সাবধানতা আমাদের করোনা মুক্ত থাকতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু উনি এখন ভীষণ চিন্তিত ঐ চৌদ্দ দিন নিয়ে। আমি আবার লম্বা লিস্ট দিলাম। ‘শুনুন, আপনি গান শুনতে ভাল বাসেন। সারাদিন ভাল গান শুনুন। বাড়িতে তো হারমোনিয়াম আছে। এই সুযোগে গান গাওয়ার পুরানো অভ্যাসটি ঝালাই করে নিন।’

মনে হোল উনি খুশী হয়েছেন।

আমি আবার লিস্ট বড় করি। ‘আপনি তো মরা গাছে ফুল ফুটাতে পারেন। বাড়ির বাগানটি এই ফাঁকে গুছিয়ে ফেলুন। গাছের নতুন নতুন চাড়া বানান। করোনা শেষ হলে বন্ধুদের গাছ উপহার দিবেন। তাদের বলবেন যে জীবন হচ্ছে গাছের মত। যত্ন নিতে হয়। বাগান করা যেমন আনন্দের তেমনি ওখানে বসে বিকেলে চা খাওয়া বেশ তৃপ্তির।’

ভাবীর মন এবার বেশ নরম হোল। বলল, ‘তাহলে তুমিও চলে আস। একসাথে বসে চা খাই।’

‘বলেন কি? এটা তো বাইরে ঘুরার হলিডে না। এটা হচ্ছে ফ্যামিলি হলিডে। পরিবারের সাথে সময় কাটান। বাইরের মানুষকে আসতে দিবেন না। কারণ আপনি জানেন না – সেই বন্ধুর কাছে এই ভাইরাস আছে কিনা। পরিবারের সাথে এমন নিরবচ্ছিন্ন সময় কাটানোর সুযোগ কি আর পাবেন?’

‘তাহলে তুমি বাড়িতে লক-ডাউন হচ্ছো কবে?’

‘আমার উপায় নেই। স্বাস্থ্য সেবায় থাকা আর সব কর্মীর মতো আমাকে কাজ করতে হবে। নতুবা এই আপনার মতো যারা ছুটে আসবে তাদের কি করে বলব যে ভয় দিয়ে জয় হবে না’।

ভাবীর সাথে কথা শেষ করে দোকানে গেলাম। ভাবলাম প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে নেই।

দোকানে গিয়ে দেখি মানুষের ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড়াদৌড়ি। জিনিস কেনার ধুম। টয়লেট টিস্যুর উপর নজর ছেড়ে এখন মাছ, মাংসের উপর নজর পড়েছে সবার। কোন দোকানে মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। আজ একজন ক্লায়েন্ট বলল যে কসাইখানাতে জবাই করার মতো যথেষ্ট গরুর ছাগলের চালান নেই। তাই মাংসের কমতি। রাস্তা ঘাট খালি খালি। আমার প্রতিবেশী একজন খাঁটি অস্ট্রেলিয়ান। দেখলাম ট্রলি ভর্তি রেড/হোয়াইট ওয়াইন আর বিয়ার নিয়ে যাচ্ছে।

আমি রসিকতা করে বলি, ‘তোমার বাড়িতে কি পার্টি? সাবধান গেস্ট কিন্তু ভাইরাস নিয়ে আসতে পারে।’

সেই লোক আমার চেয়ে সেয়ানা। বলল, ‘পার্টি তো তোমরা করছ। শোন, রান্না করে আমাকে খবর দিবে আর আমি ওয়াইন নিয়ে তোমাদের বাড়িতে খেতে আসব। আমরা তো ভাল প্রতিবেশী। তাই না?’

- নারে ভাই। আমি বেশী কিছু কিনতে পারিনি।

- কেন?

- সারাদিন তো কাজে থাকি। কেনার সময় কই?

- শোন, ছোট ছোট দোকান থেকে জিনিস কিনবে না।

- কেন?

- ওরা জিনিস এর দাম ডাবল করে দিয়েছে।

- ওগুলো কি বাংলাদেশী দোকান?

- তুমি বুঝলে কি করে?

- এই কাজে আমরা বেশ এক্সপার্ট।

আমি আর কথা বাড়ালাম না। দোকান থেকে বের হয়ে এলাম। হঠাৎ মনে হোল এই করোনা ভাইরাস হঠাৎ কিভাবে জগতের সকল মানুষকে একই কাতারে দাঁড় করলো। অর্থ, বিত্ত, ধর্ম, সংস্কৃতি যা পারেনি – করোনা ঠিক তাই করে দেখাল। আমরা সবাই একই ভাবে অসহায়। আমাদের সুস্থ থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে সচেতন হওয়া।




জন মার্টিন, সিডনি, জুন, ২০১৭





Share on Facebook               Home Page             Published on: 21-Mar-2020

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far