 কাতারের সুখ দুঃখ - ২১ ড. আব্দুল্লাহ আল-মামুন
আগের পর্ব        পরের পর্ব 
বাঙালির নাকি কথার আগে হাত চলে। কোনো সমাবেশ কিংবা আলোচনা সভায় শান্তিপূর্ণভাবে কথা না বলে আমরা খুব সহজেই বাক-বিতণ্ডা এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ি। দেশে দেশে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির কিছু কার্যকলাপ দেখে এর সত্যতা মেলে। সিডনীর কিছু ঘটনা এখনো মনে পড়ে। তবে গত এক দশকে সিডনী শহরে কি ঘটেছে, তা অবশ্য আমার জানা নেই। এ বছরের জানুয়ারিতে বকেয়া বেতনের দাবীতে কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে কিছু শ্রমিক ঢুকে পড়ে এবং প্রচুর ভাঙচুর করে। এতে দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তাও আহত হন। খুব বেশীদিনের কথা নয়, কাতার দূতাবাসেও হাতাহাতির মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি খুব খারাপের দিকে মোড় না নিলেও কাতারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির অপার ক্ষতি হয়।
 মানুষের ক্ষোভ থাকতে পারে, কিন্তু তা বলে প্রবাসে স্বদেশের প্রতিনিধিত্বকারী দূতাবাসে হামলা করা কিংবা সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিজেদের হট্টগোল মেটাতে পুলিশ ডাকাডাকি, স্বাগতিক দেশ খুবই খারাপ চোখে দেখে। দূতাবাসে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও জনশক্তি রপ্তানির খাতে সুদূরপ্রসারী ক্ষতিসাধন করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে না গেলে বাংলাদেশ দূতাবাসের কি যে গুরুত্ব তা বোঝা যায়না। অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্টে no visa required স্ট্যাম্প লাগানোর প্রয়োজন ছাড়া ক্যানবেরাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কখনো দ্বারস্থ হয়েছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু এখানে ব্যবসা, বাণিজ্য, চাকুরী, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে প্রত্যয়নসহ সহ বিরোধ মীমাংসার জন্যও দূতাবাসের প্রয়োজন হয়। এজন্য দূতাবাসে আধিপত্য বিস্তারের জন্য কমিউনিটির কিছু মানুষ উঠে পড়ে লেগে যায়। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আনুকূল্য পাওয়ার জন্য অনেকে দূতাবাসে সকাল-বিকেল হাজিরা দেন। কেউ আবার কর্মকর্তাদের দামী উপঢৌকন দিতেও পিছপা হন না। প্রবাসী কমিউনিটির সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা চাট্টিখানি কথা নয়। এই ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে অনেক সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিছুদিন আগে কাতারে নিযুক্ত একজন রাষ্ট্রদূতকে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে।
কাতারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কথা মনে পড়ছে, যিনি পেশায় ছিলেন প্রকৌশলী। স্বাভাবিকভাবেই কাতারের বাংলাদেশী প্রকৌশলীরা তাঁকে খুব কাছের মানুষ বলে মনে করত। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, দূতাবাসে চার বছরর দায়িত্বে থাকাকালীন সহযোগিতা করাতো দূরে থাক, ইন্সটিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) কাতার চ্যাপ্টারের কোনো অনুষ্ঠানে একটি বারের জন্যও তিনি অংশগ্রহণ করার সৌজন্য-বোধ দেখান নি। অথচ খোদ রাষ্ট্রদূত মহোদয় আইইবির অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগ দিয়েছেন। আমলা পরিচয়ের কাছে প্রকৌশলী পরিচয়টা এতোটা তুচ্ছ হতে পারে তা আগে জানা ছিলনা। তবে আইইবির অনুষ্ঠানে তার অনুপস্থিতির ব্যাপারটি এখনো আমার কাছে জটিল রহস্যই রয়ে গেছে।
 যা বলছিলাম, কুয়েতে বাংলাদেশে দূতাবাসের দুর্ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি। কাতারে গত আগস্ট মাসে বকেয়া বেতনের দাবীতে হাজারো বাংলাদেশি শ্রমিক বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নামে এবং দোহা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক অবরোধ করে বসে। তিন চার মাসের বেতন না পাওয়ায় বিপর্যস্ত শ্রমিকরা হয়তো অনেকটা নিরুপায় হয়ে এই পথে নেমেছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, হরতাল, সড়ক অবরোধ, কাতারে সম্পূর্ণ অবৈধ। দাবী পূরণের জন্য স্বাগতিক দেশের আইন ভঙ্গ করে কখনোই কোনো কিছু করা উচিত নয়। এতে সাময়িক সুবিধা পাওয়া গেলেও, তা সমগ্র কমিউনিটির উপর দীর্ঘ মেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কাতারের বেশ কিছু বড় বড় কোম্পানি এখন বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কাতারী কর্তৃপক্ষের প্রচ্ছন্ন নির্দেশ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
ভিসা ব্যবসা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে চট-জলদি অর্থ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী একাধিক কোম্পানি খুলে মোটা টাকার বিনিময়ে কাজের কথা বলে শত শত কর্মী নিয়ে আসছে কাতারে। অথচ দেখা যায়, সেই কোম্পানির আওতায় কোনো কাজই নেই। ভিসা প্রতি কমপক্ষে ৫ হাজার রিয়াল করেও যদি মুনাফা হয়, তাহলে ১০০ ভিসায় ৫ লক্ষ রিয়াল খুব সহজেই কামিয়ে নেয়া যায় (১ অস্ট্রেলিয়ান ডলার = ২.৫ কাতারী রিয়াল)।
সমস্যা হল, কাজের চুক্তিপত্র, বেতন ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে মানুষ প্রবাস পাড়ি দিচ্ছেন আর নিজের অজান্তেই ভিসা ব্যবসায়ীদের প্রতারণার জালে ফেঁসে যাচ্ছেন। ভুয়া কোম্পানির ভিসা নিয়ে আসার পর বহু মানুষ দিনের পর দিন বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। দীর্ঘদিন কাজের সন্ধান না পেয়ে চরম হতাশায় কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্য বেপরোয়া হয়ে আইন-বিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। ভিসা বেচা-কেনা করে অর্থ কামিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কখনো হয়ে যান লাপাত্তা। স্থানীয় কফিল বা স্পন্সরদের কিছু অর্থ দিয়ে এই ধরণের অবৈধ কাজে সহযোগিতা করার জন্য প্রলোভিত করছে এসব ভিসা ব্যবসায়ীরা। কোম্পানির নামে বের করা ভিসা থেকে যে অর্থ উপার্জন করা যায়, তা স্থানীয় কাতারীদের আগে জানা ছিল না। দুঃখজনক ভাবে, অবৈধ পথে টাকা কামানোর পথ দেখিয়ে আমরাই তাদের চতুর বানিয়ে দিচ্ছি।
সেদিন বাংলাদেশী রেস্তোরাঁয় চা খেতে গিয়ে একজন বাংলাদেশীর দেখা পেলাম যিনি ভিসা কিনেছেন ৯ লক্ষ টাকা দিয়ে। কাতারে এসে দেখেন তার কোনো কাজ নেই। শুনে আমার ভিমড়ি খাবার দশা! এখন দু’বেলা খাবার কিনে খাবেন সেই সামর্থ্যও তার নেই। আমার অনুরোধে রেস্তরাঁর মালিক ওই বেলার জন্য তার খাবারের ব্যবস্থা করে দিলেন। ভিটেমাটি বিক্রি করে এসেছেন তিনি। এখন যে দেশে ফিরে যাবেন সেই পথও খোলা নেই। প্রতারিত মানুষটির কথা শুনতে গিয়ে চোখে জল এসে গেলো।
ইদানীং কাতারে কিছু বাংলাদেশী জুয়া খেলা, গাঁজা এবং ইয়াবার মত মাদক দ্রব্যের নেশা ও বেচাকেনায় মেতে উঠেছে। কাতারের কারাগারে যে দুই শতাধিক বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছেন, তাদের ৮০ শতাংশ মাদক সম্পৃক্ত অপরাধে জড়িত থাকার কারণে সাজা খাটছেন। কারাভোগী অনেকের বয়স মাত্র ২৫-৪০ বছরের মধ্যে। এদের কেউ আবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। এতো কম বয়সে জীবনের সোনালী দিনগুলো প্রবাসে কারাগারের অন্তরালে বিলীন হয়ে যাবে ভাবতেই বেদনা-ক্লিষ্ট হয় মন। এছাড়া স্বদেশে পাড়ায় পাড়ায় এলাকার আধিপত্য নিয়ে যেমন বিভিন্ন দলের মধ্যে সংঘাত হয়, ঠিক তেমনি জেলা ভিত্তিক গোষ্ঠীর মধ্যে এই ধরনের সংঘাত এখন দোহা শহরেও শুরু হয়েছে। এইসব অবৈধ কার্যকলাপ এবং সংঘাতের জের ধরে সম্প্রতি বাংলাদেশীদের হাতে একজন নেপালি নাগরিক খুন হবার পর পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিটি।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মসজিদে ইমাম এবং মুয়াজ্জিন পদে প্রচুর বাংলাদেশী ওলামারা কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু গত বছর বাংলাদেশী এক মুয়াজ্জিনের হাতে বাহরাইনের এক ইমাম নৃশংসভাবে খুন হবার পর মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী ওলামাদের সুদিন শেষ হবার পথে। ইতিমধ্যে বাহরাইন থেকে অর্ধশতাধিক ইমাম ও মুয়াজ্জিন হিসাবে নিয়োজিত বাংলাদেশীর দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাহরাইনে ইমাম খুন হবার ঘটনা কাতারেও প্রভাব ফেলেছে। জানা গেছে, কাতারে ইমাম ও মুয়াজ্জিন পদে ২০০ শত বাংলাদেশীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর হঠাৎ করে তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
এখন দোহা শহরের বহু এলাকায় রাস্তার ফুটপাতে, রেস্তোরাঁ ও মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর বাংলাদেশী নাগরিককে কাজের সন্ধানে জটলা বেঁধে শোরগোল করতে দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের জটলা থেকে বহু মানুষকে পুলিশ গাড়ীতে তুলে নিয়ে জেলে ভরছে কিংবা সরাসরি দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এখানকার পুলিশ আরবি ছাড়া অন্য ভাষাতে কথা বলে না। তাই যারা আরবি বলতে জানে, তাদের কথাকেই পুলিশ বেশী গুরুত্ব দেয়। ভাষাগত সমস্যার কারণে পুলিশের সাথে কথাবার্তা বলতে পারে না বলে অনেক বাংলাদেশী বিপাকে পড়ছেন। এ দেশের পুলিশের কাছে কোনো ওজর আপত্তি খাটে না। ফলে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থাকলে, বৈধ রেসিডেন্ট পারমিট থাকার পরও আপনার সমস্যা হতে পারে।
 গত সপ্তাহে মাগরিবের নামাজ পড়তে নেমেছি একটি মসজিদে। মসজিদ সংলগ্ন খোলা চত্বরে ভিড় করেছে বহু বাংলাদেশী। অবাক হয়ে দেখি, একজন দুই হাত তুলে “হেলপার চাই হেলপার চাই” বলে চেঁচাচ্ছে। অন্য একজন “ভিসা আছে, ভিসা আছে“ বলে হাঁক-ডাক দিচ্ছে, যেন কোনো কিছুর নিলাম হচ্ছে। জটলার ঠিক পেছনেই একজন পাঠানকে খুব মনোযোগ দিয়ে জটলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে দেখলাম। প্রবাসী জনগোষ্ঠীর খবরা-খবর রাখার জন্য পুলিশের কিছু গুপ্তচর বা খোচর রয়েছে। এরা কমিউনিটির মধ্যে আড়ি পেতে থাকে এবং পুলিশকে তথ্য সরবরাহ করে। এই পাঠান যদি পুলিশের খোচর হয়ে থাকে তাতে অবাক হব না। অথচ অবৈধ নিলামে ব্যস্ত বাংলাদেশী ভাইদের আশে পাশে কি ঘটছে সেদিকে কারো কোনো ভ্রƒক্ষেপই নেই। এই ধরণের জটলায় পুলিশ অভিযান চালাতে পারে জেনেও এসব কাজ আমরা কেনো যে করি, তা মাথায় ঢোকে না।
অস্ট্রেলিয়ায় উপার্জিত অর্থের সিংহভাগ আমরা বাড়ী-গাড়ী, সংসার নির্বাহের জন্য ব্যয় করে থাকি। যা প্রকারান্তরে সমৃদ্ধ করছে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি। নিয়মিত দেশে অর্থ পাঠান এমন মানুষের সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ায় খুবই কম। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে এই চিত্র পুরোপুরি উল্টো। এখানে মানুষ যা আয় করছে, থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে বাকী সবটুকুই পাঠিয়ে দিচ্ছে দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশী রেমিট্যান্স যায় বাংলাদেশে। মরুর দেশে কর্মরত মানুষের ঘামে ভেজা টাকা দিয়েই ঘুরছে স্বদেশের অর্থনীতির চাকা আর সেজন্যই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছুঁতে চলেছে ৩৩ বিলিয়ন ডলার। মরুর রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য রইলো আমার হৃদয় নিংড়ানো স্যালুট। উল্লেখ্য, প্রবাসী আয় পাঠানো শীর্ষে থাকা ১০টি দেশের তালিকায় অস্ট্রেলিয়া নেই।
মাদকদ্রব্য সেবন, পাচার, ও ভিসা প্রতারণা মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশীদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে ভিসা প্রতারণা এবং মাদক পাচার বন্ধ করতে হলে এ দুটো সমস্যার উৎসে হাত দিতে হবে। যেমন বাংলাদেশের বিমান বন্দরে নিরাপত্তার চাদরের ফাঁক দিয়ে মাদকদ্রব্য যাতে বেরিয়ে না যায় সেজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ভিসা ব্যবসায়ীরা অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান-বাংলাদেশীরা কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না? অস্ট্রেলিয়ায় থাকি বলে এই সব খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা কি আমরা এড়াতে পারি?
সেদিন কম্পিউটার ঠিক করতে গিয়ে শুনলাম একজন টগবগে যুবকের আকস্মিক জীবনাবসানের মর্মান্তিক কাহিনী। যে দোকানে কম্পিউটার ঠিক করতে গিয়েছি তারই উপর তলায় যুবকটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। যুবকটি কাতার থেকে দেশে নিয়মিত বাবার কাছে টাকা পাঠাতো। গ্রামে ওর পাঠানো টাকা দিয়েই নির্মিত হয়েছে নতুন বাড়ী। কিন্তু বিয়ে করার পর বউ নিয়ে তাকে বাড়ীতে উঠতে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, বাবা ও ছোটো ভাই মিলে নির্মমভাবে তাকে পিটিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। আপনজনদের হাতে এমন করে প্রতারিত হবার কষ্ট সইতে না পেরে কাতারে ফেরার পর যুবকটি আত্মহননের পথ বেছে নেয়। কাতারের পথে পথে, চোরা গলিতে প্রতিদিনই রচিত হচ্ছে এমন প্রতারণায় ভরা বেদনার উপাখ্যান। বাংলাদেশী রেস্তোরার চায়ের টেবিলে বসে কান পাতলেই শোনা যায় জীবন থেকে নেয়া এমন কত সুখ দুঃখের গল্প। কাতারে এসেছি এক দশক পেরিয়ে গেছে। এতোটা দিন সিডনীর ফেলে আসা জীবনের কথা ভেবে নিজের ভেতরে কখনো শোক কিংবা বৈরাগ্য অনুভব করিনি। কাতারে পথ চলতে গিয়ে যেমন সমাজের বিত্তবান মানুষের সাথে মিশেছি, তেমনি অভাবী, শ্রমজীবী আম জনতার সাথে মেশারও দুর্লভ সুযোগ আমার হয়েছে। এখন আবার সিডনী ফিরে যাবার ডাক শুনতে পাচ্ছি। সিডনী থাকাকালীন মনে হত, চারপাশ ঘিরে থাকা জগতটাই হচ্ছে আমার একমাত্র পৃথিবী। এভাবে গ্রিন হাউসের কৃত্রিম পরিবেশে গড়ে ওঠা লতাপাতর মতো কখন যে নিজের অস্তিত্বকেই হারাতে বসেছিলাম, জানি না। কিন্তু কাতারে আসার পর মনে হল, গ্রিন হাউসের কাঁচের দেয়ালের বাইরে রয়েছে অন্য এক পৃথিবী। মধ্যপ্রাচ্যের মরু প্রান্তরে এসে অবশেষে খুঁজে পেয়েছি নিজের অস্তিত্বের ক্লোন দিয়ে গড়া সেই যমজ পৃথিবী, মিলেছে শেকড়ের সন্ধান। (চলবে…)
আগের পর্ব        পরের পর্ব 
 ড. আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কাতার থেকে
|